হোয়াইট হাউজে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধ্যায় যেখানে শেষ হলো, সেখান থেকেই শুরু করলেন জো বাইডেন। সদ্য সাবেক হয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ছেড়ে সুদূর ফ্লোরিডায় পাড়ি জমিয়েছেন। দুপুর গড়াতে না গড়াতেই বাইডেন সেই বাড়িকেই স্থায়ী ঠিকানা বানালেন। বিদায়বেলায় ট্রাম্পের পাশে ছিলেন স্ত্রী মেলানিয়া, বাইডেনও তার নতুন ঠিকানায় প্রবেশ করেছেন জীবনসঙ্গীর হাত ধরে। সিএনএন
ক্যাপিটল ভবনে বাইডেনকে শপথবাক্য পাঠ করান দেশটির প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। তার আগে শপথ নেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
পূর্বনির্ধারিত সময়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হয়েছিলেন তারা। অনুষ্ঠানে আরও যোগ দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ, ট্রাম্প প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, সিনেটের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল প্রমুখ।
একে তো করোনাভাইরাস মহামারী, তার ওপর দু’সপ্তাহ আগে পার্লামেন্ট ভবনে ট্রাম্প-সমর্থকদের তা-বের জেরে এ বছর একেবারেই সীমিত রাখা হয়েছে আয়োজন। ছিল নজিরবিহীন নিরাপত্তা।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন ডেমোক্র্যাট সিনেটর অ্যামি ক্লোবুচার। এরপর আসেন রিপাবলিকান সিনেটর রয় ব্লান্ট। তাদের দু’জনের মুখেই ছিল গণতন্ত্র রক্ষায় ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন পপ তারকা লেডি গাগা। দুটি ভাষায় দেশের গান গেয়েছেন জেনিফার লোপেজ।
এর একটু পরেই আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন জো বাইডেন। অবশ্য তার আগেই শপথবাক্য পাঠ করানো হয় ভাইস-প্রেসিডেন্ট হ্যারিসকে।
ক্ষমতা গ্রহণের পর অভিষেক ভাষণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বাইডেন বলেন, এটা আমেরিকার দিন। এটা গণতন্ত্রের দিন। আজ কোন প্রার্থীর বিজয় নয়, আমরা একটি কারণ উদযাপন করব। কারণটি হচ্ছে গণতন্ত্র। মানুষের প্রার্থনা কবুল হয়েছে। মানুষের ইচ্ছার মান রাখা হয়েছে। ক্যাপিটলের অনুষ্ঠান শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ লিমুজিনে চড়ে হোয়াইট হাউজের পথে রওনা দেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্টের প্রতীক হিসেবে গাড়িটির নম্বর প্লেটেও লেখা হয়েছে ৪৬।
এসময় তাদের পেছনে ছিল বিশাল গাড়িবহর। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসা প্রেসিডেন্টের গাড়ির সঙ্গে হেঁটে আসেন মাস্ক পরা ছয়জন সিক্রেট সার্ভিস কর্মকর্তাও। হোয়াইট হাউজের কাছাকাছি এলে এক সময় নেমে হাঁটা শুরু করেন বাইডেন দম্পতি। এ সময় সাংবাদিকদের বাইডেন বলেন, ‘মনে হচ্ছে, বাড়ি যাচ্ছি।’
এর কিছুক্ষণ পর ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবারের মতো হোয়াইট হাউজে পা রাখেন কমলা হ্যারিসও। সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ‘সেকেন্ড জেন্টেলম্যান’ ডগ এমহফ।
অভিষেকের দিনই জো বাইডেন ট্রাম্প প্রশাসনের অন্তত এক ডজন নীতিতে কাটাছেঁড়া চালাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে যতটা কষ্ট করে তিনি প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি দুর্ভোগ হয়তো অপেক্ষা করছে সামনের দিনগুলোতে।
নির্বাচনের পর থেকেই বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে বাইডেনকে। ট্রাম্প পরাজয় স্বীকার করেননি। ক্ষমতা হস্তান্তরে তার প্রশাসন চরম অসহযোগিতা করেছে বাইডেন টিমকে। সবশেষ গত ৬ জানুয়ারি পার্লামেন্ট ভবনে সহিংসতা ঘটনা এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য সামনের দিনগুলো মোটেও সহজ হবে না।
করোনা মহামারী, অর্থনৈতিক দৈন্য, ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্র নীতির কারণে যে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার জন্য বেশ ভুগতে হতে পারে বাইডেনকে। এখন এ সংকট তিনি কীভাবে মোকাবিলা করেন সেটাই দেখার আশায় বিশ্ববাসী।
