তিন দফা সময় বাড়িয়েও নির্মাণ কাজের ২০ ভাগও শেষ হয়নি

প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন মেনে নেয়া যায় না : তদন্ত কমিটি

তিন দফা সময় বৃদ্ধির পরও রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল ও ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণ কাজের ২০ ভাগও হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রহণ করা এ প্রকল্প দুটির কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা কেউ বলতে পারছে না। অভিযোগ রয়েছে, অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন করে প্রকল্প ব্যয় ১০৭ ভাগ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে লুটপাটের ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এ দুটি মেগা প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্ব

মেগা প্রকল্প দুটির অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন করে প্রকল্প ব্যয় ১০৭ ভাগ বৃদ্ধি করার ঘটনায় ইউজিসির তদন্ত কমিটি সরেজমিন নির্মাণ কাজ পরিদর্শনকালে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

কমিটি গত রোববার তদন্ত করতে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিয়োগ করা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কেউ বা প্রকৌশল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তাকে সেখানে পায়নি। শুধু উপাচার্যের পক্ষে দুজন সেখানে উপস্থিত ছিলেন, যারা এ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন বলে তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, কোন কারণ ছাড়াই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মুনওয়ার হাবিব অ্যান্ড প্রাকৃত নির্মাণ লিমিটেডকে বাদ দিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ তার আপন ভাগ্নে মঞ্জুর কাদের হেমায়েত উদ্দিনকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। উপাচার্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভাগ্নেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস কমিটির সদস্য হিসেবেও নিয়োগ দিয়েছেন।

সূত্র আরও জানায়, দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রক্রিয়া করেছেন উপাচার্যের ভাগ্নে মঞ্জুর কাদের ফরমেট তৈরি করে নিজেই। তিনি দ্বিতীয় পরামর্শক হিসেবে আবেদন করেছেন আবার নির্বাচকের দায়িত্বও পালন করছেন। এ ক্ষেত্রে সব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে অনিয়মের রেকর্ড করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। দশ তলাবিশিষ্ট শেখ হাসিনা হলের জন্য ৫১ দশমিক ৩৫ কোটি টাকা এবং ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণে ২৬ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই সময় উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ড. একেএম নুরন্নবী।

২০১৬ সালের জুন মানে এ দুটি কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। শেখ হাসিনা হলের কাজের ঠিকাদারি পান আবদুস সালাম জেভি এবং ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ঠিকাদারি পান মের্সাস হাবিব অ্যান্ড কোং জেভি। কাজ দুটি শেষ করতে সময় সীমা নির্ধারণ করা হয় দেড় বছর।

নির্মাণ কাজ চলাকালে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন করেন। তিনি ইচ্ছামতো নকশা তৈরি করেন, যার মূল উদ্দেশ্য ব্যয় বৃদ্ধি দেখানো। তিনি পূর্বের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে কোন সুনিদিষ্ট কারণ ছাড়াই কোন নিয়ম-কানুন না মেনেই অপসারণ করেন। দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপাচার্য তার ভাগ্নে মঞ্জুর কাদের হেমায়েত উদ্দিনকে নিয়োগ দেন। নিয়োগ পাবার পর হেমায়েত উদ্দিন পূর্বের অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন করেন। নতুন করে তৈরি করা নকশা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির অনুমোদন ছিল না। সে কারণে শেখ হাসিনা হলের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পূর্বের অনুমোদিত আর্কিটেকচারাল ড্রইংয়ে কিচেন এবং করিডোর অংশ (দুই অংশের ডাইনিং রুমের সংযোগ করিডোর) একতলা বিশিষ্ট ছিল। ঐ অংশের ভিত্তি দেয়া হয়েছিল একতলা হিসেবে। কিন্তু দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই কিচেন এবং করিডোর অংশ একতলার পরিবর্তে তিনতলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, যা খুবই বিপদজ্জনক।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইচ্ছামতো যত্রতত্র ভবনের এরিয়া বাড়িয়েছে। যা জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে প্রকৌশল বিভাগ মনে করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রকৌশলী জানান, আন্ডার গ্রাজুয়েট লেভেলের হোস্টেল বিল্ডিংয়ে কোথাও প্রতিটি রুমের সঙ্গে এটাচ টয়লেট নেই বা থাকে না। তারপরেও ৮৮১টি টয়লেট নির্মাণে নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। এটা হলে পুরো ভবনটি টয়লেট সর্বস্ব ভবনে এবং মরণ ফাঁদে পরিণত হবে। দ্বিতীয় পরামর্শক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাত্রী হলের এরিয়া ১৭ হাজার ৯শ বর্গমিটার থেকে বাড়িয়ে ২২ হাজার ৯৬৬ বর্গমিটার করেছে। যা ডিপিপির অনুমোদনের তুলনায় প্রায় ৫৪ হাজার বর্গফুট বা ৩৩ শতাংশ বেশি।

