ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তি সহজীকরণে গুরুত্বারোপ

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ব্যাংক ঋণ পেতে নানা ধরনের জটিলতায় পড়েন। তাই অনেক শিক্ষিত বেকার চাইলেও ব্যবসা শুরু করতে পারেন না। তাই এই খাতকে টেনে তুলতে হলে ঋণ প্রাপ্তিতে জটিলতা কমাতে হবে। গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ব্যবসায়ী নেতারা। অনুষ্ঠানের শুরুতে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান সমসাময়িক অর্থনীতিবিষয়ক ১১টি এজেন্ডার ওপর বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ২০২১ সালে ডিসিসিআই’র কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ৫৪.১৩ শতাংশ ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এটি আরও দ্রুতগতিতে উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করা সম্ভব হবে। এ ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া সহজীকরণের ওপর জোরারোপ করেন।

দেশের কুটির ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তার লক্ষ্যে একটি বিশেষ ব্যাংক অথবা ‘এসএমই বন্ড’ প্রবর্তন প্রস্তাব করেন। কুটির, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পকে মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পের সংজ্ঞায়নে আলাদা করার প্রস্তাব করেন, যার মাধ্যমে কুটির, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পের সার্বিক সহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এছাড়া দেশের এসএমই খাতের সার্বিক উন্নয়নে এসএমই নীতিমালার পরিবর্তে ‘এসএমই ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্ট’ প্রবতর্নের প্রস্তাব করেন, যার মাধ্যমে এ খাতের প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরা সম্ভব হবে।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি জানান, শিল্প খাতের চাহিদামাফিক দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে শিল্প ও শিক্ষা খাতের মধ্যকার সমন্বয় বাড়াতে ডিসিসিআই ইতোমধ্যে ১২টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে এবং ডিসিসিআই আশা প্রকাশ করেন, বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে বিদ্যামান বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে পাঠ্যক্রম যুগোপযোগীকরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, করোনার কারণে বিশ^ব্যাপী বৈদেশিক বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ এবং বর্তমানে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ পরিস্থিতিও রাতারাতি পরিবর্তন হবে না, এমতাবস্থায় দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রদত্ত সুবিধা আমাদের স্থানীয় উদ্যোক্তাদের প্রদানের প্রস্তাব করেন। তিনি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ‘ইকোনোমিক ডিপ্লোমেসি’র আরও বেশি হারে গুরুত্ব প্রদানের ওপর জোরারোপ করেন। তিনি জানান, এ লক্ষ্যে ঢাকা চেম্বারের পক্ষ হতে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করার বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের উৎপাদিত পণ্যে বেশিরভাগই রপ্তানি হয় আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশসমূহে, যারা করোনা মোকাবিলায় বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং এ পরিস্থিতি আরও দীর্ঘস্থায়ী হলে এ অঞ্চলের দেশসমূহ হতে আমাদের রপ্তানি পণ্যের অর্ডার কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমাদের এশিয়া অঞ্চলের দেশসমূহের প্রতি আরও বেশি মাত্রায় নজর দিতে হবে।

ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়াগের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা নিয়ে, করপোরেট করের বিদ্যমান হার কমানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ডিসিসিআই’র পক্ষ হতে এ বছর এশিয়া অঞ্চলে ‘ডিসিসিআই ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ আয়োজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এলডিসি হতে উত্তরণের পর বাংলাদেশ বিদ্যমান বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা হারাবে এবং এ পরিস্থতি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের পক্ষ হতে প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদানের সময়সীমা বাড়ানোর দাবি উপস্থাপন করা যেতে পারে। একই সময়ে বৈশি^ক ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক সূচক সমূহে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নয়নে সরকার ও বেসরকারি খাতকে একযোগে কাজ করতে হবে। ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এনকেএ মবিন, সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন, পরিচালক মো. শাহিদ হোসেন, গোলাম জিলানী, হোসেন এ সিকদার এবং নাসিরউদ্দিন এ ফেরদৌস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

রবিবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২১ , ১০ মাঘ ১৪২৭, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তি সহজীকরণে গুরুত্বারোপ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ব্যাংক ঋণ পেতে নানা ধরনের জটিলতায় পড়েন। তাই অনেক শিক্ষিত বেকার চাইলেও ব্যবসা শুরু করতে পারেন না। তাই এই খাতকে টেনে তুলতে হলে ঋণ প্রাপ্তিতে জটিলতা কমাতে হবে। গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ব্যবসায়ী নেতারা। অনুষ্ঠানের শুরুতে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান সমসাময়িক অর্থনীতিবিষয়ক ১১টি এজেন্ডার ওপর বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ২০২১ সালে ডিসিসিআই’র কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ৫৪.১৩ শতাংশ ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এটি আরও দ্রুতগতিতে উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করা সম্ভব হবে। এ ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া সহজীকরণের ওপর জোরারোপ করেন।

দেশের কুটির ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তার লক্ষ্যে একটি বিশেষ ব্যাংক অথবা ‘এসএমই বন্ড’ প্রবর্তন প্রস্তাব করেন। কুটির, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পকে মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পের সংজ্ঞায়নে আলাদা করার প্রস্তাব করেন, যার মাধ্যমে কুটির, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পের সার্বিক সহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এছাড়া দেশের এসএমই খাতের সার্বিক উন্নয়নে এসএমই নীতিমালার পরিবর্তে ‘এসএমই ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্ট’ প্রবতর্নের প্রস্তাব করেন, যার মাধ্যমে এ খাতের প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরা সম্ভব হবে।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি জানান, শিল্প খাতের চাহিদামাফিক দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে শিল্প ও শিক্ষা খাতের মধ্যকার সমন্বয় বাড়াতে ডিসিসিআই ইতোমধ্যে ১২টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে এবং ডিসিসিআই আশা প্রকাশ করেন, বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে বিদ্যামান বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে পাঠ্যক্রম যুগোপযোগীকরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, করোনার কারণে বিশ^ব্যাপী বৈদেশিক বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ এবং বর্তমানে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ পরিস্থিতিও রাতারাতি পরিবর্তন হবে না, এমতাবস্থায় দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রদত্ত সুবিধা আমাদের স্থানীয় উদ্যোক্তাদের প্রদানের প্রস্তাব করেন। তিনি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ‘ইকোনোমিক ডিপ্লোমেসি’র আরও বেশি হারে গুরুত্ব প্রদানের ওপর জোরারোপ করেন। তিনি জানান, এ লক্ষ্যে ঢাকা চেম্বারের পক্ষ হতে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করার বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের উৎপাদিত পণ্যে বেশিরভাগই রপ্তানি হয় আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশসমূহে, যারা করোনা মোকাবিলায় বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং এ পরিস্থিতি আরও দীর্ঘস্থায়ী হলে এ অঞ্চলের দেশসমূহ হতে আমাদের রপ্তানি পণ্যের অর্ডার কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমাদের এশিয়া অঞ্চলের দেশসমূহের প্রতি আরও বেশি মাত্রায় নজর দিতে হবে।

ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়াগের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা নিয়ে, করপোরেট করের বিদ্যমান হার কমানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ডিসিসিআই’র পক্ষ হতে এ বছর এশিয়া অঞ্চলে ‘ডিসিসিআই ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ আয়োজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এলডিসি হতে উত্তরণের পর বাংলাদেশ বিদ্যমান বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা হারাবে এবং এ পরিস্থতি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের পক্ষ হতে প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদানের সময়সীমা বাড়ানোর দাবি উপস্থাপন করা যেতে পারে। একই সময়ে বৈশি^ক ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক সূচক সমূহে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নয়নে সরকার ও বেসরকারি খাতকে একযোগে কাজ করতে হবে। ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এনকেএ মবিন, সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন, পরিচালক মো. শাহিদ হোসেন, গোলাম জিলানী, হোসেন এ সিকদার এবং নাসিরউদ্দিন এ ফেরদৌস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।