সন্তানের সামনে মাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন

এবার নোয়াখালীর হাতিয়ার চর চানন্দিতে এক গৃহবধূকে সন্তানদের সামনে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করে তা ভাইরালের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে। আদালত হাতিয়ার সহকারী পুলিশ সুপারকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।

গত ৫ জানুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১ জানুয়ারি হাতিয়ার চানন্দি ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামের ওই গৃহবধূকে স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্থানীয় বখাটে জিয়া ওরপে জিহাদ, ফারুখ, এনায়েত, ভুট্টু মাঝি ও ফারুক ঘরে ঢুকে সন্তানদের সামনে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে নির্যাতনের ছবি মোবাইলে ধারন করে। এ সময় তার ও তার সন্তানদের আর্তচিৎকারে প্রতিবেশীরা লাঠিসোটা নিয়ে ছুটে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। তারপর ওই সন্ত্রাসীরা মোবাইলে ধারণ করা ছবি ভাইরাল করে দেয়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন লোক বিবস্ত্র করে ওই গৃহবধূকে নির্যাতন করে টেনে হিঁচড়ে ঘরের একটি কক্ষে ঢুকিয়ে বন্ধ করে রাখে। একজন এলোপাথাড়ি পিটিয়ে গৃহবধূর ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।

এরপর প্রতিবেশীরা এসে তাকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, গত ৪ জানুয়ারি ভিকটিম হাতিয়া থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তার মামলা গ্রহণ করেনি তাই সে বাধ্য হয়ে ৫ জানুয়ারি জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. শামছু উদ্দিন খালেদের আদালতে অভিযোগ দাখিল করেন। বিচারক তার অভিযোগ আমলে নিয়ে হাতিয়া সার্কেলের সরকারী পুলিশ সুপার গোলাম ফারুককে তদন্ত করে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

হাতিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার গোলাম ফারুখ আদালতে মামলা ও তাকে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশের কথা নিশ্চিত করে জানান, আদালতের নির্দেশ হাতে আসার পর গত শনিবার তিনি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে মামলার তদন্ত শুরু করেছেন এবং আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক ৭ দিনের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে এ প্রতিনিধিকে জানান।

হাতিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় জানান, তিনি নিজেও ঘটনাস্থলে রয়েছেন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করছেন। তবে তিনি জানান, সহকারী পুলিশ সুপার সাহেবের কাছে আদালতের নির্দেশ আসার আগে ভিকটিম বা তার পরিবার কেউই তাকে ঘটনা জানায়নি এবং থানায় কোন মামলাও দায়ের করতে যায়নি।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় এ প্রতিনিধিকে জানান, তিনি নিজেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং এলাকার লোকজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ভাইরালকৃত ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে জানতে পেরেছেন, নারীকে নির্যাতনের মতো কোন ঘটনা সেখানে ঘটেনি। ওই নারীর সঙ্গে যে লোকের দুর্বল সম্পর্ক ছিল এলাকাবাসী তাকে টেনে হিঁচড়ে ঘর থেকে বের করেছিল। তবে এ ব্যাপারেও পুলিশ হাতিয়া থানায় মামলা রুজু করবে। আর ওই গৃহবধূর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে করা মামলার ব্যাপারে আদালতের নির্দেশ মোতাবেক হাতিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার পর আদালতের দিকনির্দেশনা মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাসপুরের জয়কৃষ্ণপুরেও নারীকে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে এবং সে ছবি মোবাইলে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়েছিল।

সোমবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২১ , ৪ মাঘ ১৪২৭, ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

নোয়াখালীর হাতিয়া

সন্তানের সামনে মাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন

প্রতিনিধি, নোয়াখালী

এবার নোয়াখালীর হাতিয়ার চর চানন্দিতে এক গৃহবধূকে সন্তানদের সামনে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করে তা ভাইরালের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে। আদালত হাতিয়ার সহকারী পুলিশ সুপারকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।

গত ৫ জানুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১ জানুয়ারি হাতিয়ার চানন্দি ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামের ওই গৃহবধূকে স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্থানীয় বখাটে জিয়া ওরপে জিহাদ, ফারুখ, এনায়েত, ভুট্টু মাঝি ও ফারুক ঘরে ঢুকে সন্তানদের সামনে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে নির্যাতনের ছবি মোবাইলে ধারন করে। এ সময় তার ও তার সন্তানদের আর্তচিৎকারে প্রতিবেশীরা লাঠিসোটা নিয়ে ছুটে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। তারপর ওই সন্ত্রাসীরা মোবাইলে ধারণ করা ছবি ভাইরাল করে দেয়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন লোক বিবস্ত্র করে ওই গৃহবধূকে নির্যাতন করে টেনে হিঁচড়ে ঘরের একটি কক্ষে ঢুকিয়ে বন্ধ করে রাখে। একজন এলোপাথাড়ি পিটিয়ে গৃহবধূর ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।

এরপর প্রতিবেশীরা এসে তাকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, গত ৪ জানুয়ারি ভিকটিম হাতিয়া থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তার মামলা গ্রহণ করেনি তাই সে বাধ্য হয়ে ৫ জানুয়ারি জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. শামছু উদ্দিন খালেদের আদালতে অভিযোগ দাখিল করেন। বিচারক তার অভিযোগ আমলে নিয়ে হাতিয়া সার্কেলের সরকারী পুলিশ সুপার গোলাম ফারুককে তদন্ত করে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

হাতিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার গোলাম ফারুখ আদালতে মামলা ও তাকে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশের কথা নিশ্চিত করে জানান, আদালতের নির্দেশ হাতে আসার পর গত শনিবার তিনি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে মামলার তদন্ত শুরু করেছেন এবং আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক ৭ দিনের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে এ প্রতিনিধিকে জানান।

হাতিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় জানান, তিনি নিজেও ঘটনাস্থলে রয়েছেন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করছেন। তবে তিনি জানান, সহকারী পুলিশ সুপার সাহেবের কাছে আদালতের নির্দেশ আসার আগে ভিকটিম বা তার পরিবার কেউই তাকে ঘটনা জানায়নি এবং থানায় কোন মামলাও দায়ের করতে যায়নি।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় এ প্রতিনিধিকে জানান, তিনি নিজেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং এলাকার লোকজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ভাইরালকৃত ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে জানতে পেরেছেন, নারীকে নির্যাতনের মতো কোন ঘটনা সেখানে ঘটেনি। ওই নারীর সঙ্গে যে লোকের দুর্বল সম্পর্ক ছিল এলাকাবাসী তাকে টেনে হিঁচড়ে ঘর থেকে বের করেছিল। তবে এ ব্যাপারেও পুলিশ হাতিয়া থানায় মামলা রুজু করবে। আর ওই গৃহবধূর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে করা মামলার ব্যাপারে আদালতের নির্দেশ মোতাবেক হাতিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার পর আদালতের দিকনির্দেশনা মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাসপুরের জয়কৃষ্ণপুরেও নারীকে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে এবং সে ছবি মোবাইলে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়েছিল।