পৃথিবীর সুরক্ষায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি

অলোক আচার্য

সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রসভ্যতা বিকশিত হতে থাকে। যা ক্রমবিকাশে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে এসে উপস্থিত হয়েছে। যন্ত্রসভ্যতা বিকাশের প্রধান উপাদান হলো জ্বালানি। এখন পর্যন্ত শিল্প-কলকারখানা চালু রাখার প্রধান জ্বালানির উৎস হলো জীবাশ্ম জ্বালানি যা অনবায়নযোগ্য। জীবাশ্ম জ্বালানি যা ব্যবহারের ফলে নিঃশেষ হবেই এবং প্রকৃতিতে আর ফেরত আনা সম্ভব না। এটাই আমাদের দুশ্চিন্তার কারণ। তাছাড়া তেল, গ্যাস বা কয়লার মতো জ্বালানি কোনো দেশে অধিক বা কম পরিমাণে মজুত থাকে। যা পৃথিবীতে অশান্তির একটি কারণ হয়ে উঠতে পারে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারও বেড়েছে বহুগুণে বেশি। ফলে প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো মহাগুরুত্বপূর্ণ সম্পদ প্রায় শেষের দিকে। আমাদের দেশেও একই অবস্থা। বিদ্যুৎ উৎপাদন সহ কলকারখানার জন্য ব্যবহৃত শক্তির একটি বড় উৎস প্রাকৃতিক গ্যাস। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তাই ভবিষ্যৎ জ্বালানির চিন্তা করতেই হচ্ছে। ভবিষ্যতের পৃথিবী কোন উৎস থেকে শক্তি উৎপাদন করবে?

অনবায়ন শক্তির বিপরীতে রয়েছে নবায়নযোগ্য শক্তি। ব্যাপক হারে না হলেও নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার সারা পৃথিবীতেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে শক্তির ঘাটতি পূরণে। উৎপাদন, গাড়ি ও অন্যান্য যন্ত্র চালনা এমনকি উড়োজাহাজ, বিদ্যুৎ উৎপাদন সব ক্ষেত্রেই নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। ভবিষ্যতের জ্বালানি ঘাটতির কথা বিবেচনা করেই এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে প্রথম পছন্দ হলো সৌরশক্তি। যা থেকে মানব জাতি যুগ যুগ শক্তি উৎপাদন করতে পারবে এবং নিঃশেষ হবে না। সৌর শক্তি কাজে লাগিয়ে আমেরিকা, চীন, জাপান, জার্মানি, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার অনেক এগিয়ে। প্রতিটি দেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য শক্তি হিসেবে সৌর শক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করছে। সৌরশক্তি ছাড়াও পানি,বাতাস কাজে লাগিয়েও শক্তি উৎপাদন করা হচ্ছে এবং তা ব্যবহারও হচ্ছে। আমাদের দেশেও সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার শুরু হয়েছে এবং তার অগ্রগতি আজ বহুদূর।

বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল যেখানে সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আজ আলোকিত। চলছে ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ। আলোকিত হচ্ছে হাট-বাজার। সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করে কেবল বাড়িঘর নয় সেই সঙ্গে ছোট ছোট উৎপাদন প্রতিষ্ঠান চালনা করা সম্ভব। বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সৌর বিদ্যুৎ সম্প্রসারণে বিশ্বে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। আমাদের যা করতে হবে তা হলো বিকল্প জ্বালানির দিকে আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে যাতে তেল,গ্যাসের ওপর নির্ভরতা দ্রুতই কমে যায়। বর্তমান বিশ্বের প্রধানতম সমস্যা হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী হলো কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে পৃথিবী ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে এবং এর ফলে সমগ্র মানব জাতি আজ হুমকিতে রয়েছে। ফলে বহু বছর আগে থেকেই বিজ্ঞানীরা জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমানোর বিষয়ে বলে আসছেন। তবে গত আগষ্টে এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, পৃথিবীর অনেক দেশ জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পথে হাঁটছে। গবেষকরা বলছেন, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে বায়ুশক্তি ও সূর্যশক্তিকে কাজে লাগিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংগ্রহের মাধ্যমে বিশ্বের বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে। এর ফলে কমেছে কয়লার মতো জীবাশ্ন জ্বালানির ব্যবহার। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জ্বালানি ব্যবহারের এই পরিবর্তনে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমণের হারও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। এসব শিল্পোন্নাত দেশগুলো পৃথিবী উষ্ণায়নের জন্য অনেকটাই দায়ী। অন্য এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বছরের প্রথম ছয় মাসে ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে বায়ুকে কাজে লাগিয়ে ২১ শতাংশ এবং সৌরশক্তি থেকে ৩৩ শতাংশ জ্বালানি ব্যবহৃত হয়েছে। কার্বন নির্গমনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা জ্বালানি ব্যবহারের এই পরিবর্তনের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব।

[লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক]

sopnil.roy@gmail.com

রবিবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২১ , ৩ মাঘ ১৪২৭, ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪২