শুক্রবার, ২২ জানুয়ারী ২০২১ , ৮ মাঘ ১৪২৭, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২
হোয়াইট হাউজে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধ্যায় যেখানে শেষ হলো, সেখান থেকেই শুরু করলেন জো বাইডেন। সদ্য সাবেক হয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ছেড়ে সুদূর ফ্লোরিডায় পাড়ি জমিয়েছেন। দুপুর গড়াতে না গড়াতেই বাইডেন সেই বাড়িকেই স্থায়ী ঠিকানা বানালেন। বিদায়বেলায় ট্রাম্পের পাশে ছিলেন স্ত্রী মেলানিয়া, বাইডেনও তার নতুন ঠিকানায় প্রবেশ করেছেন জীবনসঙ্গীর হাত ধরে। সিএনএন
ক্যাপিটল ভবনে বাইডেনকে শপথবাক্য পাঠ করান দেশটির প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। তার আগে শপথ নেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
পূর্বনির্ধারিত সময়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হয়েছিলেন তারা। অনুষ্ঠানে আরও যোগ দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ, ট্রাম্প প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, সিনেটের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল প্রমুখ।
একে তো করোনাভাইরাস মহামারী, তার ওপর দু’সপ্তাহ আগে পার্লামেন্ট ভবনে ট্রাম্প-সমর্থকদের তা-বের জেরে এ বছর একেবারেই সীমিত রাখা হয়েছে আয়োজন। ছিল নজিরবিহীন নিরাপত্তা।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন ডেমোক্র্যাট সিনেটর অ্যামি ক্লোবুচার। এরপর আসেন রিপাবলিকান সিনেটর রয় ব্লান্ট। তাদের দু’জনের মুখেই ছিল গণতন্ত্র রক্ষায় ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন পপ তারকা লেডি গাগা। দুটি ভাষায় দেশের গান গেয়েছেন জেনিফার লোপেজ।
এর একটু পরেই আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন জো বাইডেন। অবশ্য তার আগেই শপথবাক্য পাঠ করানো হয় ভাইস-প্রেসিডেন্ট হ্যারিসকে।
ক্ষমতা গ্রহণের পর অভিষেক ভাষণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বাইডেন বলেন, এটা আমেরিকার দিন। এটা গণতন্ত্রের দিন। আজ কোন প্রার্থীর বিজয় নয়, আমরা একটি কারণ উদযাপন করব। কারণটি হচ্ছে গণতন্ত্র। মানুষের প্রার্থনা কবুল হয়েছে। মানুষের ইচ্ছার মান রাখা হয়েছে। ক্যাপিটলের অনুষ্ঠান শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ লিমুজিনে চড়ে হোয়াইট হাউজের পথে রওনা দেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্টের প্রতীক হিসেবে গাড়িটির নম্বর প্লেটেও লেখা হয়েছে ৪৬।
এসময় তাদের পেছনে ছিল বিশাল গাড়িবহর। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসা প্রেসিডেন্টের গাড়ির সঙ্গে হেঁটে আসেন মাস্ক পরা ছয়জন সিক্রেট সার্ভিস কর্মকর্তাও। হোয়াইট হাউজের কাছাকাছি এলে এক সময় নেমে হাঁটা শুরু করেন বাইডেন দম্পতি। এ সময় সাংবাদিকদের বাইডেন বলেন, ‘মনে হচ্ছে, বাড়ি যাচ্ছি।’
এর কিছুক্ষণ পর ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবারের মতো হোয়াইট হাউজে পা রাখেন কমলা হ্যারিসও। সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ‘সেকেন্ড জেন্টেলম্যান’ ডগ এমহফ।
অভিষেকের দিনই জো বাইডেন ট্রাম্প প্রশাসনের অন্তত এক ডজন নীতিতে কাটাছেঁড়া চালাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে যতটা কষ্ট করে তিনি প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি দুর্ভোগ হয়তো অপেক্ষা করছে সামনের দিনগুলোতে।
নির্বাচনের পর থেকেই বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে বাইডেনকে। ট্রাম্প পরাজয় স্বীকার করেননি। ক্ষমতা হস্তান্তরে তার প্রশাসন চরম অসহযোগিতা করেছে বাইডেন টিমকে। সবশেষ গত ৬ জানুয়ারি পার্লামেন্ট ভবনে সহিংসতা ঘটনা এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য সামনের দিনগুলো মোটেও সহজ হবে না।
করোনা মহামারী, অর্থনৈতিক দৈন্য, ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্র নীতির কারণে যে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার জন্য বেশ ভুগতে হতে পারে বাইডেনকে। এখন এ সংকট তিনি কীভাবে মোকাবিলা করেন সেটাই দেখার আশায় বিশ্ববাসী।