জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে চালু হচ্ছে হটলাইন

জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে এবার র‌্যাব সদর দপ্তরে হটলাইন চালু করা হচ্ছে। এ হটলাইনের মাধ্যমে পলাতক জঙ্গিরা র‌্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে তাদের প্রথমে আত্মসমপর্ণের সুযোগ দেয়া হবে। এরপর স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ লক্ষ্যে র‌্যাব সদর দপ্তর কাজ করছে। শীঘ্রই হটলাইন চালু করা হবে। গতকাল র‌্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ সংবাদকে এ তথ্য জানান।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার সংবাদকে জানান, ‘যে সব জঙ্গি সাধারণত আত্মসমর্পণ করতে চায় তাদের সুযোগ-সুবিধা ও সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে যারা হামলা ও হত্যা মামলায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেন, আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের ধর্ম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দেয়া। তাদের ভুল মতামত খন্ডন করা। জঙ্গিদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। তাদের ওপর নজর রাখা। তাদের ‘বিনা কারণে হয়রানি’ না করা। পরিবারের সঙ্গে বসবাসের সুযোগ দেয়া। আর তাদের বন্ধু-বান্ধবদের উপর নজর রাখা। আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের আর্থিক প্রণোদনা দেয়া। তাদের জন্য সাইকোলজিক্যাল পরামর্শক ঠিক করা। এসব লক্ষ্য সামনে রেখেই এই কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে। আর এভাবেই আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন মুঠোফোনে সংবাদকে জানান, ‘জঙ্গিরা যাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে তার জন্য র‌্যাবের কয়েকজন অফিসারের কাছে হটলাইন নম্বরটি থাকবে। তাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করলে র‌্যাব পদক্ষেপ নিবে। তবে কারো বিরুদ্ধে সুনিদিষ্ট অভিযোগ থাকলে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

গত ১৪ জানুয়ারি ৯ জঙ্গি বিনাশর্তে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পদক্ষেপ নিয়েছেন। বেশ কয়েক মাস পর্যবেক্ষণের পর র‌্যাব তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে।

তবে আত্মসমর্পণ করা একজনের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় তার বিরুদ্ধে প্রথমে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এরপর তাকে পুনর্বাসনের পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

র‌্যাব জানায়, দেশকে জঙ্গিমুক্ত করতে সরকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী কঠোর অবস্থান তৈরি হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মারমুখী অভিযানে জঙ্গিরা আত্মগোপনে বা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে না। তারা ফেরারি জীবনের অবসাদ থেকে বিষন্নতায় ভোগে। এমনকি মানুষিকভাবে ভেঙে পড়ে। তাই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি আত্মসমর্পণের এই সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, জঙ্গিরা এখনও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যুব সমাজকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে। গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের সাইবার টিমের অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে আসছে। তাই জঙ্গিবাদ নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন জেলায় নানা পেশার মানুষকে জঙ্গিবাদ সম্পর্কে সচেতন করতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। শিক্ষক, মসজিদের ইমামসহ সর্বস্তরের মানুষকে এই উদ্যোগে শামিল করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

সোমবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২১ , ৪ মাঘ ১৪২৭, ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে চালু হচ্ছে হটলাইন

বাকিবিল্লাহ |

জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে এবার র‌্যাব সদর দপ্তরে হটলাইন চালু করা হচ্ছে। এ হটলাইনের মাধ্যমে পলাতক জঙ্গিরা র‌্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে তাদের প্রথমে আত্মসমপর্ণের সুযোগ দেয়া হবে। এরপর স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ লক্ষ্যে র‌্যাব সদর দপ্তর কাজ করছে। শীঘ্রই হটলাইন চালু করা হবে। গতকাল র‌্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ সংবাদকে এ তথ্য জানান।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার সংবাদকে জানান, ‘যে সব জঙ্গি সাধারণত আত্মসমর্পণ করতে চায় তাদের সুযোগ-সুবিধা ও সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে যারা হামলা ও হত্যা মামলায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেন, আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের ধর্ম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দেয়া। তাদের ভুল মতামত খন্ডন করা। জঙ্গিদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। তাদের ওপর নজর রাখা। তাদের ‘বিনা কারণে হয়রানি’ না করা। পরিবারের সঙ্গে বসবাসের সুযোগ দেয়া। আর তাদের বন্ধু-বান্ধবদের উপর নজর রাখা। আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের আর্থিক প্রণোদনা দেয়া। তাদের জন্য সাইকোলজিক্যাল পরামর্শক ঠিক করা। এসব লক্ষ্য সামনে রেখেই এই কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে। আর এভাবেই আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন মুঠোফোনে সংবাদকে জানান, ‘জঙ্গিরা যাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে তার জন্য র‌্যাবের কয়েকজন অফিসারের কাছে হটলাইন নম্বরটি থাকবে। তাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করলে র‌্যাব পদক্ষেপ নিবে। তবে কারো বিরুদ্ধে সুনিদিষ্ট অভিযোগ থাকলে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

গত ১৪ জানুয়ারি ৯ জঙ্গি বিনাশর্তে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পদক্ষেপ নিয়েছেন। বেশ কয়েক মাস পর্যবেক্ষণের পর র‌্যাব তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে।

তবে আত্মসমর্পণ করা একজনের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় তার বিরুদ্ধে প্রথমে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এরপর তাকে পুনর্বাসনের পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

র‌্যাব জানায়, দেশকে জঙ্গিমুক্ত করতে সরকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী কঠোর অবস্থান তৈরি হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মারমুখী অভিযানে জঙ্গিরা আত্মগোপনে বা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে না। তারা ফেরারি জীবনের অবসাদ থেকে বিষন্নতায় ভোগে। এমনকি মানুষিকভাবে ভেঙে পড়ে। তাই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি আত্মসমর্পণের এই সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, জঙ্গিরা এখনও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যুব সমাজকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে। গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের সাইবার টিমের অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে আসছে। তাই জঙ্গিবাদ নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন জেলায় নানা পেশার মানুষকে জঙ্গিবাদ সম্পর্কে সচেতন করতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। শিক্ষক, মসজিদের ইমামসহ সর্বস্তরের মানুষকে এই উদ্যোগে শামিল করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।