দুধের মাছি এমপি শহিদ-সেলিনা দম্পতি

মোহাম্মদ আবু নোমান

জাতীয় সংসদের একজন জনপ্রতিনিধি আন্তর্জাতিক অপরাধী হিসেবে প্রকাশ পাবে এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। সারা বিশ্ব যখন মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত তথা কঠোর অবস্থানে, এমন সময়ে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ওরফে পাপুলকে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ কুয়েতে আটকের ঘটনা অনভিপ্রেত, লজ্জা ও দুর্ভাগ্যজনক। একজন জনপ্রতিনিধি (আইন প্রণেতা) আর অন্য কেউ গ্রেপ্তার হওয়া এক নয়। আমাদের দেশের কতিপয় চোর-ডাকাতদের নানা কু-কীর্তির অর্জন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানি ও প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে! সংসদের একজন জনপ্রতিনিধি তথা আইনপ্রণেতার এমন অধঃপতিত হওয়া রাষ্ট্রীয় চরিত্রের অসুস্থতার বহিঃপ্রকাশ নয় কী?

দেশে ওনাদের সাজা হয় না

বাংলাদেশে যদি যথাযথ জবাবদিহি থাকত তাহলে কুয়েতের আগে দেশেই এমপি শহিদ সস্ত্রীক আটক হতেন। একটা কথা এমপি যুগল হয়তো ভুলেই ছিলেন, টাকার জোরে নিজের দেশে যা খুশি করা যায়, কিন্তু পরের দেশে পোদ্দারি চলেনা। কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়ায়ই শুধু আমরা জানব কেন? মানব আর অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে দেশে কি কোন আইন নেই? নাকি আইন শুধু বিরোধীদের দমনের জন্যই? আমাদের দেশে যথা সময়ে ওনাদের কু-কীর্তির খোঁজ রাখা হয় না, সাজা হয় না। কারণ, ওনাদের হাত বহুত লম্বা।

যদিও এমপি শহিদ কুয়েতে গ্রেপ্তারে পর দুদক তদন্ত চালিয়ে টাকা পাচারের প্রমাণ পেয়েছে। সেই প্রমাণের ভিত্তিতে তারা মামলা করেছে। সেই মামলায় তারা আদালত থেকে সংসদ সদস্য দম্পতির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করাতে পেরেছে। দুদকের তদন্ত সঠিক হলে সংসদ সদস্য দম্পতি অবশ্যই প্রিভিলেজ লঙ্ঘন করেছেন। দুই কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় শহিদের বাংলাদেশে থাকা স্ত্রী, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম আগাম জামিনের জন্যও গত ২৬ নভেম্বর হাইকোর্টে আবেদন করেছেন।

দুধের মাছি সংসদ সদস্য শহিদ

শহিদুল ইসলাম ওরফে পাপুলকে এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগে তার এলাকার অনেকেই তাকে চিনতেনই না। নির্বাচনের কিছু দিন আগে থেকে এলাকায় তার আনাগোনা দেখা যায়। টাকার জোরে দুধের মাছির মতো জুড়ে বসেছেন। মূলত টাকার কাছে বিক্রি হয়েই জোটের প্রার্থীকে বিশেষ কৃপায় নিষ্ক্রিয় রেখে শহিদ এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখানেই এমপি শহিদুল থেমে থাকেননি। নিজের স্ত্রীর জন্যও সংরক্ষিত আসন থেকে এমপি পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। স্পষ্টতই দেশ এখন সৎ এবং যোগ্য নেতৃত্বের দেউলিয়াপনায় ভুগছে! এমপি শহিদের কারণে দেশের যে পরিমাণ ইমেজ ক্ষতি হয়েছে তার দায়ভার কে নেবে? প্রকৃত ত্যাগী রাজনীতিবিদ কিংবা শিক্ষিত ও ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের সাপোর্ট না দিয়ে, অগণতান্ত্রিক ধারার শহিদের মতো ব্যাক্তিদের সুযোগ করে দিলে দেশের জন্য এ রকম দুঃসংবাদ আসবেই। সুযোগসন্ধানীরা সব সময়ই ‘দুধের মাছির’ মতো ক্ষমতার আশপাশে ঘুরঘুর করে উড়ে বেড়ায়। সুযোগ বুঝে ক্ষমতার মধুতে চুমুক দিয়ে থাকে। ক্ষমতার আশপাশে এত বেশি দুধের মাছিদের ভিড় থাকে যে, দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতারাও তাদের সামনে দাঁড়াতে পারেন না। এই সুযোগসন্ধানী লোকগুলো ঝোপ বুঝে কোপ মারায় দারুণ সিদ্ধহস্ত।

