পৌর নির্বাচন দ্বিতীয় ধাপ

সহিংসতার মধ্যে আজ ভোট

পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা বেড়ে গেছে। প্রচার-প্রচারণা আর উত্তাপ কোন কোন জায়গায় সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে পৌরভোটের আগেই বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী-সমর্থকদের সংর্ঘষের ঘটনায় কাউন্সিলর প্রার্থীসহ দ্ইুজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। একে-অপরের ওপর হামলা, প্রতিপক্ষের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনাও ঘাটেছে। হামলা ও সহিংসতার এসব ঘটনা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যেই বেশি।

দ্বিতীয় ধাপে দেশের ৬০টি পৌরসভায় দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে এবং নির্দলীয়ভাবে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচন আজ। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এসব পৌরসভায় টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এরমধ্যে ২৮টি পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এবং ৩২টি পৌরসভায় ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার ঝিনাইদহের শৈলকুপায় পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক কাউন্সিলর প্রার্থী এবং অন্য একজন আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন। প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়েছেন বিশ থেকে পঁচিশজন। গত বুধবার রাতে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী শওকত হোসেনের ভাই আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত হোসেন বল্টু দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হওয়ার ৫ ঘণ্টার মাথায় একই ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর হোসেন বাবুর মরদেহ নদী হতে উদ্ধার করা হয়। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এ দুটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই মনে করেন, একটি খুনের জের ধরে অন্য খুনের ঘটনাটি ঘটেছে।

এদিকে নরসিংদীর মনোহরদী এলাকায় পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এতটাই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে, কোথাও কোথাও পুলিশকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হচ্ছে। বুধবার রাতে তিন কাউন্সিলর প্রার্থী, সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। এ সময় সংঘর্ষে বেশ কয়েকজনের আহত হওয়ার তথ্য জানা গেছে।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বুধবার রাতে তালতলায় আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দফায়-দফায় সংঘর্ষ, গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় সেখানকার ভোটাররা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

এদিকে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় গত বুধবার রাতে শেরপুর পৌরসভা এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল করার সময় শহরের কিছু দোকানপাট ও যানবাহন ভাঙচুর করে। এতে শহরে উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে নারায়ণগঞ্জের তারাবোতে ও গাজীপুরের শ্রীপুরেও পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আর বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যেই এ ধরনের সহিংসতা বেশি ঘটছে।

এদিকে অনেক পৌর এলাকায় বিএনপি মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের প্রতিপক্ষের হুমকি ও হামলার কারণে নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে যেসব পৌরসভায় ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী সক্রিয়, সেখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

প্রথম ধাপে গত ২৮ ডিসেম্বর ২৩টি পৌরসভার ভোটে আওয়ামী লীগ ১৮টি, বিএনপি ২টি এবং স্বতন্ত্র ৩ জন মেয়র পদে জয়লাভ করেন। ইভিএমে ভোটের ওই নির্বাচনে গড়ে ৬৫ শতাংশ ভোট পড়ে। তবে দ্বিতীয় ধাপে সহিংসতার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে নির্বাচনী আমেজের বদলে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তাই এ ধাপে গড় ভোটের হার কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেছেন, ‘দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে সরকার।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘অতীতের তুলনায় এবারের পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা কম ঘটছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সংঘাত সব সময় হয়ে এসেছে। তবে কোন সহিংসতা কাম্য নয়’। দ্বিতীয় ধাপের এই নির্বাচনে আটটি রাজনৈতিক দল তাদের নিজস্ব প্রতীক নিয়ে অংশ নিচ্ছে। তবে ভোটের আগেই সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, পাবনার ভাঙ্গুরা, পিরোজপুরের পিরোজপুর সদর এবং নারায়ণগঞ্জের তারাবো পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী থাকায় এ চারজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এছাড়া সাতজন সাধারণ কাউন্সিলরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।

ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম-সচিব ও পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান জানান, দ্বিতীয় ধাপের জন্য ইসি প্রথমে ৬১টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করলেও নীলফামারীর সৈয়দপুরের প্রতিদ্বন্দ্বী একজন মেয়র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে সেখানে ভোট স্থগিত করা হয়েছে।

দ্বিতীয় ধাপে প্রার্থী ও ভোটার পরিসংখ্যান

ইসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে পৌরসভায় মোট মেয়র প্রার্থী ২২১ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৩২০ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ৭৪৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৬১টি পৌরসভায় মোট ভোটার ২২ লাখ ৪০ হাজার ২২৬ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১১ লাখ ৮ হাজার ৪৩১ জন এবং নারী ১১ লাখ ৩১ হাজার ৮৩১ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৮০টি এবং ভোটকক্ষ ৬ হাজার ৫০৮টি।

ইসির প্রস্তুতি সম্পন্ন

ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম-সচিব ও পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান জানান, দ্বিতীয় ধাপের জন্য ইসি প্রথমে ৬১টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করলেও নীলফামারীর সৈয়দপুরের প্রতিদ্বন্দ্বী একজন মেয়র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে সেখানে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। তিনি জানান, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্র ছাড়াও নির্বাচনী এলাকাসমূহে বিজিবি, পুলিশ, আনসার মোতায়েন করা হচ্ছে। এছাড়া মোবাইল টিম এলাকায় টহল দেবে এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন থাকবে। নির্বাচনী এলাকাসমূহে যানবাহন চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

