সেভেন স্টার গ্রুপের চাঁদা দাবি : চক্রের ৬ সদস্য গ্রেপ্তার

ঢাকায় ব্যবসা করা কক্সবাজারের এক শীর্ষ ব্যবসায়ীর কাছে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সেভেন স্টার গ্রুপের সদস্যদের জেল থেকে ছাড়ানোর জন্য খরচ বাবদ ১ লাখ টাকা দাবি করা হয় ২০২০ সালের ১৯ আগস্ট। ওই ব্যবসায়ীকে বলা হয় টাকা না দিলে তাকে খুন করা হবে। একাধিকবার ফোন করার পর ওই ব্যবসায়ী আতঙ্কিত হয়ে বিভিন্ন সময়ে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রদান করেন টেলিফোনকারীদের। দ্বিতীয় দফায় টাকা দাবি করা হলে তিনি পুলিশকে অবগত করেন। পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের টিম অনুসন্ধান করে জানতে পারেন এ গ্রুপটি শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সেভেন স্টার গ্রুপের সদস্য নয়। টার্গেট ব্যক্তিদের টেলিফোন করে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করাই তাদের মূল কাজ। টানা অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে আটক করার পর চক্রটির কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিশ। গতকাল দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মো. ওয়ালিদ হোসেন ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।

গতকাল আটক হওয়া কথিত সেভেন স্টার গ্রুপের ৬ সদস্যকে হাজির করা হয়। এরা হলোÑ বেল্লাল খান (৩৫), রাকিব খান টিটুল (৩৯), মো. আ. হান্নান মোল্লা (৪৫), মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. সোহাগ (৩৩) এবং মো. খোরশেদ আলম (৪০)। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, একাধিক সিমকার্ড জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ব্যবসার প্রয়োজনে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় যেতে হয়। গত বছরের আগস্ট মাসে অপরিচিত নম্বর থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সেভেন স্টার গ্রুপের সদস্য পরিচয় দিয়ে ফোন দিয়ে বলা হয় বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। বড় ভাই নিজেকে জিসানের ঘনিষ্ট উল্লেখ করে দ্রুত ১ লাখ টাকা দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। বলেন, আপনি কখন কোথায় যান, কি করেন, আপনার ছেলে মেয়ে কতজন, কোথায় পড়াশুনা করে, বাসা কোথায় সব তথ্য আমাদের কাছে আছে। সেভেন স্টার গ্রুপের কয়েক সদস্যকে জেল থেকে ছাড়াতে টাকা লাগবে। টাকা না দিলে আপনার এবং আপনার পরিবারের বড় ক্ষতি হবে। প্রতিমাসে আপনাকে টাকা দিতে হবে। আতঙ্কিত হয়ে ব্যবসায়ী বিষয়টি গোপন রেখে কয়েকমাস প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা করে ৩০ হাজার টাকা দিতে থাকেন। এরপর দ্বিতীয় দফায় ব্যবসায়ীকে বলা হয় যাত্রাবাড়ি এলাকায় আমাদের একজন সদস্য থাকবে তাকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে হবে। এরপর ওই ব্যবসায়ী বিষয়টি পুলিশকে জানান। ডিএমপির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পর্যালোচনাকারী টিমের উপকমিশনার মো. শরিফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে তদন্ত শুরু হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তদন্ত করে প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয় বেল্লাল খান এবং রাকিব খানকে। তাদের দেয়া তথ্যে অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বেল্লাল খান এবং রাকিব খান প্রকাশনা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এরাই মূল বিভিন্ন প্রকাশনীতে সরকারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের ছাপানো টেলিফোন গাইড সংগ্রহ করেন। ওই টেলিফোন গাইড থেকে টার্গেট ব্যক্তির মোবাইল নম্বরসহ ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে দ্বিতীয় গ্রুপকে দেন। দ্বিতীয় গ্রুপ টেলিফোন করে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। না দিলে হত্যা, অপহরণের ভয় দেখায়। পরিবারের সদস্যদেরও ক্ষতি করার ভয় দেখায়। এতে আতঙ্কিত হয়ে যারা টাকা দিতে রাজি হয় তাদের বিকাশসহ বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্ট নম্বর দিয়ে টাকা পাঠাতে বলা হয়। তৃতীয় গ্রুপের কাজ থাকে টাকা উত্তোলন করে তা নির্ধারিত জায়গায় জমা দেয়া।

ডিবির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার জুনায়েদ আলম সরকার বলেন, বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে ডিরোক্টরি (টেলিফোন গাইড) সংগ্রহ করে টার্গেট ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীদের টেলিফোন নম্বর নেয়। এরপর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সেভের স্টার গ্রুপের সদস্য পরিচয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে অপহরণ, হত্যা এমনকি পরিবারের ক্ষতি করার ভয় দেখান। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি করে আসছে চক্রটি। চক্রটি আদৌ সেভেন স্টার গ্রুপের সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই।

ডিবি জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদকসহ বিভিন্ন আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। মূলত চক্রটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম পরিচয়ে চাঁদাবাজি করে আসছিল। ইতিপূর্বে তারা একাধিকবার গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বের হয়ে একই কাজ শুরু করে। চিকিৎসক, সরকারি দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা, ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে চক্রটি চাদাবাজি করে। এসব কাজে ব্যবহৃত মোবাইলের সিম তারা শ্রমজীবী মানুষের নামে তোলে যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ধরতে না পারে। এ চক্রের আরও সদস্যদের ধরতে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।

রবিবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২১ , ৩ মাঘ ১৪২৭, ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪২

সেভেন স্টার গ্রুপের চাঁদা দাবি : চক্রের ৬ সদস্য গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

ঢাকায় ব্যবসা করা কক্সবাজারের এক শীর্ষ ব্যবসায়ীর কাছে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সেভেন স্টার গ্রুপের সদস্যদের জেল থেকে ছাড়ানোর জন্য খরচ বাবদ ১ লাখ টাকা দাবি করা হয় ২০২০ সালের ১৯ আগস্ট। ওই ব্যবসায়ীকে বলা হয় টাকা না দিলে তাকে খুন করা হবে। একাধিকবার ফোন করার পর ওই ব্যবসায়ী আতঙ্কিত হয়ে বিভিন্ন সময়ে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রদান করেন টেলিফোনকারীদের। দ্বিতীয় দফায় টাকা দাবি করা হলে তিনি পুলিশকে অবগত করেন। পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের টিম অনুসন্ধান করে জানতে পারেন এ গ্রুপটি শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সেভেন স্টার গ্রুপের সদস্য নয়। টার্গেট ব্যক্তিদের টেলিফোন করে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করাই তাদের মূল কাজ। টানা অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে আটক করার পর চক্রটির কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিশ। গতকাল দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মো. ওয়ালিদ হোসেন ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।

গতকাল আটক হওয়া কথিত সেভেন স্টার গ্রুপের ৬ সদস্যকে হাজির করা হয়। এরা হলোÑ বেল্লাল খান (৩৫), রাকিব খান টিটুল (৩৯), মো. আ. হান্নান মোল্লা (৪৫), মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. সোহাগ (৩৩) এবং মো. খোরশেদ আলম (৪০)। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, একাধিক সিমকার্ড জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ব্যবসার প্রয়োজনে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় যেতে হয়। গত বছরের আগস্ট মাসে অপরিচিত নম্বর থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সেভেন স্টার গ্রুপের সদস্য পরিচয় দিয়ে ফোন দিয়ে বলা হয় বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। বড় ভাই নিজেকে জিসানের ঘনিষ্ট উল্লেখ করে দ্রুত ১ লাখ টাকা দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। বলেন, আপনি কখন কোথায় যান, কি করেন, আপনার ছেলে মেয়ে কতজন, কোথায় পড়াশুনা করে, বাসা কোথায় সব তথ্য আমাদের কাছে আছে। সেভেন স্টার গ্রুপের কয়েক সদস্যকে জেল থেকে ছাড়াতে টাকা লাগবে। টাকা না দিলে আপনার এবং আপনার পরিবারের বড় ক্ষতি হবে। প্রতিমাসে আপনাকে টাকা দিতে হবে। আতঙ্কিত হয়ে ব্যবসায়ী বিষয়টি গোপন রেখে কয়েকমাস প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা করে ৩০ হাজার টাকা দিতে থাকেন। এরপর দ্বিতীয় দফায় ব্যবসায়ীকে বলা হয় যাত্রাবাড়ি এলাকায় আমাদের একজন সদস্য থাকবে তাকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে হবে। এরপর ওই ব্যবসায়ী বিষয়টি পুলিশকে জানান। ডিএমপির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পর্যালোচনাকারী টিমের উপকমিশনার মো. শরিফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে তদন্ত শুরু হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তদন্ত করে প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয় বেল্লাল খান এবং রাকিব খানকে। তাদের দেয়া তথ্যে অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বেল্লাল খান এবং রাকিব খান প্রকাশনা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এরাই মূল বিভিন্ন প্রকাশনীতে সরকারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের ছাপানো টেলিফোন গাইড সংগ্রহ করেন। ওই টেলিফোন গাইড থেকে টার্গেট ব্যক্তির মোবাইল নম্বরসহ ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে দ্বিতীয় গ্রুপকে দেন। দ্বিতীয় গ্রুপ টেলিফোন করে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। না দিলে হত্যা, অপহরণের ভয় দেখায়। পরিবারের সদস্যদেরও ক্ষতি করার ভয় দেখায়। এতে আতঙ্কিত হয়ে যারা টাকা দিতে রাজি হয় তাদের বিকাশসহ বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্ট নম্বর দিয়ে টাকা পাঠাতে বলা হয়। তৃতীয় গ্রুপের কাজ থাকে টাকা উত্তোলন করে তা নির্ধারিত জায়গায় জমা দেয়া।

ডিবির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার জুনায়েদ আলম সরকার বলেন, বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে ডিরোক্টরি (টেলিফোন গাইড) সংগ্রহ করে টার্গেট ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীদের টেলিফোন নম্বর নেয়। এরপর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সেভের স্টার গ্রুপের সদস্য পরিচয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে অপহরণ, হত্যা এমনকি পরিবারের ক্ষতি করার ভয় দেখান। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি করে আসছে চক্রটি। চক্রটি আদৌ সেভেন স্টার গ্রুপের সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই।

ডিবি জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদকসহ বিভিন্ন আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। মূলত চক্রটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম পরিচয়ে চাঁদাবাজি করে আসছিল। ইতিপূর্বে তারা একাধিকবার গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বের হয়ে একই কাজ শুরু করে। চিকিৎসক, সরকারি দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা, ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে চক্রটি চাদাবাজি করে। এসব কাজে ব্যবহৃত মোবাইলের সিম তারা শ্রমজীবী মানুষের নামে তোলে যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ধরতে না পারে। এ চক্রের আরও সদস্যদের ধরতে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।