যাদের ঠিকানা নেই তাদের ঠিকানা করে দেব : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সকলের জন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করাই হবে মুজিববর্ষের লক্ষ্য, যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবন-যাপন করতে পারে। দেশের ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে ঘর দিতে পারার চেয়ে বড় কোন উৎসব আর কিছুই হতে পারে না।

শেখ হাসিনা গতকাল মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে আরও বলেন, ‘এভাবেই মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সমগ্র বাংলাদেশের গৃহহীনদের নিরাপদ বাসস্থান তৈরি করে দেয়া হবে, যাতে দেশের একটি লোকও গৃহহীন না থাকে।’ যাতে তারা উন্নত জীবনযাপন করতে পারে, আমরা সে ব্যবস্থা করে দিব। যাদের থাকার ঘর নেই, ঠিকানা নেই আমরা তাদের যেভাবেই হোক একটা ঠিকানা করে দেব।’

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন।

৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান করা হয় এবং একই সঙ্গে ৩ হাজার ৭শ’ ১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়।

গণভবনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) এবং সারাদেশের ৪৯২টি উপজেলা প্রান্ত ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিল এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে।

শেখ হাসিনা বলেন, মুজিববর্ষের অনেক কর্মসূচি আমাদের ছিল। সেগুলো আমরা করোনার কারণে করতে পারিনি। তবে করোনা এক দিকে আশীর্বাদও হয়েছে, কারণ আমরা এই একটি কাজের দিকেই (গৃহহীনকে ঘর করে দেয়া) নজর দিতে পেরেছি। আজকে এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে তারপরও সীমিত আকারে আমরা করে দিচ্ছি এবং একটা ঠিকানা আমি সমস্ত মানুষের জন্য করে দেব। কারণ আমি বিশ^াস করি যখন এই মানুষগুলো ঘরে থাকবে তখন আমার বাবা এবং মা-যারা সারাটা জীবন এদেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে গিয়েছেন তাদের আত্মা শান্তি পাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে এদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তাদের আত্মাটা অন্তত শান্তি পাবে। কারণ এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাটাই ছিল আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের একমাত্র লক্ষ্য।

তিনি বলেন, আজকে আমি সবচেয়ে খুশি যে এতো অল্প সময়ে এতগুলো পরিকারকে আমরা একটা ঠিকানা দিতে পেরেছি। এই শীতের মধ্যে তারা থাকতে পারবে। কেননা আমাদের যারা শরণার্থী (রোহিঙ্গা) তাদের জন্যও আমরা ভাসানচরে ঘর করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিল, ’৯১ সালের ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদেরও কক্সবাজার এবং পিরোজপুরে আমরা ফ্ল্যাট করে দিয়েছি অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদেরও ঘর করে দিয়েছি এবং সেখানে শীঘ্রই আরও ১শ’টি ভবন তৈরি করা হবে। আজ (গতকাল) এক লাখ ৬৬ হাজার ১৮৯টি ঘর করে দিলাম এবং শীঘ্রই আরও এক লাখ ঘর আমরা করে দেব।

অনুষ্ঠানে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার কাঠালতলা গ্রাম, নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুর গ্রাম, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সারাদেশের বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা উপকারভোগীদের মাঝে বাড়ির চাবি এবং দলিল হস্তান্তর করেন।

পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী এই স্বল্প সময়ে সফলভাবে গৃহনির্মাণ এবং কাগজপত্র তৈরির মতো জটিল কাজ ঠিকাদার নিয়োগ না দিয়ে সম্পন্ন করতে পারায় জেলা প্রশাসন এবং তার দপ্তর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতো দ্রুত সময়ে পৃথিবীর কোন দেশে কোন সময় কোন সরকার একসঙ্গে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ঘর করে দিয়েছে কিনা আমার জানা নেই। যেহেতু যারা প্রশাসনে রয়েছেন তারা সরাসরি ঘরগুলো তৈরি করেছেন তাই সম্ভব হয়েছে এবং মানসম্মত হয়েছে, সেজন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সরকারি কর্মচারীরা যেভাবে সবসময় আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন এটা অতুলনীয়। আর সেই সঙ্গে আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি, সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র থেকে শুরু করে সবাই সহযোগিতা করেছেন। এই একটি কাজে আমরা দেখেছি সবার সম্মিলিত প্রয়াস। তাই আজ আমরা এতো বড় একটা দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, এই গৃহায়ন প্রকল্পে কোন শ্রেণী বাদ যাচ্ছে না, বেদে শ্রেণীকেও আমরা ঘর করে দিয়েছি। হিজড়াদের স্বীকৃতি দিয়েছি এবং তাদেরও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দলিত বা হরিজন শ্রেণীর জন্য উচ্চমানের ফ্ল্যাট তৈরি করে দিচ্ছি। চা শ্রমিকদের জন্য করে দিয়েছি, এভাবে প্রত্যেকটা শ্রেণীর মানুষের পুনর্বাসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

এদিন ভিক্ষুক, ছিন্নমূল এবং বিধবাসহ ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান করা হয়। সরকার মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য ১,১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৬,১৮৯টি বাড়ি নির্মাণ করেছে। একই সঙ্গে ৩ হাজার ৭শ’ ১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন আশ্রয়ণ প্রকল্প মুজিববর্ষ উদযাপনকালে ২১টি জেলায় ৩৬টি উপজেলায় ৪৪টি প্রকল্পের অধীন ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণ করে ৩,৭১৫টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করছে। ইতোমধ্যে সারাদেশের ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬শ’ ২২টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এ তালিকা অনুযায়ী গৃহ নির্মাণ ও পরিবার পুনর্বাসনের কার্যক্রম চলবে।

উপকারভোগী প্রতিটি পরিবারকে ২ শতক জমির রেজিস্ট্রার্ড মালিকানা দলিল হস্তান্তরসহ নতুন খতিয়ান এবং সনদ হস্তান্তর করা হয়। প্রতিটি জমি এবং বাড়ির মালিকানা স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে দেয়া হয়েছে।

প্রতিটি দুই রুমের সেমিপাকা টিনশেড বাড়িতে রান্নাঘর, টয়লেট, বারান্দাসহ বিদ্যুৎ ও পানির নাগরিক সুবিধা রয়েছে। গ্রোথ সেন্টারের পাশে হওয়ায় প্রকল্প এলাকায় পাকা রাস্তা, স্কুল, মসজিদ-মাদ্রাসা এবং বাজার রয়েছে।

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব স্থবিরতায় ঘরগুলো হস্তান্তরকালে সশরীরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে না পারার আক্ষেপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ ইচ্ছে ছিল নিজ হাতে আপনাদের কাছে বাড়ির দলিলগুলো তুলে দেব। কিন্তু এই করোনাভাইরাসের কারণে সেটা করতে পারলাম না। তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিলাম বলেই আপনাদের সামনে এভাবে হাজির হতে পেরেছি।’

আমাদের দেশের মানুষ যেন অন্ন, বস্ত্র এবং উন্নত জীবন পায় সেটা নিশ্চিত করাই জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য ছিল উল্লেখ করে তিনি ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলোর বিশেষ করে সেনা শাসক জিয়াউর রহমানের তথাকথিত গণতন্ত্রায়নের নামে দেশের বিরাজনীতিকরণেরও কঠোর সমালোচনা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স উপলক্ষে সারাদেশের উপজেলা প্রান্তগুলোতে উৎসবের আমেজ পরিলক্ষিত হয়। চারটি স্থানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি মতবিনিময় করলেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা তাদের এবং স্থানীয় জনগণের ভিভিও বার্তা মূল অনুষ্ঠানে প্রেরণ করেন। নতুন গৃহপ্রবেশ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সারাদেশের উপকারভোগীদের নিয়ে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। সেইসঙ্গে দেশব্যাপী মিষ্টিমুখ করানো হয় বলেও তথ্য মিলেছে।

রবিবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২১ , ১০ মাঘ ১৪২৭, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪২

