রেমিট্যান্স বাড়াতে প্রণোদনা বৃদ্ধির পরামর্শ

রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি করতে প্রণোদনা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এছাড়া টেকসই রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বড় পরিসরে বিদেশ যেতে আগ্রহীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উন্নত প্রশিক্ষণের ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। গতকাল এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম আয়োজিত ‘সাম্প্রতিক প্রবাসী আয়-রেমিট্যান্স প্রবাহ : এতো টাকা আসছে কোথা থেকে?’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মত দেন।

নাগরিক প্লাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, সরকার প্রবাসীদের দেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে যে দুই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে সম্প্রতি তার কারণে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। গত ছয় মাসেই প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। প্রণোদনা আরেকটু বাড়ানো গেলে এই প্রবৃদ্ধি আরও টেকসই হবে। চলমান ব্যবস্থায় প্রণোদনা দিয়ে পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রবৃদ্ধি টেকসই হতে পারে। কিন্তু এরপর অবশ্যই এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রণোদনার মাধ্যমে চূড়ান্ত টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে না। এজন্য অবশ্যই প্রবাসীদের জন্য সরকারকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দক্ষতা অর্জন করার প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। যে লোক যে দেশে যেতে চায় সেই দেশের সংস্কৃতি, ভাষা এবং সংশ্লিষ্ট কাজের বিষয়ে তাকে দক্ষ করার পর পাঠাতে পারলে তার বেতন তুলনামূলক বেশি হওয়ার পাশাপাশি তার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরতে পারবেন।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ কোন প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরও ২ টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা পাচ্ছেন সুবিধাভোগী।

এর আগে মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পরপরই বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফের এক গবেষণায় বাংলাদেশের রেমিট্যান্স ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে উল্টো পরিস্থিতি দেখা গেছে। ২০১৯ সালের স্বাভাবিক সময়ে প্রবাসীরা যে রেমিট্যান্স প্রেরণ করেছিল মহামারীর সময়ে সেই প্রবাহ উল্টো ৩৮ শতাংশ বেড়ে গেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স ৩০ শতাংশ এসেছে সৌদি আরব থেকে। গত বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে রেমিট্যান্স প্রেরণের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ২৮ শতাংশ নিয়ে এবার দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। দুই শতাংশ প্রণোদনা, উৎস না দেখিয়ে দেড় হাজার ডলার বা দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্স পাঠানোর যে সুযোগ, গত জুলাই মাস থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার ডলার বা পাঁচ লাখ টাকা করার সিদ্ধান্ত এতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এ সময় তিনি মহামারী কারণে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা কমে যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, গত বছর যেখানে প্রায় ১৫ লাখ লোক বিদেশ গেছে সেখানে গত ছয় মাসে মাত্র সাত হাজার লোক বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে এখনও রেমিট্যান্স প্রবাহ ঠিক থাকলেও আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কমে যাওয়ার আশঙ্কা করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে সিপিডি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, সরকার দুই শতাংশ প্রনোদণা ঘোষণার পর থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। এখন এই রেমিট্যান্স দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টেও বিরাট ভূমিকা রাখছে। এমন পরিস্থিতি এই ইতিবাচক প্রবাহ আরও কিভাবে বাড়ানো যায়, বিদেশ থেকে আরও কিভাবে সম্পদ দেশে আনা যায় তা নিয়ে সমন্বিতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে পর্যালোচনা করে এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করার উদ্যোগ নিতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সেন্টার ফর নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশিস-এর (এনআরবি) চেয়ারপারসন এমএস সেকিল চৌধুরী বলেন, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে সাত লাখের বেশি লোক বিদেশ গেলেও ২০২০ সাল গেছেন মাত্র দুই লাখ ২৯ হাজার। কিন্তু রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে বিরাট উল্লম্ফন ঘটেছে। এর পেছনে তিনি উৎস না দেখে পাঁচ হাজার ডলার পাঠানোর সুযোগের পাশাপাশি দুই শতাংশ প্রণোদনা ও বিশেষ করে এবার হজ করতে যেতে না পারা একটি কারণ বলে মনে করেন।

অনুষ্ঠানে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটিং মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) চেয়ারপারসন অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, আমাদের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে এখন প্রবাসীদের পরিবারের মধ্যে ৬১ শতাংশ রেমিট্যান্স পাচ্ছে না। রেমিট্যান্স আসছে মাত্র ৩১ শতাংশ পরিবারের কাছে। তাই এই পরিসংখ্যানের মধ্যে আবার রেমিট্যান্স উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে এটা অসংগতিপূর্ণ। এটা কিভাবে হচ্ছে তা বের করা যাচ্ছে না।

সোমবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২১ , ৪ মাঘ ১৪২৭, ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

রেমিট্যান্স বাড়াতে প্রণোদনা বৃদ্ধির পরামর্শ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি করতে প্রণোদনা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এছাড়া টেকসই রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বড় পরিসরে বিদেশ যেতে আগ্রহীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উন্নত প্রশিক্ষণের ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। গতকাল এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম আয়োজিত ‘সাম্প্রতিক প্রবাসী আয়-রেমিট্যান্স প্রবাহ : এতো টাকা আসছে কোথা থেকে?’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মত দেন।

নাগরিক প্লাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, সরকার প্রবাসীদের দেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে যে দুই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে সম্প্রতি তার কারণে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। গত ছয় মাসেই প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। প্রণোদনা আরেকটু বাড়ানো গেলে এই প্রবৃদ্ধি আরও টেকসই হবে। চলমান ব্যবস্থায় প্রণোদনা দিয়ে পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রবৃদ্ধি টেকসই হতে পারে। কিন্তু এরপর অবশ্যই এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রণোদনার মাধ্যমে চূড়ান্ত টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে না। এজন্য অবশ্যই প্রবাসীদের জন্য সরকারকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দক্ষতা অর্জন করার প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। যে লোক যে দেশে যেতে চায় সেই দেশের সংস্কৃতি, ভাষা এবং সংশ্লিষ্ট কাজের বিষয়ে তাকে দক্ষ করার পর পাঠাতে পারলে তার বেতন তুলনামূলক বেশি হওয়ার পাশাপাশি তার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরতে পারবেন।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ কোন প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরও ২ টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা পাচ্ছেন সুবিধাভোগী।

এর আগে মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পরপরই বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফের এক গবেষণায় বাংলাদেশের রেমিট্যান্স ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে উল্টো পরিস্থিতি দেখা গেছে। ২০১৯ সালের স্বাভাবিক সময়ে প্রবাসীরা যে রেমিট্যান্স প্রেরণ করেছিল মহামারীর সময়ে সেই প্রবাহ উল্টো ৩৮ শতাংশ বেড়ে গেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স ৩০ শতাংশ এসেছে সৌদি আরব থেকে। গত বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে রেমিট্যান্স প্রেরণের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ২৮ শতাংশ নিয়ে এবার দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। দুই শতাংশ প্রণোদনা, উৎস না দেখিয়ে দেড় হাজার ডলার বা দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্স পাঠানোর যে সুযোগ, গত জুলাই মাস থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার ডলার বা পাঁচ লাখ টাকা করার সিদ্ধান্ত এতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এ সময় তিনি মহামারী কারণে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা কমে যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, গত বছর যেখানে প্রায় ১৫ লাখ লোক বিদেশ গেছে সেখানে গত ছয় মাসে মাত্র সাত হাজার লোক বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে এখনও রেমিট্যান্স প্রবাহ ঠিক থাকলেও আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কমে যাওয়ার আশঙ্কা করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে সিপিডি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, সরকার দুই শতাংশ প্রনোদণা ঘোষণার পর থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। এখন এই রেমিট্যান্স দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টেও বিরাট ভূমিকা রাখছে। এমন পরিস্থিতি এই ইতিবাচক প্রবাহ আরও কিভাবে বাড়ানো যায়, বিদেশ থেকে আরও কিভাবে সম্পদ দেশে আনা যায় তা নিয়ে সমন্বিতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে পর্যালোচনা করে এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করার উদ্যোগ নিতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সেন্টার ফর নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশিস-এর (এনআরবি) চেয়ারপারসন এমএস সেকিল চৌধুরী বলেন, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে সাত লাখের বেশি লোক বিদেশ গেলেও ২০২০ সাল গেছেন মাত্র দুই লাখ ২৯ হাজার। কিন্তু রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে বিরাট উল্লম্ফন ঘটেছে। এর পেছনে তিনি উৎস না দেখে পাঁচ হাজার ডলার পাঠানোর সুযোগের পাশাপাশি দুই শতাংশ প্রণোদনা ও বিশেষ করে এবার হজ করতে যেতে না পারা একটি কারণ বলে মনে করেন।

অনুষ্ঠানে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটিং মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) চেয়ারপারসন অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, আমাদের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে এখন প্রবাসীদের পরিবারের মধ্যে ৬১ শতাংশ রেমিট্যান্স পাচ্ছে না। রেমিট্যান্স আসছে মাত্র ৩১ শতাংশ পরিবারের কাছে। তাই এই পরিসংখ্যানের মধ্যে আবার রেমিট্যান্স উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে এটা অসংগতিপূর্ণ। এটা কিভাবে হচ্ছে তা বের করা যাচ্ছে না।