পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতির

বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার পোশাক খাতে করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে। তবে এই পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ধীরগতির। বিশেষ করে ছোট কারখানা বা পোশাক সংগঠনের সদস্য নয় এমন কারখানাগুলো ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে। ঋণ প্রাপ্তির জটিলতার কারণে বেশিরভাগ ছোট কারখানাগুলো ঋণের আবেদন করেনি। ৯০ শতাংশ বড় কারখানার বিপরীতে মাত্র ৪০ শতাংশ ছোট কারখানা এই আবেদন করেছে। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের কারখানাগুলো অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণ ও ব্যাংকের আমানতের ওপর বেশি নির্ভরশীল ছিল।

গতকাল বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্টের (সিইডি) ম্যাপড ইন বাংলাদেশ (এমআইবি) যৌথ আলোচনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘কোভিড-১৯ বিবেচনায় পোশাক খাতে দুর্বলতা, সহনশীলতা এবং পুনরুদ্ধার : জরিপের ফলাফল’ নামে এই আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভাটির সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি সিপিডি ও এমআইবি-এর এই গবেষণার কথা উল্লেখ করে বলেন, মোট ৬১০টি পোশাক কারখানায় এই জরিপটি পরিচালনা করা হয়, যার ফলে কোভিড-১৯ বিবেচনায় পোশাক খাতে দুর্বলতা, সহনশীলতা এবং পুনরুদ্ধারকে বিশ্লেষণ করা সহজতর হবে। এই গবেষণার মাধ্যমে পোশাক খাত পুনরুদ্ধারে মধ্যমেয়াদি পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।

সভাটি সঞ্চালনা করেন এমআইবি’র প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দ হাসিবুদ্দিন হাসিব। তিনি এই গবেষণার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং তথ্য প্রাপ্তির গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন।

সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনার আবেদন প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে। সদস্য নয় এমন কারখানাগুলোকে অনতিবিলম্বে অ্যাসোসিয়েশনের সদ্যস্যভুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন দেয়ার প্রক্রিয়াটিকে কমপ্লায়েন্সের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) ও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) দায়িত্ব নিয়ে সামনে এসে শ্রমিকদের তালিকা সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। পোশাক খাতের ভবিষ্যতের বিকাশের জন্য ভ্যালু চেইনের বিভিন্ন বিভাগে আরও বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) বিবেচনা করা উচিত।

পোশাকশিল্পে নারী শ্রমিকদের অবদানের কথা তুলে ধরেন সংলাপের বিশেষ অতিথি শিরীন আখতার। তিনি বলেন, কোভিডের সময়কালে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করলেও পোশাকশিল্প আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এই সময়ে আমরা অনুধাবন করেছি, আপদকালে আমাদের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। সরকার ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা সবার কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে কীনা তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে সুশাসনের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। যারা কাজ হারিয়েছেন বা যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে তাদের দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। শ্রমিকেদের প্রশিক্ষণ এবং স্বাস্থ্যগত বিষয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়াও শ্রমিকরা যেন ন্যূনতম মজুরি পায় সেটাও দেখা দরকার। শ্রমিকরা কখন কোভিডের টিকা পাবেন সে বিষয়েও আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন।

ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে সংলাপের অতিথি বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বেশিরভাগ শ্রমিকের পর্যাপ্ত পরিমাণ কাগজ না থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়। ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণ প্রাপ্তির প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ করতে হবে।

ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একে এনামুল হক বলেন, এই গবেষণায় সার্বিক পরিস্থিতি উঠে আসলেও করোনার কারণে সৃষ্ট ঝুঁকিগুলোকে আলাদা করে দেখার সুযোগ রয়েছে। শ্রমিকদের করোনা পরীক্ষার অপর্যাপ্ততা কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিকে কতটুকু গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা সর্বাগ্রে ভেবে দেখতে হবে। মিসামি গার্মেন্টস ও বিজিএমইএ’র পরিচালক মিরান আলী সংলাপে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

সংলাপের সভাপতি সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি শ্রমিকদের জন্য একটি সামাজিক সুরক্ষা বীমারও প্রস্তাব করেন, যেখানে মালিক, শ্রমিক, সরকার, ক্রেতা এবং উন্নয়ন অংশীদাররা অংশ নেবে।

সিইডি’র উপদেষ্টা অধ্যাপক রহিম বি তালুকদার সংলাপে সমাপনি বক্তব্য প্রদান করেন। সংলাপে সাংবাদিক, গবেষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশাজীবীসহ অনেকে অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের মতামত তুলে ধরেন।

রবিবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২১ , ১০ মাঘ ১৪২৭, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪২

