আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ঢাকার বাইরে ৪ স্থানে

মোহাম্মদপুরের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত চলবে সবুজ রঙের বাস। পরীক্ষামূলকভাবে আগামী এপ্রিল থেকে এই রুটে চালু করা হবে। প্রাথমিকভাবে ঘাটারচর-মতিঝিল পর্যন্ত চালু হওয়ার কথা থাকলেও তা বাড়িয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। প্রায় ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রুটে ৩৪টি স্থান বাস স্টপেজের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার বাইবে ৪টি স্থানে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রাত ১২টার পর বিআরটিসির বাস যত্রতত্র রাখা যাবে না। এই বাসগুলো তাদের নিজস্ব ডিপো-টার্মিনাল বা তাদের জায়গায় রাখতে হবে। গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন কমিটির পঞ্চদশ সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ডিএসসিসি’র মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম, রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার, রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান এহছানে এলাহী, রাজউক চেয়ারম্যান সাঈদ নূর আলম, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ,ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমানসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী, প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউর রহমান প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আগে ঘাটারচর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পাইলট রুট চালুর সিদ্ধান্ত ছিল। সে মোতাবেক কমিটি কার্যক্রম শুরু করার পর সার্বিক বাস্তবতায় দেখা যায় যে, ঘাটারচর থেকে শুধু মতিঝিল পযর্ন্ত রুট নির্ধারণ করা হলে এটি ফলপ্রসু নাও হতে পারে। এ জন্য পাইলট রুটের পরিধি বাড়িয়ে ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত করা হচ্ছে।’

বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে একশ’ কোটি টাকার বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘এই বরাদ্দ হতে বর্তমানে চলাচলকারী বাসগুলোর আধুনিকায়নের জন্য মালিকদের মতামতের ভিত্তিতে সহজ সুদে ঋণের মাধ্যমে এই টাকা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলাপ হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে মালিকেরা যাতে এই ঋণ পান সে ব্যাপারে দ্রুত ডিটিসিএ চিঠি লিখবে।’

ঢাকা দক্ষিণের মেয়র বলেন, ‘ঢাকার বাইরে থেকে আসা বাস রাখার জন্য রাজধানীর বাইরে চারটি অন্তঃজেলা টার্মিনাল করে শহরের ভেতরেরগুলোকে সিটি টার্মিনালে রূপান্তর করা হবে। আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল করার জন্য চিহ্নিত ১০টি জায়গার কয়েকটি আমরা পরিদর্শন করেছি। সরজমিন পরিদর্শনের প্রেক্ষিতে আমরা বিরুলিয়ার বাটুলিয়াতে একটি জায়গা নির্ধারণ করেছি। সেখানে একটি আন্তঃজেলা টার্মিনাল হবে। মূলত উত্তরাঞ্চলের যে বাসগুলো আছে, সেখানে এসব বাস থাকবে। সাভারের হেমায়েতপুরে দুটি জায়গা দেখে একটি, দক্ষিণাঞ্চলের জন্য কেরানীগঞ্জের বাঘাইরে একটি জায়গা নির্ধারণ করেছি। আরেকটি জায়গা কাঁচপুরে। এই চারটি জায়গায় আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল স্থাপন করলে ঢাকা শহরের ওপর থেকে চাপ কমে যাবে। সায়েদাবাদ, গাবতলী এবং মহাখালী টার্মিনালগুলোকে আমরা সিটি টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারব। বাকি চারটি টার্মিনাল সারাদেশের যে বাসগুলো ঢাকামুখী যাতায়াত করে, তাদের জন্য নির্ধারণ করতে পারব। প্রাথমিকভাবে এই সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত করে মন্ত্রী বরাবর পাঠিয়ে দেব। সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেব।’

কতগুলো কোম্পানির মাধ্যমে ঢাকায় বাস চালানো হবে, সেই নীতিমালা শীঘ্রই তৈরি হচ্ছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে যে কোম্পানির মাধ্যমে চলবে, কতগুলো বাস চলবে, কতগুলো প্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত হবে, আয় কিভাবে বণ্টন হবে, কীভাবে পরিচালিত হবে- সামগ্রিক বিষয় নিয়ে নীতিমালা হবে। আশা করি ঢাকা পরিবহন সম্বয় কর্তৃপক্ষ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে অংশীজনদের নিয়ে বসে একটি খসড়া তৈরি করবে। আগামী সভার আগেই খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করলে কোম্পানি গঠনের দিকে এগিয়ে যাবে।’

রাত ১২টার পরে যত্রতত্র বিআরটিসির বাস রাখতে দেয়া হবে না জানিয়ে তাপস বলেন, ‘আগামী ২৬ জানুয়ারি বিআরটিএকে ভাড়া নির্ধারণের যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তারা সেখানে সিদ্ধান্ত নেবে। গত সভায় একটি নির্দেশনা দিয়েছিলাম, রাত ১২টার পর বিআরটিসির বাস যত্রতত্র রাখা যাবে না। এই বাসগুলো তাদের নিজস্ব ডিপো-টার্মিনাল বা তাদের জায়গায় রাখতে হবে। এ বিষয়ে অনেক দূর অগ্রগতি হয়েছে। তবে কিছু বাস এখনও বাইরে থাকছে জায়গা সংকুলান না হওয়ায়। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিআরটিসি সব বাস থাকার ব্যবস্থা করবে।’

