মাস্টারমাইন্ড স্কুলের সামনে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ
রাজধানীর কলাবাগানে ‘ও’ লেভেল শিক্ষার্থীকে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলা দ্রুতবিচার আদালতে নেয়া, আসামি দিহানের সহযোগীদের পরিচয় জানানো, ভিকটিম পরিবারকে মামলার তদন্ত সম্পর্কে সঠিক তথ্য সরবরাহসহ বিভিন্ন দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল করা হয়েছে। গতকাল ধানমন্ডিতে উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগানে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের বাইরের রাস্তায় এই সমাবেশ ও মিছিল করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও হত্যার শিকার শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা। মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা বলেন, আমরা বিচার দেখতে চাই। ইতোমধ্যে নানা চাপের আলামত দেখা যাচ্ছে, সেসব যাতে না প্রভাব ফেলে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। তাদের মতে, সম্পর্কে সম্মতি বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা করা জরুরি। এ বিষয়ে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানান তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান নিয়ে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের সামনে থেকে সংসদ ভবনের রাস্তায় জড়ো হয়। সমাবেশ থেকে দিহানের সহযোগীদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সহপাঠীরা বলেন, আমরা একটি সুষ্ঠু ডিএনএ টেস্ট দেখতে চাই। এ ঘটনায় বাইরে থেকে যেন কোন চাপ সৃষ্টি করা না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে সরকারকে আহ্বান জানানো হয়। ধর্ষকদের দ্রুত বিচার দাবি করেন ধর্ষণের পর হত্যার শিকার শিক্ষার্থীর বাবা আল আমিন আহমেদ। তিনি বলেন, ধর্ষণে সহযোগীদেরও চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হোক। সমাবেশে উপস্থিত-অনুপস্থিত সব ছেলেমেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।
এদিকে কলাবাগান থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক স্বপন কুমার জানান, গত ৮ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদের আদালতে দিহান ধর্ষণের দায় স্বীকার করে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এছাড়া ওই দিনই নিহত ছাত্রীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত শেষে ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের ফলে যৌন ও পায়ুপথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে চেতনানাশক কিছু খাওয়ানো হয়েছে কিনা, তার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করে কেমিক্যাল পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। এসব রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ৭ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা মা কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে যান। এর এক ঘণ্টা পর তার বাবাও ব্যবসায়িক কাজে বাসা থেকে বের হয়ে যান। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ওই শিক্ষার্থী তার মাকে ফোন করে কোচিং থেকে পড়ালেখার পেপার্স আনার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। এই মামলার একমাত্র আসামি ‘ও’ লেভেলপড়ুয়া শিক্ষার্থী দুপুর আনুমানিক ১টা ১৮ মিনিটে ফোন করে ওই শিক্ষার্থীর মাকে জানান, মেয়েটি তার বাসায় গিয়েছিলেন। হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। অফিস থেকে বের হয়ে আনুমানিক দুপুর ১টা ৫২ মিনিটে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা হাসপাতালে পৌঁছান। হাসপাতালের কর্মচারীদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসামি তার কলাবাগান ডলফিন গলির বাসায় ডেকে নিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে অচেতন হয়ে পড়লে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আসামি নিজেই তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মারা যান।
শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২১ , ১ মাঘ ১৪২৭, ১ জমাদিউস সানি ১৪৪২
মাস্টারমাইন্ড স্কুলের সামনে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
রাজধানীর কলাবাগানে ‘ও’ লেভেল শিক্ষার্থীকে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলা দ্রুতবিচার আদালতে নেয়া, আসামি দিহানের সহযোগীদের পরিচয় জানানো, ভিকটিম পরিবারকে মামলার তদন্ত সম্পর্কে সঠিক তথ্য সরবরাহসহ বিভিন্ন দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল করা হয়েছে। গতকাল ধানমন্ডিতে উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগানে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের বাইরের রাস্তায় এই সমাবেশ ও মিছিল করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও হত্যার শিকার শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা। মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা বলেন, আমরা বিচার দেখতে চাই। ইতোমধ্যে নানা চাপের আলামত দেখা যাচ্ছে, সেসব যাতে না প্রভাব ফেলে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। তাদের মতে, সম্পর্কে সম্মতি বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা করা জরুরি। এ বিষয়ে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানান তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান নিয়ে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের সামনে থেকে সংসদ ভবনের রাস্তায় জড়ো হয়। সমাবেশ থেকে দিহানের সহযোগীদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সহপাঠীরা বলেন, আমরা একটি সুষ্ঠু ডিএনএ টেস্ট দেখতে চাই। এ ঘটনায় বাইরে থেকে যেন কোন চাপ সৃষ্টি করা না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে সরকারকে আহ্বান জানানো হয়। ধর্ষকদের দ্রুত বিচার দাবি করেন ধর্ষণের পর হত্যার শিকার শিক্ষার্থীর বাবা আল আমিন আহমেদ। তিনি বলেন, ধর্ষণে সহযোগীদেরও চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হোক। সমাবেশে উপস্থিত-অনুপস্থিত সব ছেলেমেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।
এদিকে কলাবাগান থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক স্বপন কুমার জানান, গত ৮ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদের আদালতে দিহান ধর্ষণের দায় স্বীকার করে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এছাড়া ওই দিনই নিহত ছাত্রীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত শেষে ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের ফলে যৌন ও পায়ুপথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে চেতনানাশক কিছু খাওয়ানো হয়েছে কিনা, তার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করে কেমিক্যাল পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। এসব রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ৭ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা মা কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে যান। এর এক ঘণ্টা পর তার বাবাও ব্যবসায়িক কাজে বাসা থেকে বের হয়ে যান। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ওই শিক্ষার্থী তার মাকে ফোন করে কোচিং থেকে পড়ালেখার পেপার্স আনার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। এই মামলার একমাত্র আসামি ‘ও’ লেভেলপড়ুয়া শিক্ষার্থী দুপুর আনুমানিক ১টা ১৮ মিনিটে ফোন করে ওই শিক্ষার্থীর মাকে জানান, মেয়েটি তার বাসায় গিয়েছিলেন। হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। অফিস থেকে বের হয়ে আনুমানিক দুপুর ১টা ৫২ মিনিটে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা হাসপাতালে পৌঁছান। হাসপাতালের কর্মচারীদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসামি তার কলাবাগান ডলফিন গলির বাসায় ডেকে নিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে অচেতন হয়ে পড়লে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আসামি নিজেই তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মারা যান।