আজ যেসব পৌরসভায় ভোট

ইসি জানায়, দ্বিতীয় ধাপে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ (ব্যালট), সিরাজগঞ্জের কাজীপুর (ইভিএম), বেলকুচি (ব্যালট), উল্লাপাড়া (ব্যালট), সদর (ব্যালট) ও রায়গঞ্জ (ব্যালট), নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ (ব্যালট), কুষ্টিয়া সদর (ব্যালট), কুমারখালী (ইভিএম), ভেড়ামারা (ব্যালট) ও মিরপুর (ব্যালট), মৌলভীবাজারের কুলাউড়া (ব্যালট) ও কমলগঞ্জ (ব্যালট), নারায়ণগঞ্জের তারাবো (ইভিএম), শরীয়তপুর সদর (ইভিএম), কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী (ব্যালট), গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ (ব্যালট) ও সদর (ব্যালট), দিনাজপুর সদর (ব্যালট), বিরামপুর (ব্যালট) ও বীরগঞ্জ (ইভিএম), নওগাঁর নজিপুর (ইভিএম), পাবনার ভাঙ্গুড়া (ব্যালট), ফরিদপুর (ইভিএম), সাথিয়া (ব্যালট), ঈশ্বরদী (ব্যালট) ও সুজানগর (ব্যালট), রাজশাহীর আড়ানী (ইভিএম), ভবানীগঞ্জ (ব্যালট) ও কাকনহাট (ইভিএম), সুনামগঞ্জ সদর (ব্যালট), ছাতক (ব্যালট) ও জগন্নাথপুর (ইভিএম), হবিগঞ্জের মাধবপুর (ব্যালট) ও নবীগঞ্জ (ব্যালট), ফরিদপুরের বোয়ালমারী (ব্যালট), ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া (ইভিএম) ও মুক্তাগাছা (ব্যালট), মাগুরা সদর (ইভিএম), ঢাকার সাভার (ইভিএম), নাটোরের নলডাঙ্গা (ইভিএম), গুরুদাসপুর (ব্যালট) ও গোপালপুর (ব্যালট), বগুড়ার শেরপুর (ব্যালট), সারিয়াকান্দি (ইভিএম) ও সান্তাহার (ইভিএম), পিরোজপুর সদর (ইভিএম), নেত্রকোনার কেন্দয়া (ইভিএম), মেহেরপুরের গাংনী (ইভিএম), ঝিনাইদহের শৈলকুপা (ইভিএম), পার্বত্য খাগড়াছড়ি সদর (ইভিএম), বান্দরবান জেলার লামা (ব্যালট), টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী (ইভিএম), কুমিল্লার চান্দিনা (ইভিএম), ফেনীর দাগনভূঞা (ইভিএম), কিশোরগঞ্জ সদর (ব্যালট) ও কুলিয়ারচর (ইভিএম), নরসিংদীর মনোহরদী (ইভিএম), নোয়াখালীর বসুরহাট (ইভিএম) এবং বাগেরহাটের মোংলা (ইভিএম) পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হবে।

উল্লেখ্য, দেশের মোট ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে মেয়াদ শেষ হওয়া পৌরসভাগুলোতে নির্বাচন হচ্ছে। তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভায় ৩০ জানুয়ারি এবং চতুর্থ ধাপে ৫৬টি পৌরসভায় ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোট হবে।

রাজশাহী জেলা বার্তা পরিবেশক জানায়, রাজশাহীর বাঘা আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে গত বুধবার রাতে। এ ঘটনার সময় আড়ানী বাজারের প্রায় ৩০টি দোকানে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এতে প্রায় ১ কোটি টাকার ক্ষতি হয় ওই বাজারের ব্যবসায়ীদের। এখনও আতঙ্কে দোকানপাট খুলছে না। এলাকায় মানুষজন কম বের হচ্ছে। সংঘর্ষের পর গতকাল দিনভর ওই ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে দোকানপাট খুলতে পারেননি। এতে করে সব ব্যবসায়ী ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। বিশেষ করে করোনা সংকট কাটিয়ে ওঠে যখন লাভের আসায় ব্যবসা জেগে উঠছে সেই সময় ভোট দ্বন্দ্বে ভাঙচুর, দোকানপাটে হামলা, মারপিট-এর ঘটনায় এলাকার ব্যবসায়ীদের ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।

এদিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদের পথসভায় বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র মুক্তার আলীসহ তার লোকজন হামলা চালিয়ে শতাধিক দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় আড়ানী পৌর বাজারের প্রায় সব দোকান বন্ধ রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার (১৪ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে আড়ানী পৌর বাজারের তালতলা মোড়ে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা চলছে। তবে এই ঘটনায় মুক্তার আলীকে প্রধান আসামি করে ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে ৫০০/৬০০ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে আড়ানী পৌর এলাকার ৪ নম্বর নুরনগর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান (৪৫) ও তার ভাগনে আরিফ হোসেন (৩০)-এর ওপর হামলা হয়। রাত ১০টার দিকে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নুরনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তাদের রাতেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের অভিযোগ, বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র মুক্তার আলীর সমর্থকরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হামলাকারীরা আড়ানী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন। হামলার শিকার বজলুর রহমান অন্য এক কাউন্সিলর প্রার্থীকে সমর্থন করেন। এ বিষয় বাঘা থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, হামলার শিকার ব্যক্তিরা ও হামলাকারীরা আপন চাচাত ভাই। ঘটনা জানার পর তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার আড়ানী পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদ গণসংযোগ শেষে আড়ানী বাজারের তালতলায় পথসভা করছিল। এ সময় বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র মুক্তার আলী ও তার সমর্থকরা ১৫/২০ জন হামলা চালায়। পরে তারা মসজিদের মাইক ব্যবহার করে লোকজনকে ডেকে মুক্তার আলীসহ তার দল নিয়ে নৌকার প্রার্থীর দুটি অফিস ভাঙচুর, ৫টি মোটরসাইকেল, শতাধিক দোকান ভাঙচুর করে লুটপাট করে নিয়ে যায়। দফায় দফায় গুলি ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায়।

বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রচারণায় হামলা প্রার্থীর স্ত্রীসহ আহত ১০

