করোনার মধ্যেও ইস্পাত উৎপাদনে বড় রেকর্ড চীনের

করোনায় সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। অনেক দেশের উৎপাদন খাত একেবারে শূন্যের কোটায় নিমেছিল। সেই অবস্থায়ও করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের একাধিক খাত ভালো করছে। এরমধ্যে দেশটির ইস্পাত খাত বড় ধরনের রেকর্ড করেছে। জানা গেছে, ২০২০ সালে দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন ১০০ কোটি টনের মাইলফলক ছাড়িয়েছে। দেশটির ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকসের (এনবিএস) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মেটাল বুলেটিন।

মেটাল বুলেটিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারীর মধ্যেও ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশগুলোর বৈশ্বিক তালিকায় চীনের অবস্থান শীর্ষে। শিল্প ধাতুটির মোট বৈশ্বিক উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি চীনের কারখানাগুলো জোগান দেয়। দেশটির সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে চীনের কারখানাগুলোয় সব মিলিয়ে ১০৫ কোটি টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন বেড়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে টানা পাঁচ বছর ধরে চীনের ইস্পাত উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে। চীনের ইতিহাসে এবারই প্রথম শিল্প ধাতুটির উৎপাদন ১০০ কোটি টন ছাড়ালো। ২০২০ সালে চীনে সব মিলিয়ে ১৩২ কোটি টন পরিশোধিত ইস্পাত ও ইস্পাতজাত পণ্য উৎপাদন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে এনবিএস, যা আগের বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে বিদায়ী বছরে দেশটিতে হট মেটাল উৎপাদনের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৮৮ কোটি ৭৫ লাখ ২০ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে।

এদিকে ইস্পাত শিল্পসংশ্লিষ্ট বেসরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মাইস্টিলের এক জরিপভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সদ্যবিদায়ী ২০২০ সালে চীনের কারখানাগুলোয় সব মিলিয়ে ২ কোটি ৯৮ লাখ ৪০ হাজার টন স্টেইনলেস স্টিল উৎপাদন হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে স্টেইনলেস স্টিল উৎপাদন বেড়েছে ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ। মাসভিত্তিক হিসাবে সর্বশেষ ডিসেম্বরে চীনের কারখানাগুলোয় ৯১ লাখ ২৫ হাজার টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে এনবিএস। আগের মাসে অপরিশোধিত ইম্পাত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৮৭ লাখ ৬৬ হাজার টন। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে চীনে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন বেড়েছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। গত মাসে চীনের কারখানাগুলোয় ইস্পাতের দৈনিক গড় উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯ লাখ ৪০ হাজার টনে, যা এক মাসের ব্যবধানে দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চাঙ্গা ভাবের মধ্য দিয়ে ২০২০ সাল শুরু করেছিল চীনা ইস্পাত শিল্প। তবে সময় যত গড়িয়েছে করোনা মহামারী পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটেছে। টানা লকডাউনে ছিল চীনের বিভিন্ন অঞ্চল। কার্যত স্থবির ছিল আমদানি-রপ্তানিসহ দেশটির সামগ্রিক অর্থনীতির চাকা। তবে এমন সংকটময় পরিস্থিতি ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চলেছে। ওই সময় থেকে করোনাকবলিত চীনা অর্থনীতির চাকা নতুন করে ঘুরতে শুরু করে, যার প্রমাণ মিলেছে দেশটির ইস্পাত উৎপাদনের তথ্যে। করোনার অভিঘাত মোকাবিলার পরও দেশটিতে প্রথমবারের মতো অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন ১০০ কোটি টন ছাড়িয়েছে।

এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জির ভাইস প্রেসিডেন্ট পল গ্রে বলেন, একটি দেশের ইস্পাত শিল্পের গতিপ্রকৃতি দেখে সামগ্রিক অর্থনৈতিক ভিত্তির আন্দাজ পাওয়া যায়। করোনা মহামারীতে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে যেখানে ইস্পাত উৎপাদন কমে এসেছে, সেখানে ব্যতিক্রম ছিল চীন। কমার বদলে গত বছর দেশটির ইস্পাত উৎপাদন প্রবৃদ্ধিতে নতুন মাইলফলক রচিত হয়েছে, যা করোনাকালীন অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে চীনকে সহায়তা করেছে।

তবে চলতি বছর চীনা ইস্পাত শিল্পের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে আকরিক লোহার বাড়তি দাম। ইস্পাত কারখানাগুলোর অন্যতম এ কাঁচামালটির দাম লাফিয়ে বাড়ছে, যা ইস্পাত উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে।

বুধবার, ২০ জানুয়ারী ২০২১ , ৬ মাঘ ১৪২৭, ৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

