প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা ভোটার

প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে অসংখ্য রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগে কথিত পরিচয়দানকারী দালালচক্রের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। উপজেলা নির্বাচন অফিস ও একাধিক সংস্থা থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। অভিযুক্তদের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু জাফর ছালেহ।

তথ্য সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য জেলা বান্দরবান আ’লীগের তরুণ সদস্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তছলিম ইকবালসহ সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। রোহিঙ্গাদের ভোটার করার বিষয় নিয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

তথ্য বিবরণীতে জানা গেছে, তছলিম ইকবাল নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালে রোহিঙ্গা নারী হুমাইরা বেগমকে মো. খলিলের মেয়ে দেখিয়ে বিছামারা নাইক্ষ্যংছড়িতে ভোটার করেছে। ওই রোহিঙ্গা নারীকে ভোটার করার ক্ষেত্রে শনাক্তকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী শাহজাহান।

সূত্র জানায়, তছলিম ইকবাল নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালে মো. হোসাইনকে মো. করম আলীর ছেলে দেখিয়ে দক্ষিণ বিছামারা নাইক্ষ্যংছড়িতে ভোটার করেছে। ওই রোহিঙ্গাকে ভোটার করার ক্ষেত্রে শনাক্তকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ওই রোহিঙ্গার ছেলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী বির্তকিত শাহজাহান।

সূত্র আরও জানায়, শাহজাহানের বোন খোলাচি দৌছড়ি ইউনিয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মায়মুনা আক্তার নিজের পিতাকে গোপন করে অন্যজনের খতিয়ান প্রদর্শন করে সরকারি চাকরিতে যোগদান করে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য সহকারী বির্তকিত কৌসুলী শাহজাহানও তার বোনের পথ অবলম্বন করে সরকারি চাকরি নিয়েছে। তবে অভিযোগের ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী শাহজাহান কোন মন্তব্য করতে পারেনি।

শুধু তাই নয়, তছলিম ইকবাল নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালে রোহিঙ্গা নারী মরজিনা আক্তারকে মৃত নুরুল কবিরের মেয়ে দেখিয়ে উত্তর বিছামারা নাইক্ষ্যংছড়িতে ভোটার করেছে। ওই রোহিঙ্গা নারীকে ভোটার করার ক্ষেত্রে শনাক্তকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে তছলিম ইকবাল। মরজিনা আক্তারের পিতাকে মৃত দেখিয়ে তছলিম ইকবাল ওই রোহিঙ্গা নারীকে ভোটার করেছে। বর্তমানে মরজিনার আসল পিতা আলীকদমে রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তছলিম ইকবাল জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ১০ জন রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তাদের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে তদন্ত চলছে। তিনি আরও জানান, জানামতে আমি কোন রোহিঙ্গাকে ভোটার হতে দেইনি। এটি আমার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু জাফর ছালেহ জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে রোহিঙ্গারা যাদের সহযোগিতায় ভোটার হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। কমিশন পরবর্তীতে যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেভাবেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও জানান, এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

এদিকে ৩ জানুয়ারি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তির অভিযোগে কথিত মা-বাবা ও দালালসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু জাফর ছালেহ।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি আলমগীর হোসেন জানান, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হওয়া ও রোহিঙ্গাদের সহযোগিতার অভিযোগে কথিত মা-বাবা পরিচয়দানকারী ব্যক্তি এবং দালাল চক্রসহ ৩৩ জনের নামে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু জাফর ছালেহ বাদী হয়ে ৪২০/৩৪ ধারায় পেনাল কোড তৎসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ২৪ ধারা তৎসহ ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯-এর ১৮ ধারা তৎসহ জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০-এর ১৪ ধারায় গত ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর মামলা দায়ের করেন।

মামলার পরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত ৬ আসামিকে গ্রেপ্তার করে, অন্যদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত আছে। ওই গ্রেপ্তারকৃত ৬ জনকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।

প্রসঙ্গত, বান্দরবানের লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় অসংখ্য রোহিঙ্গা ভোটার হয়ে আসছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি অভিযুক্ত প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে সময়মতো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে তারা আগামীতে আরও উৎসাহী হয়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় স্থান করে দিবে। পাশাপাশি জড়িত প্রভাবশালীদের আইনের আওতায় আনার জন্য জোর দাবি জানিয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ির সচেতন মহল।

সোমবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২১ , ৪ মাঘ ১৪২৭, ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