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল বাশার চোকদারের সমর্থকদের প্রচারণায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী মান্নান হাওলাদারের সমর্থকদের হামলার অভিযোগ। এ ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর স্ত্রী আফরিন মিতুসহ আহত হয়েছেন ১০ জন। এছাড়া আহত হয়েছেন হান্নান মুন্সী, ফয়সাল সরদার, শামীম চোকদার, নাসিমা আক্তার, পাখি আক্তার, রিজিয়া আক্তার, সুলতানা আক্তার, নাসরিন আক্তার ও মোহাম্মদ আলী শিকদার এবং আইএনবি’র প্রতিনিধি আবু রায়হান অর্ণব।

হান্নান মুন্সী ও ফয়সাল সরদারকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের ভেদরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

আগামী ৩০ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ১০ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের পরপরই প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নামে প্রার্থীরা। মেয়র পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ভেদরগঞ্জ উপজেলার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান হাওলাদার। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ভেদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আবুল বাশার এবং বিএনপি প্রার্থী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বিএম মুস্তাফিজ।

বিদ্রোহী প্রার্থীর স্ত্রী আহত আফরিন মিতু জানান, ৭নং ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। এ সময় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর সর্মথকরা তাদের ওই ওয়ার্ড থেকে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়। তারা প্রচারণা চালালে হামলা এবং লাঞ্ছিত করা হয়। তার গহনা ছিনিয়ে নেয় এবং তার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করা হয়েছে। জীবননাশের হুমকি দিয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল বাশার চোকদার বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অশ্রুর হাওলাদার, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহাদাত হোসেন ও আওয়ামী লীগ সমর্থক হিরু সরদারের নেতৃত্বে শতাধিক লোকজন হামলা চালায় এবং নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য নানা ধরনের হুমকি প্রদর্শন করে। আমরা বিষয়টি একাধিকবার নির্বাচন কমিশন ও থানায় জানিয়েছি।

প্রার্থী আবদুল মান্নান হাওলাদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আবুল বাশার চোকদারের স্ত্রী বহিরাগত নারীদের নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। তাদের এলাকা থেকে চলে যেতে বলা হয়। সে সময় তারা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং সমর্থকদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে আমার পক্ষের একজন আহত হয়েছে।

ভেদরগঞ্জ থানার ওসি এবিএম রশিদুল বাড়ি জানান, দুই পক্ষের মধ্যে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন ধরনের লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

জগন্নাথপুর

রাত পোহালেই শুরু হচ্ছে ভোট উৎসব। কে হচ্ছেন পৌর পিতা ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের অভিভাবক। এ নিয়ে পৌরবাসীর মধ্যে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। গতকাল থেকে প্রচার-প্রচারণা বন্ধ রয়েছে। প্রচারণা বন্ধ থাকলেও নিজেদের বিজয় নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রার্থীরা বিভিন্ন কৌশল চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে-নির্বাচনটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান জানান। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত জগন্নাথপুর পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ২৮৬৪২ জন। ইভিএম পদ্ধতিতে এই প্রথমবারের মতো ভোট গ্রহণ হবে। ১২টি ভোট কেন্দ্রের ৭৫টি বুথে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে। ভোটারদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিটি বুথে ইভিএম সরঞ্জাম বসানো হচ্ছে। দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। নির্বাচনের দিন পৌর এলাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।

এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৫, নারী কাউন্সিলর পদে ৯ ও পুরুষ কাউন্সিলর পদে ৩৯ জনসহ মোট ৫৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- মেয়র পদে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান পৌর মেয়র মিজানুর রশীদ ভূইয়া (নৌকা), স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সাবেক পৌর মেয়র আক্তারুজ্জামান আক্তার (চামচ), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হারুনুজ্জামান (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী আমজদ আলী শফিক (মোবাইল ফোন) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিষ্ণু চন্দ্র রায় (জগ)। এরমধ্যে মিজান-আক্তার দ্বিমুখী লড়াই হবে বলে ভোটারদের ধারণা।

সুন্দরগঞ্জ

প্রশাসনের পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা সেলের মধ্য দিয়ে আজ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতকাল বিকেলে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ৯টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছাড়া ভোটের যাবতীয় উপকরণ নিয়ে পৌঁছে যান ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তারা। সকালে ব্যালট পেপার ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে দিবে প্রশাসন। সকাল ৮টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ ফোর্স ও বিজিবিকে আইনগত সহায়তা ও নির্দেশনা প্রদানসহ মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯-এর আওতায় নির্বাচন আচারণবিধি প্রতিপালনের জন্য ১৪ জানুয়ারি হতে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯টি ভোটকেন্দ্রে ১০ জন বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্র্রেটকে নিয়োগ দিয়েছেন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোটের সংখ্যা অনুয়ায়ী ৫ জন করে পুলিশ সদস্য এবং ৭ জন করে আনছার সদস্য নিয়োজিত থাকবে।

এছাড়া পুলিশ ও র‌্যাবের ৩টি মোবাইল, ৩টি স্ট্রাইকিং টিম সার্বক্ষণিক টহল প্রদান করবেন এবং ২ প্লাটুন বিজিবি নিয়োজিত থাকবে। নির্বাচনের ভোটগ্রহণের জন্য ৯ জন প্রিজাইডিং, ৪৪ জন সহকারী প্রিজাইডিং ও ৮৮ জন পুলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভায় মোট ভোট সংখ্য ১৪ হাজার ৭১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৬ হাজার ৮৬৩ জন এবং নারী ভোটার ৭ হাজার ২০৮ জন। ৯টি ওয়ার্ডের ৯টি কেন্দ্রের ৪৪টি কক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে ৫০ জন প্রার্থী প্রতিদন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে মেয়র পদে ৭ জন, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ১১ জন এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ৩২ জন।

