ফ্রান্স-তুরস্ক সম্পর্কে নতুন মোড় এরদোয়ানকে চিঠি ম্যাক্রোঁর

পুরনো বিষযগুলোকে ভুলে গিয়ে তুরস্ক ও ফ্রান্স নতুন করে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যক্রোঁর মধ্যকার ব্যক্তিগত সম্পর্ক মেরামতের উদ্যোগও পরিলক্ষিত হয়েছে। এরইমধ্যে দুই নেতার চিঠি চালাচালি হয়েছে। নিজের লেখা চিঠিতে তুর্কি প্রেসিডেন্টকে ‘প্রিয় তাইয়েপ’ বলে সম্বোধন করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। আল-জাজিরা

ইসলাম অবমাননাসহ নানা বিষয়ে গত বছরই এরদোগানের আক্রমণের নিশানায় পরিণত হয়েছিলেন ম্যাক্রোঁ। ফরাসি প্রেসিডেন্টকে মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষারও পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। তবে দুই নেতার সাম্প্রতিক চিঠি চালাচালিকে উভয় দেশের উত্তেজনায় বরফ গলার প্রমাণ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোকে জানান, নতুন বছর উপলক্ষে ফরাসি প্রেসিডেন্টকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন এরদোগান। এতে গত বছর ফ্রান্সে সংঘটিত একাধিক হামলার ঘটনায় সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। ওই চিঠির জবাবে এ সপ্তাহেই একটি ‘অত্যন্ত ইতিবাচক’ চিঠি পাঠিয়েছেন ম্যাক্রোঁ। তুর্কি প্রেসিডেন্টকে ‘প্রিয় তাইয়েপ’ সম্বোধন করে লেখা ওই চিঠিতে বৈঠকে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। কাভুসোগলু বলেন, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ইউরোপের জন্য তুরস্কের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। নিকট ভবিষ্যতে তিনি আমাদের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি ইতিবাচক সম্পর্কে গড়ে তোলার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।

তুর্কি কর্মকর্তারা জানান, চিঠিতে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, সিরিয়া ও লিবিয়ার মতো আঞ্চলিক ইস্যু এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব বিনিময়ে পারস্পরিক সমঝোতার মতো বিষয়গুলোর প্রতি ইঙ্গিত ফরাসি প্রেসিডেন্ট। ফরাসি প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে বিস্তারিত জানানো না হলেও চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। প্যারিস বলছে, তারা এখন আঙ্কারার স্পষ্ট জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে। এমন সময়ে এ চিঠি চালাচালির ঘটনা ঘটলো যখন ভূমধ্যসাগরে সাইপ্রাসের উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান তৎপরতার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার মুখে রয়েছেন তুর্কি কর্মকর্তারা। তুরস্কের সামরিক পৃষ্ঠপোষকতায় গত বছর কারাবাখ যুদ্ধে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের সাফল্য পায় আজারবাইজান। বহু বছর পর নিজ দেশের ভূখ- কারাবাখ পুনরুদ্ধারে সফল হয় আজেরি বাহিনী। কারাবাখ যুদ্ধে আর্মেনিয়ার পক্ষ নিয়েছিল ফ্রান্স। তবে শেষ পর্যন্ত আজেরি ফৌজের জয় স্বভাবতই প্যারিসের জন্য সুখকর ছিল না।

লিবিয়াতেও বিদ্রোহী গোষ্ঠী হাফতার বাহিনীকে সমর্থন দিয়ে আসছে ফ্রান্স ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে সেখানেও তুরস্কের সমর্থন নিয়ে অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে দেশটির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জাতীয় ঐকমত্যের সরকার।

ফ্রান্সে মহানবী (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের ঘটনায় তুরস্ক ও ফ্রান্সের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা নতুন রূপ নেয়। ফরাসি প্রেসিডেন্ট মহানবী (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিলে তার তীব্র সমালোচনা করেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। এরদোগান বলেন, ইসলামের প্রতি এমন মানসিকতার জন্য ম্যাক্রোঁর মানসিক চিকিৎসা দরকার। সব মিলিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুই দেশের সম্পর্কে উত্তাপ বিরাজ করছে। এমন বাস্তবতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুর্কি বিরোধী যে কোনও প্রস্তাবে সোচ্চার ভূমিকা নেয় ফ্রান্স। এখন এ চিঠি চালাচালির পর দুই দেশের সম্পর্ক কতটা সামনে অগ্রসর হয় সেটাই দেখার বিষয়।

রবিবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২১ , ৩ মাঘ ১৪২৭, ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ফ্রান্স-তুরস্ক সম্পর্কে নতুন মোড় এরদোয়ানকে চিঠি ম্যাক্রোঁর

image

পুরনো বিষযগুলোকে ভুলে গিয়ে তুরস্ক ও ফ্রান্স নতুন করে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যক্রোঁর মধ্যকার ব্যক্তিগত সম্পর্ক মেরামতের উদ্যোগও পরিলক্ষিত হয়েছে। এরইমধ্যে দুই নেতার চিঠি চালাচালি হয়েছে। নিজের লেখা চিঠিতে তুর্কি প্রেসিডেন্টকে ‘প্রিয় তাইয়েপ’ বলে সম্বোধন করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। আল-জাজিরা

ইসলাম অবমাননাসহ নানা বিষয়ে গত বছরই এরদোগানের আক্রমণের নিশানায় পরিণত হয়েছিলেন ম্যাক্রোঁ। ফরাসি প্রেসিডেন্টকে মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষারও পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। তবে দুই নেতার সাম্প্রতিক চিঠি চালাচালিকে উভয় দেশের উত্তেজনায় বরফ গলার প্রমাণ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোকে জানান, নতুন বছর উপলক্ষে ফরাসি প্রেসিডেন্টকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন এরদোগান। এতে গত বছর ফ্রান্সে সংঘটিত একাধিক হামলার ঘটনায় সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। ওই চিঠির জবাবে এ সপ্তাহেই একটি ‘অত্যন্ত ইতিবাচক’ চিঠি পাঠিয়েছেন ম্যাক্রোঁ। তুর্কি প্রেসিডেন্টকে ‘প্রিয় তাইয়েপ’ সম্বোধন করে লেখা ওই চিঠিতে বৈঠকে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। কাভুসোগলু বলেন, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ইউরোপের জন্য তুরস্কের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। নিকট ভবিষ্যতে তিনি আমাদের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি ইতিবাচক সম্পর্কে গড়ে তোলার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।

তুর্কি কর্মকর্তারা জানান, চিঠিতে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, সিরিয়া ও লিবিয়ার মতো আঞ্চলিক ইস্যু এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব বিনিময়ে পারস্পরিক সমঝোতার মতো বিষয়গুলোর প্রতি ইঙ্গিত ফরাসি প্রেসিডেন্ট। ফরাসি প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে বিস্তারিত জানানো না হলেও চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। প্যারিস বলছে, তারা এখন আঙ্কারার স্পষ্ট জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে। এমন সময়ে এ চিঠি চালাচালির ঘটনা ঘটলো যখন ভূমধ্যসাগরে সাইপ্রাসের উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান তৎপরতার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার মুখে রয়েছেন তুর্কি কর্মকর্তারা। তুরস্কের সামরিক পৃষ্ঠপোষকতায় গত বছর কারাবাখ যুদ্ধে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের সাফল্য পায় আজারবাইজান। বহু বছর পর নিজ দেশের ভূখ- কারাবাখ পুনরুদ্ধারে সফল হয় আজেরি বাহিনী। কারাবাখ যুদ্ধে আর্মেনিয়ার পক্ষ নিয়েছিল ফ্রান্স। তবে শেষ পর্যন্ত আজেরি ফৌজের জয় স্বভাবতই প্যারিসের জন্য সুখকর ছিল না।

লিবিয়াতেও বিদ্রোহী গোষ্ঠী হাফতার বাহিনীকে সমর্থন দিয়ে আসছে ফ্রান্স ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে সেখানেও তুরস্কের সমর্থন নিয়ে অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে দেশটির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জাতীয় ঐকমত্যের সরকার।

ফ্রান্সে মহানবী (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের ঘটনায় তুরস্ক ও ফ্রান্সের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা নতুন রূপ নেয়। ফরাসি প্রেসিডেন্ট মহানবী (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিলে তার তীব্র সমালোচনা করেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। এরদোগান বলেন, ইসলামের প্রতি এমন মানসিকতার জন্য ম্যাক্রোঁর মানসিক চিকিৎসা দরকার। সব মিলিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুই দেশের সম্পর্কে উত্তাপ বিরাজ করছে। এমন বাস্তবতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুর্কি বিরোধী যে কোনও প্রস্তাবে সোচ্চার ভূমিকা নেয় ফ্রান্স। এখন এ চিঠি চালাচালির পর দুই দেশের সম্পর্ক কতটা সামনে অগ্রসর হয় সেটাই দেখার বিষয়।