করোনায় পোশাক খাতের ক্ষতি

পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতির

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার পোশাক খাতে করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে। তবে এই পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ধীরগতির। বিশেষ করে ছোট কারখানা বা পোশাক সংগঠনের সদস্য নয় এমন কারখানাগুলো ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে। ঋণ প্রাপ্তির জটিলতার কারণে বেশিরভাগ ছোট কারখানাগুলো ঋণের আবেদন করেনি। ৯০ শতাংশ বড় কারখানার বিপরীতে মাত্র ৪০ শতাংশ ছোট কারখানা এই আবেদন করেছে। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের কারখানাগুলো অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণ ও ব্যাংকের আমানতের ওপর বেশি নির্ভরশীল ছিল।

গতকাল বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্টের (সিইডি) ম্যাপড ইন বাংলাদেশ (এমআইবি) যৌথ আলোচনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘কোভিড-১৯ বিবেচনায় পোশাক খাতে দুর্বলতা, সহনশীলতা এবং পুনরুদ্ধার : জরিপের ফলাফল’ নামে এই আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভাটির সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি সিপিডি ও এমআইবি-এর এই গবেষণার কথা উল্লেখ করে বলেন, মোট ৬১০টি পোশাক কারখানায় এই জরিপটি পরিচালনা করা হয়, যার ফলে কোভিড-১৯ বিবেচনায় পোশাক খাতে দুর্বলতা, সহনশীলতা এবং পুনরুদ্ধারকে বিশ্লেষণ করা সহজতর হবে। এই গবেষণার মাধ্যমে পোশাক খাত পুনরুদ্ধারে মধ্যমেয়াদি পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।

সভাটি সঞ্চালনা করেন এমআইবি’র প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দ হাসিবুদ্দিন হাসিব। তিনি এই গবেষণার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং তথ্য প্রাপ্তির গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন।

সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনার আবেদন প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে। সদস্য নয় এমন কারখানাগুলোকে অনতিবিলম্বে অ্যাসোসিয়েশনের সদ্যস্যভুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন দেয়ার প্রক্রিয়াটিকে কমপ্লায়েন্সের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) ও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) দায়িত্ব নিয়ে সামনে এসে শ্রমিকদের তালিকা সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। পোশাক খাতের ভবিষ্যতের বিকাশের জন্য ভ্যালু চেইনের বিভিন্ন বিভাগে আরও বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) বিবেচনা করা উচিত।

পোশাকশিল্পে নারী শ্রমিকদের অবদানের কথা তুলে ধরেন সংলাপের বিশেষ অতিথি শিরীন আখতার। তিনি বলেন, কোভিডের সময়কালে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করলেও পোশাকশিল্প আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এই সময়ে আমরা অনুধাবন করেছি, আপদকালে আমাদের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। সরকার ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা সবার কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে কীনা তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে সুশাসনের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। যারা কাজ হারিয়েছেন বা যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে তাদের দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। শ্রমিকেদের প্রশিক্ষণ এবং স্বাস্থ্যগত বিষয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়াও শ্রমিকরা যেন ন্যূনতম মজুরি পায় সেটাও দেখা দরকার। শ্রমিকরা কখন কোভিডের টিকা পাবেন সে বিষয়েও আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন।

ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে সংলাপের অতিথি বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বেশিরভাগ শ্রমিকের পর্যাপ্ত পরিমাণ কাগজ না থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়। ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণ প্রাপ্তির প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ করতে হবে।

ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একে এনামুল হক বলেন, এই গবেষণায় সার্বিক পরিস্থিতি উঠে আসলেও করোনার কারণে সৃষ্ট ঝুঁকিগুলোকে আলাদা করে দেখার সুযোগ রয়েছে। শ্রমিকদের করোনা পরীক্ষার অপর্যাপ্ততা কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিকে কতটুকু গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা সর্বাগ্রে ভেবে দেখতে হবে। মিসামি গার্মেন্টস ও বিজিএমইএ’র পরিচালক মিরান আলী সংলাপে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

সংলাপের সভাপতি সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি শ্রমিকদের জন্য একটি সামাজিক সুরক্ষা বীমারও প্রস্তাব করেন, যেখানে মালিক, শ্রমিক, সরকার, ক্রেতা এবং উন্নয়ন অংশীদাররা অংশ নেবে।

সিইডি’র উপদেষ্টা অধ্যাপক রহিম বি তালুকদার সংলাপে সমাপনি বক্তব্য প্রদান করেন। সংলাপে সাংবাদিক, গবেষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশাজীবীসহ অনেকে অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের মতামত তুলে ধরেন।