বীমা কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে

বীমা খাত বর্তমানে ইমেজ ক্রাইসিসে ভুগছে। ৭৮টি কোম্পানির মধ্য অনেকেরই যোগ্য সিইও নেই। এ সেক্টর এগিয়েছে কিছু আনপ্রফেশনাল লোক দিয়ে। এজন্য খাতটির প্রকৃত উন্নয়ন হয়নি। বীমা কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রবাসী জনগোষ্ঠী বড় সংখ্যা বিমা সেক্টরের বাইরে। তাদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। বীমা সেক্টর নিয়ে জনগণের মধ্যে যে আস্থা সংকট রয়েছে, সেই আস্থা সংকট কাটিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে। গতকাল রাজধানীর ইআরএফ কার্যালয়ে আয়োজিত ‘চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড অপরচুনিটিস অব ইন্স্যুরেন্স সেক্টর ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন বলেছেন, অর্থনীতির সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হচ্ছে বীমা শিল্প। তাই সব শ্রেণীর মানুষের জন্য ইন্স্যুরেন্স হওয়া উচিত। আর্থিক খাতের সবচেয়ে অ্যাসেন্সিয়াল ফিন্যান্সিয়াল প্রডাক্ট হচ্ছে ইন্স্যুরেন্স। অথচ এ সেক্টর থেকে আমরা দূরে থাকছি। বিদেশে একটি লোকও বীমার বাইরে নেই। তাদের বীমা করা ম্যান্ডটরি অথচ আমাদের দেশে কোন ম্যাকানিজম নেই। তাই এ সেক্টরে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি। আগামীতে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে সব কিছু স্বচ্ছতার সঙ্গে করতে চাই। সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, সারা বিশ্বের দিকে তাকালে দেখতে পাই জিডিপিতে এ শিল্পের অবদান ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। আমাদের দেশের জিডিপিতে বীমা শিল্পের অবদান মাত্র শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ হতে হবে। তাই অর্থনীতির গতিকে ত্বরান্বিত করতে লাইফ এবং নন লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর পেইড-আপ ক্যাপিটাল বাড়ানো উচিত।

ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) মো. কাজিম উদ্দীন বলেন, এ সেক্টরে যেমন চ্যালেঞ্জ রয়েছে তেমনি সুযোগও রয়েছে। এখানে আস্থার সংকট ও দাবি পরিশোধের সমস্যা রয়েছে। তাই প্রত্যেক কোম্পানিগুলো যদি সঠিক সময়ে দাবিগুলো পরিশোধ করে তাহলে এ সেক্টর থেকে আস্থা সংকট কেটে যাবে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, ইন্স্যুরেন্সে নেতিবাচক দিকটা বেশি কাজ করে। তবে এখান থেকে উত্তরণের কাজ করছে আইডিআরএ। এ শিল্প উন্নয়নে ইডরা যে পদক্ষেপ নিয়েছে তার ফল ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে। তবে বীমা কোম্পানিগুলোর নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তাদের যদি নিজস্ব সক্ষমতা না থাকে তাহলে তারা অন্যকে কী নিরাপত্তা দেবে। তাই এটি নিশ্চিতে আইনি সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সদিচ্ছারও প্রয়োজন।

ইআরএফ-এর সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বলেন, গত ৪০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়েছে বীমা শিল্প সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারেনি। বাংলাদেশের জিডিবিতে বীমা শিল্পের ভূমিকা এক শতাংশও নেই। তাই আমরা আশা করব আগামীতে যে রিফর্মগুলো এ সেক্টরে আসবে গণমাধ্যম সেই রিফর্মগুলোর সঙ্গে এক সঙ্গে কাজ করবে।

বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মিজান মালিক বলেন, যে প্রতিনিধিগুলো সাধারণত জনগণের কাছে যায়। তারা জনগণকে বীমা নিয়ে সঠিক তথ্যটা দিতে পারে না। তাই বীমার মাঠ পর্যায়ে কর্মীদের আরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সম্পাদক একেএম রাশেদ শাহরিয়ারের সভাপতিত্বে সেমিনারে কীনোট উপস্থাপন করেন ঢাবির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এমডি জালালুল আজিম ও ইন্স্যুরেন্স একাডেমির পরিচালক এসএম ইব্রাহীম হোসেন। সেমিনারে সঞ্চালনা করেন বাণিজ্য প্রতিদিনের চিফ রিপোর্টার মো. গিয়াস উদ্দিন।

সোমবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২১ , ১১ মাঘ ১৪২৭, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

