মুজিবুর রহমান দিলুর জীবনাবসান

প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের শোক

২০০৫ সালে গুলেন বারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন কোমায় ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেতা মুজিবুর রহমান দিলু। পরে তিনি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন। গত বুধবার জানা যায় তার ফুসফুস সংক্রমিত হয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালের আইসিইউতেও (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু এ যাত্রায় আর ফিরলেন না দিলু। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে গতকাল ভোর ৬-৩৫ মিনিটে বিদায় নিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলু।

মুজিবুর রহমান দিলুর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। গতকাল এক শোকবার্তায় তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

এদিকে, বিশিষ্ট অভিনেতা, নাট্য পরিচালক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলুর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। স্পিকার এক শোক বার্তায় মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তার শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। এছাড়া, দিলুর মৃত্যুতে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া এবং চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

ফুসফুসের সংক্রমণ প্রথমে উত্তরার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন ৬৯ বছর বয়সী মুজিবুর রহমান দিলু। হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, দিলু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে অবস্থার অবনতি হলে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে স্থানান্তর করা হয় হাসপাতালটির আইসিইউতে। এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

স্ত্রী রানী রহমান, দুই ছেলে অয়ন রহমান, অতুল রহমান ও এক মেয়ে তানজিলা মুজিবকে নিয়ে ঢাকার উত্তরায় তিনি থাকতেন। তিনি শান্ত মরিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাহী পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন।

মঞ্চ ও টেলিভিশনের অভিনেতা, সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলুর জন্ম ১৯৫২ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে। তার অভিনয়জীবন শুরু হয় মঞ্চ থেকে। পরে ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী হন। ১৯৭৬ সাল থেকে টেলিভিশনে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন।

বিটিভির কালজয়ী ধারাবাহিক নাটক সংশপ্তক-এর মালু চরিত্রে অভিনয় মুজিবুর রহমান দিলুকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। তার মালু চরিত্রটি আজও দর্শকদের মনে দাগ কেটে আছে। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি বেশ কিছুদিন অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন। মঞ্চে তিনি কাজ করেছেন দীর্ঘদিন।

মুজিবুর রহমান দিলুর উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক হচ্ছে- ‘আমি গাধা বলছি’, ‘নানা রঙ্গের দিনগুলি’, ‘জনতার রঙ্গশালা’, ‘নীল পানিয়া’, ‘আরেক ফাল্গুন’, ‘ওমা কী তামাশা’। তার উল্লেখযোগ্য টিভি নাটক ‘নীল পানিয়া’, ‘মহাপ্রস্থান’, ‘কিছু তো বলুন’, ‘তথাপি’, ‘আরেক ফাল্গুন’। উল্লেখযোগ্য ধারাবাহিক নাটক- ‘সময় অসময়’ এবং ‘সংশপ্তক’। আশির দশকে ছোটদের জনপ্রিয় গল্প ও সংগীত-এর সমন্বয়ে শ্রুতি নাটক ‘টোনাটুনি’ প্রকল্পের নির্দেশক ছিলেন দিলু। তার কণ্ঠে পাতা ওল্টাও, শিশুদের মধ্যে অসম্ভব জনপ্রিয় ছিল যা আজও অনেকেই মনে রেখেছেন।

মঙ্গলবার যোহরের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে মুজিবুর রহমান দিলুর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রাখা হয় তার মরদেহ। সেখানে নাট্যাঙ্গনের শিল্পী-কলাকুশলীরা ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন নেতারা প্রয়াত সহযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আসরের পর বনানী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয় অভিনেতা মুজিবুর রহমান দিলুকে।

দিলুর মৃত্যুতে নাট্যাঙ্গনের অনেকে শোক প্রকাশ করেছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করছেন। দিলুর বড় ভাই নাট্য ব্যক্তিত্ব মঞ্চসারথি আতাউর রহমান তার ফেসবুকে লিখেন, ‘আমার ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা, কীর্তিমান মঞ্চ ও টেলিভিশন অভিনেতা মুজিবুর রহমান দিলু নিউমনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গতকাল সকাল ৬-৩৫ মিনিটে এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে অসীমের যাত্রী হয়েছেন। সে জীবনযুদ্ধে যেমন ছিল এক পরাক্রান্ত সৈনিক, তেমনি ছিল এক বর্ণিল জীবনের অধিকারী। তার আত্মার চির শান্তি কামনায় দেশবাসীর কাছে আমাদের প্রত্যাশা।’

আরও খবর

বুধবার, ২০ জানুয়ারী ২০২১ , ৬ মাঘ ১৪২৭, ৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্যাভিনেতা

