কিশোর গ্যাং

দেশের বিপথগামী শিশু ও তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ এখন গ্যাং কালচারের সঙ্গে যুক্ত। রাজধানী শহর থেকে এখন গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়েছে এমন অপরাধের ঢেউ। শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভয়ঙ্কর এই গ্যাং সংস্কৃতি।

স্কুলে পড়তে গিয়ে কিংবা এলাকায় আড্ডা দিতে গিয়ে শুরুতে মজার ছলে এসব গ্রুপ তৈরি হলেও পরে একসময় মাদক, অস্ত্র এমনকি খুনোখুনিতেও জড়িয়ে পড়ে। কেউ স্ব-প্রণোদিত হয়ে কেউ বা বল প্রয়োগের কারণে গ্যাং সদস্য হয়। কিশোররা এ সময় রাজনৈতিক গড ফাদারদের অপরাধের হাতিয়ার হয়ে উঠে। নিজেদের জানান দিতে দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকা, পাড়া মহল্লা ভাগ করে নেয়া এবং নিজস্ব গ্যাংয়ের শক্তি প্রদর্শন করা। অবৈধ সব কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ, ইভটিজিং ও মাদক বিস্তারে গ্যাং সদস্যদের কাজে লাগানো হয়।

মূলত: দুটি কারণে কিশোররা এসব গ্যাং সংস্কৃতিতে ঢুকে পড়ছে। প্রথমত: মাদক, অস্ত্রের দাপটসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। দ্বিতীয়ত: এখনকার শিশু-কিশোররা পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথেষ্ট মনোযোগ পাচ্ছে না। ফলে কিশোরদের কেউ যখন বন্ধুদের মাধ্যমে কিশোর গ্যাংগুলোতে ঢুকছে এবং মাদক ও অস্ত্রের জোগান সহজেই পেয়ে যাচ্ছে তখন তার প্রলুব্ধ হওয়া এবং অপরাধপ্রবণ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।

কিশোর অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব। কিশোর গ্যাং থেকে ফিরিয়ে এনে কিশোরদের শক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি সরকারের সদিচ্ছারও প্রয়োজন। সমাজে অপরাধী হওয়ার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে পরিবারে কিশোরদের একাকী বা বিচ্ছিন্ন না রেখে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। গান-নাচ-বাদ্যযন্ত্র শেখানো, আবৃত্তি, গল্প শোনা, গল্প বলা, গল্প বানানো, শব্দের খেলা, ছবি জোড়া দেয়া, শারীরিক শিক্ষাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে তাদের ব্যস্ত রাখতে হবে। প্রতিযোগিতা নয়, তারা কতটা সৃজনশীলভাবে তা শিখতে পেরেছে তা দেখা প্রয়োজন।

শিশু-কিশোরদের মোবাইল হাতে না দিয়ে বই পড়ায় উৎসাহী করে তুলতে হবে। তাদের নিয়েই মঞ্চনাটকসহ সব ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে। যদি একটি শিশু, শিশু বয়স থেকে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, খেলাধুলা, থিয়েটার, সংগীত, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িত থাকে, যদি তার মনস্তাত্ত্বিক জায়গা বুঝে তাকে গড়ে তোলা হয়, তবে তার কৈশোর ভালো কাটবে।

আল-আমিন হক

একলাশপুর, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।

রবিবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২১ , ১০ মাঘ ১৪২৭, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪২

কিশোর গ্যাং

দেশের বিপথগামী শিশু ও তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ এখন গ্যাং কালচারের সঙ্গে যুক্ত। রাজধানী শহর থেকে এখন গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়েছে এমন অপরাধের ঢেউ। শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভয়ঙ্কর এই গ্যাং সংস্কৃতি।

স্কুলে পড়তে গিয়ে কিংবা এলাকায় আড্ডা দিতে গিয়ে শুরুতে মজার ছলে এসব গ্রুপ তৈরি হলেও পরে একসময় মাদক, অস্ত্র এমনকি খুনোখুনিতেও জড়িয়ে পড়ে। কেউ স্ব-প্রণোদিত হয়ে কেউ বা বল প্রয়োগের কারণে গ্যাং সদস্য হয়। কিশোররা এ সময় রাজনৈতিক গড ফাদারদের অপরাধের হাতিয়ার হয়ে উঠে। নিজেদের জানান দিতে দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকা, পাড়া মহল্লা ভাগ করে নেয়া এবং নিজস্ব গ্যাংয়ের শক্তি প্রদর্শন করা। অবৈধ সব কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ, ইভটিজিং ও মাদক বিস্তারে গ্যাং সদস্যদের কাজে লাগানো হয়।

মূলত: দুটি কারণে কিশোররা এসব গ্যাং সংস্কৃতিতে ঢুকে পড়ছে। প্রথমত: মাদক, অস্ত্রের দাপটসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। দ্বিতীয়ত: এখনকার শিশু-কিশোররা পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথেষ্ট মনোযোগ পাচ্ছে না। ফলে কিশোরদের কেউ যখন বন্ধুদের মাধ্যমে কিশোর গ্যাংগুলোতে ঢুকছে এবং মাদক ও অস্ত্রের জোগান সহজেই পেয়ে যাচ্ছে তখন তার প্রলুব্ধ হওয়া এবং অপরাধপ্রবণ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।

কিশোর অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব। কিশোর গ্যাং থেকে ফিরিয়ে এনে কিশোরদের শক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি সরকারের সদিচ্ছারও প্রয়োজন। সমাজে অপরাধী হওয়ার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে পরিবারে কিশোরদের একাকী বা বিচ্ছিন্ন না রেখে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। গান-নাচ-বাদ্যযন্ত্র শেখানো, আবৃত্তি, গল্প শোনা, গল্প বলা, গল্প বানানো, শব্দের খেলা, ছবি জোড়া দেয়া, শারীরিক শিক্ষাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে তাদের ব্যস্ত রাখতে হবে। প্রতিযোগিতা নয়, তারা কতটা সৃজনশীলভাবে তা শিখতে পেরেছে তা দেখা প্রয়োজন।

শিশু-কিশোরদের মোবাইল হাতে না দিয়ে বই পড়ায় উৎসাহী করে তুলতে হবে। তাদের নিয়েই মঞ্চনাটকসহ সব ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে। যদি একটি শিশু, শিশু বয়স থেকে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, খেলাধুলা, থিয়েটার, সংগীত, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িত থাকে, যদি তার মনস্তাত্ত্বিক জায়গা বুঝে তাকে গড়ে তোলা হয়, তবে তার কৈশোর ভালো কাটবে।

আল-আমিন হক

একলাশপুর, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।