দেশের হারানো সম্মান ফিরে আসবে কী?

সংসদ থেকে শহিদকে বহিষ্কার কিংবা তার স্ত্রীকেও বহিষ্কার করলেও দেশের যে সম্মানহানি হয়ছে সেটা কি ফিরে আসবে কী? যারা শহিদের মতো লোককে নির্বাচনের জন্য ‘বিশেষ বিবেচনায়’ যোগ্য ঘোষণা করেছিল তারা কি এর দায়ভার নেবে? দুদকসহ সরকারের দায়ীত্বশীল সবগুলো প্রতিষ্ঠান যদি চোখ কান খোলা রাখত, তাহলে এ অবস্থা কোনদিনই হতো না। কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তরা কী করছেন? রাষ্ট্রের এমন স্পর্শকাতর ইস্যুতে কুয়েত দূতাবাস তো নিজস্ব তদন্ত করে নোট পাঠানো উচিত ছিল? দেশের একজন আইন প্রণেতার বিদেশের মাটিতে এভাবে গ্রেপ্তার হওয়াটা দেশের জন্য লজ্জাজনক, তাই এই কূটনৈতিক ব্যর্থতার জন্য ওই দেশের রাষ্ট্রদূতসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। স্বদেশের এমপিরা সেদেশে কি ব্যবসা করছেন তা কি দুতাবাসের কর্মকর্তারা জেনে থাকেন না?

দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার সুবাধে সংসদ সদস্য শহিদের মতো অনৈতিক সুবিধাবাদীরা ক্ষমতাসীনদের বৃত্তেই বিচরণ করবে এটাই সত্য। আর ক্ষমাতাসীনদের কিছু নেতা বুঝে না বুঝে এই সুবিধাভোগীদের আশ্রয় দিচ্ছেন। যার কারণে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বরাবরই ক্ষমাতীনদের আশেপাশে সুবিধাবাদী ও সুবিধাভোগীদের একটি বৃত্ত গড়ে উঠে। সুবিধাবাদী, সুবিধাভোগী ও জালিয়াতিকারীদের আপন করে সর্বোচ্চ সেবা-যত্ন করেছেন তার প্রমাণ সংবাদ সদস্য শাহিদের স্ত্রীর সংরক্ষিত আসনে এমপি হওয়া।

সরকার ক্ষমতায় থাকলে এ রকম অনুপ্রবেশ হয়েই থাকে। সরকারের মধ্যে স্বদলীয় কিছু লোক এদের জায়গা করে দিয়ে থাকে। ফলস্বরূপ, তারা দ্রুত একটি দাপুটে অবস্থায় তৈরি করে ফেলে। আওয়ামী লীগ একটি বিশাল দল। এ জাতীয় ষড়যন্ত্রকারী, প্রতারক, লোভী মানুষ শাসক দলে আশ্রয় পেতে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ে তাদের স্বরূপ উম্মোচিত হয়ে থাকে, তাদের ধরা পড়তে হয়। শহিদকে গ্রেপ্তার করা তার প্রমাণ।

abunoman1972@gmail.com

রবিবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২১ , ১০ মাঘ ১৪২৭, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪২

