পুঁজিবাজারে কারসাজির দিন শেষ

পুঁজিবাজারে কারসাজি করার দিন শেষ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, পুঁজিবাজারে কারসাজি করে এখন আর কেউ পার পাবে না। কেউ খেলতে চাইলে আমরা তাকে তখনই ধরে ফেলব। যারা সিরিয়াল ট্রেডিং করে বা চাতুরী করতে চায়, আমরা এখন তাদের ফোন করে কমিশনে ডেকে নিয়ে আসি। তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এই কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখার জন্য যা যা দরকার তাই করছি।

গতকাল ‘ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েটস- আইডিইএ’ আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম এসব কথা বলেন। এই আলোচনার মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে কীভাবে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের উৎস হিসেবে গড়ে তোলা যায়।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারে কারসাজি করে এখন আর কেউ পার পাবে না। পুঁজিবাজারে কোন লোক যদি দুষ্টুমি করতে আসে, তার কাছে কত টাকা থাকতে পারে? শত কোটি, হাজার কোটি? আমরা তার ১০ গুণ ক্ষমতা দিয়ে দিচ্ছি আইসিবিকে যেন কেউ খেলতে এসে কোন সুবিধা না করতে পারে। কেউ খেলতে চাইলে আমরা তাকে ধরে ফেলব তখনই। আইসিবিকে শক্তিশালী করার জন্য আমরা পাঁচ হাজার কোটি টাকা চেয়েছি। সুতরাং বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বা ব্যাংকিং খাতের যদি বাড়তি টাকা থাকে, তাহলে এর সঠিক ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া আমরা হিসাব করে দেখেছি, মানুষকে দেয়া হয়নি এমন লভ্যাংশ এবং শেয়ার পড়ে আছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার। সেসব এতদিন বিভিন্ন জায়গায় পড়েছিল। আমরা সবগুলোকে এখন মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে আইসিবির কাছে নিয়ে আসছি। এই মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা কারসাজি থামানোর কাজ করে যাচ্ছি। প্রথম প্রথম আমরা বিষয়গুলো গণমাধ্যমে জানাতাম। তাতে দেখলাম একটু আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। আমরা এখন যারা সিরিয়াল ট্রেডিং করে বা চাতুরি করতে চায় তাদের ফোন করে কমিশনে ডেকে নিয়ে আসি। তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এই কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখার জন্য যা যা দরকার তাই করছি। এছাড়া মার্জিন ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কম সুদে ১০ হাজার কোটি টাকা চেয়েছি। সার্ভেইলেন্সে আমরা সুইডেনের এখন সবচেয়ে লেটেস্ট যে সার্ভেইলেন্সের সফটওয়্যার, সেটা ব্যবহার করছি। যে কেউ কোন কিছু করলেই আমরা সহজেই সেটা ধরে ফেলতে পারি।

আলোচনায় ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের ধসের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে এবং ২০১০ সালে যে ধস হয়েছে, সে সময় আজকের মতো পুঁজিবাজার নিয়ে সবার জ্ঞান ছিল না। ১৯৯৬ সালে মানুষ হাতে কাগজ নিয়ে মতিঝিলে শেয়ার লেনদেন করত। কিন্তু এখন এরকম নেই। এখন এগুলো সব চলে এসেছে সিসিবিএল, সিডিবিএল এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আইটি প্লাটফর্মের মধ্যে। আমাদের সার্ভেইলেন্সের সফটওয়্যার এখন অনেক শক্তিশালী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমাদের পুঁজিবাজার আরও অনেক দূরে যেতে হবে। পুঁজিবাজার ভালো করতে হলে নতুন ভালো কোম্পানি নিয়ে আসতে হবে। আর পুঁজিবাজার থেকে মুনাফা করতে হলে বিনিয়োগকারীদের ভালো কোম্পানির শেয়ার কিনতে হবে। সরকার পুঁজিবাজার নিয়ে খুব ইতিবাচক। বিএসইসি ভালো কাজ করছে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিএলসি ফিন্যান্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান। আলোচনায় অংশ নেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর, ব্যবসায়ী আজম জে চৌধুরী প্রমুখ।

রবিবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২১ , ৩ মাঘ ১৪২৭, ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪২

