দশম আর দ্বাদশে ক্লাস নিয়মিত বাকিদের সপ্তাহে একদিন

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শুধুমাত্র দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস করতে হবে। আর বাকিদের সপ্তাহে মাত্র একদিন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ক্লাস করতে হবে। গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের ১১তম অধিবেশনে পরীক্ষা ছাড়া এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের বিধান করতে বিদ্যমান আইন সংশোধনের প্রস্তাব পাসের সময় এসব তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এর আগে সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদে মুলতবি বৈঠক শুরু হয়।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রায় এক বছর ধরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শুরু হয়েছে ভার্চুয়াল শিক্ষা কার্যক্রম। তবে এর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষার্থীদের ক্ষতির অজুহাতে শিক্ষাবিদদের একটি অংশসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার কিছু মানুষ বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

তবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই এর বিরোধিতা করে বলছেন, আগে জীবন, পরে শিক্ষা। করোনা সংক্রমণের স্পর্শকাতর এই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলে কোমলমতি শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। এদিকে অভিভাবকদের অধিকাংশই বলছেন, সংক্রমণ শেষ না হলে তারা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবেন না।

৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতকাল সংসদে বলেছেন, ‘প্রাথমিকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর কেবলমাত্র দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর নিয়মিত ক্লাস হবে। এদের সিলেবাস শেষ করতে হবে। বাকি শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন করে আসবে। একদিন এসে পুরো সপ্তাহের পড়া নিয়ে যাবে। পরের সপ্তাহে আবার একদিন আসবে।’

‘শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসতে হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসানো সম্ভব হয় না। তাই সব শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে না এনে আলাদা আলাদা দিন ক্লাসে আনার ব্যবস্থা হবে’- বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

স্কুল খোলার পর শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এই বছরের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া সম্ভব হয়, তাহলে পরের কয়েকমাসের মধ্যে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের ওই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের প্রস্তুতি নিয়ে এ বছরের পরীক্ষা নিতে পারব বলে আশা করি।’

বিএনপির সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বিল পাসের ওপর জনমত যাচাইয়ের আলোচনার বলেন, ‘দেশের শিক্ষার মান একেবারেই তলানিতে। লকডাউনে সবকিছুই চলেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলো না কেন। সরকারের এই ভুল সিদ্ধান্তের মাশুল দেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।’

পরে সংশোধনী প্রস্তাবের আলোচনায় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘২০২০ সালের গ্লোবাল নলেজ ইনডেক্স অনুসারে ১৩৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১২তম। মানের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ সর্বনিম্ন। অটোপাস যুক্ত হলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা সহজে অনুমেয়।’

জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘যাদের সরকারের সময় শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া হয়েছিল শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছিল। শিক্ষার হার কমে গিয়েছিল সেই দলের সদস্য এখন শিক্ষার মান নিয়ে মায়াকান্না করেন।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষার মান বুঝতে যেটুকু শিক্ষার প্রয়োজন হয় একজন মাধ্যমিক পেরুতে ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তা সম্ভব নয়। এ কারণে হয়ত বিএনপির আমলে মানের দিকে হয়ত নজর দেয়া যায়নি। এখন তার দলের যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তিনিও বারবার বহিষ্কৃত হয়েছেন। এই ইতিহাস নিয়ে শিক্ষার মানের দিকে নজর দেয়া কঠিন।’

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, তার স্বামী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী। সন্তানেরা দেশে-বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। সেখান থেকেও তারা মানের দিকে নজর পান।’

দেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেবে, যা এই মহামারীর সময়ে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবেও সংসদে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খোলা হবে, তা করোনা মোকাবিলার জন্য গঠিত ‘জাতীয় পরামর্শক কমিটি’র মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে জানিয়ে গতকাল বিকেলে আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবসের এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, ‘করোনা পরবর্তীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে নেয়া যায় তার চেষ্টা করছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে কীভাবে আরও ভালো করতে পারি সেটা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সেজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব প্রস্তুতি সেরে নিতে বলা হয়েছে। ক্লাস রুমের সঙ্গে অনলাইনে ক্লাস চলবে।’

বাংলাদেশ-ইউনেস্কো কমিশন এই সভার আয়োজন করে। এতে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলমসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