নাইক্ষ্যংছড়ি

প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা ভোটার

জসিম সিদ্দিকী, নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে ফিরে

প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে অসংখ্য রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগে কথিত পরিচয়দানকারী দালালচক্রের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। উপজেলা নির্বাচন অফিস ও একাধিক সংস্থা থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। অভিযুক্তদের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু জাফর ছালেহ।

তথ্য সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য জেলা বান্দরবান আ’লীগের তরুণ সদস্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তছলিম ইকবালসহ সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। রোহিঙ্গাদের ভোটার করার বিষয় নিয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

তথ্য বিবরণীতে জানা গেছে, তছলিম ইকবাল নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালে রোহিঙ্গা নারী হুমাইরা বেগমকে মো. খলিলের মেয়ে দেখিয়ে বিছামারা নাইক্ষ্যংছড়িতে ভোটার করেছে। ওই রোহিঙ্গা নারীকে ভোটার করার ক্ষেত্রে শনাক্তকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী শাহজাহান।

সূত্র জানায়, তছলিম ইকবাল নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালে মো. হোসাইনকে মো. করম আলীর ছেলে দেখিয়ে দক্ষিণ বিছামারা নাইক্ষ্যংছড়িতে ভোটার করেছে। ওই রোহিঙ্গাকে ভোটার করার ক্ষেত্রে শনাক্তকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ওই রোহিঙ্গার ছেলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী বির্তকিত শাহজাহান।

সূত্র আরও জানায়, শাহজাহানের বোন খোলাচি দৌছড়ি ইউনিয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মায়মুনা আক্তার নিজের পিতাকে গোপন করে অন্যজনের খতিয়ান প্রদর্শন করে সরকারি চাকরিতে যোগদান করে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য সহকারী বির্তকিত কৌসুলী শাহজাহানও তার বোনের পথ অবলম্বন করে সরকারি চাকরি নিয়েছে। তবে অভিযোগের ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী শাহজাহান কোন মন্তব্য করতে পারেনি।

শুধু তাই নয়, তছলিম ইকবাল নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালে রোহিঙ্গা নারী মরজিনা আক্তারকে মৃত নুরুল কবিরের মেয়ে দেখিয়ে উত্তর বিছামারা নাইক্ষ্যংছড়িতে ভোটার করেছে। ওই রোহিঙ্গা নারীকে ভোটার করার ক্ষেত্রে শনাক্তকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে তছলিম ইকবাল। মরজিনা আক্তারের পিতাকে মৃত দেখিয়ে তছলিম ইকবাল ওই রোহিঙ্গা নারীকে ভোটার করেছে। বর্তমানে মরজিনার আসল পিতা আলীকদমে রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তছলিম ইকবাল জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ১০ জন রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তাদের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে তদন্ত চলছে। তিনি আরও জানান, জানামতে আমি কোন রোহিঙ্গাকে ভোটার হতে দেইনি। এটি আমার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু জাফর ছালেহ জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে রোহিঙ্গারা যাদের সহযোগিতায় ভোটার হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। কমিশন পরবর্তীতে যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেভাবেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও জানান, এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

এদিকে ৩ জানুয়ারি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তির অভিযোগে কথিত মা-বাবা ও দালালসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু জাফর ছালেহ।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি আলমগীর হোসেন জানান, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হওয়া ও রোহিঙ্গাদের সহযোগিতার অভিযোগে কথিত মা-বাবা পরিচয়দানকারী ব্যক্তি এবং দালাল চক্রসহ ৩৩ জনের নামে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু জাফর ছালেহ বাদী হয়ে ৪২০/৩৪ ধারায় পেনাল কোড তৎসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ২৪ ধারা তৎসহ ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯-এর ১৮ ধারা তৎসহ জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০-এর ১৪ ধারায় গত ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর মামলা দায়ের করেন।

মামলার পরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত ৬ আসামিকে গ্রেপ্তার করে, অন্যদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত আছে। ওই গ্রেপ্তারকৃত ৬ জনকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।

প্রসঙ্গত, বান্দরবানের লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় অসংখ্য রোহিঙ্গা ভোটার হয়ে আসছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি অভিযুক্ত প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে সময়মতো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে তারা আগামীতে আরও উৎসাহী হয়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় স্থান করে দিবে। পাশাপাশি জড়িত প্রভাবশালীদের আইনের আওতায় আনার জন্য জোর দাবি জানিয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ির সচেতন মহল।