আজ মঞ্চস্থ হচ্ছে ‘ম্যাকবেথ’ ও ‘গহন যাত্রা’
পদাতিক নাট্য সংসদ ৪৪ বছরে পদার্পণ করেছে গত ২১ জানুয়ারি। এ উপলক্ষে আজ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় সন্ধ্যা ৬টা হতে দুটি নাটক গহন যাত্রা ও ম্যাকবেথের ৫০তম মঞ্চায়ন হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। বিশেষ অতিথি থাকবেন নাট্যব্যক্তিত্ব ম. হামিদ, লাকী ইনাম, মঞ্চসারথি আতাউর রহমান ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলি লাকী। নাটক মঞ্চায়ন শেষে দুই নাটকসংশ্লিষ্ট নেপথ্যের কারিগরদের সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হবে।
পদাতিকের চার দশকেরও বেশি সময় পথচলার উৎসই হচ্ছে তার অঙ্গীকার ও বিশ্বাস। ‘নাটক হোক জীবন যুদ্ধের হাতিয়ার’ ও ‘নাটক হোক জীবনের প্রকাশিত সত্য’ এই মূলমন্ত্রকে ধারণ করে ১৯৭৮ সালের ২১ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি চত্বর থেকে যাত্রা শুরু হয় পদাতিকের। স্বাধীনতার সাত বছরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও শোষণমুক্ত সমাজ নির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে একদল তরুণ গড়ে তোলে পদাতিক নাট্য সংসদ।
সময়টি ছিল বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের স্বর্ণযুগ। দলের কাজ শুরু হয় বাংলার মাটি ও মানুষের কবি জসীম উদ্দীনের ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ গীতিকাব্য নাটক নিয়ে। এরপর মঞ্চে বাংলার কবি লেখক নাট্যকার থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের কালজয়ী নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে পদাতিক বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া বাংলাদেশের পথনাটকের ইতহাসেও প্রথম পথচলার ইতিহাস তৈরি করে পদাতিক নাট্য সংসদ।
জাতির জনককে হত্যার পঁচাত্তর পরবর্তী রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে সঙ্গে যখন রাজপথে নাটক করার ওপর কড়াকড়ি চলতে থােেক, এ সময় পদাতিক পথে নামায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক নাটক এসএস সোলায়মানের ‘ক্ষ্যাপা পাগলার প্যাঁচাল’।
স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ঢাকার রাজপথে একের পরএক প্রদর্শনী করে গেছে পদাতিক এই নাটকের। পরবর্তীতে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, শিক্ষাঙ্গনে রক্তপাতের বিরুদ্ধে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জনমত গঠনে আরও অনেক পথনাটক করে। লিখতে গেলে পদাতিকের ৪৪ বছরের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ ইাতহাস।
এই দীর্ঘ সময় ধরে পদাতিক ৪৩টি নাটক মঞ্চে আনে। অসংখ্য নাট্যকর্মী তৈরি করে। পদাতিকের উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কালের যাত্রা’, কবি জসীম উদ্দীনের ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট, ও বেদের মেয়ে, উলিয়াম শেক্সপিয়ারের সৈয়দ শামসুল হক অনূদিত ‘ম্যাকবেথ, মাক্সিম গোর্কির উপন্যাস নিয়ে বের্টোল্ট ব্রেখটের নাটক ‘মা’, ময়মনসিংহ গীতিকার নয়ন চাঁদ ঘোষের ‘চন্দ্রাবতী,’ বাদল সরকারের ‘বল্লভপুরের রূপকথা’, আগাথা ক্রিষ্টির আবদুস সেলিম অনূদিত ‘মাউসট্র্যাপ’, ওয়াইল্ডার থর্নটনের ও গোলাম সারোয়ার রূপান্তরিত ‘চককর’, ল্যু সুনের ‘ক্ষেতমজুর খইমুদ্দিন’, সফদার হাসমির ‘মেশিন’, কাজী রফিকের ‘মনসার পালা, তারামন বিবি, ট্রাইব্যুনাল, সারি সারি লাশ, চোর’ নাসরিন মুস্তাফার ‘জনমাংক,’ লামিসা শিরীন হোসাইনের ‘কালরাত্রি,’ রুবাইয়াৎ আহমেদের ‘গহন যাত্রা,’ সায়িক সিদ্দিকীর গুনজান বিবির পালা। বর্তমানে নিয়মিত মঞ্চস্থ হচ্ছে নতুন নাটক মনোজ মিত্রের ‘পাকে বিপাকে’