মেয়র পদে মো. আবদুল্লাহ আল মামুন (নৌকা), মো. আবদুুর রশিদ রেজা সরকার ডাবলু (লাঙল), দেবাশীষ কুমার সাহা (মোবাইল ফোন), আবুল খায়ের মো. মশিউর রহমান সবুজ (ধানের শীষ), মো. খয়বর হোসেন মওলা (নারিকেল গাছ), মো. আল শাহাদৎ জামান (জগ), মো. গোলাম আহসান হাবীব মাসুদ (সিংহ) মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছেন। রিটানিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আল মারুফ জানান, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় দ্বিতীয় ধাপে আজ অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ভোটের যাবতীয় উপকরণ। এবার খাগড়াছড়ি পৌরসভায় সব কেন্দ্রে (১৮টি) ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে। পৌরসভায় সব কটি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে ভোটারবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে র‌্যাব ও বিজিবির স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ চার স্তরের নিরাপত্তা বেস্টনি গড়ে তোলা হয়েছে। সে সঙ্গে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো শহর।

অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে গতকাল সকালে খাগড়াছড়ি হাইস্কুল মাঠে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো. আবদুল আজিজ নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ব্রিফিং করে অবাধ-সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। এ সময় তিনি দায়িত্ব পালনে কোন ধরনের গাফিলতি সহ্য করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন। তিনি আরও বলেন, ভোট হবে উৎসবমুখর পরিবেশে। যারা বিভিন্ন অঘটন ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটিয়ে কান্নার রোল বইয়ে দিতে চায়, শান্তিপূর্ণ খাগড়াছড়িতে এটা সম্ভব হবে না।

খাগড়াছড়ি পৌরসভায় ভোটার এবার ৩৭ হাজার ৮৭ জন। তারমধ্যে পুরুষ ভোটার ২০ হাজার ৩৫১ জন ও নারী ভোটার ১৬ হাজার ৭শ‘ ৩৬ জন। খাগড়াছড়ি পৌরসভায় মেয়র পদে চার, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪০ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে মেয়র পদে চার প্রার্থী হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী, বিএনপির ইব্রাহিম খলিল, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র মো. রফিকুল আলম ও গত পৌরসভা নির্বাচনে মাত্র ৯৫ ভোট পাওয়া জাতীয় পার্টির এবারের প্রার্থী ফিরোজ আহমেদ। তার নেই কোন প্রচারণা। এমনকি কোন পোস্টার কিংবা মাইকিং চোখে পড়েনি।

নওগাঁর পত্নীতলা

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৫ জনকে আটক করে থানা পুলিশ। আটক বিএনপির নেতাকর্মীদের দেখতে গিয়ে আটক হলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খাজা নজিবুল্ল্যাহ চৌধুরী। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে তিনি থানা চত্বরে আটক হন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে নজিপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড হরিরামপুর মল্লায় অস্থায়ী নৌকা প্রতীকের দুটি নির্বাচনী ক্যাম্প পোড়ানোর অভিযোগ উঠে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ঘটনায় নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী রেজাউল কবীর চৌধুরীর ভাই শরিফুল চৌধুরী বাদী হয়ে রাতেই থানায় মামলা করেন। মামলায় খাজা নজিবুল্ল্যাহ চৌধুরীসহ ৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

আটককৃতরা হলেন- পত্নীতলা থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও শিহাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নওশাদ আলী, পৌর যুবদলের ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল কাদের, পৌর বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও নজিপুর বাসস্ট্যান্ড বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এজেড মিজান এবং পত্নীতলা ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য খোকন হোসেনসহ ৫ জন।

পতœীলা থানার ওসি শামসুল আলম শাহ বলেন, নৌকা প্রতীকের অস্থায়ী নির্বাচনী ক্যাম্প পোড়ানোর অভিযোগে খাজা নজিবুল্ল্যাহ চৌধুরীকে ১ নম্বর আসামি করে থানায় মামলা হয়। মামলার পর রাত ২টার দিকে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে আটক করা হয়। গতকাল আদালতের মাধ্যমে তাদের নওগাঁ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বগুড়া

দ্বিতীয় ধাপে পৌরসভা নির্বাচনে বগুড়ার ৩টি পৌরসভা নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ৩২ জন প্রিজাইটিং অফিসার, ২২৪ জন সহকারী প্রিজাইটিং অফিসার, ৪৪৮ জন পোলিং অফিসার ও ৭০৪ জন ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব, আনসার বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে ১ জন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। অন্যদিকে প্রতিটি উপজেলায় ৩ প্লাটুন করে বিজিবি দায়িত্ব পালন করবেন। আজ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু হবে।

শেরপুর পৌরসভায় ৪ জন মেয়র, ১০ সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ১৬ জন কাউন্সিলসহ মোট ২৭ জন, সারিয়াকান্দি পৌরসভায় ৪ জন মেয়র, ১১ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ৩১ জন কাউন্সিলরসহ মোট ৪৪ জন প্রার্থী এবং সান্তাহার পৌরসভায় ৩ জন মেয়র, ১০ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও ২৪ কাউন্সিলরসহ মোট ৩৭ জন প্রার্থীসহ ৩ পৌর সভায় মোট ১১ জন মেয়র, ৩১ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ৯১ জন কাউন্সিলরসহ মোট ১৩৩ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

শেরপুর পৌরসভায় নির্বাচনের জন্য ১১টি ভোটকেন্দ্রের ৮২টি ভোট কক্ষে মোট ২৩ হাজার ৭৫৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সারিয়াকান্দি পৌরসভায় ৯টি ভোটকেন্দ্রে ৫০টি ভোট কক্ষে ১৪ হাজার ১৫৮ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সান্তাহার পৌরসভায় ১২টি ভোটকেন্দ্রে ৯২টি ভোট কক্ষে ২৫ হাজার ৬৬৯ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

image
আরও খবর

শনিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২১ , ২ মাঘ ১৪২৭, ২ জমাদিউস সানি ১৪৪২