বীমা কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

বীমা খাত বর্তমানে ইমেজ ক্রাইসিসে ভুগছে। ৭৮টি কোম্পানির মধ্য অনেকেরই যোগ্য সিইও নেই। এ সেক্টর এগিয়েছে কিছু আনপ্রফেশনাল লোক দিয়ে। এজন্য খাতটির প্রকৃত উন্নয়ন হয়নি। বীমা কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রবাসী জনগোষ্ঠী বড় সংখ্যা বিমা সেক্টরের বাইরে। তাদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। বীমা সেক্টর নিয়ে জনগণের মধ্যে যে আস্থা সংকট রয়েছে, সেই আস্থা সংকট কাটিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে। গতকাল রাজধানীর ইআরএফ কার্যালয়ে আয়োজিত ‘চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড অপরচুনিটিস অব ইন্স্যুরেন্স সেক্টর ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন বলেছেন, অর্থনীতির সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হচ্ছে বীমা শিল্প। তাই সব শ্রেণীর মানুষের জন্য ইন্স্যুরেন্স হওয়া উচিত। আর্থিক খাতের সবচেয়ে অ্যাসেন্সিয়াল ফিন্যান্সিয়াল প্রডাক্ট হচ্ছে ইন্স্যুরেন্স। অথচ এ সেক্টর থেকে আমরা দূরে থাকছি। বিদেশে একটি লোকও বীমার বাইরে নেই। তাদের বীমা করা ম্যান্ডটরি অথচ আমাদের দেশে কোন ম্যাকানিজম নেই। তাই এ সেক্টরে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি। আগামীতে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে সব কিছু স্বচ্ছতার সঙ্গে করতে চাই। সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, সারা বিশ্বের দিকে তাকালে দেখতে পাই জিডিপিতে এ শিল্পের অবদান ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। আমাদের দেশের জিডিপিতে বীমা শিল্পের অবদান মাত্র শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ হতে হবে। তাই অর্থনীতির গতিকে ত্বরান্বিত করতে লাইফ এবং নন লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর পেইড-আপ ক্যাপিটাল বাড়ানো উচিত।

ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) মো. কাজিম উদ্দীন বলেন, এ সেক্টরে যেমন চ্যালেঞ্জ রয়েছে তেমনি সুযোগও রয়েছে। এখানে আস্থার সংকট ও দাবি পরিশোধের সমস্যা রয়েছে। তাই প্রত্যেক কোম্পানিগুলো যদি সঠিক সময়ে দাবিগুলো পরিশোধ করে তাহলে এ সেক্টর থেকে আস্থা সংকট কেটে যাবে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, ইন্স্যুরেন্সে নেতিবাচক দিকটা বেশি কাজ করে। তবে এখান থেকে উত্তরণের কাজ করছে আইডিআরএ। এ শিল্প উন্নয়নে ইডরা যে পদক্ষেপ নিয়েছে তার ফল ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে। তবে বীমা কোম্পানিগুলোর নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তাদের যদি নিজস্ব সক্ষমতা না থাকে তাহলে তারা অন্যকে কী নিরাপত্তা দেবে। তাই এটি নিশ্চিতে আইনি সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সদিচ্ছারও প্রয়োজন।

ইআরএফ-এর সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বলেন, গত ৪০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়েছে বীমা শিল্প সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারেনি। বাংলাদেশের জিডিবিতে বীমা শিল্পের ভূমিকা এক শতাংশও নেই। তাই আমরা আশা করব আগামীতে যে রিফর্মগুলো এ সেক্টরে আসবে গণমাধ্যম সেই রিফর্মগুলোর সঙ্গে এক সঙ্গে কাজ করবে।

বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মিজান মালিক বলেন, যে প্রতিনিধিগুলো সাধারণত জনগণের কাছে যায়। তারা জনগণকে বীমা নিয়ে সঠিক তথ্যটা দিতে পারে না। তাই বীমার মাঠ পর্যায়ে কর্মীদের আরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।

বাণিজ্য প্রতিদিনের সম্পাদক একেএম রাশেদ শাহরিয়ারের সভাপতিত্বে সেমিনারে কীনোট উপস্থাপন করেন ঢাবির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এমডি জালালুল আজিম ও ইন্স্যুরেন্স একাডেমির পরিচালক এসএম ইব্রাহীম হোসেন। সেমিনারে সঞ্চালনা করেন বাণিজ্য প্রতিদিনের চিফ রিপোর্টার মো. গিয়াস উদ্দিন।