৭৫ কি.মি. দীর্ঘ রাবনাবাদ চ্যানেলের রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং শুরু

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেছেন, পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করতে সক্ষম হয়েছি। রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিংও নিজস্ব অর্থায়নে করার সাহসিকতা ও সক্ষমতা রয়েছে। আর এই সাহসের নাম শেখ হসিনা। তার স্বপ্নের পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিংয়ের কাজ উদ্বোধন করা হলো। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বৈশি^ক করোনা মহামারী মোকাবিলা করে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বিকেলে পায়রা বন্দরের ‘রাবনাবাদ চ্যানেলের (ইনার আউটার চ্যানেল) জরুরি মেইনটেইনেন্স ড্রেজিং’ প্রকল্পের শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, পায়রা বন্দর সরকারের একটি জাতীয় অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প। এই বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ইতোমধ্যে এই বন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এছাড়া বন্দরের সার্ভিস জেটি নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। সংযোগ সড়ক ও আন্ধারমানিক নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ কাজ অতি শীঘ্রই শুরু হবে। অদূর ভবিষ্যতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে রাবনাবাদ চ্যানেলের নব্যতা বৃদ্ধি করা হবে। যার ফলে ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট বিশিষ্ট বাণিজ্যিক জাহাজ সরাসরি বন্দরে ভিড়তে পারবে।

এই রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পায়রার রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা ছয় দশমিক তিন মিটার বজায় রাখতে বেলজিয়ামের ড্রেজিং কোম্পানি জানডেনুলের (ঔধহ উব ঘঁষ ) সঙ্গে ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৮ মাসব্যাপী রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ৭৫ কিমি দীর্ঘ ১০০-১২৫ মিটার প্রস্থ, ছয় দশমিক তিন মিটার নাব্যতার রাবনাবাদ চ্যানেলটির কার্য চুক্তি মূল্যের ৪০৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা পায়রা বন্দরের নিজস্ব তহবিল থেকে সংকুলানের কথা জানালেন মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং কাজের উদ্বোধনকে ঘিরে পায়রা বন্দরে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর হুমায়ুন কল্লোল, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানডেনুল কোম্পানির প্রকল্প পরিচালক ইয়াংমইনস। এ সময় বন্দরের পরিচালক, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলী আহম্মেদসহ অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

পায়রা বন্দর সূত্রে জানা গেছে, পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ড্রেজিং কোম্পানি জান ডে নুল বেলজিয়াম ১৯৫১ সাল থেকে বিশে^র বিভিন্ন বন্দরে ড্রেজিং করে ২০ মিটার পর্যন্ত গভীর চ্যানেলের নব্যতার কাজ সম্পাদন করে আসছে। এ কোম্পানির ড্রেজার বহরে সর্বাধুনিক ও পৃথিবীর সর্ববৃহৎ কাটার সাকশন ড্রেজার ও ট্রেইলিং সাকশন হপার ড্রেজার রয়েছে। এমনকি ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরের সংযোগকারী পৃথিবীর বৃহত্তম কৃত্রিম চ্যানেল সুয়েজখাল খননের একক কৃতিত্ব রয়েছে এ কোম্পানির। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকাসহ বহু বন্দরে বৃহত্তর বিভিন্ন ড্রেজিং প্রকল্প সম্পন্ন করেছে এই কোম্পানি। ১৮ মাসব্যাপী এই ড্রেজিং কার্যক্রম চলবে বলে মন্ত্রী জানান।

ফলে রাবনাবাদ ইনার ও আউটার চ্যানেলের প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০০-১২৫ মিটার প্রস্থ চ্যানেলের প্রায় নয় দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ঘনমিটার পলি অপসারণ করে কাক্সিক্ষত (ছয় দশমিক তিন মিটার) নাব্যতা বজায় রাখা হবে। এ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩৭ দশমিক ৩০ কোটি টাকা। যার মধ্যে চুক্তিমূল্য ৪০৮ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে অতি স্বল্প সময় পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক চুক্তির পরপরই মোবিলাইজেশন, সাইট প্রিপারেশন কার্য শুরু করা হয় ও হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ কাজের জন্য সার্ভে ভ্যাসেল, পন্টুন, ক্রু ভ্যাসেল প্রকল্প এলাকায় আনা হয়েছে।

রবিবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২১ , ৩ মাঘ ১৪২৭, ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪২

