২০ লাখ ডোজ টিকা দিচ্ছে ভারত

আগামীকালই দেশে আসছে ২০ লাখ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন। বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে ২০ লাখ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন দিচ্ছে ভারত। আগামীকাল করোনার এই টিকার চালান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে বলে গতকাল রাতে সাংবাদিকদের জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

তিনি আরও জানান, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন বুধবার ঢাকায় আসবে। এদিন ২০ লাখ ভ্যাকসিন দেশে আসবে। এই ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ঔষধ প্রশাসনে চিঠি দেয়া হয়েছে।

এর আগে গতকাল ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন থেকে এক জরুরি চিঠিতে বলা হয়, বিশেষ বিমানে করে দুই মিলিয়ন (২০ লাখ) টিকা দেশে আসবে। তবে এটা বাংলাদেশের সঙ্গে যে ক্রয় চুক্তি হয়েছে তার অন্তর্ভুক্ত নয়। এগুলো ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতার নিদর্শন হিসেবে দেয়া হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতার নিদর্শন হিসেবে দুই মিলিয়ন করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে। যা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি। টিকাগুলো একটি বিশেষ বিমানে ২০ জানুয়ারি ভারত থেকে ঢাকায় পাঠানো হবে। টিকার এই চালানে মোট ২৯ হাজার ৪০০ ভায়াল থাকবে। যার ওজন ৭৮০ কেজি। প্রতিটি বাক্সে ১২০০ ভায়াল প্যাকেট করা থাকবে। যার প্রতি প্যাকেটের ওজন ৩২ কেজি।’ এর আগে দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, ভারত থেকে উপহার হিসেবে আরও কিছু টিকা যেকোন সময় আসবে।

বাংলাদেশ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার তিন কোটি ডোজ কিনেছে। সেই ভ্যাকসিনের প্রথম চালান ২৫ জানুয়ারির মধ্যে দেশে পৌঁছবে।

ঢাকায় ৩০০ কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে

এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন যেকোন দিন দেশে করোনার ভ্যাকসিন (টিকা) আসছে। প্রথম পর্যায়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তিনশতাধিক কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে। টিকা সংরক্ষণ ও প্রয়োগের প্রস্তুতিও চলছে জোরালোভাবে।

আগামী ২৫ বা ২৬ জানুয়ারি দেশে সেরামের ভ্যাকসিনের (অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা) প্রথম চালানটি আসবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘এর এক সপ্তাহ পরই ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হবে। পাশর্^প্রতিক্রিয়া মেনেই সবাইকে ভ্যাকসিন (টিকা) নিতে হবে। ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য ঢাকায় তিনশ’র মতো ভ্যাকসিন প্রয়োগ কেন্দ্র হবে, এবং ৪২ হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।

টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিটি কেন্দ্রের প্রবেশমুখে টিকা গ্রহীতাদের নামের তালিকা ঝুলানো থাকবে। অনলাইনে করা আবেদনের রেজিস্ট্রেশন কার্ড সঙ্গে নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে যেতে হবে। রেজিস্ট্রেশন কার্ড ছাড়া কাউকে টিকা দেয়া হবে না।

যেকোন সময় আসছে ভারত সরকারের উপহারের ভ্যাকসিন

আগামী ২৫-২৬ জানুয়ারির মধ্যে করোনার টিকার প্রথম লট চলে আসবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত সরকার আমাদের কিছু ভ্যাকসিন উপহারস্বরূপ দেবে। সেটাও আমরা আশা করছি যেকোন সময় চলে আসবে। ভারত কী পরিমাণ ভ্যাকসিন দিচ্ছে সেটার সংখ্যা এখনই বলতে পারব না। তবে সেটা বেশ ভালো পরিমাণ। অল্প সময়ের মধ্যে চলে আসবে। প্রথম লট পাওয়ার আগেও উপহারের ভ্যাকসিন চলে আসতে পারে। এর পাশাপাশি অন্যান্য যারা টিকা তৈরি করছে যেমন রাশিয়া, সানোফি, মডার্না, ফাইজারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকাদান কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারত সরকারের উপহারের করোনা ভ্যাকসিন দু’একদিনের মধ্যে দেশে আসছে। সেটি দেশে দশ লাখ ডোজ হতে পারে।

