বাইডেনের অভিষেকেই ডজনখানেক নির্বাহী আদেশ আসছে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর ভূমিকাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বাইডেনের কাজ শুরু হবে দায়িত্বের প্রথম দিন থেকেই। আবাসন ও শিক্ষা ঋণ, জলবায়ু পরিবর্তন আর অভিবাসনের মতো ডজনখানেক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তনের জন্য নির্বাহী আদেশ দিতে অভিষেকের দিনই ব্যস্ত সময় কাটবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের।

তার হবু চিফ অব স্টাফ রন ক্লেইন এক মেমোতে সেসব নির্বাহী আদেশের বিষয়ে একটি ধারণা দিয়েছেন সাংবাদিকদের। আগামী বুধবার বাইডেনের অভিষেকের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের মেয়াদের ইতি ঘটতে যাচ্ছে। ট্রাম্পের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব নীতি বদলে ফেলা হয়েছিল, সেগুলো আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর আগে থেকেই দিয়ে আসছিলেন বাইডেন।

রন ক্লেইন জানিয়েছেন, দায়িত্বের প্রথম দিন বাইডেন যেসব নির্বাহী আদেশ দেবেন, তার একটিতে যুক্তরাষ্ট্রের আবার প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যোগ দেয়ার ঘোষণা থাকবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার প্রাক শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যেন না হতে পারে, সেজন্য নিঃসরণের মাত্রা সম্মিলিতভাবে কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করা হয়েছে ২০১৫ সালের ওই চুক্তিতে। এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৯টি দেশ ওই চুক্তিতে অনুস্বাক্ষর করেছে।

২০১৬ সালে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর ছয় মাসের মধ্যে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়ে পুরো বিশ্বকে হতাশ করেছিলেন ট্রাম্প। তার ওই ঘোষণা কার্যকর হয় গত ৪ নভেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক পরের দিন।

ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন ভোটের প্রচারের সময়ই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস চুক্তিতে ফিরিয়ে আনবেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অভিবাসনের নিয়ম বদলাতে তৎপর হন রিপাবলিকান ট্রাম্প। সে সময় সাতটি মুসলিম প্রধান দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার পথ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে ১৩টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র সফরে কড়াকড়ি চলছে।

তার উত্তরসূরি বাইডেন দায়িত্বের প্রথম দিনই সাত মুসলিম দেশের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে নতুন নির্বাহী আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন রন ক্লেইন।

পাশাপাশি শিক্ষা ঋণের লোনের কিস্তি দেয়ার বাধ্যবাধকতা স্থগিত করে এর আগে যে আদেশ হয়েছিল, তার মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা আসবে বাইডেনের অভিষেকের দিনই। পাশাপাশি আবাসন ঋণের কিস্তি শোধে ব্যর্থতার জন্য উচ্ছেদ কার্যক্রমও বন্ধ থাকবে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ভ্রমণ এবং ফেডারেল সরকারের সব প্রতিষ্ঠানে মাস্ক বাধ্যতামূলক করবেন বাইডেন। এসব নির্বাহী আদেশের বেশিরভাগের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না। এর বাইরে বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের বহু প্রত্যাশিত নতুন অভিবাসন নীতির খসড়াও ঘোষণা করবেন, যা লাখো অনিবন্ধিত অভিবাসীর বৈধতা পাওয়ার পথ খুলবে। অবশ্য এ নীতি বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

এর পাশাপাশি করোনাভাইরাসের টিকাদান এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের যে প্রণোদনার প্রস্তাব বাইডেন ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেন, তা কংগ্রেসে পাস করাতে বেশ বেগ পেতে হবে, কারণ প্রতিনিধি পরিষদের আসনের দিক দিয়ে তার দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এগিয়ে থাকলেও রিপাবলিকানদের সঙ্গে তাদের ব্যবধান সামান্যই। ক্লেইন বলেছেন, বাইডেনের প্রথম দিনের প্রতিশ্রুতির একটি বড় অংশের বাস্তবায়ন শুরু হয়ে যাবে অভিষেকের পরের ৯ দিনের মধ্যে। এর মধ্যে থাকবে করোনাভাইরাস পরীক্ষার আওতা বাড়ানো এবং সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদিত পণ্যকে অগ্রাধিকার দেয়ার নির্দেশনা।

image

আবাসন ও শিক্ষা ঋণ, জলবায়ু পরিবর্তন আর অভিবাসনের যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তনের জন্য নির্বাহী আদেশ দিতেই অভিষেকে ব্যস্ত সময় কাটবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের -ফাইল ছবি

আরও খবর
ইসরায়েলকে নিরাপত্তা দিতে সেন্ট্রাল কমান্ডকে নির্দেশ ট্রাম্পের
আফগানিস্তানে দুই নারী বিচারককে গুলি করে হত্যা
বাইডেন প্রশাসনে ২০ ভারতীয় বংশোদ্ভূত : ১৩ জনই নারী
ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৬
ভারতে ১৩ বছরের কিশোরীকে দলবেধে ধর্ষণ

সোমবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২১ , ৪ মাঘ ১৪২৭, ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

বাইডেনের অভিষেকেই ডজনখানেক নির্বাহী আদেশ আসছে

image

আবাসন ও শিক্ষা ঋণ, জলবায়ু পরিবর্তন আর অভিবাসনের যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তনের জন্য নির্বাহী আদেশ দিতেই অভিষেকে ব্যস্ত সময় কাটবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের -ফাইল ছবি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর ভূমিকাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বাইডেনের কাজ শুরু হবে দায়িত্বের প্রথম দিন থেকেই। আবাসন ও শিক্ষা ঋণ, জলবায়ু পরিবর্তন আর অভিবাসনের মতো ডজনখানেক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তনের জন্য নির্বাহী আদেশ দিতে অভিষেকের দিনই ব্যস্ত সময় কাটবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের।

তার হবু চিফ অব স্টাফ রন ক্লেইন এক মেমোতে সেসব নির্বাহী আদেশের বিষয়ে একটি ধারণা দিয়েছেন সাংবাদিকদের। আগামী বুধবার বাইডেনের অভিষেকের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের মেয়াদের ইতি ঘটতে যাচ্ছে। ট্রাম্পের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব নীতি বদলে ফেলা হয়েছিল, সেগুলো আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর আগে থেকেই দিয়ে আসছিলেন বাইডেন।

রন ক্লেইন জানিয়েছেন, দায়িত্বের প্রথম দিন বাইডেন যেসব নির্বাহী আদেশ দেবেন, তার একটিতে যুক্তরাষ্ট্রের আবার প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যোগ দেয়ার ঘোষণা থাকবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার প্রাক শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যেন না হতে পারে, সেজন্য নিঃসরণের মাত্রা সম্মিলিতভাবে কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করা হয়েছে ২০১৫ সালের ওই চুক্তিতে। এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৯টি দেশ ওই চুক্তিতে অনুস্বাক্ষর করেছে।

২০১৬ সালে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর ছয় মাসের মধ্যে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়ে পুরো বিশ্বকে হতাশ করেছিলেন ট্রাম্প। তার ওই ঘোষণা কার্যকর হয় গত ৪ নভেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক পরের দিন।

ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন ভোটের প্রচারের সময়ই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস চুক্তিতে ফিরিয়ে আনবেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অভিবাসনের নিয়ম বদলাতে তৎপর হন রিপাবলিকান ট্রাম্প। সে সময় সাতটি মুসলিম প্রধান দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার পথ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে ১৩টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র সফরে কড়াকড়ি চলছে।

তার উত্তরসূরি বাইডেন দায়িত্বের প্রথম দিনই সাত মুসলিম দেশের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে নতুন নির্বাহী আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন রন ক্লেইন।

পাশাপাশি শিক্ষা ঋণের লোনের কিস্তি দেয়ার বাধ্যবাধকতা স্থগিত করে এর আগে যে আদেশ হয়েছিল, তার মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা আসবে বাইডেনের অভিষেকের দিনই। পাশাপাশি আবাসন ঋণের কিস্তি শোধে ব্যর্থতার জন্য উচ্ছেদ কার্যক্রমও বন্ধ থাকবে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ভ্রমণ এবং ফেডারেল সরকারের সব প্রতিষ্ঠানে মাস্ক বাধ্যতামূলক করবেন বাইডেন। এসব নির্বাহী আদেশের বেশিরভাগের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না। এর বাইরে বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের বহু প্রত্যাশিত নতুন অভিবাসন নীতির খসড়াও ঘোষণা করবেন, যা লাখো অনিবন্ধিত অভিবাসীর বৈধতা পাওয়ার পথ খুলবে। অবশ্য এ নীতি বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

এর পাশাপাশি করোনাভাইরাসের টিকাদান এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের যে প্রণোদনার প্রস্তাব বাইডেন ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেন, তা কংগ্রেসে পাস করাতে বেশ বেগ পেতে হবে, কারণ প্রতিনিধি পরিষদের আসনের দিক দিয়ে তার দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এগিয়ে থাকলেও রিপাবলিকানদের সঙ্গে তাদের ব্যবধান সামান্যই। ক্লেইন বলেছেন, বাইডেনের প্রথম দিনের প্রতিশ্রুতির একটি বড় অংশের বাস্তবায়ন শুরু হয়ে যাবে অভিষেকের পরের ৯ দিনের মধ্যে। এর মধ্যে থাকবে করোনাভাইরাস পরীক্ষার আওতা বাড়ানো এবং সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদিত পণ্যকে অগ্রাধিকার দেয়ার নির্দেশনা।