কী ঘটল এবার পৌর নির্বাচনে

দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ৬০টি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ৪৫টি পৌরসভায় (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪টি) জয়লাভ করেছে আওয়ামী লীগ, হেরেছে ১৪টি পৌরসভায়। অর্থাৎ প্রায় ২৫ শতাংশ আসনে নৌকা প্রতীকের পরাজয় হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, এবার ভোট পড়েছে প্রায় ৬২ শতাংশ।

মেয়র পদে বিএনপি ৪টিতে, জাতীয় পার্টি ও জাসদ একটি করে পৌরসভায় জয়লাভ করেছেন। এছাড়া, স্বতন্ত্র ৮ জন প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৬ জন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এবং ২ জন বিএনপির। এদিকে কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় একটি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত থাকায় চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি।

হবিগঞ্জ জেলা নবীগঞ্জে বিজয়ী বিএনপি প্রার্থী সুষ্ঠু ভোট হয়েছে দাবি করলেও পরাজিত আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী গোলাম রসুল রাহেল চৌধুরী ভোটে কারচুপির অভিযোগ এনে রাতে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের জামাতা রাহেল চৌধুরী বলেন, একটি কেন্দ্রে ভোট ‘টেম্পারিং’ করে তাকে পরাজিত করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, এখানে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন ছিল। অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফজলুল হক সেলিম চৌধুরীর কাছে গত শনিবার অনুষ্ঠিত পৌরভোটের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সংবাদকে তিনি বলেন, ‘নবীগঞ্জ পৌরসভায় ভোট মোটামুটি সুষ্ঠু হয়েছে। কোথাও ভোটারদের বাধা দেয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। তবে একটি কেন্দ্রে ভোটের ফলাফল পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।’

দ্বিতীয় ধাপে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি বরাবরের মতো এবারও ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বলেছে, বেশিরভাগ কেন্দ্রে তাদের এজেন্ট ঢুকতে দেয়া হয়নি। যেখানে ঢুকতে পেরেছে, সেখান থেকেও এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। প্রার্থী, এজেন্ট ও সমর্থকদের মারধর করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় জর্জরিত বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের বড়িতে ভোটের আগের রাতে পুলিশ হানা দিয়েছে। ভোটে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারা হয়েছে। ইভিএমের ক্ষেত্রে মেয়র পদে ভোটারদের গোপন কক্ষে ভোট দিতে দেয়া হয়নি। বিএনপির প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।

বাস্তবে কী হয়েছে?

সংশ্লিষ্ট বেশকিছু নির্বাচনী এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে, একযুগের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির তৃণমূলে নেতা থাকলেও কর্মী সংকট বেড়েছে। মামলার কারণে তালিকাভুক্ত অনেক কর্মীই প্রকাশ্যে মাঠে নামছেন না। কেন্দ্রে নামের রেকর্ড রাখতে চেষ্টা-তদবির করে মনোনয়ন নিলেও বিএনপির অনেক প্রার্থী প্রচারণায় তেমন একটা সক্রিয় ছিলেন না। যেসব জায়গায় প্রার্থীরা সক্রিয় ছিলেন, সেখানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে, ৪টি পৌরসভায় মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থীরা জয়লাভও করেছেন। আরও দুটি পৌরসভায় জিতেছেন বিএনপির দুই বিদ্রোহী প্রার্থী। এদিকে বিএনপি মাঠে না থাকায় ‘নৌকা পেলেই পাস’ এমন ধারণায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ বেড়েছে। একটি পদের জন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা সাত থেকে আটজন কোথাও আবার এরচেয়ে বেশিও আবেদন পড়েছে। কেন্দ্র থেকে একজনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার পর বাকিদের কেউ না কেউ স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসেবে ভোটে থেকে যাচ্ছেন। ফলে তৃণমূলে বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণ করা কেন্দ্রের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিদ্রোহীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সংবাদকে বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রতিনিধি হতে স্থানীয় নেতারা আগ্রহী হতেই পারে। এতে দোষের কিছু নেই। তবে কেন্দ্র যাকে মনোনয়ন দেয়, তার পক্ষে সবার কাজ করা উচিত। যারা বিদ্রোহী তারা বিজয়ী হলেও তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

