কক্সবাজার এলএ শাখার দুর্নীতি

সার্ভেয়ার কেশব লাল ও দালাল মহিব উল্লাহ আটক

কক্সবাজার এলএ শাখার শীর্ষ দালাল মুহিব উল্লাহ ও সাবেক সার্ভেয়ার কেশব লাল দেবকে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে চট্টগ্রাম জিইসি মোড়স্থ এমইএস কলেজ গেইট এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।

তাদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মে জড়িত থাকা এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।

আটক দালাল মুহিব উল্লাহ কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়া পালং ইউনিয়নের ফরিদ আহমেদের ছেলে। কেশব লাল দেব কক্সবাজার এলএ শাখার সাবেক সার্ভেয়ার, বর্তমানে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ শাখায় কর্মরত।

দুদকের একটি সূত্র জানায়, কেশব লাল দেব কক্সবাজার এলএ শাখায় থাকাকালীন সরকারের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পকে ঘিরে ভূমি অধিগ্রহণ কাজে মুহিব উল্লাহসহ শতাধিক দালাল ও সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সিন্ডিকেট করে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের মাধ্যমে অবৈধভাবে শতশত কোটি টাকা আয় করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়াও কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দুর্নীতি ও নানা অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে আটককৃত দালালদের ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতেও মুহিব উল্লাহ ও সার্ভেয়ার কেশব লাল দেবের নাম উঠে আসে। তাদের এসব দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে সত্যতাও পেয়েছে দুদক। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা র্কাযালয়-২-এর উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রথম কাজ ভূমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে দালালদের সিন্ডিকেটটি তৈরি হয়েছে। এসব দালাল জমির মালিকদের নাম দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি নজরে আসার পর দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধানে নামে। অনুসন্ধানের শুরুতেই দুদক ও র‌্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ ওয়াসিম নামের এক সার্ভেয়ারকে নগদ টাকাসহ আটক করে।

তার তথ্যের ভিত্তিতে পরে ২২ জুলাই মো. সেলিম উল্লাহ, ৩ আগস্ট মোহাম্মদ কামরুদ্দিন ও সালাহ উদ্দিন নামের ৩ দালালকে আটক করে দুদক। আটকের সময় এসব দালালের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকার নগদ চেক ও ভূমি অধিগ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ মূলনথি উদ্ধার করা হয়। পরে আটককৃতদের ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে প্রায় দেড়’শ দালালের নাম উঠে আসে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া ও তারাবনিয়ারছড়া এলাকা থেকে ৯৩ লাখ টাকাসহ সার্ভেয়ার ওয়াসিমকে আটক করা হয়। সেখান থেকে ১৫ লাখ টাকার চেক ও ঘুষ গ্রহণের বিভিন্ন নথি জব্দ করা হয়। এরপরই জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের প্রতি অমানবিক আচরণ ও আর্থিক হয়রানি প্রকাশ্যে আসে।

এর পর পরই ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার ৩০ কর্মকর্তাকে এক আদেশে শাস্তিমূলক বদলি করে ভূমি মন্ত্রণালয়। তারমধ্যে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কর্মরত ১৯ জন সার্ভেয়ার, সাতজন কানুনগো ও ৪ জন অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা রয়েছে।

একই অভিযোগে মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীনকে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জিইসি মোড় থেকে আটক করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনি কক্সবাজার শহরের পেশকারপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের ছেলে।

রবিবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২১ , ১০ মাঘ ১৪২৭, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪২

কক্সবাজার এলএ শাখার দুর্নীতি

সার্ভেয়ার কেশব লাল ও দালাল মহিব উল্লাহ আটক

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার

কক্সবাজার এলএ শাখার শীর্ষ দালাল মুহিব উল্লাহ ও সাবেক সার্ভেয়ার কেশব লাল দেবকে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে চট্টগ্রাম জিইসি মোড়স্থ এমইএস কলেজ গেইট এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।

তাদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মে জড়িত থাকা এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।

আটক দালাল মুহিব উল্লাহ কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়া পালং ইউনিয়নের ফরিদ আহমেদের ছেলে। কেশব লাল দেব কক্সবাজার এলএ শাখার সাবেক সার্ভেয়ার, বর্তমানে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ শাখায় কর্মরত।

দুদকের একটি সূত্র জানায়, কেশব লাল দেব কক্সবাজার এলএ শাখায় থাকাকালীন সরকারের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পকে ঘিরে ভূমি অধিগ্রহণ কাজে মুহিব উল্লাহসহ শতাধিক দালাল ও সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সিন্ডিকেট করে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের মাধ্যমে অবৈধভাবে শতশত কোটি টাকা আয় করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়াও কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দুর্নীতি ও নানা অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে আটককৃত দালালদের ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতেও মুহিব উল্লাহ ও সার্ভেয়ার কেশব লাল দেবের নাম উঠে আসে। তাদের এসব দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে সত্যতাও পেয়েছে দুদক। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা র্কাযালয়-২-এর উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রথম কাজ ভূমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে দালালদের সিন্ডিকেটটি তৈরি হয়েছে। এসব দালাল জমির মালিকদের নাম দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি নজরে আসার পর দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধানে নামে। অনুসন্ধানের শুরুতেই দুদক ও র‌্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ ওয়াসিম নামের এক সার্ভেয়ারকে নগদ টাকাসহ আটক করে।

তার তথ্যের ভিত্তিতে পরে ২২ জুলাই মো. সেলিম উল্লাহ, ৩ আগস্ট মোহাম্মদ কামরুদ্দিন ও সালাহ উদ্দিন নামের ৩ দালালকে আটক করে দুদক। আটকের সময় এসব দালালের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকার নগদ চেক ও ভূমি অধিগ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ মূলনথি উদ্ধার করা হয়। পরে আটককৃতদের ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে প্রায় দেড়’শ দালালের নাম উঠে আসে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া ও তারাবনিয়ারছড়া এলাকা থেকে ৯৩ লাখ টাকাসহ সার্ভেয়ার ওয়াসিমকে আটক করা হয়। সেখান থেকে ১৫ লাখ টাকার চেক ও ঘুষ গ্রহণের বিভিন্ন নথি জব্দ করা হয়। এরপরই জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের প্রতি অমানবিক আচরণ ও আর্থিক হয়রানি প্রকাশ্যে আসে।

এর পর পরই ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার ৩০ কর্মকর্তাকে এক আদেশে শাস্তিমূলক বদলি করে ভূমি মন্ত্রণালয়। তারমধ্যে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কর্মরত ১৯ জন সার্ভেয়ার, সাতজন কানুনগো ও ৪ জন অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা রয়েছে।

একই অভিযোগে মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীনকে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জিইসি মোড় থেকে আটক করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনি কক্সবাজার শহরের পেশকারপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের ছেলে।