পায়রা বন্দরে

৭৫ কি.মি. দীর্ঘ রাবনাবাদ চ্যানেলের রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং শুরু

প্রতিনিধি, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেছেন, পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করতে সক্ষম হয়েছি। রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিংও নিজস্ব অর্থায়নে করার সাহসিকতা ও সক্ষমতা রয়েছে। আর এই সাহসের নাম শেখ হসিনা। তার স্বপ্নের পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিংয়ের কাজ উদ্বোধন করা হলো। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বৈশি^ক করোনা মহামারী মোকাবিলা করে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বিকেলে পায়রা বন্দরের ‘রাবনাবাদ চ্যানেলের (ইনার আউটার চ্যানেল) জরুরি মেইনটেইনেন্স ড্রেজিং’ প্রকল্পের শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, পায়রা বন্দর সরকারের একটি জাতীয় অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প। এই বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ইতোমধ্যে এই বন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এছাড়া বন্দরের সার্ভিস জেটি নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। সংযোগ সড়ক ও আন্ধারমানিক নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ কাজ অতি শীঘ্রই শুরু হবে। অদূর ভবিষ্যতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে রাবনাবাদ চ্যানেলের নব্যতা বৃদ্ধি করা হবে। যার ফলে ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট বিশিষ্ট বাণিজ্যিক জাহাজ সরাসরি বন্দরে ভিড়তে পারবে।

এই রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পায়রার রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা ছয় দশমিক তিন মিটার বজায় রাখতে বেলজিয়ামের ড্রেজিং কোম্পানি জানডেনুলের (ঔধহ উব ঘঁষ ) সঙ্গে ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৮ মাসব্যাপী রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ৭৫ কিমি দীর্ঘ ১০০-১২৫ মিটার প্রস্থ, ছয় দশমিক তিন মিটার নাব্যতার রাবনাবাদ চ্যানেলটির কার্য চুক্তি মূল্যের ৪০৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা পায়রা বন্দরের নিজস্ব তহবিল থেকে সংকুলানের কথা জানালেন মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং কাজের উদ্বোধনকে ঘিরে পায়রা বন্দরে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর হুমায়ুন কল্লোল, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানডেনুল কোম্পানির প্রকল্প পরিচালক ইয়াংমইনস। এ সময় বন্দরের পরিচালক, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলী আহম্মেদসহ অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

পায়রা বন্দর সূত্রে জানা গেছে, পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ড্রেজিং কোম্পানি জান ডে নুল বেলজিয়াম ১৯৫১ সাল থেকে বিশে^র বিভিন্ন বন্দরে ড্রেজিং করে ২০ মিটার পর্যন্ত গভীর চ্যানেলের নব্যতার কাজ সম্পাদন করে আসছে। এ কোম্পানির ড্রেজার বহরে সর্বাধুনিক ও পৃথিবীর সর্ববৃহৎ কাটার সাকশন ড্রেজার ও ট্রেইলিং সাকশন হপার ড্রেজার রয়েছে। এমনকি ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরের সংযোগকারী পৃথিবীর বৃহত্তম কৃত্রিম চ্যানেল সুয়েজখাল খননের একক কৃতিত্ব রয়েছে এ কোম্পানির। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকাসহ বহু বন্দরে বৃহত্তর বিভিন্ন ড্রেজিং প্রকল্প সম্পন্ন করেছে এই কোম্পানি। ১৮ মাসব্যাপী এই ড্রেজিং কার্যক্রম চলবে বলে মন্ত্রী জানান।

ফলে রাবনাবাদ ইনার ও আউটার চ্যানেলের প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০০-১২৫ মিটার প্রস্থ চ্যানেলের প্রায় নয় দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ঘনমিটার পলি অপসারণ করে কাক্সিক্ষত (ছয় দশমিক তিন মিটার) নাব্যতা বজায় রাখা হবে। এ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩৭ দশমিক ৩০ কোটি টাকা। যার মধ্যে চুক্তিমূল্য ৪০৮ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে অতি স্বল্প সময় পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক চুক্তির পরপরই মোবিলাইজেশন, সাইট প্রিপারেশন কার্য শুরু করা হয় ও হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ কাজের জন্য সার্ভে ভ্যাসেল, পন্টুন, ক্রু ভ্যাসেল প্রকল্প এলাকায় আনা হয়েছে।