বিষমুক্ত সবজি ফেরি ৪৫ বছর ধরে ক্রেতার ভরসা আরশেদ-গফুর

কালীগঞ্জ শহরে বসবাসকারীদের চেনা মুখ বয়োবৃদ্ধ আরশেদ আলী আর আব্দুল গফুর। দু’জনে প্রায় সমবয়সী। বাড়ি শহরতলীতে। তারা দু’জনেই কাকডাকা ভোরে শাক সবজি সিকে বাক কাঁধে করে চলে আসেন শহরে। এরপর বিভিন্ন মহল্লায় ঘুরে আরশেদ আলী বিক্রি করেন পেপে। আর আব্দুল গফুর বিক্রি করেন নানা রকমের বিষমুক্ত গ্রামীণ শাক। এভাবে চলছে ৪৫ বছরের অধিক সময়।

এ বয়সে সবজির বোঝা কাঁধে নিয়ে প্রতিদিন শহরের মানুষের যোগান দিয়ে চললেও গফুর চাচা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। তারা দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে শরীরের জন্য বড়ই উপকারী নিরাপদ খাদ্য সতেজ পেপে, কচু শাক, কচুর ডাটা, লাল শাক, সজনে শাক, কুমড়া শাক, লাউ শাক, কলার মোচা, কলার থোড়সহ গ্রামীণ বিভিন্ন শাক সবজি বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে সেবা করেছেন। আরশেদ আলীর বাড়ি উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামে। অন্যদিকে আব্দুল গফুরের বাড়ি তৈলকুপে। প্রতিদিন ভোরে কালীগঞ্জবাসী কমপক্ষে ৪০-৪৫ বছর দেখতে পেয়েছেন সবজি ভরা দু’জনেই সিকে বাক কাঁধে। ছুটে চলেন বিভিন্ন মহল্লার বাড়ি বাড়িতে। সবজি বিক্রি করে নরম রোদেই চাল ডাল কিনে বাড়ি ফিরেন তারা। তারা জানান, বয়স ৮৫’র ওপরে। দু’জনেই এভাবে শাকসবজি বিক্রি করছেন কয়েক যুগ ধরে।

বৃদ্ধ বয়সেও তারা কেন এমন পরিশ্রমের কাজ করছেন এমন প্রশ্ন করলে কিছুদিন আগে তাদের একজন বয়োবৃদ্ধ আব্দুল গফুর ছিলেন নীরব। তবে তার চোখ পানিতে ছলছল করছিল। এক পর্যায়ে উত্তর দিলেন এ বয়সে কেউ শখে এমন পরিশ্রম করে না। কপালে ছিল তাই করছেন। বেশ কিছুদিন নিজে অসুস্থ তাই বাজারের মানুষগুলোর শাক খাওয়াতে পারছিনে। অন্যজন আরশেদ চাচার বললেন ভিন্ন কথা। অভাবের সংসার হলেও বাড়ির সকলে তার নিষেধ করে। কিন্তু তার ভাষ্য, কর্মক্ষম থাকা অবস্থায় কেন অন্যের ঘাড়ে বোঝা হতে হবে। যতদিন শরীরে সুস্থতা আছে ততদিন পরিশ্রম করতে হবে। তাছাড়া কাজে থাকলে দেহ মন উভয়ই ভালো থাকে। তাই কাজ করে যাচ্ছেন।

বয়োবৃদ্ধ আরশেদ আলী জানান, ৪ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। আর ছেলেরাও বিয়ে করে সবাই পৃথক সংসার করছেন। মাঠে অল্প কিছু চাষযোগ্য জমি আছে। সেখান থেকে কিছু ফসল আসে। আর নিজে সারাবছর গ্রাম গ্রাম ঘুরে পেপে কিনে শহরে নিয়ে বিক্রি করে থাকি। এতে আমার সংসার কোন মতে চলে যায়। তিনি বলেন,পরিশ্রমের কারণেই এখনও সুস্থ আছি।

আব্দুল গফুর জানান, ৪ ছেলে ১ মেয়ে তার। মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরাও বিয়ে করে সকলেই পৃথক সংসার করছে। আর আমি বৃদ্ধা স্ত্রীকে নিয়ে এভাবে কাজের মাধ্যমে পয়সা রোজগার করে দুবেলা দুমুঠো খেযে বেঁচে আছি। তিনি জানান, বসত ভিটের সাথে অল্প কিছু জমি আছে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের শাক চাষ করি। আর বাকি সময় মাঠে ও নদীর কিনার দিয়ে ঘুরে বিভিন্ন শাক নিজে তুলি আবার গ্রাম গ্রাম ঘুরে বাজারের দুর্লভ কিছু শাক কিনে এগুলো পরেরদিন ভোরে শহরে নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিক্রি করি।

তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে তৎকালীন কালীগঞ্জে কর্মরত থানা নির্বাহী কর্মকর্তা মানোয়ার হোসেন মোল্লার বাসায় বিভিন্ন ধরনের শাক বিক্রি করতাম। তিনি আমার কষ্ট দেখে আমাকে বয়স্কভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

পেপে চাচা আর সবজি চাচা জানান, যে জিনিস মানুষের শারীরিকভাবে উপকারে আসে সেগুলোই আমরা ৪৫ বছর ধরে বিক্রি করে আসছি। তারা জানান, বেশি কষ্ট হয় গ্রাম গ্রাম ঘুরে এগুলো জোগাড় করে সিকে বাকে ভরে কাঁধে নিয়ে শহরে পৌঁছতে।

বয়োবৃদ্ধ আরশেদ আলীর ছেলে ইব্রাহিম হোসেন জানান, চিকিৎসকদের পরামর্শে তার কাজে আমরা বাধা দিই না। শহরের বিশিষ্ট মাংস গুল মোহাম্মদ জানান, তারা অত্যন্ত ভদ্র ও সৎ। এখন বয়স হয়ে গেছে ফলে মালামাল বোঝায় সিকে বাক কাঁধে নিয়ে যখন তারা পথ দিয়ে হেঁটে যান তখন মানুষের খুব নজরে পড়ে। তাদের শহরবাসী খুব ভালোবাসে।

image
আরও খবর
পবিস কর্তাদের যোগসাজশে বাড়ির সংযোগে সেচযন্ত্রে বিদ্যুৎ : মৃত্যু ৩
সিলেটে বিচারককে ঘুষ দেয়ার চেষ্টা এসআই ক্লোজড
ভাণ্ডারিয়ায় বধ্যভূমি দখলে বাধা দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের ওপর হামালা
চাটমোহরে মেয়র কাউন্সিলর শপথ
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে টেন্ডার অনিয়মের অভিযোগ
ছাত্র আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট থাকায় অপসারণ হচ্ছেন খুবির তিন শিক্ষক
টেকনাফে অস্ত্রসহ ৫ রোহিঙ্গা আটক
নড়াইলে শ্রমিককে হত্যার অভিযোগ
গ্রামে বসে পাইপে সুপেয় পানি পাচ্ছেন সাড়ে ৩ হাজার পরিবার
মির্জাপুরে জমি বিবাদে বোন খুন ভাই আটক
৩ কোটি টাকার কারেন্ট জাল জব্দ
রাস্তায় ফেলে রাখা বৃদ্ধার পাশে ঠাকুরগাঁও রিপোর্টার্স ইউনিটি-ইউএনও
ফসলি জমিতে পুকুর খননের হিড়িক : উৎপাদন হুমকিতে
৪ জেলায় সুখের নীড় পাচ্ছে ১২৭০ গৃহহীন পরিবার

শুক্রবার, ২২ জানুয়ারী ২০২১ , ৮ মাঘ ১৪২৭, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২

বিষমুক্ত সবজি ফেরি ৪৫ বছর ধরে ক্রেতার ভরসা আরশেদ-গফুর

প্রতিনিধি, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)

image

কালীগঞ্জ শহরে বসবাসকারীদের চেনা মুখ বয়োবৃদ্ধ আরশেদ আলী আর আব্দুল গফুর। দু’জনে প্রায় সমবয়সী। বাড়ি শহরতলীতে। তারা দু’জনেই কাকডাকা ভোরে শাক সবজি সিকে বাক কাঁধে করে চলে আসেন শহরে। এরপর বিভিন্ন মহল্লায় ঘুরে আরশেদ আলী বিক্রি করেন পেপে। আর আব্দুল গফুর বিক্রি করেন নানা রকমের বিষমুক্ত গ্রামীণ শাক। এভাবে চলছে ৪৫ বছরের অধিক সময়।

এ বয়সে সবজির বোঝা কাঁধে নিয়ে প্রতিদিন শহরের মানুষের যোগান দিয়ে চললেও গফুর চাচা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। তারা দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে শরীরের জন্য বড়ই উপকারী নিরাপদ খাদ্য সতেজ পেপে, কচু শাক, কচুর ডাটা, লাল শাক, সজনে শাক, কুমড়া শাক, লাউ শাক, কলার মোচা, কলার থোড়সহ গ্রামীণ বিভিন্ন শাক সবজি বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে সেবা করেছেন। আরশেদ আলীর বাড়ি উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামে। অন্যদিকে আব্দুল গফুরের বাড়ি তৈলকুপে। প্রতিদিন ভোরে কালীগঞ্জবাসী কমপক্ষে ৪০-৪৫ বছর দেখতে পেয়েছেন সবজি ভরা দু’জনেই সিকে বাক কাঁধে। ছুটে চলেন বিভিন্ন মহল্লার বাড়ি বাড়িতে। সবজি বিক্রি করে নরম রোদেই চাল ডাল কিনে বাড়ি ফিরেন তারা। তারা জানান, বয়স ৮৫’র ওপরে। দু’জনেই এভাবে শাকসবজি বিক্রি করছেন কয়েক যুগ ধরে।