এই দীর্ঘ পথচলায় পদাতিকের যাদের অবদান তাদের অনেকে বেঁচে নেই। তাদের মধ্যে রয়েছেন পদাতিকের আজীবন সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, ভাষাসৈনিক প্রয়াত সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন, পদাতিকের প্রতিষ্ঠাতা, মঞ্চে কাব্যনাটকের পুরোধা, নাট্যকার, নির্দেশক এসএম সোলায়মান, পদাতিকের সংগঠক গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রথম সাংগঠনিক সম্পাদক আবু মুরতাঈশ কচি। দলে অবদান রেখেছে এমন অনেকে দেশে এবং দেশের বাইরে আছে, তারা এখনও প্রাণের টান অনুভব করে পদাতিকের প্রতি। বর্তমানে বিশ্ব মহামারীর এই কঠিনতম সময়ও নাট্যকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে পদাতিকের এই প্রজন্ম।
সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন স্মারক সম্মাননা
পদাতিক ১০ বছর ধরে উদযাপন করে আসছে দুই বাংলার নাট্যদল নিয়ে নাট্যোৎসব এবং সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন স্মারক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান। স্মারক সম্মাননা প্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাট্যজন নাট্যকার সেলিম আল দীন (মরণোত্তর), মামুনুর রশীদ, ফেরদৌসী মজুমদার, রামেন্দু মজুমদার, ম. হামিদ, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, অধ্যাপক জামিল আহমেদ, আতাউর রহমান, অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন আহমদ, আসাদুজ্জামান নূর এমপি, কেরামত মাওলা, ড. ইনামুল হক, আলী যাকের, সৈয়দ শামসুল হক, সারা যাকের, শিমুল ইউসুফ, লাকী ইনাম, এসএম সোলায়মান (মরণোত্তর) প্রমুখ।
শনিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২১ , ৯ মাঘ ১৪২৭, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪২
আজ মঞ্চস্থ হচ্ছে ‘ম্যাকবেথ’ ও ‘গহন যাত্রা’
আল সামাদ রুবেল
পদাতিক নাট্য সংসদ ৪৪ বছরে পদার্পণ করেছে গত ২১ জানুয়ারি। এ উপলক্ষে আজ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় সন্ধ্যা ৬টা হতে দুটি নাটক গহন যাত্রা ও ম্যাকবেথের ৫০তম মঞ্চায়ন হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। বিশেষ অতিথি থাকবেন নাট্যব্যক্তিত্ব ম. হামিদ, লাকী ইনাম, মঞ্চসারথি আতাউর রহমান ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলি লাকী। নাটক মঞ্চায়ন শেষে দুই নাটকসংশ্লিষ্ট নেপথ্যের কারিগরদের সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হবে।
পদাতিকের চার দশকেরও বেশি সময় পথচলার উৎসই হচ্ছে তার অঙ্গীকার ও বিশ্বাস। ‘নাটক হোক জীবন যুদ্ধের হাতিয়ার’ ও ‘নাটক হোক জীবনের প্রকাশিত সত্য’ এই মূলমন্ত্রকে ধারণ করে ১৯৭৮ সালের ২১ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি চত্বর থেকে যাত্রা শুরু হয় পদাতিকের। স্বাধীনতার সাত বছরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও শোষণমুক্ত সমাজ নির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে একদল তরুণ গড়ে তোলে পদাতিক নাট্য সংসদ।
সময়টি ছিল বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের স্বর্ণযুগ। দলের কাজ শুরু হয় বাংলার মাটি ও মানুষের কবি জসীম উদ্দীনের ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ গীতিকাব্য নাটক নিয়ে। এরপর মঞ্চে বাংলার কবি লেখক নাট্যকার থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের কালজয়ী নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে পদাতিক বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া বাংলাদেশের পথনাটকের ইতহাসেও প্রথম পথচলার ইতিহাস তৈরি করে পদাতিক নাট্য সংসদ।