দুধের মাছি এমপি শহিদ-সেলিনা দম্পতি

মোহাম্মদ আবু নোমান

জাতীয় সংসদের একজন জনপ্রতিনিধি আন্তর্জাতিক অপরাধী হিসেবে প্রকাশ পাবে এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। সারা বিশ্ব যখন মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত তথা কঠোর অবস্থানে, এমন সময়ে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ওরফে পাপুলকে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ কুয়েতে আটকের ঘটনা অনভিপ্রেত, লজ্জা ও দুর্ভাগ্যজনক। একজন জনপ্রতিনিধি (আইন প্রণেতা) আর অন্য কেউ গ্রেপ্তার হওয়া এক নয়। আমাদের দেশের কতিপয় চোর-ডাকাতদের নানা কু-কীর্তির অর্জন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানি ও প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে! সংসদের একজন জনপ্রতিনিধি তথা আইনপ্রণেতার এমন অধঃপতিত হওয়া রাষ্ট্রীয় চরিত্রের অসুস্থতার বহিঃপ্রকাশ নয় কী?

দেশে ওনাদের সাজা হয় না

বাংলাদেশে যদি যথাযথ জবাবদিহি থাকত তাহলে কুয়েতের আগে দেশেই এমপি শহিদ সস্ত্রীক আটক হতেন। একটা কথা এমপি যুগল হয়তো ভুলেই ছিলেন, টাকার জোরে নিজের দেশে যা খুশি করা যায়, কিন্তু পরের দেশে পোদ্দারি চলেনা। কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়ায়ই শুধু আমরা জানব কেন? মানব আর অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে দেশে কি কোন আইন নেই? নাকি আইন শুধু বিরোধীদের দমনের জন্যই? আমাদের দেশে যথা সময়ে ওনাদের কু-কীর্তির খোঁজ রাখা হয় না, সাজা হয় না। কারণ, ওনাদের হাত বহুত লম্বা।

যদিও এমপি শহিদ কুয়েতে গ্রেপ্তারে পর দুদক তদন্ত চালিয়ে টাকা পাচারের প্রমাণ পেয়েছে। সেই প্রমাণের ভিত্তিতে তারা মামলা করেছে। সেই মামলায় তারা আদালত থেকে সংসদ সদস্য দম্পতির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করাতে পেরেছে। দুদকের তদন্ত সঠিক হলে সংসদ সদস্য দম্পতি অবশ্যই প্রিভিলেজ লঙ্ঘন করেছেন। দুই কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় শহিদের বাংলাদেশে থাকা স্ত্রী, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম আগাম জামিনের জন্যও গত ২৬ নভেম্বর হাইকোর্টে আবেদন করেছেন।

দুধের মাছি সংসদ সদস্য শহিদ

শহিদুল ইসলাম ওরফে পাপুলকে এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগে তার এলাকার অনেকেই তাকে চিনতেনই না। নির্বাচনের কিছু দিন আগে থেকে এলাকায় তার আনাগোনা দেখা যায়। টাকার জোরে দুধের মাছির মতো জুড়ে বসেছেন। মূলত টাকার কাছে বিক্রি হয়েই জোটের প্রার্থীকে বিশেষ কৃপায় নিষ্ক্রিয় রেখে শহিদ এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখানেই এমপি শহিদুল থেমে থাকেননি। নিজের স্ত্রীর জন্যও সংরক্ষিত আসন থেকে এমপি পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। স্পষ্টতই দেশ এখন সৎ এবং যোগ্য নেতৃত্বের দেউলিয়াপনায় ভুগছে! এমপি শহিদের কারণে দেশের যে পরিমাণ ইমেজ ক্ষতি হয়েছে তার দায়ভার কে নেবে? প্রকৃত ত্যাগী রাজনীতিবিদ কিংবা শিক্ষিত ও ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের সাপোর্ট না দিয়ে, অগণতান্ত্রিক ধারার শহিদের মতো ব্যাক্তিদের সুযোগ করে দিলে দেশের জন্য এ রকম দুঃসংবাদ আসবেই। সুযোগসন্ধানীরা সব সময়ই ‘দুধের মাছির’ মতো ক্ষমতার আশপাশে ঘুরঘুর করে উড়ে বেড়ায়। সুযোগ বুঝে ক্ষমতার মধুতে চুমুক দিয়ে থাকে। ক্ষমতার আশপাশে এত বেশি দুধের মাছিদের ভিড় থাকে যে, দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতারাও তাদের সামনে দাঁড়াতে পারেন না। এই সুযোগসন্ধানী লোকগুলো ঝোপ বুঝে কোপ মারায় দারুণ সিদ্ধহস্ত।

