সাবেক এমপি আওয়াল দম্পতির সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব জব্দ

দুর্নীতির দুটি মামলায় দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পিরোজপুর-১ আসনের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম আওয়াল দম্পতির ৪০ সিডিউলের সম্পদ এবং ১৮ ব্যাংক হিসাব ও এফডিআর ফ্রিজ করেছে আদালত। দুদকের উপপরিচালক মো. আলী আকবরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ এম ইমরুল কায়েশের আদালত এ আদেশ দেন। আদেশের কপি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ আদেশের ফলে সাবেক প্রভাশালী এমপি ও তার স্ত্রী কোন ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন বা হস্তান্তর করতে পারবেন না। একইভাবে কোন সম্পদ বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবেন না।

দুদকের উপপরিচালক মো. আলী আকবর টেলিফোনে জানান, গত বছরের (২০২০) ৩০ সেপ্টেম্বর সাবেক এমপি একেএম আওয়াল দম্পতির বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছিল। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে দুই মামলায় আওয়ালের স্ত্রী লায়লা পারভীনকে আসামি করা হয়েছে। ওই মামলায় সাবেক এমপির অবৈধ সম্পদ, যাবতীয় ব্যাংক হিসাব ও এফডিআর জব্দ করার আবেদন করা হয় গত বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি)। গতকাল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে আদালত আদেশ দিয়েছেন। আদেশ অনুযায়ী সাবেক এমপি আওয়াল এবং তার স্ত্রীর সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন।

দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জানান, দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এমপি আওয়ালের ২৮টি সিডিউলের যাবতীয় সম্পদ ক্রোক করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া সাবেক এ এমপির নামে থাকা ১৫টি ব্যাংক হিসাব ও সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে থাকা যাবতীয় অর্থও ফ্রিজ করা হয়েছে। একই আদেশে সাবেক এমপি আওয়ালের স্ত্রী লায়লা পারভীনের ৩টি ব্যাংক হিসাব ও সঞ্চয়পত্রের অর্থও ফ্রিজ করা হয়েছে। এছাড়া তার নামে ১২টি তফসিলের সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেয়া হয়েছে। এ আদেশের কপি সংশ্লিষ্ট জায়গায় পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর বলেন, এ আদেশের ফলে এখন থেকে সাবেক এমপি আওয়াল ও তার স্ত্রীর নামে থাকা ব্যাংক হিসাব থেকে কোন অর্থ তোলা যাবে না। সঞ্চয়পত্র তোলা বা হস্তান্তর করা যাবে না। এছাড়া কোন সম্পদ (জমি, বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান) বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না।

পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম আউয়াল। তার স্ত্রী লায়লা পারভীন। এ দম্পতির নামে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রায় ৪৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ উপ-পরিচালক মো. আলী আকবর বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দুটিতে একেএম আউয়ালের বিরুদ্ধে ৩৩ কোটি ২৭ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫৫ টাকার এবং লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে ১০ কোটি ৯৮ লাখ ৯০ হাজার ৫০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। প্রথম মামলার অভিযোগে বলা হয়, একেএম আউয়াল অবৈধ উপায়ে ৩৩ কোটি ২৭ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫৫ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন। এছাড়া তিনি দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে মোট ১৫ কোটি ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৩ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। অপর মামলার অভিযোগে আউয়ালের স্ত্রী লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে ১০ কোটি ৯৮ লাখ ৯০ হাজার ৫০ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিকানার তথ্য রয়েছে। এর আগে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ দম্পতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। আউয়াল ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পরপর দুইবার পিরোজপুর-১ (সদর-নাজিরপুর-নেছারাবাদ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

সোমবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২১ , ৪ মাঘ ১৪২৭, ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

দুর্নীতির মামলা

সাবেক এমপি আওয়াল দম্পতির সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব জব্দ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

দুর্নীতির দুটি মামলায় দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পিরোজপুর-১ আসনের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম আওয়াল দম্পতির ৪০ সিডিউলের সম্পদ এবং ১৮ ব্যাংক হিসাব ও এফডিআর ফ্রিজ করেছে আদালত। দুদকের উপপরিচালক মো. আলী আকবরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ এম ইমরুল কায়েশের আদালত এ আদেশ দেন। আদেশের কপি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ আদেশের ফলে সাবেক প্রভাশালী এমপি ও তার স্ত্রী কোন ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন বা হস্তান্তর করতে পারবেন না। একইভাবে কোন সম্পদ বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবেন না।

দুদকের উপপরিচালক মো. আলী আকবর টেলিফোনে জানান, গত বছরের (২০২০) ৩০ সেপ্টেম্বর সাবেক এমপি একেএম আওয়াল দম্পতির বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছিল। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে দুই মামলায় আওয়ালের স্ত্রী লায়লা পারভীনকে আসামি করা হয়েছে। ওই মামলায় সাবেক এমপির অবৈধ সম্পদ, যাবতীয় ব্যাংক হিসাব ও এফডিআর জব্দ করার আবেদন করা হয় গত বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি)। গতকাল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে আদালত আদেশ দিয়েছেন। আদেশ অনুযায়ী সাবেক এমপি আওয়াল এবং তার স্ত্রীর সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন।

দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জানান, দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এমপি আওয়ালের ২৮টি সিডিউলের যাবতীয় সম্পদ ক্রোক করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া সাবেক এ এমপির নামে থাকা ১৫টি ব্যাংক হিসাব ও সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে থাকা যাবতীয় অর্থও ফ্রিজ করা হয়েছে। একই আদেশে সাবেক এমপি আওয়ালের স্ত্রী লায়লা পারভীনের ৩টি ব্যাংক হিসাব ও সঞ্চয়পত্রের অর্থও ফ্রিজ করা হয়েছে। এছাড়া তার নামে ১২টি তফসিলের সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেয়া হয়েছে। এ আদেশের কপি সংশ্লিষ্ট জায়গায় পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর বলেন, এ আদেশের ফলে এখন থেকে সাবেক এমপি আওয়াল ও তার স্ত্রীর নামে থাকা ব্যাংক হিসাব থেকে কোন অর্থ তোলা যাবে না। সঞ্চয়পত্র তোলা বা হস্তান্তর করা যাবে না। এছাড়া কোন সম্পদ (জমি, বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান) বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না।

পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম আউয়াল। তার স্ত্রী লায়লা পারভীন। এ দম্পতির নামে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রায় ৪৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ উপ-পরিচালক মো. আলী আকবর বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দুটিতে একেএম আউয়ালের বিরুদ্ধে ৩৩ কোটি ২৭ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫৫ টাকার এবং লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে ১০ কোটি ৯৮ লাখ ৯০ হাজার ৫০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। প্রথম মামলার অভিযোগে বলা হয়, একেএম আউয়াল অবৈধ উপায়ে ৩৩ কোটি ২৭ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫৫ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন। এছাড়া তিনি দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে মোট ১৫ কোটি ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৩ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। অপর মামলার অভিযোগে আউয়ালের স্ত্রী লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে ১০ কোটি ৯৮ লাখ ৯০ হাজার ৫০ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিকানার তথ্য রয়েছে। এর আগে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ দম্পতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। আউয়াল ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পরপর দুইবার পিরোজপুর-১ (সদর-নাজিরপুর-নেছারাবাদ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।