যেসব (১৪টি) পৌরসভায় হেরেছে নৌকা

বগুড়ার সান্তাহার পৌরসভায় ধানের শীষ প্রতীকে ৭ হাজার ৭৮৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন ভুট্ট। এখানে নৌকা পেয়েছে ৭ হাজার ৪০২ ভোট। শেরপুর পৌরসভায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী জানে আলম খোকা জগ প্রতীকে ৮ হাজার ৭৬৯ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের আবদুস ছাত্তার ৫ হাজার ৯৯ ভোট এবং বিএনপির স্বাধীন কুন্ডু ৩ হাজার ৩৬৩ ভোট পেয়েছেন। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌরসভায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আক্তারুজ্জামান আক্তার চামচ প্রতীকে আট হাজার ৩৫৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগ এখানে ৮ হাজার ১৮ ভোট, বিএনপি ৮১৭ ভোট পেয়েছে। দিনাজপুর পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম ধানের শীষ প্রতীকে ৪৪ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এখানে নৌকা পেয়েছে ২৪ হাজার ২২৬ ভোট।

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থী ছাবির আহমেদ চৌধুরী ৫ হাজার ৭৪২ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম রসুল চৌধুরী রাহেল (নৌকা) পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৮৫ ভোট। হবিগঞ্জের মাধবপুর পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থী হাবিবুর রহমান মানিক ৫ হাজার ৩২ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রাথী পংকজ কুমার সাহা পেয়েছেন (নারিকেল গাছ) ৪ হাজার ১৮৫ ভোট। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শ্রীধাম দাসগুপ্ত (নৌকা) পেয়েছেন ৬০৮ ভোট।

রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মুক্তার আলী নারকেল গাছ প্রতীকে ৫ হাজার ৯০৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নানা অভিযোগ, মামলা ও দল থেকে বহিষ্কারের পরও তার জয়লাভ ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের প্রতিফলন বলে মনে করেন তিনি। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহীদুজ্জামান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৪ হাজার ৩০০ ভোট। আর বিএনপির প্রার্থী তোজাম্মেল হক ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ২৭৬ ভোট। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান বকুল নারিকেলগাছ প্রতীকে ৮ হাজার ৯৬৩ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। এখানে নৌকা পেয়েছে ৭ হাজার ৮০৪ ভোট। বিদ্রোহী মনিরুজ্জামান বকুলকে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ধানের শীষ এখানে পেয়েছে ৩ হাজার ৫২ ভোট।

সিরাজগঞ্জ বেলকুচি পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাজ্জাদুল হক রেজা নারিকেল গাছ প্রতীকে ১৮ হাজার ৩৮৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাসের স্ত্রী বেগম আশানুর বিশ্বাস (নৌকা) প্রতীকে ১২ হাজার ৭৮৪ ভোট পেয়েছেন। ধানের শীষ পেয়েছে ৩ হাজার ৮২২ ভোট। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ হোসেন ফাকু নারিকেল গাছ প্রতীকে ১১ হাজার ৯৭৪ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে লাঙ্গল তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী জাতীয় পার্টির আবদুর রহমান মিয়া লাঙ্গল প্রতীকে ৯ হাজার ৩০৭ ভোট, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম হাতপাখা মার্কায় ৬ হাজার ৮৭১ ভোট, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফরহাদ হোসেন ধলু সওদাগর নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৭২৬ ভোট এবং বিএনপি প্রার্থী শহিদুল ইসলাম ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৮০৯ ভোট।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. মোশারফ হোসেন বাবুল মোবাইল প্রতীকে ৩ হাজার ৯৯৩ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ৪৭ ভোটে পরাজিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৪৬ ভোট। মো. মোশারফ হোসেন বাবুল বীরগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তাকে সভাপতির পদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

গাইবান্ধা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মতলুবর রহমান নারিকেল গাছ প্রতীকে ১২ হাজার ৩৯৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আনওয়ার-উল-সরওয়ার (রেলইঞ্জিন) পেয়েছেন ৭ হাজার ৯৭৬ ভোট। এছাড়াও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবীর (নৌকা) পেয়েছেন ৭ হাজার ৩০১ ভোট, বিএনপি থেকে মো. শহিদুজ্জামান শহীদ (ধানের শীষ) ৯১৮ ভোট, মো. শামছুল আলম (মোবাইল ফোন) ২ হাজার ৬৬৯ ভোট, মো. আহসানুল করিম (চামুচ) ১ হাজার ৯৭৪ ভোট, মো. মির্জা হাসান (জগ) ১৭০ ভোট এবং ফারুক আহমেদ (ক্যারাম বোর্ড) পেয়েছেন ১ হাজার ৬৯২ ভোট। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ পৌরসভায় জাতীয় পার্টির আবদুর রশিদ রেজা সরকার লাঙ্গল প্রতীকে ২ হাজার ৭০৪ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী বর্তমান মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুন পেয়েছেন ২ হাজার ৫৫৮ ভোট।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী আনোয়ারুল কবির টুটুল মশাল প্রতীকে ৮ হাজার ৩২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের শামিমুল ইসলাম ছানা পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৩৪ ভোট। এছাড়া, বিএনপির প্রার্থী শামীম রেজা (ধানের শীষ) ৮৪১ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সোলায়মান চিশতি পেয়েছেন ১১৭ ভোট। এ উপজেলাতেই জাসদ সভাপতি ও কুষ্টিয়া-২ আসনের (ভেড়ামারা-মিরপুর) সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফের বাড়ি।