বৃদ্ধ বয়সেও তারা কেন এমন পরিশ্রমের কাজ করছেন এমন প্রশ্ন করলে কিছুদিন আগে তাদের একজন বয়োবৃদ্ধ আব্দুল গফুর ছিলেন নীরব। তবে তার চোখ পানিতে ছলছল করছিল। এক পর্যায়ে উত্তর দিলেন এ বয়সে কেউ শখে এমন পরিশ্রম করে না। কপালে ছিল তাই করছেন। বেশ কিছুদিন নিজে অসুস্থ তাই বাজারের মানুষগুলোর শাক খাওয়াতে পারছিনে। অন্যজন আরশেদ চাচার বললেন ভিন্ন কথা। অভাবের সংসার হলেও বাড়ির সকলে তার নিষেধ করে। কিন্তু তার ভাষ্য, কর্মক্ষম থাকা অবস্থায় কেন অন্যের ঘাড়ে বোঝা হতে হবে। যতদিন শরীরে সুস্থতা আছে ততদিন পরিশ্রম করতে হবে। তাছাড়া কাজে থাকলে দেহ মন উভয়ই ভালো থাকে। তাই কাজ করে যাচ্ছেন।

বয়োবৃদ্ধ আরশেদ আলী জানান, ৪ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। আর ছেলেরাও বিয়ে করে সবাই পৃথক সংসার করছেন। মাঠে অল্প কিছু চাষযোগ্য জমি আছে। সেখান থেকে কিছু ফসল আসে। আর নিজে সারাবছর গ্রাম গ্রাম ঘুরে পেপে কিনে শহরে নিয়ে বিক্রি করে থাকি। এতে আমার সংসার কোন মতে চলে যায়। তিনি বলেন,পরিশ্রমের কারণেই এখনও সুস্থ আছি।

আব্দুল গফুর জানান, ৪ ছেলে ১ মেয়ে তার। মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরাও বিয়ে করে সকলেই পৃথক সংসার করছে। আর আমি বৃদ্ধা স্ত্রীকে নিয়ে এভাবে কাজের মাধ্যমে পয়সা রোজগার করে দুবেলা দুমুঠো খেযে বেঁচে আছি। তিনি জানান, বসত ভিটের সাথে অল্প কিছু জমি আছে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের শাক চাষ করি। আর বাকি সময় মাঠে ও নদীর কিনার দিয়ে ঘুরে বিভিন্ন শাক নিজে তুলি আবার গ্রাম গ্রাম ঘুরে বাজারের দুর্লভ কিছু শাক কিনে এগুলো পরেরদিন ভোরে শহরে নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিক্রি করি।

তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে তৎকালীন কালীগঞ্জে কর্মরত থানা নির্বাহী কর্মকর্তা মানোয়ার হোসেন মোল্লার বাসায় বিভিন্ন ধরনের শাক বিক্রি করতাম। তিনি আমার কষ্ট দেখে আমাকে বয়স্কভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

পেপে চাচা আর সবজি চাচা জানান, যে জিনিস মানুষের শারীরিকভাবে উপকারে আসে সেগুলোই আমরা ৪৫ বছর ধরে বিক্রি করে আসছি। তারা জানান, বেশি কষ্ট হয় গ্রাম গ্রাম ঘুরে এগুলো জোগাড় করে সিকে বাকে ভরে কাঁধে নিয়ে শহরে পৌঁছতে।

বয়োবৃদ্ধ আরশেদ আলীর ছেলে ইব্রাহিম হোসেন জানান, চিকিৎসকদের পরামর্শে তার কাজে আমরা বাধা দিই না। শহরের বিশিষ্ট মাংস গুল মোহাম্মদ জানান, তারা অত্যন্ত ভদ্র ও সৎ। এখন বয়স হয়ে গেছে ফলে মালামাল বোঝায় সিকে বাক কাঁধে নিয়ে যখন তারা পথ দিয়ে হেঁটে যান তখন মানুষের খুব নজরে পড়ে। তাদের শহরবাসী খুব ভালোবাসে।