নাব্য সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে নদীর উৎস ও পতনমুখ খনন করে গভীর করতে হবে

নদীবেষ্টিত বরিশাল বিভাগে নৌযোগাযোগের উন্নয়নে ‘বরিশাল বিভাগের নদীসমূহের নাব্যতা বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা হ্রাস, জলাভূমি বাস্তু পুনরুদ্ধার, সেচ ও ল্যান্ডিং সুবিধাদি বৃদ্ধি করে নদী ব্যবস্থাপনার সম্ভাব্যতা যাচাই’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা নিয়ে গতকাল বরিশাল সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি। বরিশাল বিভাগীয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, নৌযান মালিক এবং সাংবাদিকরা এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে তাদের মতামত দেন।

বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) ড. অমিতাভ সরকার কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস’কে (সিইজিআইএস) নিয়োগ দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।

কর্মশালায় উন্মুক্ত মতামতে বক্তারা বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নদী খনন করলেই নদী রক্ষা হয় না। প্রতিবছরই নদী খনন হচ্ছে, পরের বছর আবার একই নদীতে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। এ সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান পেতে হলে প্রতিটি নদীর উৎস্য ও পতনমুখ খনন করে গভীর করতে হবে’।

ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চ সুরভীর স্বত্বাধিকারী রিয়াজ উল কবীর বলেন, নদী খনন কার্যক্রমে নৌযান মালিকদের সম্পৃক্ত করা হয় না। ফলে কতটুকু খনন প্রয়োজন, কতটুকু করা হয় তা অজানাই থেকে যায় নৌযান মালিকদের।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেন, আগের সরকারগুলো নৌপথ উন্নয়নে মনোযোগ দেয়নি। তারা সড়কপথের উন্নয়নে বেশি মনোযোগী ছিলেন। এর পেছনে পরিবহন আমদানি ব্যবসা ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেক নৌপথই এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী ইশতেহারে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ উন্নয়নের কথা বলেছেন।

বিশ্বে দ্বিতীয় কোন নজির নেই যেখানে নির্বাচনী ইশতেহারে নৌপথ উন্নয়ন যুক্ত করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ আমাদের পুরো জাতিকে সাহসী করে তুলেছে। এখন আমরা নৌপথ ও সড়কপথ যেকোন উন্নয়নে বড় প্রকল্প গ্রহণ করতে ভয় পাই না।

এছাড়া নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রণের অধীন ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে বিদ্যমান সব ঘাটের তথ্য উদঘাটনে সিইজিআইএস সমীক্ষা এলাকায় সব নৌপথে মাঠ পর্যায়ে জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে মোট ২৪৪টি ঘাট চিহ্নিত করা হয়।

ট্রাফিক সমীক্ষা, স্থানীয় জনগণের চাহিদা, ঘাটের প্রয়োজনীয় সুবিধাদির অভাব, নৌপথের সংযোগ, নদীর অবস্থা ও প্রস্থ প্রভৃতি বিবেচনা করে নতুন ঘাট এবং বিদ্যমান ঘাট উন্নয়নের জন্য গৃহীত পরিকল্পনার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই প্রস্তাবনা অনুযায়ী বিভাগের মধ্যে বরিশাল জেলার উজিরপুর, ঝালকাঠির চারাখালী ও পিরোজপুরে একটি করে নতুন লঞ্চঘাট এবং বরিশালের জালুখালী, ঝালকাঠির ডিসি পার্ক ও পিরোজপুরের ডিসি পার্কে পর্যটনের জন্য ঘাটের প্রস্তাবনা করা হয়েছে।

কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন- বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য ফিদা খান, বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, ঝালকাঠীর জেলা প্রশাসক মো. জহুর আলী, বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন, লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য সাইদুর রহমান রিন্টু প্রমুখ।

বুধবার, ২০ জানুয়ারী ২০২১ , ৬ মাঘ ১৪২৭, ৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

বরিশালে কর্মশালায় বক্তারা

নাব্য সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে নদীর উৎস ও পতনমুখ খনন করে গভীর করতে হবে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল

নদীবেষ্টিত বরিশাল বিভাগে নৌযোগাযোগের উন্নয়নে ‘বরিশাল বিভাগের নদীসমূহের নাব্যতা বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা হ্রাস, জলাভূমি বাস্তু পুনরুদ্ধার, সেচ ও ল্যান্ডিং সুবিধাদি বৃদ্ধি করে নদী ব্যবস্থাপনার সম্ভাব্যতা যাচাই’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা নিয়ে গতকাল বরিশাল সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি। বরিশাল বিভাগীয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, নৌযান মালিক এবং সাংবাদিকরা এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে তাদের মতামত দেন।

বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) ড. অমিতাভ সরকার কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস’কে (সিইজিআইএস) নিয়োগ দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।

কর্মশালায় উন্মুক্ত মতামতে বক্তারা বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নদী খনন করলেই নদী রক্ষা হয় না। প্রতিবছরই নদী খনন হচ্ছে, পরের বছর আবার একই নদীতে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। এ সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান পেতে হলে প্রতিটি নদীর উৎস্য ও পতনমুখ খনন করে গভীর করতে হবে’।

ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চ সুরভীর স্বত্বাধিকারী রিয়াজ উল কবীর বলেন, নদী খনন কার্যক্রমে নৌযান মালিকদের সম্পৃক্ত করা হয় না। ফলে কতটুকু খনন প্রয়োজন, কতটুকু করা হয় তা অজানাই থেকে যায় নৌযান মালিকদের।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেন, আগের সরকারগুলো নৌপথ উন্নয়নে মনোযোগ দেয়নি। তারা সড়কপথের উন্নয়নে বেশি মনোযোগী ছিলেন। এর পেছনে পরিবহন আমদানি ব্যবসা ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেক নৌপথই এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী ইশতেহারে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ উন্নয়নের কথা বলেছেন।

বিশ্বে দ্বিতীয় কোন নজির নেই যেখানে নির্বাচনী ইশতেহারে নৌপথ উন্নয়ন যুক্ত করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ আমাদের পুরো জাতিকে সাহসী করে তুলেছে। এখন আমরা নৌপথ ও সড়কপথ যেকোন উন্নয়নে বড় প্রকল্প গ্রহণ করতে ভয় পাই না।

এছাড়া নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রণের অধীন ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে বিদ্যমান সব ঘাটের তথ্য উদঘাটনে সিইজিআইএস সমীক্ষা এলাকায় সব নৌপথে মাঠ পর্যায়ে জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে মোট ২৪৪টি ঘাট চিহ্নিত করা হয়।

ট্রাফিক সমীক্ষা, স্থানীয় জনগণের চাহিদা, ঘাটের প্রয়োজনীয় সুবিধাদির অভাব, নৌপথের সংযোগ, নদীর অবস্থা ও প্রস্থ প্রভৃতি বিবেচনা করে নতুন ঘাট এবং বিদ্যমান ঘাট উন্নয়নের জন্য গৃহীত পরিকল্পনার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই প্রস্তাবনা অনুযায়ী বিভাগের মধ্যে বরিশাল জেলার উজিরপুর, ঝালকাঠির চারাখালী ও পিরোজপুরে একটি করে নতুন লঞ্চঘাট এবং বরিশালের জালুখালী, ঝালকাঠির ডিসি পার্ক ও পিরোজপুরের ডিসি পার্কে পর্যটনের জন্য ঘাটের প্রস্তাবনা করা হয়েছে।

কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন- বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য ফিদা খান, বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, ঝালকাঠীর জেলা প্রশাসক মো. জহুর আলী, বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন, লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য সাইদুর রহমান রিন্টু প্রমুখ।