পাশর্^প্রতিক্রিয়া মেনেই ভ্যাকসিন নিতে হবে

করোনার ভ্যাকসিনে পাশ্বপ্রতিক্রিয়া হলে জনসাধারণকে সব ধরনের চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনার ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেটা আছে, সেটি গুরুতর নয়। অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম। এজন্য আমি মনে করি জনগণকে প্রস্তুত থাকতে হবে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মেনে নিয়ে ভ্যাকসিন নিতে হবে।’

যেকোন ওষুধের কিংবা ভ্যাকসিনের সাইডইফেক্ট থাকতে পারে-মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটি ওষুধ গ্রহণ করলেও সেটার গায়ে লেখা থাকে, কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। আবার নাও হতে পারে। বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনেও হয়েছে। এ যাবৎ আমরা বাংলাদেশে যেসব ভ্যাকসিন দিয়ে থাকি সেখানেও কিন্তু সাইডইফেক্ট আছে। কাজেই আমি মনে করি, এটাতে বড় কোন সমস্যা হবে না।’

করোনার ভ্যাকসিন ১৮ বছরের কম বয়সী কাউকে প্রথমে দেয়া হবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘অন্য সবাই যারা এ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়া হবে।’

দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণের দাবি

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে এসেছে দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে যাওয়ার পরিসংখ্যান এমন আভাস দিচ্ছে। দেশে সফলভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে চিঠি দিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা।’

করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধের মতো ভ্যাকসিন দেয়ার কর্মসূচিতেও ভালো করার আশাবাদ ব্যক্ত করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মাত্র একটি করোনা পরীক্ষার ল্যাব ছিল, বর্তমানে ২০০টি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী লকডাউন থাকায় পিপিই সংকট ছিল। বর্তমানে আমরা পিপিই রপ্তানি করছি। সব কিছু অজানা থাকায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শে করোনা চিকিৎসা পদ্ধতি সাত ধাপে পরিবর্তন করা হয়েছে। শুরুতে আমাদের কিছু ঘাটতি থাকলেও অব্যবস্থাপনা ছিল না। তবে বেসরকারিভাবে কিছু অনিয়ম হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’

জাহিদ মালেক বলেন, ‘যারা বিদেশ যাচ্ছেন আমরা তাদের করোনা টেস্টের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে কোটির বেশি মানুষ চিকিৎসা সুবিধা নিয়েছে। এটি আমাদের একটি সফল কার্যক্রম। করোনার মধ্যেও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন থেমে নেই।’

দেশের পরীক্ষা স্থগিত থাকলেও মেডিকেল কলেজের সব পরীক্ষা চলমান-উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি বছরের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা এপ্রিলে আয়োজন করা হবে। বর্তমানে হাসপাতালে ৮০ শতাংশ সাধারণ বেড ও ৬০ শতাংশ আইসিইউ খালি রয়েছে। সারাদেশে দুই হাজার করোনা রোগী এবং ২০০ জন আইসিইউতে চিকিৎসা নিচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মুরসালিন নোমানী এবং সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে সংগঠনের সদস্যদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির আহ্বান জানান। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘প্রত্যেক সাংবাদিক করোনার টিকা পাবেন।’ অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রয়াত সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সেরামের ভ্যাকসিনের দাম

এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ৪ ডলার করে সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা কিনছি। আর পরিবহনসহ সংরক্ষণে যে এক ডলার খরচ, সেটাও দেয়া হচ্ছে। আমাদের চুক্তি আছে যে, ভারত সরকার কম দামে কিনলে আমাদের কম দামে দেবে। বেশি দাম হলে আমরা সেই দামে নেব না, আমরা কম দামেই নেব। আমাদের কাছে যদি ২৫-২৬ জানুয়ারি ভ্যাকসিন চলে আসে, তারপরও আমাদের প্রিপারেশনের জন্য টাইম দরকার। আশা করি, সপ্তাহখানেকের মধ্যে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করতে পারব।’

