দেশে গমের দাম স্থীতিশীল রাখতে রপ্তানি শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা রাশিয়ার

দেশের বাজারে গমের দাম ঠিক রাখতে রপ্তানি শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গম রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়া। দেশটির সরকার জানায়, চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ জুন সময়ে রাশিয়া থেকে গম রপ্তানিতে টনপ্রতি ৩০ ডলার ৩২ সেন্ট রপ্তানি শুল্ক দিতে হবে। একই সময়ে রুশ রপ্তানিকারকরা সর্বোচ্চ ১ কোটি ৭৫ লাখ টন গম রপ্তানি করতে পারবেন। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার এক মাসের বেশি সময় আগেই দেশটিতে গমের রপ্তানি মূল্য চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। রয়টার্স।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার মধ্যে বাম্পার ফলনের পরও রাশিয়ায় গম ও গম থেকে তৈরি খাবারসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। করোনা মহামারীর মধ্যে খাবারের দাম অনেক বেশি বাড়লে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি মাথায় রেখে খাবারের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানতে না পারায় সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। সম্ভাব্য সংকট এড়াতে রপ্তানিতে লাগাম টানতে গমে বাড়তি শুল্ক আরোপ করে মস্কো। বেধে দেয়া হয় কোটা। গত সপ্তাহে রুশ গমের রপ্তানি মূল্য টনপ্রতি ১৩ ডলার বেড়েছে। মস্কোভিত্তিক কৃষিপণ্যবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইকেএআরের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সর্বশেষ সপ্তাহে রাশিয়ার বাজারে ফ্রি অন বোর্ড (এফওবি) চুক্তিতে প্রতিটন সাড়ে ১২ শতাংশ প্রোটিন সমৃদ্ধ গমের রপ্তানি মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৭৫ ডলারে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশটিতে কৃষিপণ্যটির রপ্তানি মূল্য টনপ্রতি ১৩ ডলার বেড়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে বিশ্বের শীর্ষ গম রপ্তানিকারকের স্বীকৃতি পায় রাশিয়া। ওই বছর দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৪ কোটি ১৪ লাখ ৩১ হাজার টন গম রপ্তানির রেকর্ড হয়। মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) জানিয়েছে, টানা দুই বছরের মন্দা ভাবের পর গত বছর রাশিয়া থেকে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৬০ লাখ টন গম রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি।

২০১৯ সালের জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের গমের আমদানি বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। আর উৎপাদন বেড়েছে ২০ শতাংশ। গত অর্থবছর বাংলাদেশ গম আমদানি করেছে ৫৫ লাখ মেট্রিক টন।

চলতি অর্থবছর তা বেড়ে ৬০ লাখ টনে উত্তীর্ণ হতে পারে বলে সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে। গম আমদানিতে শীর্ষস্থানীয় চারটি দেশ হলো- মিসর, ইন্দোনেশিয়া, আলজেরিয়া ও ব্রাজিল। এই দেশগুলোতে সব মিলিয়ে গত অর্থবছর মোট পাঁচ কোটি সাত লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। প্রধান গম রপ্তানিকারক দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউক্রেন। গম উৎপাদনেও বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখ করার মতো। গত ১০ বছরে বাংলাদেশে গমের উৎপাদন ৯ লাখ টন থেকে বেড়ে প্রায় ১২ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া গমের সঙ্গে সাধারণত ভুট্টা মেশানো হয়। ভুট্টার উৎপাদনও বেড়েছে। ২০০৯ সালে দেশে ভুট্টার উৎপাদন ছিল ৭ লাখ ৩০ হাজার টন। আর গত বছর তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩৯ লাখ টন। ভুট্টার বেশিরভাগই গমের সঙ্গে মিশিয়ে পোলট্রি ও মাছের খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

শনিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২১ , ২ মাঘ ১৪২৭, ২ জমাদিউস সানি ১৪৪২

দেশে গমের দাম স্থীতিশীল রাখতে রপ্তানি শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা রাশিয়ার

সংবাদ ডেস্ক

image

দেশের বাজারে গমের দাম ঠিক রাখতে রপ্তানি শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গম রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়া। দেশটির সরকার জানায়, চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ জুন সময়ে রাশিয়া থেকে গম রপ্তানিতে টনপ্রতি ৩০ ডলার ৩২ সেন্ট রপ্তানি শুল্ক দিতে হবে। একই সময়ে রুশ রপ্তানিকারকরা সর্বোচ্চ ১ কোটি ৭৫ লাখ টন গম রপ্তানি করতে পারবেন। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার এক মাসের বেশি সময় আগেই দেশটিতে গমের রপ্তানি মূল্য চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। রয়টার্স।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার মধ্যে বাম্পার ফলনের পরও রাশিয়ায় গম ও গম থেকে তৈরি খাবারসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। করোনা মহামারীর মধ্যে খাবারের দাম অনেক বেশি বাড়লে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি মাথায় রেখে খাবারের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানতে না পারায় সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। সম্ভাব্য সংকট এড়াতে রপ্তানিতে লাগাম টানতে গমে বাড়তি শুল্ক আরোপ করে মস্কো। বেধে দেয়া হয় কোটা। গত সপ্তাহে রুশ গমের রপ্তানি মূল্য টনপ্রতি ১৩ ডলার বেড়েছে। মস্কোভিত্তিক কৃষিপণ্যবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইকেএআরের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সর্বশেষ সপ্তাহে রাশিয়ার বাজারে ফ্রি অন বোর্ড (এফওবি) চুক্তিতে প্রতিটন সাড়ে ১২ শতাংশ প্রোটিন সমৃদ্ধ গমের রপ্তানি মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৭৫ ডলারে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশটিতে কৃষিপণ্যটির রপ্তানি মূল্য টনপ্রতি ১৩ ডলার বেড়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে বিশ্বের শীর্ষ গম রপ্তানিকারকের স্বীকৃতি পায় রাশিয়া। ওই বছর দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৪ কোটি ১৪ লাখ ৩১ হাজার টন গম রপ্তানির রেকর্ড হয়। মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) জানিয়েছে, টানা দুই বছরের মন্দা ভাবের পর গত বছর রাশিয়া থেকে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৬০ লাখ টন গম রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি।

২০১৯ সালের জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের গমের আমদানি বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। আর উৎপাদন বেড়েছে ২০ শতাংশ। গত অর্থবছর বাংলাদেশ গম আমদানি করেছে ৫৫ লাখ মেট্রিক টন।

চলতি অর্থবছর তা বেড়ে ৬০ লাখ টনে উত্তীর্ণ হতে পারে বলে সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে। গম আমদানিতে শীর্ষস্থানীয় চারটি দেশ হলো- মিসর, ইন্দোনেশিয়া, আলজেরিয়া ও ব্রাজিল। এই দেশগুলোতে সব মিলিয়ে গত অর্থবছর মোট পাঁচ কোটি সাত লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। প্রধান গম রপ্তানিকারক দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউক্রেন। গম উৎপাদনেও বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখ করার মতো। গত ১০ বছরে বাংলাদেশে গমের উৎপাদন ৯ লাখ টন থেকে বেড়ে প্রায় ১২ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া গমের সঙ্গে সাধারণত ভুট্টা মেশানো হয়। ভুট্টার উৎপাদনও বেড়েছে। ২০০৯ সালে দেশে ভুট্টার উৎপাদন ছিল ৭ লাখ ৩০ হাজার টন। আর গত বছর তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩৯ লাখ টন। ভুট্টার বেশিরভাগই গমের সঙ্গে মিশিয়ে পোলট্রি ও মাছের খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।