পৌর নির্বাচন দ্বিতীয় ধাপ

সহিংসতার মধ্যে আজ ভোট

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা বেড়ে গেছে। প্রচার-প্রচারণা আর উত্তাপ কোন কোন জায়গায় সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে পৌরভোটের আগেই বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী-সমর্থকদের সংর্ঘষের ঘটনায় কাউন্সিলর প্রার্থীসহ দ্ইুজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। একে-অপরের ওপর হামলা, প্রতিপক্ষের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনাও ঘাটেছে। হামলা ও সহিংসতার এসব ঘটনা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যেই বেশি।

দ্বিতীয় ধাপে দেশের ৬০টি পৌরসভায় দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে এবং নির্দলীয়ভাবে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচন আজ। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এসব পৌরসভায় টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এরমধ্যে ২৮টি পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এবং ৩২টি পৌরসভায় ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার ঝিনাইদহের শৈলকুপায় পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক কাউন্সিলর প্রার্থী এবং অন্য একজন আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন। প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়েছেন বিশ থেকে পঁচিশজন। গত বুধবার রাতে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী শওকত হোসেনের ভাই আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত হোসেন বল্টু দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হওয়ার ৫ ঘণ্টার মাথায় একই ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর হোসেন বাবুর মরদেহ নদী হতে উদ্ধার করা হয়। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এ দুটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই মনে করেন, একটি খুনের জের ধরে অন্য খুনের ঘটনাটি ঘটেছে।

এদিকে নরসিংদীর মনোহরদী এলাকায় পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এতটাই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে, কোথাও কোথাও পুলিশকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হচ্ছে। বুধবার রাতে তিন কাউন্সিলর প্রার্থী, সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। এ সময় সংঘর্ষে বেশ কয়েকজনের আহত হওয়ার তথ্য জানা গেছে।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বুধবার রাতে তালতলায় আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দফায়-দফায় সংঘর্ষ, গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় সেখানকার ভোটাররা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

এদিকে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় গত বুধবার রাতে শেরপুর পৌরসভা এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল করার সময় শহরের কিছু দোকানপাট ও যানবাহন ভাঙচুর করে। এতে শহরে উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে নারায়ণগঞ্জের তারাবোতে ও গাজীপুরের শ্রীপুরেও পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আর বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যেই এ ধরনের সহিংসতা বেশি ঘটছে।

এদিকে অনেক পৌর এলাকায় বিএনপি মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের প্রতিপক্ষের হুমকি ও হামলার কারণে নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে যেসব পৌরসভায় ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী সক্রিয়, সেখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

প্রথম ধাপে গত ২৮ ডিসেম্বর ২৩টি পৌরসভার ভোটে আওয়ামী লীগ ১৮টি, বিএনপি ২টি এবং স্বতন্ত্র ৩ জন মেয়র পদে জয়লাভ করেন। ইভিএমে ভোটের ওই নির্বাচনে গড়ে ৬৫ শতাংশ ভোট পড়ে। তবে দ্বিতীয় ধাপে সহিংসতার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে নির্বাচনী আমেজের বদলে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তাই এ ধাপে গড় ভোটের হার কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেছেন, ‘দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে সরকার।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘অতীতের তুলনায় এবারের পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা কম ঘটছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সংঘাত সব সময় হয়ে এসেছে। তবে কোন সহিংসতা কাম্য নয়’। দ্বিতীয় ধাপের এই নির্বাচনে আটটি রাজনৈতিক দল তাদের নিজস্ব প্রতীক নিয়ে অংশ নিচ্ছে। তবে ভোটের আগেই সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, পাবনার ভাঙ্গুরা, পিরোজপুরের পিরোজপুর সদর এবং নারায়ণগঞ্জের তারাবো পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী থাকায় এ চারজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। এছাড়া সাতজন সাধারণ কাউন্সিলরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।

ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম-সচিব ও পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান জানান, দ্বিতীয় ধাপের জন্য ইসি প্রথমে ৬১টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করলেও নীলফামারীর সৈয়দপুরের প্রতিদ্বন্দ্বী একজন মেয়র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে সেখানে ভোট স্থগিত করা হয়েছে।

দ্বিতীয় ধাপে প্রার্থী ও ভোটার পরিসংখ্যান

ইসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে পৌরসভায় মোট মেয়র প্রার্থী ২২১ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৩২০ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ৭৪৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৬১টি পৌরসভায় মোট ভোটার ২২ লাখ ৪০ হাজার ২২৬ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১১ লাখ ৮ হাজার ৪৩১ জন এবং নারী ১১ লাখ ৩১ হাজার ৮৩১ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৮০টি এবং ভোটকক্ষ ৬ হাজার ৫০৮টি।

ইসির প্রস্তুতি সম্পন্ন

ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম-সচিব ও পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান জানান, দ্বিতীয় ধাপের জন্য ইসি প্রথমে ৬১টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করলেও নীলফামারীর সৈয়দপুরের প্রতিদ্বন্দ্বী একজন মেয়র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে সেখানে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। তিনি জানান, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্র ছাড়াও নির্বাচনী এলাকাসমূহে বিজিবি, পুলিশ, আনসার মোতায়েন করা হচ্ছে। এছাড়া মোবাইল টিম এলাকায় টহল দেবে এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন থাকবে। নির্বাচনী এলাকাসমূহে যানবাহন চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

