পুন্ড্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড়শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত

বগুড়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে আইন বিভাগে অনুমোদনহীন ভর্তি করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন না থাকলেও পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইন বিভাগের কোর্সে শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে প্রলুদ্ধ করারও অভিযোগ করা হয়েছে। প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী প্রায় ৪ বছর ধরে ওই বিশ^বিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে আসলেও এখন তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি আইন বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রম চলতি বছর আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। এর আগে শতাধিক শিক্ষার্থীর চূড়ান্ত পর্বের (সেমিস্টার) পরীক্ষা না নিয়ে কৌশলের আশ্রয় নেয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব শিক্ষার্থী যেমন পরীক্ষা দিতে পারছে না তেমনি চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা দেয়ার পরও বেশ কিছু শিক্ষার্থী সনদ না পেয়ে প্রতারিত হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এর প্রতিবাদ করায় আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হয়রানির জন্য থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অভিযোগ করেছেন। তবে পুন্ড্র বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের হয়রানির কথা অস্বীকার করেছে।

ভারপ্রাপ্ত ভিসি অনুমোদন ছাড়া শিক্ষার্থীদের আইন বিভাগে ভর্তি ও পাঠদানের কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, বিষয়টি এখন তাদের এখতিয়ারের বাইরে। তারা অনুমোদনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০১৬-১৭ সালে তারা বগুড়ার পুন্ড্র ইউনিভার্সিটিতে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ভর্তির সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, তাদের এলএলবি ও এলএলএম কোর্সের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের (ইউজিসি) অনুমোদন রয়েছে।

প্রায় দু’বছর ক্লাস ও পরীক্ষা দেয়ার পর শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন, ইউজিসির কোন অনুমোদন নেই। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ-পুন্ড্র ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান ও বর্তমান চেয়ারম্যান হোসনে আরা বেগম তাদের আশ^াস দিয়ে জানিয়েছিলেন, ইউজিসির অনুমোদন এবং সিলেবাসেরও অনুমোদন রয়েছে। তবে পরবর্তীতে গত বছর ইউজিসি’র বিজ্ঞপ্তিতে অনুমোদন না থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসলে শিক্ষার্থীদের আবারও আশ্বাস দেয়া হয়।

এ সময় দুটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সবগুলো সেমিস্টার সম্পন্ন করলেও তাদের চূড়ান্ত সেমিস্টারের কয়েকটি পরীক্ষা কর্তৃপক্ষ নেননি বলে শিক্ষার্থীরা জানান। অন্যদিকে প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সব পরীক্ষা দিয়েও সনদ পাননি। শিক্ষার্থীরা তাদের চূড়ান্ত পরীক্ষা ও সনদের দাবি করে প্রতিবাদ জানায়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অন্য বিভাগের সনদ দেয়ার কথা জানালে তারা প্রত্যাখান করেছেন।

তবে এ বিষয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হোসনে আরা বেগম জানিয়েছেন, তারা এ ধরনের কোন প্রতিশ্রতি দেননি। অন্য বিভাগে পড়ার কথা বলেছিলেন। শিক্ষার্থীরা জানান, আকস্মিক বিশ^বিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়াসহ নানা হুমকি দেয়ায় তাদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিয়তায় পড়েছে। এদিকে চূড়ান্ত পরীক্ষা ও সনদের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় শতাধিক বলে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে পুন্ড্র ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত ভিসি অধ্যাপক আনম রেজাউল করিম জানান, শিক্ষার্থীদের বর্তমান শিক্ষাজীবন নিয়ে যে দাবি তা সঠিক।

সোমবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২১ , ৪ মাঘ ১৪২৭, ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া কোর্স চালু

পুন্ড্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড়শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত

প্রতিনিধি, বগুড়া

বগুড়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে আইন বিভাগে অনুমোদনহীন ভর্তি করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন না থাকলেও পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইন বিভাগের কোর্সে শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে প্রলুদ্ধ করারও অভিযোগ করা হয়েছে। প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী প্রায় ৪ বছর ধরে ওই বিশ^বিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে আসলেও এখন তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি আইন বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রম চলতি বছর আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। এর আগে শতাধিক শিক্ষার্থীর চূড়ান্ত পর্বের (সেমিস্টার) পরীক্ষা না নিয়ে কৌশলের আশ্রয় নেয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব শিক্ষার্থী যেমন পরীক্ষা দিতে পারছে না তেমনি চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা দেয়ার পরও বেশ কিছু শিক্ষার্থী সনদ না পেয়ে প্রতারিত হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এর প্রতিবাদ করায় আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হয়রানির জন্য থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অভিযোগ করেছেন। তবে পুন্ড্র বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের হয়রানির কথা অস্বীকার করেছে।

ভারপ্রাপ্ত ভিসি অনুমোদন ছাড়া শিক্ষার্থীদের আইন বিভাগে ভর্তি ও পাঠদানের কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, বিষয়টি এখন তাদের এখতিয়ারের বাইরে। তারা অনুমোদনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০১৬-১৭ সালে তারা বগুড়ার পুন্ড্র ইউনিভার্সিটিতে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ভর্তির সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, তাদের এলএলবি ও এলএলএম কোর্সের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের (ইউজিসি) অনুমোদন রয়েছে।

প্রায় দু’বছর ক্লাস ও পরীক্ষা দেয়ার পর শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন, ইউজিসির কোন অনুমোদন নেই। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ-পুন্ড্র ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান ও বর্তমান চেয়ারম্যান হোসনে আরা বেগম তাদের আশ^াস দিয়ে জানিয়েছিলেন, ইউজিসির অনুমোদন এবং সিলেবাসেরও অনুমোদন রয়েছে। তবে পরবর্তীতে গত বছর ইউজিসি’র বিজ্ঞপ্তিতে অনুমোদন না থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসলে শিক্ষার্থীদের আবারও আশ্বাস দেয়া হয়।

এ সময় দুটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সবগুলো সেমিস্টার সম্পন্ন করলেও তাদের চূড়ান্ত সেমিস্টারের কয়েকটি পরীক্ষা কর্তৃপক্ষ নেননি বলে শিক্ষার্থীরা জানান। অন্যদিকে প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সব পরীক্ষা দিয়েও সনদ পাননি। শিক্ষার্থীরা তাদের চূড়ান্ত পরীক্ষা ও সনদের দাবি করে প্রতিবাদ জানায়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অন্য বিভাগের সনদ দেয়ার কথা জানালে তারা প্রত্যাখান করেছেন।

তবে এ বিষয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হোসনে আরা বেগম জানিয়েছেন, তারা এ ধরনের কোন প্রতিশ্রতি দেননি। অন্য বিভাগে পড়ার কথা বলেছিলেন। শিক্ষার্থীরা জানান, আকস্মিক বিশ^বিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়াসহ নানা হুমকি দেয়ায় তাদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিয়তায় পড়েছে। এদিকে চূড়ান্ত পরীক্ষা ও সনদের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় শতাধিক বলে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে পুন্ড্র ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত ভিসি অধ্যাপক আনম রেজাউল করিম জানান, শিক্ষার্থীদের বর্তমান শিক্ষাজীবন নিয়ে যে দাবি তা সঠিক।