বুধবার, ২০ জানুয়ারী ২০২১ , ৬ মাঘ ১৪২৭, ৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ঢাকার বাইরে ৪ স্থানে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

মোহাম্মদপুরের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত চলবে সবুজ রঙের বাস। পরীক্ষামূলকভাবে আগামী এপ্রিল থেকে এই রুটে চালু করা হবে। প্রাথমিকভাবে ঘাটারচর-মতিঝিল পর্যন্ত চালু হওয়ার কথা থাকলেও তা বাড়িয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। প্রায় ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রুটে ৩৪টি স্থান বাস স্টপেজের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার বাইবে ৪টি স্থানে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রাত ১২টার পর বিআরটিসির বাস যত্রতত্র রাখা যাবে না। এই বাসগুলো তাদের নিজস্ব ডিপো-টার্মিনাল বা তাদের জায়গায় রাখতে হবে। গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন কমিটির পঞ্চদশ সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ডিএসসিসি’র মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম, রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার, রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান এহছানে এলাহী, রাজউক চেয়ারম্যান সাঈদ নূর আলম, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ,ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমানসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী, প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউর রহমান প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আগে ঘাটারচর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পাইলট রুট চালুর সিদ্ধান্ত ছিল। সে মোতাবেক কমিটি কার্যক্রম শুরু করার পর সার্বিক বাস্তবতায় দেখা যায় যে, ঘাটারচর থেকে শুধু মতিঝিল পযর্ন্ত রুট নির্ধারণ করা হলে এটি ফলপ্রসু নাও হতে পারে। এ জন্য পাইলট রুটের পরিধি বাড়িয়ে ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত করা হচ্ছে।’

বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে একশ’ কোটি টাকার বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘এই বরাদ্দ হতে বর্তমানে চলাচলকারী বাসগুলোর আধুনিকায়নের জন্য মালিকদের মতামতের ভিত্তিতে সহজ সুদে ঋণের মাধ্যমে এই টাকা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলাপ হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে মালিকেরা যাতে এই ঋণ পান সে ব্যাপারে দ্রুত ডিটিসিএ চিঠি লিখবে।’

ঢাকা দক্ষিণের মেয়র বলেন, ‘ঢাকার বাইরে থেকে আসা বাস রাখার জন্য রাজধানীর বাইরে চারটি অন্তঃজেলা টার্মিনাল করে শহরের ভেতরেরগুলোকে সিটি টার্মিনালে রূপান্তর করা হবে। আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল করার জন্য চিহ্নিত ১০টি জায়গার কয়েকটি আমরা পরিদর্শন করেছি। সরজমিন পরিদর্শনের প্রেক্ষিতে আমরা বিরুলিয়ার বাটুলিয়াতে একটি জায়গা নির্ধারণ করেছি। সেখানে একটি আন্তঃজেলা টার্মিনাল হবে। মূলত উত্তরাঞ্চলের যে বাসগুলো আছে, সেখানে এসব বাস থাকবে। সাভারের হেমায়েতপুরে দুটি জায়গা দেখে একটি, দক্ষিণাঞ্চলের জন্য কেরানীগঞ্জের বাঘাইরে একটি জায়গা নির্ধারণ করেছি। আরেকটি জায়গা কাঁচপুরে। এই চারটি জায়গায় আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল স্থাপন করলে ঢাকা শহরের ওপর থেকে চাপ কমে যাবে। সায়েদাবাদ, গাবতলী এবং মহাখালী টার্মিনালগুলোকে আমরা সিটি টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারব। বাকি চারটি টার্মিনাল সারাদেশের যে বাসগুলো ঢাকামুখী যাতায়াত করে, তাদের জন্য নির্ধারণ করতে পারব। প্রাথমিকভাবে এই সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত করে মন্ত্রী বরাবর পাঠিয়ে দেব। সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেব।’

কতগুলো কোম্পানির মাধ্যমে ঢাকায় বাস চালানো হবে, সেই নীতিমালা শীঘ্রই তৈরি হচ্ছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে যে কোম্পানির মাধ্যমে চলবে, কতগুলো বাস চলবে, কতগুলো প্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত হবে, আয় কিভাবে বণ্টন হবে, কীভাবে পরিচালিত হবে- সামগ্রিক বিষয় নিয়ে নীতিমালা হবে। আশা করি ঢাকা পরিবহন সম্বয় কর্তৃপক্ষ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে অংশীজনদের নিয়ে বসে একটি খসড়া তৈরি করবে। আগামী সভার আগেই খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করলে কোম্পানি গঠনের দিকে এগিয়ে যাবে।’

রাত ১২টার পরে যত্রতত্র বিআরটিসির বাস রাখতে দেয়া হবে না জানিয়ে তাপস বলেন, ‘আগামী ২৬ জানুয়ারি বিআরটিএকে ভাড়া নির্ধারণের যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তারা সেখানে সিদ্ধান্ত নেবে। গত সভায় একটি নির্দেশনা দিয়েছিলাম, রাত ১২টার পর বিআরটিসির বাস যত্রতত্র রাখা যাবে না। এই বাসগুলো তাদের নিজস্ব ডিপো-টার্মিনাল বা তাদের জায়গায় রাখতে হবে। এ বিষয়ে অনেক দূর অগ্রগতি হয়েছে। তবে কিছু বাস এখনও বাইরে থাকছে জায়গা সংকুলান না হওয়ায়। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিআরটিসি সব বাস থাকার ব্যবস্থা করবে।’