জাতির জনককে হত্যার পঁচাত্তর পরবর্তী রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে সঙ্গে যখন রাজপথে নাটক করার ওপর কড়াকড়ি চলতে থােেক, এ সময় পদাতিক পথে নামায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক নাটক এসএস সোলায়মানের ‘ক্ষ্যাপা পাগলার প্যাঁচাল’।
স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ঢাকার রাজপথে একের পরএক প্রদর্শনী করে গেছে পদাতিক এই নাটকের। পরবর্তীতে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, শিক্ষাঙ্গনে রক্তপাতের বিরুদ্ধে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জনমত গঠনে আরও অনেক পথনাটক করে। লিখতে গেলে পদাতিকের ৪৪ বছরের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ ইাতহাস।
এই দীর্ঘ সময় ধরে পদাতিক ৪৩টি নাটক মঞ্চে আনে। অসংখ্য নাট্যকর্মী তৈরি করে। পদাতিকের উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কালের যাত্রা’, কবি জসীম উদ্দীনের ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট, ও বেদের মেয়ে, উলিয়াম শেক্সপিয়ারের সৈয়দ শামসুল হক অনূদিত ‘ম্যাকবেথ, মাক্সিম গোর্কির উপন্যাস নিয়ে বের্টোল্ট ব্রেখটের নাটক ‘মা’, ময়মনসিংহ গীতিকার নয়ন চাঁদ ঘোষের ‘চন্দ্রাবতী,’ বাদল সরকারের ‘বল্লভপুরের রূপকথা’, আগাথা ক্রিষ্টির আবদুস সেলিম অনূদিত ‘মাউসট্র্যাপ’, ওয়াইল্ডার থর্নটনের ও গোলাম সারোয়ার রূপান্তরিত ‘চককর’, ল্যু সুনের ‘ক্ষেতমজুর খইমুদ্দিন’, সফদার হাসমির ‘মেশিন’, কাজী রফিকের ‘মনসার পালা, তারামন বিবি, ট্রাইব্যুনাল, সারি সারি লাশ, চোর’ নাসরিন মুস্তাফার ‘জনমাংক,’ লামিসা শিরীন হোসাইনের ‘কালরাত্রি,’ রুবাইয়াৎ আহমেদের ‘গহন যাত্রা,’ সায়িক সিদ্দিকীর গুনজান বিবির পালা। বর্তমানে নিয়মিত মঞ্চস্থ হচ্ছে নতুন নাটক মনোজ মিত্রের ‘পাকে বিপাকে’
এই দীর্ঘ পথচলায় পদাতিকের যাদের অবদান তাদের অনেকে বেঁচে নেই। তাদের মধ্যে রয়েছেন পদাতিকের আজীবন সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, ভাষাসৈনিক প্রয়াত সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন, পদাতিকের প্রতিষ্ঠাতা, মঞ্চে কাব্যনাটকের পুরোধা, নাট্যকার, নির্দেশক এসএম সোলায়মান, পদাতিকের সংগঠক গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রথম সাংগঠনিক সম্পাদক আবু মুরতাঈশ কচি। দলে অবদান রেখেছে এমন অনেকে দেশে এবং দেশের বাইরে আছে, তারা এখনও প্রাণের টান অনুভব করে পদাতিকের প্রতি। বর্তমানে বিশ্ব মহামারীর এই কঠিনতম সময়ও নাট্যকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে পদাতিকের এই প্রজন্ম।
সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন স্মারক সম্মাননা
পদাতিক ১০ বছর ধরে উদযাপন করে আসছে দুই বাংলার নাট্যদল নিয়ে নাট্যোৎসব এবং সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন স্মারক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান। স্মারক সম্মাননা প্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাট্যজন নাট্যকার সেলিম আল দীন (মরণোত্তর), মামুনুর রশীদ, ফেরদৌসী মজুমদার, রামেন্দু মজুমদার, ম. হামিদ, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, অধ্যাপক জামিল আহমেদ, আতাউর রহমান, অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন আহমদ, আসাদুজ্জামান নূর এমপি, কেরামত মাওলা, ড. ইনামুল হক, আলী যাকের, সৈয়দ শামসুল হক, সারা যাকের, শিমুল ইউসুফ, লাকী ইনাম, এসএম সোলায়মান (মরণোত্তর) প্রমুখ।