আইডিইএ-ভার্চুয়াল সভায় বিএসইসির চেয়ারম্যান

পুঁজিবাজারে কারসাজির দিন শেষ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

পুঁজিবাজারে কারসাজি করার দিন শেষ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, পুঁজিবাজারে কারসাজি করে এখন আর কেউ পার পাবে না। কেউ খেলতে চাইলে আমরা তাকে তখনই ধরে ফেলব। যারা সিরিয়াল ট্রেডিং করে বা চাতুরী করতে চায়, আমরা এখন তাদের ফোন করে কমিশনে ডেকে নিয়ে আসি। তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এই কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখার জন্য যা যা দরকার তাই করছি।

গতকাল ‘ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েটস- আইডিইএ’ আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম এসব কথা বলেন। এই আলোচনার মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে কীভাবে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের উৎস হিসেবে গড়ে তোলা যায়।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারে কারসাজি করে এখন আর কেউ পার পাবে না। পুঁজিবাজারে কোন লোক যদি দুষ্টুমি করতে আসে, তার কাছে কত টাকা থাকতে পারে? শত কোটি, হাজার কোটি? আমরা তার ১০ গুণ ক্ষমতা দিয়ে দিচ্ছি আইসিবিকে যেন কেউ খেলতে এসে কোন সুবিধা না করতে পারে। কেউ খেলতে চাইলে আমরা তাকে ধরে ফেলব তখনই। আইসিবিকে শক্তিশালী করার জন্য আমরা পাঁচ হাজার কোটি টাকা চেয়েছি। সুতরাং বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বা ব্যাংকিং খাতের যদি বাড়তি টাকা থাকে, তাহলে এর সঠিক ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া আমরা হিসাব করে দেখেছি, মানুষকে দেয়া হয়নি এমন লভ্যাংশ এবং শেয়ার পড়ে আছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার। সেসব এতদিন বিভিন্ন জায়গায় পড়েছিল। আমরা সবগুলোকে এখন মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে আইসিবির কাছে নিয়ে আসছি। এই মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা কারসাজি থামানোর কাজ করে যাচ্ছি। প্রথম প্রথম আমরা বিষয়গুলো গণমাধ্যমে জানাতাম। তাতে দেখলাম একটু আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। আমরা এখন যারা সিরিয়াল ট্রেডিং করে বা চাতুরি করতে চায় তাদের ফোন করে কমিশনে ডেকে নিয়ে আসি। তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এই কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখার জন্য যা যা দরকার তাই করছি। এছাড়া মার্জিন ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কম সুদে ১০ হাজার কোটি টাকা চেয়েছি। সার্ভেইলেন্সে আমরা সুইডেনের এখন সবচেয়ে লেটেস্ট যে সার্ভেইলেন্সের সফটওয়্যার, সেটা ব্যবহার করছি। যে কেউ কোন কিছু করলেই আমরা সহজেই সেটা ধরে ফেলতে পারি।

আলোচনায় ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের ধসের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে এবং ২০১০ সালে যে ধস হয়েছে, সে সময় আজকের মতো পুঁজিবাজার নিয়ে সবার জ্ঞান ছিল না। ১৯৯৬ সালে মানুষ হাতে কাগজ নিয়ে মতিঝিলে শেয়ার লেনদেন করত। কিন্তু এখন এরকম নেই। এখন এগুলো সব চলে এসেছে সিসিবিএল, সিডিবিএল এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আইটি প্লাটফর্মের মধ্যে। আমাদের সার্ভেইলেন্সের সফটওয়্যার এখন অনেক শক্তিশালী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমাদের পুঁজিবাজার আরও অনেক দূরে যেতে হবে। পুঁজিবাজার ভালো করতে হলে নতুন ভালো কোম্পানি নিয়ে আসতে হবে। আর পুঁজিবাজার থেকে মুনাফা করতে হলে বিনিয়োগকারীদের ভালো কোম্পানির শেয়ার কিনতে হবে। সরকার পুঁজিবাজার নিয়ে খুব ইতিবাচক। বিএসইসি ভালো কাজ করছে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিএলসি ফিন্যান্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান। আলোচনায় অংশ নেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর, ব্যবসায়ী আজম জে চৌধুরী প্রমুখ।