যানজট দূর করতে চাই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা

রাজধানীতে যানজট কমাতে কয়েকটি সড়কে বিচ্ছিন্নভাবে ইউটার্ন ব্যবস্থা চালু করা হলেও বাস্তবে এর সুফল পাওয়া যায়নি। ইউটার্নগুলো তৈরি করার পর দেখা যাচ্ছে, যানজট কমেনি, উল্টো আরও বেড়েছে। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত সংবাদের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, তেজগাঁও-বনানী সড়কে ইউটার্ন থাকার ফলে যানবাহনের জটলায় ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। যদিও ইউটার্ন নির্মাণের ফলে উত্তরার যানজট কমে গেছে বলে জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।

শুধু ইউটার্ন নয়, যানজট কমানোর লক্ষ্যে বিচ্ছিন্নভাবে আরও যেসব প্রকল্প বা কাজ করা হয়েছে তার কোনটিই আসলে কাজের বলে প্রমাণিত হয়নি। যানজট কমানোর উদ্দেশ্য নিয়ে ইউটার্ন করা হয়েছিল। ইউটার্নের কারণে রাস্তা ছোট হয়ে গেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে পথচারী পারাপারের ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে ফ্লাইওভারের নামে তৈরি করা হয়েছে ওভারপাস। এতে যানজট আরও বিস্তৃত হয়েছে। যেভাবে ফ্লাইওভারগুলো তৈরি হয়েছে তাতে পরবর্তীতে গণপরিবহন পরিকল্পনার সঙ্গে এর সমন্বয় করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিচ্ছিন্নভাবে ইউটার্ন কিংবা ফ্লাইওভার নির্মাণ করলেই যানজট নিরসন হবে না। এর জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রয়োজন। রাজধানীকে যানজটমুক্ত করতে ২০০৪ সালে প্রণয়ন করা হয় গণপরিবহনের কৌশলগত পরিকল্পনা (এসটিপি)। সমন্বয়ের অভাবে ১০ বছর বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো এর বাইরে বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়। এসটিপি সংশোধন করে আরএসটিপি গঠন করা হয় ২০১৬ সালে। সেখানে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি করার কথা বলা আছে। বাস র‌্যাপিট ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু এর কোনটিই বাস্তবায়ন হয়নি।

সংশোধিত এসটিপির দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি। এর সবগুলো সুপারিশ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না করলে সুফল আসবে না। পরিবহন ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল করতে হবে। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হবে। অবৈধ পার্কিং বন্ধ করতে হবে। পথচারীদের চলাচল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যাতে ছোট ছোট ট্রিপগুলো হেঁটেই যেতে পারে। পাশাপাশি গণপরিবহনের সংশোধিত কৌশলগত পরিকল্পনা (আরএসটিপি) বাস্তবায়ন করতে হবে। গণপরিবহনের উন্নয়ন, অবকাঠামোর উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠানিক উন্নয়নের মাধ্যমে এই কাজগুলো এগিয়ে নিতে হবে।

যারা সড়ক ব্যবহার করেন তারা যদি নিজেরাই ট্র্যাফিক আইন মেনে চলেন, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এর জন্য প্রয়োজন সভ্য নগর আচরণ তৈরির সামাজিক উদ্যোগ আর টেকসই সড়ক প্রকৌশলের সমন্বয়। নগরবাসীকে স্বীকার করে নিতে হবে যে, সুষ্ঠু নগরজীবন তৈরির দায়িত্ব সবার। গণপরিবহন-ব্যবস্থাকে অগ্রাহ্য করে, ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহারকে প্রাধান্য দিলে এ ধরনের বৈপরীত্য তৈরি হবেই।

শুক্রবার, ২২ জানুয়ারী ২০২১ , ৮ মাঘ ১৪২৭, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২

যানজট দূর করতে চাই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা

রাজধানীতে যানজট কমাতে কয়েকটি সড়কে বিচ্ছিন্নভাবে ইউটার্ন ব্যবস্থা চালু করা হলেও বাস্তবে এর সুফল পাওয়া যায়নি। ইউটার্নগুলো তৈরি করার পর দেখা যাচ্ছে, যানজট কমেনি, উল্টো আরও বেড়েছে। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত সংবাদের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, তেজগাঁও-বনানী সড়কে ইউটার্ন থাকার ফলে যানবাহনের জটলায় ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। যদিও ইউটার্ন নির্মাণের ফলে উত্তরার যানজট কমে গেছে বলে জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।

শুধু ইউটার্ন নয়, যানজট কমানোর লক্ষ্যে বিচ্ছিন্নভাবে আরও যেসব প্রকল্প বা কাজ করা হয়েছে তার কোনটিই আসলে কাজের বলে প্রমাণিত হয়নি। যানজট কমানোর উদ্দেশ্য নিয়ে ইউটার্ন করা হয়েছিল। ইউটার্নের কারণে রাস্তা ছোট হয়ে গেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে পথচারী পারাপারের ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে ফ্লাইওভারের নামে তৈরি করা হয়েছে ওভারপাস। এতে যানজট আরও বিস্তৃত হয়েছে। যেভাবে ফ্লাইওভারগুলো তৈরি হয়েছে তাতে পরবর্তীতে গণপরিবহন পরিকল্পনার সঙ্গে এর সমন্বয় করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিচ্ছিন্নভাবে ইউটার্ন কিংবা ফ্লাইওভার নির্মাণ করলেই যানজট নিরসন হবে না। এর জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রয়োজন। রাজধানীকে যানজটমুক্ত করতে ২০০৪ সালে প্রণয়ন করা হয় গণপরিবহনের কৌশলগত পরিকল্পনা (এসটিপি)। সমন্বয়ের অভাবে ১০ বছর বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো এর বাইরে বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়। এসটিপি সংশোধন করে আরএসটিপি গঠন করা হয় ২০১৬ সালে। সেখানে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি করার কথা বলা আছে। বাস র‌্যাপিট ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু এর কোনটিই বাস্তবায়ন হয়নি।

সংশোধিত এসটিপির দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি। এর সবগুলো সুপারিশ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না করলে সুফল আসবে না। পরিবহন ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল করতে হবে। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হবে। অবৈধ পার্কিং বন্ধ করতে হবে। পথচারীদের চলাচল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যাতে ছোট ছোট ট্রিপগুলো হেঁটেই যেতে পারে। পাশাপাশি গণপরিবহনের সংশোধিত কৌশলগত পরিকল্পনা (আরএসটিপি) বাস্তবায়ন করতে হবে। গণপরিবহনের উন্নয়ন, অবকাঠামোর উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠানিক উন্নয়নের মাধ্যমে এই কাজগুলো এগিয়ে নিতে হবে।

যারা সড়ক ব্যবহার করেন তারা যদি নিজেরাই ট্র্যাফিক আইন মেনে চলেন, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এর জন্য প্রয়োজন সভ্য নগর আচরণ তৈরির সামাজিক উদ্যোগ আর টেকসই সড়ক প্রকৌশলের সমন্বয়। নগরবাসীকে স্বীকার করে নিতে হবে যে, সুষ্ঠু নগরজীবন তৈরির দায়িত্ব সবার। গণপরিবহন-ব্যবস্থাকে অগ্রাহ্য করে, ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহারকে প্রাধান্য দিলে এ ধরনের বৈপরীত্য তৈরি হবেই।