ঠিকাদারের যোগসাজশে প্রকল্প ব্যয় ১০৭ ভাগ বৃদ্ধি করে ৫১ দশমিক ৩৫ কোটি টাকা থেকে ১০৭ কোটি টাকা দেখানো হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সংশোধিত প্রকল্প প্রাক্কলন অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির বিরোধিতায় তা ফেরত পাঠানো হয়। তারপরও অনেকটা গায়ের জোরে শেখ হাসিনা হল দোতলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির পরামর্শ পাশকাটিয়ে ডিপিপির মূল্য প্রায় ১০৭ ভাগ বৃদ্ধি করে পুনরায় স্টিয়ারিং কমিটির কাছে উপস্থাপন করে পাস করানোর চক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

পিআইসি সদস্য জহুরুল ইসলাম প্রকল্প শেষ হবার আগেই পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করার কঠোর সমালোচনা করেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রধান আসমা নাসরিন ডিপিপি মূল্য ১০৭ ভাগ বৃদ্ধির বিষয়টি আরও পর্যালোচনা ও নিরীক্ষা করা প্রয়োজন বলে জানান। শেখ হাসিনা হলে প্রতিটি কক্ষে এটাচড টয়লেট স্থাপনের বিষয়টিতে আপত্তি তুলে প্রচলিত টয়লেট জোন স্থাপন করে নকশা সংশোধনের ওপর জোরালো মতামত দেন।

ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান, ইউজিসি সদস্য আলমগীর হোসেন ভুইয়া ও দুর্গারানী দাসের তদন্ত কমিটি গত ১৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনা হলের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করতে এসে অননুমোদিত নকশায় কাজ শুরু করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে অনুমোদিত নকশার বাইরে কাজ করার ব্যাপারে প্রশ্ন করেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ওপর দায় চাপান।

সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর সঙ্গে বেশ কয়েকবার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বুধবার, ২০ জানুয়ারী ২০২১ , ৬ মাঘ ১৪২৭, ৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

বেরোবিতে শেখ হাসিনা হল ও ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট

তিন দফা সময় বাড়িয়েও নির্মাণ কাজের ২০ ভাগও শেষ হয়নি

প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন মেনে নেয়া যায় না : তদন্ত কমিটি

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

তিন দফা সময় বৃদ্ধির পরও রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল ও ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণ কাজের ২০ ভাগও হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রহণ করা এ প্রকল্প দুটির কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা কেউ বলতে পারছে না। অভিযোগ রয়েছে, অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন করে প্রকল্প ব্যয় ১০৭ ভাগ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে লুটপাটের ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এ দুটি মেগা প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্ব

মেগা প্রকল্প দুটির অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন করে প্রকল্প ব্যয় ১০৭ ভাগ বৃদ্ধি করার ঘটনায় ইউজিসির তদন্ত কমিটি সরেজমিন নির্মাণ কাজ পরিদর্শনকালে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

কমিটি গত রোববার তদন্ত করতে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিয়োগ করা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কেউ বা প্রকৌশল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তাকে সেখানে পায়নি। শুধু উপাচার্যের পক্ষে দুজন সেখানে উপস্থিত ছিলেন, যারা এ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন বলে তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, কোন কারণ ছাড়াই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মুনওয়ার হাবিব অ্যান্ড প্রাকৃত নির্মাণ লিমিটেডকে বাদ দিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ তার আপন ভাগ্নে মঞ্জুর কাদের হেমায়েত উদ্দিনকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। উপাচার্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভাগ্নেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস কমিটির সদস্য হিসেবেও নিয়োগ দিয়েছেন।

সূত্র আরও জানায়, দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রক্রিয়া করেছেন উপাচার্যের ভাগ্নে মঞ্জুর কাদের ফরমেট তৈরি করে নিজেই। তিনি দ্বিতীয় পরামর্শক হিসেবে আবেদন করেছেন আবার নির্বাচকের দায়িত্বও পালন করছেন। এ ক্ষেত্রে সব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে অনিয়মের রেকর্ড করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। দশ তলাবিশিষ্ট শেখ হাসিনা হলের জন্য ৫১ দশমিক ৩৫ কোটি টাকা এবং ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণে ২৬ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই সময় উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ড. একেএম নুরন্নবী।