আজ যেসব পৌরসভায় ভোট

ইসি জানায়, দ্বিতীয় ধাপে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ (ব্যালট), সিরাজগঞ্জের কাজীপুর (ইভিএম), বেলকুচি (ব্যালট), উল্লাপাড়া (ব্যালট), সদর (ব্যালট) ও রায়গঞ্জ (ব্যালট), নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ (ব্যালট), কুষ্টিয়া সদর (ব্যালট), কুমারখালী (ইভিএম), ভেড়ামারা (ব্যালট) ও মিরপুর (ব্যালট), মৌলভীবাজারের কুলাউড়া (ব্যালট) ও কমলগঞ্জ (ব্যালট), নারায়ণগঞ্জের তারাবো (ইভিএম), শরীয়তপুর সদর (ইভিএম), কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী (ব্যালট), গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ (ব্যালট) ও সদর (ব্যালট), দিনাজপুর সদর (ব্যালট), বিরামপুর (ব্যালট) ও বীরগঞ্জ (ইভিএম), নওগাঁর নজিপুর (ইভিএম), পাবনার ভাঙ্গুড়া (ব্যালট), ফরিদপুর (ইভিএম), সাথিয়া (ব্যালট), ঈশ্বরদী (ব্যালট) ও সুজানগর (ব্যালট), রাজশাহীর আড়ানী (ইভিএম), ভবানীগঞ্জ (ব্যালট) ও কাকনহাট (ইভিএম), সুনামগঞ্জ সদর (ব্যালট), ছাতক (ব্যালট) ও জগন্নাথপুর (ইভিএম), হবিগঞ্জের মাধবপুর (ব্যালট) ও নবীগঞ্জ (ব্যালট), ফরিদপুরের বোয়ালমারী (ব্যালট), ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া (ইভিএম) ও মুক্তাগাছা (ব্যালট), মাগুরা সদর (ইভিএম), ঢাকার সাভার (ইভিএম), নাটোরের নলডাঙ্গা (ইভিএম), গুরুদাসপুর (ব্যালট) ও গোপালপুর (ব্যালট), বগুড়ার শেরপুর (ব্যালট), সারিয়াকান্দি (ইভিএম) ও সান্তাহার (ইভিএম), পিরোজপুর সদর (ইভিএম), নেত্রকোনার কেন্দয়া (ইভিএম), মেহেরপুরের গাংনী (ইভিএম), ঝিনাইদহের শৈলকুপা (ইভিএম), পার্বত্য খাগড়াছড়ি সদর (ইভিএম), বান্দরবান জেলার লামা (ব্যালট), টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী (ইভিএম), কুমিল্লার চান্দিনা (ইভিএম), ফেনীর দাগনভূঞা (ইভিএম), কিশোরগঞ্জ সদর (ব্যালট) ও কুলিয়ারচর (ইভিএম), নরসিংদীর মনোহরদী (ইভিএম), নোয়াখালীর বসুরহাট (ইভিএম) এবং বাগেরহাটের মোংলা (ইভিএম) পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হবে।

উল্লেখ্য, দেশের মোট ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে মেয়াদ শেষ হওয়া পৌরসভাগুলোতে নির্বাচন হচ্ছে। তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভায় ৩০ জানুয়ারি এবং চতুর্থ ধাপে ৫৬টি পৌরসভায় ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোট হবে।

রাজশাহী জেলা বার্তা পরিবেশক জানায়, রাজশাহীর বাঘা আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে গত বুধবার রাতে। এ ঘটনার সময় আড়ানী বাজারের প্রায় ৩০টি দোকানে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এতে প্রায় ১ কোটি টাকার ক্ষতি হয় ওই বাজারের ব্যবসায়ীদের। এখনও আতঙ্কে দোকানপাট খুলছে না। এলাকায় মানুষজন কম বের হচ্ছে। সংঘর্ষের পর গতকাল দিনভর ওই ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে দোকানপাট খুলতে পারেননি। এতে করে সব ব্যবসায়ী ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। বিশেষ করে করোনা সংকট কাটিয়ে ওঠে যখন লাভের আসায় ব্যবসা জেগে উঠছে সেই সময় ভোট দ্বন্দ্বে ভাঙচুর, দোকানপাটে হামলা, মারপিট-এর ঘটনায় এলাকার ব্যবসায়ীদের ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।

এদিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদের পথসভায় বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র মুক্তার আলীসহ তার লোকজন হামলা চালিয়ে শতাধিক দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় আড়ানী পৌর বাজারের প্রায় সব দোকান বন্ধ রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার (১৪ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে আড়ানী পৌর বাজারের তালতলা মোড়ে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা চলছে। তবে এই ঘটনায় মুক্তার আলীকে প্রধান আসামি করে ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে ৫০০/৬০০ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে আড়ানী পৌর এলাকার ৪ নম্বর নুরনগর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান (৪৫) ও তার ভাগনে আরিফ হোসেন (৩০)-এর ওপর হামলা হয়। রাত ১০টার দিকে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নুরনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তাদের রাতেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের অভিযোগ, বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র মুক্তার আলীর সমর্থকরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হামলাকারীরা আড়ানী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন। হামলার শিকার বজলুর রহমান অন্য এক কাউন্সিলর প্রার্থীকে সমর্থন করেন। এ বিষয় বাঘা থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, হামলার শিকার ব্যক্তিরা ও হামলাকারীরা আপন চাচাত ভাই। ঘটনা জানার পর তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার আড়ানী পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদ গণসংযোগ শেষে আড়ানী বাজারের তালতলায় পথসভা করছিল। এ সময় বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র মুক্তার আলী ও তার সমর্থকরা ১৫/২০ জন হামলা চালায়। পরে তারা মসজিদের মাইক ব্যবহার করে লোকজনকে ডেকে মুক্তার আলীসহ তার দল নিয়ে নৌকার প্রার্থীর দুটি অফিস ভাঙচুর, ৫টি মোটরসাইকেল, শতাধিক দোকান ভাঙচুর করে লুটপাট করে নিয়ে যায়। দফায় দফায় গুলি ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায়।

বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রচারণায় হামলা প্রার্থীর স্ত্রীসহ আহত ১০