বেসরকারি পর্যায়ে ভ্যাকসিন আনার অনুমতি দেয়া হবে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘একটি ভ্যাকসিনের দাম যেটা হবে, সেটি নির্ধারণ করার জন্য সরকারি প্রক্রিয়া আছে। সেই প্রক্রিয়া অনুযায়ী আমরা দামও নির্ধারণ করে দেব। ভ্যাকসিনের যে নীতিমালা সেটিও করা হয়েছে, নীতিমালা ফাইনাল করে দেয়া হবে।’

নীতিমালা অনুযায়ী ভ্যাকসিন দেয়া হবে- জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সব ভ্যাকসিনের দাম এক হবে না। দেশ ভিন্নতায় ভ্যাকসিনের দাম ভিন্ন ভিন্ন হবে। কাজেই সেদিক লক্ষ্য রেখে এই দাম নির্ধারণ করে দেব। যেভাবে আমরা টেস্টের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছি, সেভাবে ভ্যাকসিনের দামও নির্ধারণ করে দেয়া হবে।’

দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের ভ্যাকসিন তৈরির বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গ্লোব বায়োটেককে আমরা সাধুবাদ জানাই। তারা একটি ভ্যাকসিন ডেভেলপ করেছে। একটি ভ্যাকসিন প্রস্তুত করতে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, তাদের সেগুলো অনুসরণ করে আসতে হবে। আমরা দেখব, আমাদের দেশীয় প্রোডাক্ট যদি মানসম্পন্ন হয়, আমরা সবসময় সেটি গ্রহণ করে থাকি। আমাদের কাছে যখন যে সাহায্য চাইবে আমরা দেব।’

মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২১ , ৫ মাঘ ১৪২৭, ৫ জমাদিউস সানি ১৪৪২

২০ লাখ ডোজ টিকা দিচ্ছে ভারত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

আগামীকালই দেশে আসছে ২০ লাখ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন। বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে ২০ লাখ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন দিচ্ছে ভারত। আগামীকাল করোনার এই টিকার চালান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে বলে গতকাল রাতে সাংবাদিকদের জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

তিনি আরও জানান, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন বুধবার ঢাকায় আসবে। এদিন ২০ লাখ ভ্যাকসিন দেশে আসবে। এই ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ঔষধ প্রশাসনে চিঠি দেয়া হয়েছে।

এর আগে গতকাল ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন থেকে এক জরুরি চিঠিতে বলা হয়, বিশেষ বিমানে করে দুই মিলিয়ন (২০ লাখ) টিকা দেশে আসবে। তবে এটা বাংলাদেশের সঙ্গে যে ক্রয় চুক্তি হয়েছে তার অন্তর্ভুক্ত নয়। এগুলো ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতার নিদর্শন হিসেবে দেয়া হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতার নিদর্শন হিসেবে দুই মিলিয়ন করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে। যা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি। টিকাগুলো একটি বিশেষ বিমানে ২০ জানুয়ারি ভারত থেকে ঢাকায় পাঠানো হবে। টিকার এই চালানে মোট ২৯ হাজার ৪০০ ভায়াল থাকবে। যার ওজন ৭৮০ কেজি। প্রতিটি বাক্সে ১২০০ ভায়াল প্যাকেট করা থাকবে। যার প্রতি প্যাকেটের ওজন ৩২ কেজি।’ এর আগে দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, ভারত থেকে উপহার হিসেবে আরও কিছু টিকা যেকোন সময় আসবে।

বাংলাদেশ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার তিন কোটি ডোজ কিনেছে। সেই ভ্যাকসিনের প্রথম চালান ২৫ জানুয়ারির মধ্যে দেশে পৌঁছবে।

ঢাকায় ৩০০ কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে

এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন যেকোন দিন দেশে করোনার ভ্যাকসিন (টিকা) আসছে। প্রথম পর্যায়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তিনশতাধিক কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে। টিকা সংরক্ষণ ও প্রয়োগের প্রস্তুতিও চলছে জোরালোভাবে।

আগামী ২৫ বা ২৬ জানুয়ারি দেশে সেরামের ভ্যাকসিনের (অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা) প্রথম চালানটি আসবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘এর এক সপ্তাহ পরই ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হবে। পাশর্^প্রতিক্রিয়া মেনেই সবাইকে ভ্যাকসিন (টিকা) নিতে হবে। ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য ঢাকায় তিনশ’র মতো ভ্যাকসিন প্রয়োগ কেন্দ্র হবে, এবং ৪২ হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।

টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিটি কেন্দ্রের প্রবেশমুখে টিকা গ্রহীতাদের নামের তালিকা ঝুলানো থাকবে। অনলাইনে করা আবেদনের রেজিস্ট্রেশন কার্ড সঙ্গে নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে যেতে হবে। রেজিস্ট্রেশন কার্ড ছাড়া কাউকে টিকা দেয়া হবে না।

যেকোন সময় আসছে ভারত সরকারের উপহারের ভ্যাকসিন

আগামী ২৫-২৬ জানুয়ারির মধ্যে করোনার টিকার প্রথম লট চলে আসবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত সরকার আমাদের কিছু ভ্যাকসিন উপহারস্বরূপ দেবে। সেটাও আমরা আশা করছি যেকোন সময় চলে আসবে। ভারত কী পরিমাণ ভ্যাকসিন দিচ্ছে সেটার সংখ্যা এখনই বলতে পারব না। তবে সেটা বেশ ভালো পরিমাণ। অল্প সময়ের মধ্যে চলে আসবে। প্রথম লট পাওয়ার আগেও উপহারের ভ্যাকসিন চলে আসতে পারে। এর পাশাপাশি অন্যান্য যারা টিকা তৈরি করছে যেমন রাশিয়া, সানোফি, মডার্না, ফাইজারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকাদান কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারত সরকারের উপহারের করোনা ভ্যাকসিন দু’একদিনের মধ্যে দেশে আসছে। সেটি দেশে দশ লাখ ডোজ হতে পারে।

পাশর্^প্রতিক্রিয়া মেনেই ভ্যাকসিন নিতে হবে

করোনার ভ্যাকসিনে পাশ্বপ্রতিক্রিয়া হলে জনসাধারণকে সব ধরনের চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনার ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেটা আছে, সেটি গুরুতর নয়। অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম। এজন্য আমি মনে করি জনগণকে প্রস্তুত থাকতে হবে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মেনে নিয়ে ভ্যাকসিন নিতে হবে।’

যেকোন ওষুধের কিংবা ভ্যাকসিনের সাইডইফেক্ট থাকতে পারে-মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটি ওষুধ গ্রহণ করলেও সেটার গায়ে লেখা থাকে, কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। আবার নাও হতে পারে। বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনেও হয়েছে। এ যাবৎ আমরা বাংলাদেশে যেসব ভ্যাকসিন দিয়ে থাকি সেখানেও কিন্তু সাইডইফেক্ট আছে। কাজেই আমি মনে করি, এটাতে বড় কোন সমস্যা হবে না।’

করোনার ভ্যাকসিন ১৮ বছরের কম বয়সী কাউকে প্রথমে দেয়া হবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘অন্য সবাই যারা এ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়া হবে।’

দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণের দাবি

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে এসেছে দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে যাওয়ার পরিসংখ্যান এমন আভাস দিচ্ছে। দেশে সফলভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে চিঠি দিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা।’

করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধের মতো ভ্যাকসিন দেয়ার কর্মসূচিতেও ভালো করার আশাবাদ ব্যক্ত করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মাত্র একটি করোনা পরীক্ষার ল্যাব ছিল, বর্তমানে ২০০টি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী লকডাউন থাকায় পিপিই সংকট ছিল। বর্তমানে আমরা পিপিই রপ্তানি করছি। সব কিছু অজানা থাকায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শে করোনা চিকিৎসা পদ্ধতি সাত ধাপে পরিবর্তন করা হয়েছে। শুরুতে আমাদের কিছু ঘাটতি থাকলেও অব্যবস্থাপনা ছিল না। তবে বেসরকারিভাবে কিছু অনিয়ম হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’

জাহিদ মালেক বলেন, ‘যারা বিদেশ যাচ্ছেন আমরা তাদের করোনা টেস্টের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে কোটির বেশি মানুষ চিকিৎসা সুবিধা নিয়েছে। এটি আমাদের একটি সফল কার্যক্রম। করোনার মধ্যেও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন থেমে নেই।’

দেশের পরীক্ষা স্থগিত থাকলেও মেডিকেল কলেজের সব পরীক্ষা চলমান-উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি বছরের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা এপ্রিলে আয়োজন করা হবে। বর্তমানে হাসপাতালে ৮০ শতাংশ সাধারণ বেড ও ৬০ শতাংশ আইসিইউ খালি রয়েছে। সারাদেশে দুই হাজার করোনা রোগী এবং ২০০ জন আইসিইউতে চিকিৎসা নিচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মুরসালিন নোমানী এবং সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে সংগঠনের সদস্যদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির আহ্বান জানান। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘প্রত্যেক সাংবাদিক করোনার টিকা পাবেন।’ অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রয়াত সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সেরামের ভ্যাকসিনের দাম

এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ৪ ডলার করে সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা কিনছি। আর পরিবহনসহ সংরক্ষণে যে এক ডলার খরচ, সেটাও দেয়া হচ্ছে। আমাদের চুক্তি আছে যে, ভারত সরকার কম দামে কিনলে আমাদের কম দামে দেবে। বেশি দাম হলে আমরা সেই দামে নেব না, আমরা কম দামেই নেব। আমাদের কাছে যদি ২৫-২৬ জানুয়ারি ভ্যাকসিন চলে আসে, তারপরও আমাদের প্রিপারেশনের জন্য টাইম দরকার। আশা করি, সপ্তাহখানেকের মধ্যে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করতে পারব।’

বেসরকারি পর্যায়ে ভ্যাকসিন আনার অনুমতি দেয়া হবে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘একটি ভ্যাকসিনের দাম যেটা হবে, সেটি নির্ধারণ করার জন্য সরকারি প্রক্রিয়া আছে। সেই প্রক্রিয়া অনুযায়ী আমরা দামও নির্ধারণ করে দেব। ভ্যাকসিনের যে নীতিমালা সেটিও করা হয়েছে, নীতিমালা ফাইনাল করে দেয়া হবে।’

নীতিমালা অনুযায়ী ভ্যাকসিন দেয়া হবে- জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সব ভ্যাকসিনের দাম এক হবে না। দেশ ভিন্নতায় ভ্যাকসিনের দাম ভিন্ন ভিন্ন হবে। কাজেই সেদিক লক্ষ্য রেখে এই দাম নির্ধারণ করে দেব। যেভাবে আমরা টেস্টের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছি, সেভাবে ভ্যাকসিনের দামও নির্ধারণ করে দেয়া হবে।’

দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের ভ্যাকসিন তৈরির বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গ্লোব বায়োটেককে আমরা সাধুবাদ জানাই। তারা একটি ভ্যাকসিন ডেভেলপ করেছে। একটি ভ্যাকসিন প্রস্তুত করতে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, তাদের সেগুলো অনুসরণ করে আসতে হবে। আমরা দেখব, আমাদের দেশীয় প্রোডাক্ট যদি মানসম্পন্ন হয়, আমরা সবসময় সেটি গ্রহণ করে থাকি। আমাদের কাছে যখন যে সাহায্য চাইবে আমরা দেব।’