২০১৬ সালের জুন মানে এ দুটি কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। শেখ হাসিনা হলের কাজের ঠিকাদারি পান আবদুস সালাম জেভি এবং ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ঠিকাদারি পান মের্সাস হাবিব অ্যান্ড কোং জেভি। কাজ দুটি শেষ করতে সময় সীমা নির্ধারণ করা হয় দেড় বছর।

নির্মাণ কাজ চলাকালে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন করেন। তিনি ইচ্ছামতো নকশা তৈরি করেন, যার মূল উদ্দেশ্য ব্যয় বৃদ্ধি দেখানো। তিনি পূর্বের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে কোন সুনিদিষ্ট কারণ ছাড়াই কোন নিয়ম-কানুন না মেনেই অপসারণ করেন। দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপাচার্য তার ভাগ্নে মঞ্জুর কাদের হেমায়েত উদ্দিনকে নিয়োগ দেন। নিয়োগ পাবার পর হেমায়েত উদ্দিন পূর্বের অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন করেন। নতুন করে তৈরি করা নকশা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির অনুমোদন ছিল না। সে কারণে শেখ হাসিনা হলের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পূর্বের অনুমোদিত আর্কিটেকচারাল ড্রইংয়ে কিচেন এবং করিডোর অংশ (দুই অংশের ডাইনিং রুমের সংযোগ করিডোর) একতলা বিশিষ্ট ছিল। ঐ অংশের ভিত্তি দেয়া হয়েছিল একতলা হিসেবে। কিন্তু দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই কিচেন এবং করিডোর অংশ একতলার পরিবর্তে তিনতলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, যা খুবই বিপদজ্জনক।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইচ্ছামতো যত্রতত্র ভবনের এরিয়া বাড়িয়েছে। যা জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে প্রকৌশল বিভাগ মনে করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রকৌশলী জানান, আন্ডার গ্রাজুয়েট লেভেলের হোস্টেল বিল্ডিংয়ে কোথাও প্রতিটি রুমের সঙ্গে এটাচ টয়লেট নেই বা থাকে না। তারপরেও ৮৮১টি টয়লেট নির্মাণে নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। এটা হলে পুরো ভবনটি টয়লেট সর্বস্ব ভবনে এবং মরণ ফাঁদে পরিণত হবে। দ্বিতীয় পরামর্শক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাত্রী হলের এরিয়া ১৭ হাজার ৯শ বর্গমিটার থেকে বাড়িয়ে ২২ হাজার ৯৬৬ বর্গমিটার করেছে। যা ডিপিপির অনুমোদনের তুলনায় প্রায় ৫৪ হাজার বর্গফুট বা ৩৩ শতাংশ বেশি।

ঠিকাদারের যোগসাজশে প্রকল্প ব্যয় ১০৭ ভাগ বৃদ্ধি করে ৫১ দশমিক ৩৫ কোটি টাকা থেকে ১০৭ কোটি টাকা দেখানো হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সংশোধিত প্রকল্প প্রাক্কলন অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির বিরোধিতায় তা ফেরত পাঠানো হয়। তারপরও অনেকটা গায়ের জোরে শেখ হাসিনা হল দোতলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির পরামর্শ পাশকাটিয়ে ডিপিপির মূল্য প্রায় ১০৭ ভাগ বৃদ্ধি করে পুনরায় স্টিয়ারিং কমিটির কাছে উপস্থাপন করে পাস করানোর চক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

পিআইসি সদস্য জহুরুল ইসলাম প্রকল্প শেষ হবার আগেই পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করার কঠোর সমালোচনা করেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রধান আসমা নাসরিন ডিপিপি মূল্য ১০৭ ভাগ বৃদ্ধির বিষয়টি আরও পর্যালোচনা ও নিরীক্ষা করা প্রয়োজন বলে জানান। শেখ হাসিনা হলে প্রতিটি কক্ষে এটাচড টয়লেট স্থাপনের বিষয়টিতে আপত্তি তুলে প্রচলিত টয়লেট জোন স্থাপন করে নকশা সংশোধনের ওপর জোরালো মতামত দেন।

ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান, ইউজিসি সদস্য আলমগীর হোসেন ভুইয়া ও দুর্গারানী দাসের তদন্ত কমিটি গত ১৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনা হলের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করতে এসে অননুমোদিত নকশায় কাজ শুরু করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে অনুমোদিত নকশার বাইরে কাজ করার ব্যাপারে প্রশ্ন করেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ওপর দায় চাপান।

সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর সঙ্গে বেশ কয়েকবার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।