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল বাশার চোকদারের সমর্থকদের প্রচারণায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী মান্নান হাওলাদারের সমর্থকদের হামলার অভিযোগ। এ ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর স্ত্রী আফরিন মিতুসহ আহত হয়েছেন ১০ জন। এছাড়া আহত হয়েছেন হান্নান মুন্সী, ফয়সাল সরদার, শামীম চোকদার, নাসিমা আক্তার, পাখি আক্তার, রিজিয়া আক্তার, সুলতানা আক্তার, নাসরিন আক্তার ও মোহাম্মদ আলী শিকদার এবং আইএনবি’র প্রতিনিধি আবু রায়হান অর্ণব।

হান্নান মুন্সী ও ফয়সাল সরদারকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের ভেদরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

আগামী ৩০ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ১০ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের পরপরই প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নামে প্রার্থীরা। মেয়র পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ভেদরগঞ্জ উপজেলার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান হাওলাদার। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ভেদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আবুল বাশার এবং বিএনপি প্রার্থী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বিএম মুস্তাফিজ।

বিদ্রোহী প্রার্থীর স্ত্রী আহত আফরিন মিতু জানান, ৭নং ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। এ সময় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর সর্মথকরা তাদের ওই ওয়ার্ড থেকে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়। তারা প্রচারণা চালালে হামলা এবং লাঞ্ছিত করা হয়। তার গহনা ছিনিয়ে নেয় এবং তার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করা হয়েছে। জীবননাশের হুমকি দিয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল বাশার চোকদার বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অশ্রুর হাওলাদার, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহাদাত হোসেন ও আওয়ামী লীগ সমর্থক হিরু সরদারের নেতৃত্বে শতাধিক লোকজন হামলা চালায় এবং নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য নানা ধরনের হুমকি প্রদর্শন করে। আমরা বিষয়টি একাধিকবার নির্বাচন কমিশন ও থানায় জানিয়েছি।

প্রার্থী আবদুল মান্নান হাওলাদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আবুল বাশার চোকদারের স্ত্রী বহিরাগত নারীদের নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। তাদের এলাকা থেকে চলে যেতে বলা হয়। সে সময় তারা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং সমর্থকদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে আমার পক্ষের একজন আহত হয়েছে।

ভেদরগঞ্জ থানার ওসি এবিএম রশিদুল বাড়ি জানান, দুই পক্ষের মধ্যে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন ধরনের লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

জগন্নাথপুর

রাত পোহালেই শুরু হচ্ছে ভোট উৎসব। কে হচ্ছেন পৌর পিতা ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের অভিভাবক। এ নিয়ে পৌরবাসীর মধ্যে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। গতকাল থেকে প্রচার-প্রচারণা বন্ধ রয়েছে। প্রচারণা বন্ধ থাকলেও নিজেদের বিজয় নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রার্থীরা বিভিন্ন কৌশল চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে-নির্বাচনটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান জানান। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত জগন্নাথপুর পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ২৮৬৪২ জন। ইভিএম পদ্ধতিতে এই প্রথমবারের মতো ভোট গ্রহণ হবে। ১২টি ভোট কেন্দ্রের ৭৫টি বুথে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে। ভোটারদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিটি বুথে ইভিএম সরঞ্জাম বসানো হচ্ছে। দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। নির্বাচনের দিন পৌর এলাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।

এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৫, নারী কাউন্সিলর পদে ৯ ও পুরুষ কাউন্সিলর পদে ৩৯ জনসহ মোট ৫৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- মেয়র পদে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান পৌর মেয়র মিজানুর রশীদ ভূইয়া (নৌকা), স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সাবেক পৌর মেয়র আক্তারুজ্জামান আক্তার (চামচ), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হারুনুজ্জামান (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী আমজদ আলী শফিক (মোবাইল ফোন) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিষ্ণু চন্দ্র রায় (জগ)। এরমধ্যে মিজান-আক্তার দ্বিমুখী লড়াই হবে বলে ভোটারদের ধারণা।

সুন্দরগঞ্জ

প্রশাসনের পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা সেলের মধ্য দিয়ে আজ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতকাল বিকেলে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ৯টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছাড়া ভোটের যাবতীয় উপকরণ নিয়ে পৌঁছে যান ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তারা। সকালে ব্যালট পেপার ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে দিবে প্রশাসন। সকাল ৮টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ ফোর্স ও বিজিবিকে আইনগত সহায়তা ও নির্দেশনা প্রদানসহ মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯-এর আওতায় নির্বাচন আচারণবিধি প্রতিপালনের জন্য ১৪ জানুয়ারি হতে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯টি ভোটকেন্দ্রে ১০ জন বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্র্রেটকে নিয়োগ দিয়েছেন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোটের সংখ্যা অনুয়ায়ী ৫ জন করে পুলিশ সদস্য এবং ৭ জন করে আনছার সদস্য নিয়োজিত থাকবে।

এছাড়া পুলিশ ও র‌্যাবের ৩টি মোবাইল, ৩টি স্ট্রাইকিং টিম সার্বক্ষণিক টহল প্রদান করবেন এবং ২ প্লাটুন বিজিবি নিয়োজিত থাকবে। নির্বাচনের ভোটগ্রহণের জন্য ৯ জন প্রিজাইডিং, ৪৪ জন সহকারী প্রিজাইডিং ও ৮৮ জন পুলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভায় মোট ভোট সংখ্য ১৪ হাজার ৭১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৬ হাজার ৮৬৩ জন এবং নারী ভোটার ৭ হাজার ২০৮ জন। ৯টি ওয়ার্ডের ৯টি কেন্দ্রের ৪৪টি কক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে ৫০ জন প্রার্থী প্রতিদন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে মেয়র পদে ৭ জন, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ১১ জন এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ৩২ জন।