যাদের ঠিকানা নেই তাদের ঠিকানা করে দেব : প্রধানমন্ত্রী

বাসস

image

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সকলের জন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করাই হবে মুজিববর্ষের লক্ষ্য, যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবন-যাপন করতে পারে। দেশের ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে ঘর দিতে পারার চেয়ে বড় কোন উৎসব আর কিছুই হতে পারে না।

শেখ হাসিনা গতকাল মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে আরও বলেন, ‘এভাবেই মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সমগ্র বাংলাদেশের গৃহহীনদের নিরাপদ বাসস্থান তৈরি করে দেয়া হবে, যাতে দেশের একটি লোকও গৃহহীন না থাকে।’ যাতে তারা উন্নত জীবনযাপন করতে পারে, আমরা সে ব্যবস্থা করে দিব। যাদের থাকার ঘর নেই, ঠিকানা নেই আমরা তাদের যেভাবেই হোক একটা ঠিকানা করে দেব।’

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন।

৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান করা হয় এবং একই সঙ্গে ৩ হাজার ৭শ’ ১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়।

গণভবনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) এবং সারাদেশের ৪৯২টি উপজেলা প্রান্ত ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিল এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে।

শেখ হাসিনা বলেন, মুজিববর্ষের অনেক কর্মসূচি আমাদের ছিল। সেগুলো আমরা করোনার কারণে করতে পারিনি। তবে করোনা এক দিকে আশীর্বাদও হয়েছে, কারণ আমরা এই একটি কাজের দিকেই (গৃহহীনকে ঘর করে দেয়া) নজর দিতে পেরেছি। আজকে এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে তারপরও সীমিত আকারে আমরা করে দিচ্ছি এবং একটা ঠিকানা আমি সমস্ত মানুষের জন্য করে দেব। কারণ আমি বিশ^াস করি যখন এই মানুষগুলো ঘরে থাকবে তখন আমার বাবা এবং মা-যারা সারাটা জীবন এদেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে গিয়েছেন তাদের আত্মা শান্তি পাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে এদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তাদের আত্মাটা অন্তত শান্তি পাবে। কারণ এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাটাই ছিল আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের একমাত্র লক্ষ্য।

তিনি বলেন, আজকে আমি সবচেয়ে খুশি যে এতো অল্প সময়ে এতগুলো পরিকারকে আমরা একটা ঠিকানা দিতে পেরেছি। এই শীতের মধ্যে তারা থাকতে পারবে। কেননা আমাদের যারা শরণার্থী (রোহিঙ্গা) তাদের জন্যও আমরা ভাসানচরে ঘর করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিল, ’৯১ সালের ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদেরও কক্সবাজার এবং পিরোজপুরে আমরা ফ্ল্যাট করে দিয়েছি অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদেরও ঘর করে দিয়েছি এবং সেখানে শীঘ্রই আরও ১শ’টি ভবন তৈরি করা হবে। আজ (গতকাল) এক লাখ ৬৬ হাজার ১৮৯টি ঘর করে দিলাম এবং শীঘ্রই আরও এক লাখ ঘর আমরা করে দেব।

অনুষ্ঠানে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার কাঠালতলা গ্রাম, নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুর গ্রাম, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সারাদেশের বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা উপকারভোগীদের মাঝে বাড়ির চাবি এবং দলিল হস্তান্তর করেন।

পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী এই স্বল্প সময়ে সফলভাবে গৃহনির্মাণ এবং কাগজপত্র তৈরির মতো জটিল কাজ ঠিকাদার নিয়োগ না দিয়ে সম্পন্ন করতে পারায় জেলা প্রশাসন এবং তার দপ্তর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতো দ্রুত সময়ে পৃথিবীর কোন দেশে কোন সময় কোন সরকার একসঙ্গে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ঘর করে দিয়েছে কিনা আমার জানা নেই। যেহেতু যারা প্রশাসনে রয়েছেন তারা সরাসরি ঘরগুলো তৈরি করেছেন তাই সম্ভব হয়েছে এবং মানসম্মত হয়েছে, সেজন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সরকারি কর্মচারীরা যেভাবে সবসময় আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন এটা অতুলনীয়। আর সেই সঙ্গে আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি, সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র থেকে শুরু করে সবাই সহযোগিতা করেছেন। এই একটি কাজে আমরা দেখেছি সবার সম্মিলিত প্রয়াস। তাই আজ আমরা এতো বড় একটা দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, এই গৃহায়ন প্রকল্পে কোন শ্রেণী বাদ যাচ্ছে না, বেদে শ্রেণীকেও আমরা ঘর করে দিয়েছি। হিজড়াদের স্বীকৃতি দিয়েছি এবং তাদেরও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দলিত বা হরিজন শ্রেণীর জন্য উচ্চমানের ফ্ল্যাট তৈরি করে দিচ্ছি। চা শ্রমিকদের জন্য করে দিয়েছি, এভাবে প্রত্যেকটা শ্রেণীর মানুষের পুনর্বাসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

এদিন ভিক্ষুক, ছিন্নমূল এবং বিধবাসহ ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান করা হয়। সরকার মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য ১,১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৬,১৮৯টি বাড়ি নির্মাণ করেছে। একই সঙ্গে ৩ হাজার ৭শ’ ১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন আশ্রয়ণ প্রকল্প মুজিববর্ষ উদযাপনকালে ২১টি জেলায় ৩৬টি উপজেলায় ৪৪টি প্রকল্পের অধীন ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণ করে ৩,৭১৫টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করছে। ইতোমধ্যে সারাদেশের ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬শ’ ২২টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এ তালিকা অনুযায়ী গৃহ নির্মাণ ও পরিবার পুনর্বাসনের কার্যক্রম চলবে।

উপকারভোগী প্রতিটি পরিবারকে ২ শতক জমির রেজিস্ট্রার্ড মালিকানা দলিল হস্তান্তরসহ নতুন খতিয়ান এবং সনদ হস্তান্তর করা হয়। প্রতিটি জমি এবং বাড়ির মালিকানা স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে দেয়া হয়েছে।

প্রতিটি দুই রুমের সেমিপাকা টিনশেড বাড়িতে রান্নাঘর, টয়লেট, বারান্দাসহ বিদ্যুৎ ও পানির নাগরিক সুবিধা রয়েছে। গ্রোথ সেন্টারের পাশে হওয়ায় প্রকল্প এলাকায় পাকা রাস্তা, স্কুল, মসজিদ-মাদ্রাসা এবং বাজার রয়েছে।

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব স্থবিরতায় ঘরগুলো হস্তান্তরকালে সশরীরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে না পারার আক্ষেপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ ইচ্ছে ছিল নিজ হাতে আপনাদের কাছে বাড়ির দলিলগুলো তুলে দেব। কিন্তু এই করোনাভাইরাসের কারণে সেটা করতে পারলাম না। তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিলাম বলেই আপনাদের সামনে এভাবে হাজির হতে পেরেছি।’

আমাদের দেশের মানুষ যেন অন্ন, বস্ত্র এবং উন্নত জীবন পায় সেটা নিশ্চিত করাই জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য ছিল উল্লেখ করে তিনি ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলোর বিশেষ করে সেনা শাসক জিয়াউর রহমানের তথাকথিত গণতন্ত্রায়নের নামে দেশের বিরাজনীতিকরণেরও কঠোর সমালোচনা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স উপলক্ষে সারাদেশের উপজেলা প্রান্তগুলোতে উৎসবের আমেজ পরিলক্ষিত হয়। চারটি স্থানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি মতবিনিময় করলেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা তাদের এবং স্থানীয় জনগণের ভিভিও বার্তা মূল অনুষ্ঠানে প্রেরণ করেন। নতুন গৃহপ্রবেশ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সারাদেশের উপকারভোগীদের নিয়ে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। সেইসঙ্গে দেশব্যাপী মিষ্টিমুখ করানো হয় বলেও তথ্য মিলেছে।