দেশের হারানো সম্মান ফিরে আসবে কী?

সংসদ থেকে শহিদকে বহিষ্কার কিংবা তার স্ত্রীকেও বহিষ্কার করলেও দেশের যে সম্মানহানি হয়ছে সেটা কি ফিরে আসবে কী? যারা শহিদের মতো লোককে নির্বাচনের জন্য ‘বিশেষ বিবেচনায়’ যোগ্য ঘোষণা করেছিল তারা কি এর দায়ভার নেবে? দুদকসহ সরকারের দায়ীত্বশীল সবগুলো প্রতিষ্ঠান যদি চোখ কান খোলা রাখত, তাহলে এ অবস্থা কোনদিনই হতো না। কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তরা কী করছেন? রাষ্ট্রের এমন স্পর্শকাতর ইস্যুতে কুয়েত দূতাবাস তো নিজস্ব তদন্ত করে নোট পাঠানো উচিত ছিল? দেশের একজন আইন প্রণেতার বিদেশের মাটিতে এভাবে গ্রেপ্তার হওয়াটা দেশের জন্য লজ্জাজনক, তাই এই কূটনৈতিক ব্যর্থতার জন্য ওই দেশের রাষ্ট্রদূতসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। স্বদেশের এমপিরা সেদেশে কি ব্যবসা করছেন তা কি দুতাবাসের কর্মকর্তারা জেনে থাকেন না?

দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার সুবাধে সংসদ সদস্য শহিদের মতো অনৈতিক সুবিধাবাদীরা ক্ষমতাসীনদের বৃত্তেই বিচরণ করবে এটাই সত্য। আর ক্ষমাতাসীনদের কিছু নেতা বুঝে না বুঝে এই সুবিধাভোগীদের আশ্রয় দিচ্ছেন। যার কারণে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বরাবরই ক্ষমাতীনদের আশেপাশে সুবিধাবাদী ও সুবিধাভোগীদের একটি বৃত্ত গড়ে উঠে। সুবিধাবাদী, সুবিধাভোগী ও জালিয়াতিকারীদের আপন করে সর্বোচ্চ সেবা-যত্ন করেছেন তার প্রমাণ সংবাদ সদস্য শাহিদের স্ত্রীর সংরক্ষিত আসনে এমপি হওয়া।

সরকার ক্ষমতায় থাকলে এ রকম অনুপ্রবেশ হয়েই থাকে। সরকারের মধ্যে স্বদলীয় কিছু লোক এদের জায়গা করে দিয়ে থাকে। ফলস্বরূপ, তারা দ্রুত একটি দাপুটে অবস্থায় তৈরি করে ফেলে। আওয়ামী লীগ একটি বিশাল দল। এ জাতীয় ষড়যন্ত্রকারী, প্রতারক, লোভী মানুষ শাসক দলে আশ্রয় পেতে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ে তাদের স্বরূপ উম্মোচিত হয়ে থাকে, তাদের ধরা পড়তে হয়। শহিদকে গ্রেপ্তার করা তার প্রমাণ।

abunoman1972@gmail.com