ভোটের হার নিয়ে দ্বিমত আ’লীগ-বিএনপির

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্যানুযায়ী দ্বিতীয় ধাপে ৬০টি পৌরসভা নির্বাচনে গড়ে ভোট পড়েছে ৬১ দশমিক ৯২ শতাংশ। এসব পৌরসভায় মোট ভোটার ছিলেন ২০ লাখ ৯১ হাজার ৬৮১ জন। এর মধ্যে ১২ লাখ ৯৫ হাজার ২৩৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সবচেয়ে বেশি ৮৫ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ ভোট পড়েছে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ পৌরসভায়। এখানে ১১ হাজার ৮৬৭ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ১০ হাজার ৯২টি। ভোট হয়েছে ব্যালট পেপারে। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে ঢাকার সাভার পৌরসভায়। এখনে ১ লাখ ৮৮ হাজার ভোটের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৬৩ হাজার ১৭৯ জন। ভোটের হার ৩৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এই পৌরসভায় ভোট নেয়া হয়েছে ইভিএমে।

স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে ভোটের হার বেশি হওয়ার বিষয়েও প্রধান দুই দল দু’ধরনের মন্তব্য করেছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, জনগণ ইভিএমে আগ্রহী হচ্ছে। নির্বাচনের উপরও তাদের আস্থা ফিরে এসেছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য শুভ লক্ষণ। অন্যদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, এ নির্বাচন কমিশনের উপর ভোটারদের আস্থা নেই। তাই তারা ভোটকেন্দ্রে যায় না। ইভিএমে ভোট গণনার নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে হওয়ায় ভোট বেশি দেখানো হচ্ছে। ব্যালট বাক্স ভারা হচ্ছে জাল ভোট দিয়ে।

সোমবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২১ , ৪ মাঘ ১৪২৭, ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

কী ঘটল এবার পৌর নির্বাচনে

ফয়েজ আহমেদ তুষার

দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ৬০টি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ৪৫টি পৌরসভায় (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪টি) জয়লাভ করেছে আওয়ামী লীগ, হেরেছে ১৪টি পৌরসভায়। অর্থাৎ প্রায় ২৫ শতাংশ আসনে নৌকা প্রতীকের পরাজয় হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, এবার ভোট পড়েছে প্রায় ৬২ শতাংশ।

মেয়র পদে বিএনপি ৪টিতে, জাতীয় পার্টি ও জাসদ একটি করে পৌরসভায় জয়লাভ করেছেন। এছাড়া, স্বতন্ত্র ৮ জন প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৬ জন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এবং ২ জন বিএনপির। এদিকে কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় একটি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত থাকায় চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি।

হবিগঞ্জ জেলা নবীগঞ্জে বিজয়ী বিএনপি প্রার্থী সুষ্ঠু ভোট হয়েছে দাবি করলেও পরাজিত আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী গোলাম রসুল রাহেল চৌধুরী ভোটে কারচুপির অভিযোগ এনে রাতে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের জামাতা রাহেল চৌধুরী বলেন, একটি কেন্দ্রে ভোট ‘টেম্পারিং’ করে তাকে পরাজিত করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, এখানে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন ছিল। অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফজলুল হক সেলিম চৌধুরীর কাছে গত শনিবার অনুষ্ঠিত পৌরভোটের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সংবাদকে তিনি বলেন, ‘নবীগঞ্জ পৌরসভায় ভোট মোটামুটি সুষ্ঠু হয়েছে। কোথাও ভোটারদের বাধা দেয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। তবে একটি কেন্দ্রে ভোটের ফলাফল পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।’

দ্বিতীয় ধাপে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি বরাবরের মতো এবারও ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বলেছে, বেশিরভাগ কেন্দ্রে তাদের এজেন্ট ঢুকতে দেয়া হয়নি। যেখানে ঢুকতে পেরেছে, সেখান থেকেও এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। প্রার্থী, এজেন্ট ও সমর্থকদের মারধর করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় জর্জরিত বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের বড়িতে ভোটের আগের রাতে পুলিশ হানা দিয়েছে। ভোটে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারা হয়েছে। ইভিএমের ক্ষেত্রে মেয়র পদে ভোটারদের গোপন কক্ষে ভোট দিতে দেয়া হয়নি। বিএনপির প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।

বাস্তবে কী হয়েছে?