করোনার মধ্যেও ইস্পাত উৎপাদনে বড় রেকর্ড চীনের

সংবাদ ডেস্ক |

image

করোনায় সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। অনেক দেশের উৎপাদন খাত একেবারে শূন্যের কোটায় নিমেছিল। সেই অবস্থায়ও করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের একাধিক খাত ভালো করছে। এরমধ্যে দেশটির ইস্পাত খাত বড় ধরনের রেকর্ড করেছে। জানা গেছে, ২০২০ সালে দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন ১০০ কোটি টনের মাইলফলক ছাড়িয়েছে। দেশটির ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকসের (এনবিএস) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মেটাল বুলেটিন।

মেটাল বুলেটিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারীর মধ্যেও ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশগুলোর বৈশ্বিক তালিকায় চীনের অবস্থান শীর্ষে। শিল্প ধাতুটির মোট বৈশ্বিক উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি চীনের কারখানাগুলো জোগান দেয়। দেশটির সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে চীনের কারখানাগুলোয় সব মিলিয়ে ১০৫ কোটি টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন বেড়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে টানা পাঁচ বছর ধরে চীনের ইস্পাত উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে। চীনের ইতিহাসে এবারই প্রথম শিল্প ধাতুটির উৎপাদন ১০০ কোটি টন ছাড়ালো। ২০২০ সালে চীনে সব মিলিয়ে ১৩২ কোটি টন পরিশোধিত ইস্পাত ও ইস্পাতজাত পণ্য উৎপাদন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে এনবিএস, যা আগের বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে বিদায়ী বছরে দেশটিতে হট মেটাল উৎপাদনের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৮৮ কোটি ৭৫ লাখ ২০ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে।

এদিকে ইস্পাত শিল্পসংশ্লিষ্ট বেসরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মাইস্টিলের এক জরিপভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সদ্যবিদায়ী ২০২০ সালে চীনের কারখানাগুলোয় সব মিলিয়ে ২ কোটি ৯৮ লাখ ৪০ হাজার টন স্টেইনলেস স্টিল উৎপাদন হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে স্টেইনলেস স্টিল উৎপাদন বেড়েছে ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ। মাসভিত্তিক হিসাবে সর্বশেষ ডিসেম্বরে চীনের কারখানাগুলোয় ৯১ লাখ ২৫ হাজার টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে এনবিএস। আগের মাসে অপরিশোধিত ইম্পাত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৮৭ লাখ ৬৬ হাজার টন। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে চীনে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন বেড়েছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। গত মাসে চীনের কারখানাগুলোয় ইস্পাতের দৈনিক গড় উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯ লাখ ৪০ হাজার টনে, যা এক মাসের ব্যবধানে দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চাঙ্গা ভাবের মধ্য দিয়ে ২০২০ সাল শুরু করেছিল চীনা ইস্পাত শিল্প। তবে সময় যত গড়িয়েছে করোনা মহামারী পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটেছে। টানা লকডাউনে ছিল চীনের বিভিন্ন অঞ্চল। কার্যত স্থবির ছিল আমদানি-রপ্তানিসহ দেশটির সামগ্রিক অর্থনীতির চাকা। তবে এমন সংকটময় পরিস্থিতি ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চলেছে। ওই সময় থেকে করোনাকবলিত চীনা অর্থনীতির চাকা নতুন করে ঘুরতে শুরু করে, যার প্রমাণ মিলেছে দেশটির ইস্পাত উৎপাদনের তথ্যে। করোনার অভিঘাত মোকাবিলার পরও দেশটিতে প্রথমবারের মতো অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন ১০০ কোটি টন ছাড়িয়েছে।

এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জির ভাইস প্রেসিডেন্ট পল গ্রে বলেন, একটি দেশের ইস্পাত শিল্পের গতিপ্রকৃতি দেখে সামগ্রিক অর্থনৈতিক ভিত্তির আন্দাজ পাওয়া যায়। করোনা মহামারীতে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে যেখানে ইস্পাত উৎপাদন কমে এসেছে, সেখানে ব্যতিক্রম ছিল চীন। কমার বদলে গত বছর দেশটির ইস্পাত উৎপাদন প্রবৃদ্ধিতে নতুন মাইলফলক রচিত হয়েছে, যা করোনাকালীন অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে চীনকে সহায়তা করেছে।

তবে চলতি বছর চীনা ইস্পাত শিল্পের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে আকরিক লোহার বাড়তি দাম। ইস্পাত কারখানাগুলোর অন্যতম এ কাঁচামালটির দাম লাফিয়ে বাড়ছে, যা ইস্পাত উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে।