করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে আমদানি খাত

করোনাভাইরাস প্রদুর্ভাবের পর আমদানি রপ্তানিতে ভাটা পড়ে। এপ্রিল-মে মাসে রপ্তানি তলানিতে ঠেকে। একই সঙ্গে আমদানিও কমে উল্লেখ্যযোগ্য হারে। এরপর কয়েক মাস আমদানি কমতেই থাকে। তবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে আমদানি খাত। আমদানি বৃদ্ধি শুরু হয় গত নভেম্বর মাসে। সেই মাসে প্রায় ৪৮১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। আর এটিই হচ্ছে করোনা শুরু পর সবচেয়ে বড় আমদানি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমদানি বৃদ্ধির অর্থ হলো দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে এবং অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছরের নভেম্বরে দেশে ৪৮১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে। আমদানির এই অঙ্ক আগের বছরের নভেম্বরের তুলনায় ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালের নভেম্বরে দেশে ৪৩৯ কোটি ২৪ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। ২০২০ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৫৩৩ কোটি ৪১ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ। পরের দুই মাস ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আমদানি হয় যথাক্রমে ৪৭২ কোটি ৩৭ লাখ ডলার ও ৪২৭ কোটি ৭২ লাখ ডলারের পণ্য। এরপরই লাগে করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কা। সেই ধাক্কায় এপ্রিলে আমদানি ব্যয় ২৮৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলারে নেমে আসে, যা ছিল বহুবছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। মে ও জুন মাসে যথাক্রমে ৩৫৩ কোটি ৩৪ লাখ ও ৪৮০ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৪২২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়। অগাস্টে হয় ৩৮০ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে আমদানি খাতে ব্যয় হয় যথাক্রমে ৪৬৫ কোটি ২৫ লাখ এবং ৪৩৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। নভেম্বরে তা ৪৮১ কোটি ছাড়িয়ে যায়।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনার পর আমদানি রপ্তানি দুই খাতেই ধস নেমেছিল। এরপর রপ্তানি খাত কয়েক মাস আগেই উঠে দাঁড়িয়েছে। এরপর আদমানি খাতও ভালো হচ্ছে। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো। কারণ আমদানি বাড়ছে এর অর্থ হলো দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে। আর বিনিয়োগ হলে অর্থনীতি চাঙ্গা থাকে। যখন আদমানি হয় তখন এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য খাতগুলোও চাঙ্গা হয়। অর্থাৎ এই খাতটি ভালো হলে অনেক খাতের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ৫৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০১৮-১৯) চেয়ে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম। এদিকে আমদানি বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চায়নও (রিজার্ভ) খানিকটা কমেছে। গত বুধবার দিন শেষে রিজার্ভ ছিল ৪২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। গত ৩০ ডিসেম্বর অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। ৭ জানুয়ারি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর তা ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

তবে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ রেমিট্যান্স বেড়েই চলেছে। ধারণা করা হচ্ছিল, করোনার প্রথম দিকে যে হারে রেমিট্যান্স আসছিল তেমন গতি কয়েক মাস পর আর থাকবে না। তবে এমন প্রভাব পড়েনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর এই ছয় মাসে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসে ২০৫ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ১৫৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার। মহামারীর মধ্যেই চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দুই দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। রেমিট্যান্সের গতি সচল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ নতুন উচ্চতায় পৌঁছার কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়া আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার অন্যতম মাইলফলক। নতুন একটি বছরের শুরুতে অবশ্যই এটি অত্যন্ত সুখকর ঘটনা।

রবিবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২১ , ৩ মাঘ ১৪২৭, ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪২

করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে আমদানি খাত

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

করোনাভাইরাস প্রদুর্ভাবের পর আমদানি রপ্তানিতে ভাটা পড়ে। এপ্রিল-মে মাসে রপ্তানি তলানিতে ঠেকে। একই সঙ্গে আমদানিও কমে উল্লেখ্যযোগ্য হারে। এরপর কয়েক মাস আমদানি কমতেই থাকে। তবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে আমদানি খাত। আমদানি বৃদ্ধি শুরু হয় গত নভেম্বর মাসে। সেই মাসে প্রায় ৪৮১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। আর এটিই হচ্ছে করোনা শুরু পর সবচেয়ে বড় আমদানি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমদানি বৃদ্ধির অর্থ হলো দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে এবং অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছরের নভেম্বরে দেশে ৪৮১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে। আমদানির এই অঙ্ক আগের বছরের নভেম্বরের তুলনায় ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালের নভেম্বরে দেশে ৪৩৯ কোটি ২৪ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। ২০২০ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৫৩৩ কোটি ৪১ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ। পরের দুই মাস ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আমদানি হয় যথাক্রমে ৪৭২ কোটি ৩৭ লাখ ডলার ও ৪২৭ কোটি ৭২ লাখ ডলারের পণ্য। এরপরই লাগে করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কা। সেই ধাক্কায় এপ্রিলে আমদানি ব্যয় ২৮৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলারে নেমে আসে, যা ছিল বহুবছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। মে ও জুন মাসে যথাক্রমে ৩৫৩ কোটি ৩৪ লাখ ও ৪৮০ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৪২২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়। অগাস্টে হয় ৩৮০ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে আমদানি খাতে ব্যয় হয় যথাক্রমে ৪৬৫ কোটি ২৫ লাখ এবং ৪৩৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। নভেম্বরে তা ৪৮১ কোটি ছাড়িয়ে যায়।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনার পর আমদানি রপ্তানি দুই খাতেই ধস নেমেছিল। এরপর রপ্তানি খাত কয়েক মাস আগেই উঠে দাঁড়িয়েছে। এরপর আদমানি খাতও ভালো হচ্ছে। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো। কারণ আমদানি বাড়ছে এর অর্থ হলো দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে। আর বিনিয়োগ হলে অর্থনীতি চাঙ্গা থাকে। যখন আদমানি হয় তখন এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য খাতগুলোও চাঙ্গা হয়। অর্থাৎ এই খাতটি ভালো হলে অনেক খাতের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ৫৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০১৮-১৯) চেয়ে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম। এদিকে আমদানি বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চায়নও (রিজার্ভ) খানিকটা কমেছে। গত বুধবার দিন শেষে রিজার্ভ ছিল ৪২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। গত ৩০ ডিসেম্বর অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। ৭ জানুয়ারি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর তা ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

তবে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ রেমিট্যান্স বেড়েই চলেছে। ধারণা করা হচ্ছিল, করোনার প্রথম দিকে যে হারে রেমিট্যান্স আসছিল তেমন গতি কয়েক মাস পর আর থাকবে না। তবে এমন প্রভাব পড়েনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর এই ছয় মাসে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসে ২০৫ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ১৫৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার। মহামারীর মধ্যেই চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দুই দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। রেমিট্যান্সের গতি সচল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ নতুন উচ্চতায় পৌঁছার কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়া আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার অন্যতম মাইলফলক। নতুন একটি বছরের শুরুতে অবশ্যই এটি অত্যন্ত সুখকর ঘটনা।