সংশ্লিষ্ট বেশকিছু নির্বাচনী এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে, একযুগের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির তৃণমূলে নেতা থাকলেও কর্মী সংকট বেড়েছে। মামলার কারণে তালিকাভুক্ত অনেক কর্মীই প্রকাশ্যে মাঠে নামছেন না। কেন্দ্রে নামের রেকর্ড রাখতে চেষ্টা-তদবির করে মনোনয়ন নিলেও বিএনপির অনেক প্রার্থী প্রচারণায় তেমন একটা সক্রিয় ছিলেন না। যেসব জায়গায় প্রার্থীরা সক্রিয় ছিলেন, সেখানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে, ৪টি পৌরসভায় মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থীরা জয়লাভও করেছেন। আরও দুটি পৌরসভায় জিতেছেন বিএনপির দুই বিদ্রোহী প্রার্থী। এদিকে বিএনপি মাঠে না থাকায় ‘নৌকা পেলেই পাস’ এমন ধারণায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ বেড়েছে। একটি পদের জন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা সাত থেকে আটজন কোথাও আবার এরচেয়ে বেশিও আবেদন পড়েছে। কেন্দ্র থেকে একজনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার পর বাকিদের কেউ না কেউ স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসেবে ভোটে থেকে যাচ্ছেন। ফলে তৃণমূলে বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণ করা কেন্দ্রের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিদ্রোহীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সংবাদকে বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রতিনিধি হতে স্থানীয় নেতারা আগ্রহী হতেই পারে। এতে দোষের কিছু নেই। তবে কেন্দ্র যাকে মনোনয়ন দেয়, তার পক্ষে সবার কাজ করা উচিত। যারা বিদ্রোহী তারা বিজয়ী হলেও তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

যেসব (১৪টি) পৌরসভায় হেরেছে নৌকা

বগুড়ার সান্তাহার পৌরসভায় ধানের শীষ প্রতীকে ৭ হাজার ৭৮৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন ভুট্ট। এখানে নৌকা পেয়েছে ৭ হাজার ৪০২ ভোট। শেরপুর পৌরসভায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী জানে আলম খোকা জগ প্রতীকে ৮ হাজার ৭৬৯ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের আবদুস ছাত্তার ৫ হাজার ৯৯ ভোট এবং বিএনপির স্বাধীন কুন্ডু ৩ হাজার ৩৬৩ ভোট পেয়েছেন। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌরসভায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আক্তারুজ্জামান আক্তার চামচ প্রতীকে আট হাজার ৩৫৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগ এখানে ৮ হাজার ১৮ ভোট, বিএনপি ৮১৭ ভোট পেয়েছে। দিনাজপুর পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম ধানের শীষ প্রতীকে ৪৪ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এখানে নৌকা পেয়েছে ২৪ হাজার ২২৬ ভোট।

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থী ছাবির আহমেদ চৌধুরী ৫ হাজার ৭৪২ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম রসুল চৌধুরী রাহেল (নৌকা) পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৮৫ ভোট। হবিগঞ্জের মাধবপুর পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থী হাবিবুর রহমান মানিক ৫ হাজার ৩২ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রাথী পংকজ কুমার সাহা পেয়েছেন (নারিকেল গাছ) ৪ হাজার ১৮৫ ভোট। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শ্রীধাম দাসগুপ্ত (নৌকা) পেয়েছেন ৬০৮ ভোট।

রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মুক্তার আলী নারকেল গাছ প্রতীকে ৫ হাজার ৯০৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নানা অভিযোগ, মামলা ও দল থেকে বহিষ্কারের পরও তার জয়লাভ ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের প্রতিফলন বলে মনে করেন তিনি। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহীদুজ্জামান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৪ হাজার ৩০০ ভোট। আর বিএনপির প্রার্থী তোজাম্মেল হক ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ২৭৬ ভোট। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান বকুল নারিকেলগাছ প্রতীকে ৮ হাজার ৯৬৩ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। এখানে নৌকা পেয়েছে ৭ হাজার ৮০৪ ভোট। বিদ্রোহী মনিরুজ্জামান বকুলকে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ধানের শীষ এখানে পেয়েছে ৩ হাজার ৫২ ভোট।