মুজিবুর রহমান দিলুর জীবনাবসান

প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের শোক

নিথর মাহবুব

২০০৫ সালে গুলেন বারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন কোমায় ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেতা মুজিবুর রহমান দিলু। পরে তিনি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন। গত বুধবার জানা যায় তার ফুসফুস সংক্রমিত হয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালের আইসিইউতেও (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু এ যাত্রায় আর ফিরলেন না দিলু। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে গতকাল ভোর ৬-৩৫ মিনিটে বিদায় নিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলু।

মুজিবুর রহমান দিলুর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। গতকাল এক শোকবার্তায় তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

এদিকে, বিশিষ্ট অভিনেতা, নাট্য পরিচালক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলুর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। স্পিকার এক শোক বার্তায় মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তার শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। এছাড়া, দিলুর মৃত্যুতে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া এবং চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

ফুসফুসের সংক্রমণ প্রথমে উত্তরার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন ৬৯ বছর বয়সী মুজিবুর রহমান দিলু। হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, দিলু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে অবস্থার অবনতি হলে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে স্থানান্তর করা হয় হাসপাতালটির আইসিইউতে। এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

স্ত্রী রানী রহমান, দুই ছেলে অয়ন রহমান, অতুল রহমান ও এক মেয়ে তানজিলা মুজিবকে নিয়ে ঢাকার উত্তরায় তিনি থাকতেন। তিনি শান্ত মরিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাহী পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন।

মঞ্চ ও টেলিভিশনের অভিনেতা, সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলুর জন্ম ১৯৫২ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে। তার অভিনয়জীবন শুরু হয় মঞ্চ থেকে। পরে ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী হন। ১৯৭৬ সাল থেকে টেলিভিশনে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন।

বিটিভির কালজয়ী ধারাবাহিক নাটক সংশপ্তক-এর মালু চরিত্রে অভিনয় মুজিবুর রহমান দিলুকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। তার মালু চরিত্রটি আজও দর্শকদের মনে দাগ কেটে আছে। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি বেশ কিছুদিন অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন। মঞ্চে তিনি কাজ করেছেন দীর্ঘদিন।

মুজিবুর রহমান দিলুর উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক হচ্ছে- ‘আমি গাধা বলছি’, ‘নানা রঙ্গের দিনগুলি’, ‘জনতার রঙ্গশালা’, ‘নীল পানিয়া’, ‘আরেক ফাল্গুন’, ‘ওমা কী তামাশা’। তার উল্লেখযোগ্য টিভি নাটক ‘নীল পানিয়া’, ‘মহাপ্রস্থান’, ‘কিছু তো বলুন’, ‘তথাপি’, ‘আরেক ফাল্গুন’। উল্লেখযোগ্য ধারাবাহিক নাটক- ‘সময় অসময়’ এবং ‘সংশপ্তক’। আশির দশকে ছোটদের জনপ্রিয় গল্প ও সংগীত-এর সমন্বয়ে শ্রুতি নাটক ‘টোনাটুনি’ প্রকল্পের নির্দেশক ছিলেন দিলু। তার কণ্ঠে পাতা ওল্টাও, শিশুদের মধ্যে অসম্ভব জনপ্রিয় ছিল যা আজও অনেকেই মনে রেখেছেন।

মঙ্গলবার যোহরের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে মুজিবুর রহমান দিলুর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রাখা হয় তার মরদেহ। সেখানে নাট্যাঙ্গনের শিল্পী-কলাকুশলীরা ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন নেতারা প্রয়াত সহযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আসরের পর বনানী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয় অভিনেতা মুজিবুর রহমান দিলুকে।

দিলুর মৃত্যুতে নাট্যাঙ্গনের অনেকে শোক প্রকাশ করেছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করছেন। দিলুর বড় ভাই নাট্য ব্যক্তিত্ব মঞ্চসারথি আতাউর রহমান তার ফেসবুকে লিখেন, ‘আমার ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা, কীর্তিমান মঞ্চ ও টেলিভিশন অভিনেতা মুজিবুর রহমান দিলু নিউমনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গতকাল সকাল ৬-৩৫ মিনিটে এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে অসীমের যাত্রী হয়েছেন। সে জীবনযুদ্ধে যেমন ছিল এক পরাক্রান্ত সৈনিক, তেমনি ছিল এক বর্ণিল জীবনের অধিকারী। তার আত্মার চির শান্তি কামনায় দেশবাসীর কাছে আমাদের প্রত্যাশা।’