মেয়র পদে মো. আবদুল্লাহ আল মামুন (নৌকা), মো. আবদুুর রশিদ রেজা সরকার ডাবলু (লাঙল), দেবাশীষ কুমার সাহা (মোবাইল ফোন), আবুল খায়ের মো. মশিউর রহমান সবুজ (ধানের শীষ), মো. খয়বর হোসেন মওলা (নারিকেল গাছ), মো. আল শাহাদৎ জামান (জগ), মো. গোলাম আহসান হাবীব মাসুদ (সিংহ) মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছেন। রিটানিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আল মারুফ জানান, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় দ্বিতীয় ধাপে আজ অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ভোটের যাবতীয় উপকরণ। এবার খাগড়াছড়ি পৌরসভায় সব কেন্দ্রে (১৮টি) ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে। পৌরসভায় সব কটি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে ভোটারবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে র‌্যাব ও বিজিবির স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ চার স্তরের নিরাপত্তা বেস্টনি গড়ে তোলা হয়েছে। সে সঙ্গে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো শহর।

অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে গতকাল সকালে খাগড়াছড়ি হাইস্কুল মাঠে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো. আবদুল আজিজ নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ব্রিফিং করে অবাধ-সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। এ সময় তিনি দায়িত্ব পালনে কোন ধরনের গাফিলতি সহ্য করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন। তিনি আরও বলেন, ভোট হবে উৎসবমুখর পরিবেশে। যারা বিভিন্ন অঘটন ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটিয়ে কান্নার রোল বইয়ে দিতে চায়, শান্তিপূর্ণ খাগড়াছড়িতে এটা সম্ভব হবে না।

খাগড়াছড়ি পৌরসভায় ভোটার এবার ৩৭ হাজার ৮৭ জন। তারমধ্যে পুরুষ ভোটার ২০ হাজার ৩৫১ জন ও নারী ভোটার ১৬ হাজার ৭শ‘ ৩৬ জন। খাগড়াছড়ি পৌরসভায় মেয়র পদে চার, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪০ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে মেয়র পদে চার প্রার্থী হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী, বিএনপির ইব্রাহিম খলিল, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র মো. রফিকুল আলম ও গত পৌরসভা নির্বাচনে মাত্র ৯৫ ভোট পাওয়া জাতীয় পার্টির এবারের প্রার্থী ফিরোজ আহমেদ। তার নেই কোন প্রচারণা। এমনকি কোন পোস্টার কিংবা মাইকিং চোখে পড়েনি।

নওগাঁর পত্নীতলা

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৫ জনকে আটক করে থানা পুলিশ। আটক বিএনপির নেতাকর্মীদের দেখতে গিয়ে আটক হলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খাজা নজিবুল্ল্যাহ চৌধুরী। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে তিনি থানা চত্বরে আটক হন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে নজিপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড হরিরামপুর মল্লায় অস্থায়ী নৌকা প্রতীকের দুটি নির্বাচনী ক্যাম্প পোড়ানোর অভিযোগ উঠে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ঘটনায় নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী রেজাউল কবীর চৌধুরীর ভাই শরিফুল চৌধুরী বাদী হয়ে রাতেই থানায় মামলা করেন। মামলায় খাজা নজিবুল্ল্যাহ চৌধুরীসহ ৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

আটককৃতরা হলেন- পত্নীতলা থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও শিহাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নওশাদ আলী, পৌর যুবদলের ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল কাদের, পৌর বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও নজিপুর বাসস্ট্যান্ড বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এজেড মিজান এবং পত্নীতলা ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য খোকন হোসেনসহ ৫ জন।

পতœীলা থানার ওসি শামসুল আলম শাহ বলেন, নৌকা প্রতীকের অস্থায়ী নির্বাচনী ক্যাম্প পোড়ানোর অভিযোগে খাজা নজিবুল্ল্যাহ চৌধুরীকে ১ নম্বর আসামি করে থানায় মামলা হয়। মামলার পর রাত ২টার দিকে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে আটক করা হয়। গতকাল আদালতের মাধ্যমে তাদের নওগাঁ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বগুড়া

দ্বিতীয় ধাপে পৌরসভা নির্বাচনে বগুড়ার ৩টি পৌরসভা নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ৩২ জন প্রিজাইটিং অফিসার, ২২৪ জন সহকারী প্রিজাইটিং অফিসার, ৪৪৮ জন পোলিং অফিসার ও ৭০৪ জন ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব, আনসার বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে ১ জন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। অন্যদিকে প্রতিটি উপজেলায় ৩ প্লাটুন করে বিজিবি দায়িত্ব পালন করবেন। আজ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু হবে।

শেরপুর পৌরসভায় ৪ জন মেয়র, ১০ সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ১৬ জন কাউন্সিলসহ মোট ২৭ জন, সারিয়াকান্দি পৌরসভায় ৪ জন মেয়র, ১১ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ৩১ জন কাউন্সিলরসহ মোট ৪৪ জন প্রার্থী এবং সান্তাহার পৌরসভায় ৩ জন মেয়র, ১০ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও ২৪ কাউন্সিলরসহ মোট ৩৭ জন প্রার্থীসহ ৩ পৌর সভায় মোট ১১ জন মেয়র, ৩১ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ৯১ জন কাউন্সিলরসহ মোট ১৩৩ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

শেরপুর পৌরসভায় নির্বাচনের জন্য ১১টি ভোটকেন্দ্রের ৮২টি ভোট কক্ষে মোট ২৩ হাজার ৭৫৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সারিয়াকান্দি পৌরসভায় ৯টি ভোটকেন্দ্রে ৫০টি ভোট কক্ষে ১৪ হাজার ১৫৮ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সান্তাহার পৌরসভায় ১২টি ভোটকেন্দ্রে ৯২টি ভোট কক্ষে ২৫ হাজার ৬৬৯ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।