সিরাজগঞ্জ বেলকুচি পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাজ্জাদুল হক রেজা নারিকেল গাছ প্রতীকে ১৮ হাজার ৩৮৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাসের স্ত্রী বেগম আশানুর বিশ্বাস (নৌকা) প্রতীকে ১২ হাজার ৭৮৪ ভোট পেয়েছেন। ধানের শীষ পেয়েছে ৩ হাজার ৮২২ ভোট। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ হোসেন ফাকু নারিকেল গাছ প্রতীকে ১১ হাজার ৯৭৪ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে লাঙ্গল তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী জাতীয় পার্টির আবদুর রহমান মিয়া লাঙ্গল প্রতীকে ৯ হাজার ৩০৭ ভোট, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম হাতপাখা মার্কায় ৬ হাজার ৮৭১ ভোট, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফরহাদ হোসেন ধলু সওদাগর নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৭২৬ ভোট এবং বিএনপি প্রার্থী শহিদুল ইসলাম ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৮০৯ ভোট।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. মোশারফ হোসেন বাবুল মোবাইল প্রতীকে ৩ হাজার ৯৯৩ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ৪৭ ভোটে পরাজিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৪৬ ভোট। মো. মোশারফ হোসেন বাবুল বীরগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তাকে সভাপতির পদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

গাইবান্ধা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মতলুবর রহমান নারিকেল গাছ প্রতীকে ১২ হাজার ৩৯৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আনওয়ার-উল-সরওয়ার (রেলইঞ্জিন) পেয়েছেন ৭ হাজার ৯৭৬ ভোট। এছাড়াও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবীর (নৌকা) পেয়েছেন ৭ হাজার ৩০১ ভোট, বিএনপি থেকে মো. শহিদুজ্জামান শহীদ (ধানের শীষ) ৯১৮ ভোট, মো. শামছুল আলম (মোবাইল ফোন) ২ হাজার ৬৬৯ ভোট, মো. আহসানুল করিম (চামুচ) ১ হাজার ৯৭৪ ভোট, মো. মির্জা হাসান (জগ) ১৭০ ভোট এবং ফারুক আহমেদ (ক্যারাম বোর্ড) পেয়েছেন ১ হাজার ৬৯২ ভোট। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ পৌরসভায় জাতীয় পার্টির আবদুর রশিদ রেজা সরকার লাঙ্গল প্রতীকে ২ হাজার ৭০৪ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী বর্তমান মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুন পেয়েছেন ২ হাজার ৫৫৮ ভোট।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী আনোয়ারুল কবির টুটুল মশাল প্রতীকে ৮ হাজার ৩২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের শামিমুল ইসলাম ছানা পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৩৪ ভোট। এছাড়া, বিএনপির প্রার্থী শামীম রেজা (ধানের শীষ) ৮৪১ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সোলায়মান চিশতি পেয়েছেন ১১৭ ভোট। এ উপজেলাতেই জাসদ সভাপতি ও কুষ্টিয়া-২ আসনের (ভেড়ামারা-মিরপুর) সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফের বাড়ি।

ভোটের হার নিয়ে দ্বিমত আ’লীগ-বিএনপির

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্যানুযায়ী দ্বিতীয় ধাপে ৬০টি পৌরসভা নির্বাচনে গড়ে ভোট পড়েছে ৬১ দশমিক ৯২ শতাংশ। এসব পৌরসভায় মোট ভোটার ছিলেন ২০ লাখ ৯১ হাজার ৬৮১ জন। এর মধ্যে ১২ লাখ ৯৫ হাজার ২৩৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সবচেয়ে বেশি ৮৫ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ ভোট পড়েছে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ পৌরসভায়। এখানে ১১ হাজার ৮৬৭ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ১০ হাজার ৯২টি। ভোট হয়েছে ব্যালট পেপারে। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে ঢাকার সাভার পৌরসভায়। এখনে ১ লাখ ৮৮ হাজার ভোটের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৬৩ হাজার ১৭৯ জন। ভোটের হার ৩৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এই পৌরসভায় ভোট নেয়া হয়েছে ইভিএমে।

স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে ভোটের হার বেশি হওয়ার বিষয়েও প্রধান দুই দল দু’ধরনের মন্তব্য করেছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, জনগণ ইভিএমে আগ্রহী হচ্ছে। নির্বাচনের উপরও তাদের আস্থা ফিরে এসেছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য শুভ লক্ষণ। অন্যদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, এ নির্বাচন কমিশনের উপর ভোটারদের আস্থা নেই। তাই তারা ভোটকেন্দ্রে যায় না। ইভিএমে ভোট গণনার নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে হওয়ায় ভোট বেশি দেখানো হচ্ছে। ব্যালট বাক্স ভারা হচ্ছে জাল ভোট দিয়ে।