পৃথিবীর সুরক্ষায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি

অলোক আচার্য

সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রসভ্যতা বিকশিত হতে থাকে। যা ক্রমবিকাশে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে এসে উপস্থিত হয়েছে। যন্ত্রসভ্যতা বিকাশের প্রধান উপাদান হলো জ্বালানি। এখন পর্যন্ত শিল্প-কলকারখানা চালু রাখার প্রধান জ্বালানির উৎস হলো জীবাশ্ম জ্বালানি যা অনবায়নযোগ্য। জীবাশ্ম জ্বালানি যা ব্যবহারের ফলে নিঃশেষ হবেই এবং প্রকৃতিতে আর ফেরত আনা সম্ভব না। এটাই আমাদের দুশ্চিন্তার কারণ। তাছাড়া তেল, গ্যাস বা কয়লার মতো জ্বালানি কোনো দেশে অধিক বা কম পরিমাণে মজুত থাকে। যা পৃথিবীতে অশান্তির একটি কারণ হয়ে উঠতে পারে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারও বেড়েছে বহুগুণে বেশি। ফলে প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো মহাগুরুত্বপূর্ণ সম্পদ প্রায় শেষের দিকে। আমাদের দেশেও একই অবস্থা। বিদ্যুৎ উৎপাদন সহ কলকারখানার জন্য ব্যবহৃত শক্তির একটি বড় উৎস প্রাকৃতিক গ্যাস। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তাই ভবিষ্যৎ জ্বালানির চিন্তা করতেই হচ্ছে। ভবিষ্যতের পৃথিবী কোন উৎস থেকে শক্তি উৎপাদন করবে?

অনবায়ন শক্তির বিপরীতে রয়েছে নবায়নযোগ্য শক্তি। ব্যাপক হারে না হলেও নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার সারা পৃথিবীতেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে শক্তির ঘাটতি পূরণে। উৎপাদন, গাড়ি ও অন্যান্য যন্ত্র চালনা এমনকি উড়োজাহাজ, বিদ্যুৎ উৎপাদন সব ক্ষেত্রেই নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। ভবিষ্যতের জ্বালানি ঘাটতির কথা বিবেচনা করেই এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে প্রথম পছন্দ হলো সৌরশক্তি। যা থেকে মানব জাতি যুগ যুগ শক্তি উৎপাদন করতে পারবে এবং নিঃশেষ হবে না। সৌর শক্তি কাজে লাগিয়ে আমেরিকা, চীন, জাপান, জার্মানি, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার অনেক এগিয়ে। প্রতিটি দেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য শক্তি হিসেবে সৌর শক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করছে। সৌরশক্তি ছাড়াও পানি,বাতাস কাজে লাগিয়েও শক্তি উৎপাদন করা হচ্ছে এবং তা ব্যবহারও হচ্ছে। আমাদের দেশেও সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার শুরু হয়েছে এবং তার অগ্রগতি আজ বহুদূর।

বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল যেখানে সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আজ আলোকিত। চলছে ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ। আলোকিত হচ্ছে হাট-বাজার। সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করে কেবল বাড়িঘর নয় সেই সঙ্গে ছোট ছোট উৎপাদন প্রতিষ্ঠান চালনা করা সম্ভব। বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সৌর বিদ্যুৎ সম্প্রসারণে বিশ্বে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। আমাদের যা করতে হবে তা হলো বিকল্প জ্বালানির দিকে আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে যাতে তেল,গ্যাসের ওপর নির্ভরতা দ্রুতই কমে যায়। বর্তমান বিশ্বের প্রধানতম সমস্যা হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী হলো কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে পৃথিবী ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে এবং এর ফলে সমগ্র মানব জাতি আজ হুমকিতে রয়েছে। ফলে বহু বছর আগে থেকেই বিজ্ঞানীরা জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমানোর বিষয়ে বলে আসছেন। তবে গত আগষ্টে এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, পৃথিবীর অনেক দেশ জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পথে হাঁটছে। গবেষকরা বলছেন, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে বায়ুশক্তি ও সূর্যশক্তিকে কাজে লাগিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংগ্রহের মাধ্যমে বিশ্বের বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে। এর ফলে কমেছে কয়লার মতো জীবাশ্ন জ্বালানির ব্যবহার। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জ্বালানি ব্যবহারের এই পরিবর্তনে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমণের হারও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। এসব শিল্পোন্নাত দেশগুলো পৃথিবী উষ্ণায়নের জন্য অনেকটাই দায়ী। অন্য এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বছরের প্রথম ছয় মাসে ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে বায়ুকে কাজে লাগিয়ে ২১ শতাংশ এবং সৌরশক্তি থেকে ৩৩ শতাংশ জ্বালানি ব্যবহৃত হয়েছে। কার্বন নির্গমনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা জ্বালানি ব্যবহারের এই পরিবর্তনের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব।

[লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক]

sopnil.roy@gmail.com