৪ ফেব্রুয়ারির পর শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে নেয়া যাবে নাকি আরও পরে নেয়া হবে সে সর্ম্পকে পরামর্শক কমিটির মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেয়া হবে। সেজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের তিন বা চার মাসের মধ্যে সরাসরি ক্লাসে এসে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করতে হবে। সেজন্য তাদের সপ্তাহে পাঁচ বা ছয়দিন ক্লাসে আসতে হতে পারে। অন্যান্য ক্লাসে সপ্তাহে একদিন আসতে হবে শিক্ষার্থীদের। তবে সবাইকে স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি মেনে ক্লাস করতে হবে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মোকাবিলার জন্য গঠিত ‘জাতীয় পরামর্শক কমিটি’র সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা তো আরও দীর্ঘ সময় বন্ধ রাখা যাবে না। এই মুহূর্তে দেশে করোনা সংক্রমণের যে অবস্থা তাতে আগামীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে ভাবতে হবে। দেশে করোনা শনাক্তের হার (নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায়) পরপর দুই সপ্তাহ যদি ৫ শতাংশের নিচে থাকে তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ধাপে ধাপে তা খুলতে হবে। হুট করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যাবে না।’

একসঙ্গে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার ব্যাখ্যা দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্লাসরুমে এতো শিক্ষার্থী থাকে না। কিন্তু বাংলাদেশে ক্লাসের শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। এখানে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি মানা খুব কঠিন। ক্লাসরুমে যেন স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকটি মানা হয় সেজন্য স্থানীয় পর্যায়ে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করার পর একজন শিক্ষার্থীও যেন বেকার না থাকে সেজন্য কারিকুলাম পরিবর্তনের কাজ চলছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে মাধ্যমিকে কোন বিভাগ থাকবে না এটার কাজ শুরু হয়েছে। সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের যেন বাধ্যতামূলকভাবে একটি কারিগরি ট্রেডে পড়ানো হয় সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

এদিকে গত শুক্রবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মাউশির নির্দেশনায়, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে বজায় রাখতে একটি গাইডলাইনও দেয়া হয়েছে। তবে শিক্ষা খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একসঙ্গে খুলে দিলে কোনভাবেই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা সম্ভব হবে না। ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হবে।

এর আগে বিল বাছাই কমিটির পাঠানোর প্রস্তাবের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি সংসদে বলেছিলেন,‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে দূরে রাখতে পেরেছি।’ কওমি মাদ্রাসা খোলা রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসার অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এতিম ও দুস্থ। তাদের বেশিরভাগই আবাসিক। সেখানে তারা থাকার সুযোগ না পেলে তাদের জীবন দুঃসহ অবস্থায় পড়বে। তাই সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে অনেকগুলো শর্ত সাপেক্ষে এটা খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখানেও মানবিকতা, স্বাস্থ্য সবকিছু বিবেচেনায় নেয়া হয়েছে।’

সোমবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২১ , ১১ মাঘ ১৪২৭, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

দশম আর দ্বাদশে ক্লাস নিয়মিত বাকিদের সপ্তাহে একদিন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শুধুমাত্র দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস করতে হবে। আর বাকিদের সপ্তাহে মাত্র একদিন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ক্লাস করতে হবে। গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের ১১তম অধিবেশনে পরীক্ষা ছাড়া এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের বিধান করতে বিদ্যমান আইন সংশোধনের প্রস্তাব পাসের সময় এসব তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এর আগে সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদে মুলতবি বৈঠক শুরু হয়।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রায় এক বছর ধরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শুরু হয়েছে ভার্চুয়াল শিক্ষা কার্যক্রম। তবে এর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষার্থীদের ক্ষতির অজুহাতে শিক্ষাবিদদের একটি অংশসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার কিছু মানুষ বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

তবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই এর বিরোধিতা করে বলছেন, আগে জীবন, পরে শিক্ষা। করোনা সংক্রমণের স্পর্শকাতর এই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলে কোমলমতি শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। এদিকে অভিভাবকদের অধিকাংশই বলছেন, সংক্রমণ শেষ না হলে তারা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবেন না।

৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতকাল সংসদে বলেছেন, ‘প্রাথমিকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর কেবলমাত্র দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর নিয়মিত ক্লাস হবে। এদের সিলেবাস শেষ করতে হবে। বাকি শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন করে আসবে। একদিন এসে পুরো সপ্তাহের পড়া নিয়ে যাবে। পরের সপ্তাহে আবার একদিন আসবে।’

‘শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসতে হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসানো সম্ভব হয় না। তাই সব শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে না এনে আলাদা আলাদা দিন ক্লাসে আনার ব্যবস্থা হবে’- বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

স্কুল খোলার পর শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এই বছরের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া সম্ভব হয়, তাহলে পরের কয়েকমাসের মধ্যে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের ওই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের প্রস্তুতি নিয়ে এ বছরের পরীক্ষা নিতে পারব বলে আশা করি।’

বিএনপির সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বিল পাসের ওপর জনমত যাচাইয়ের আলোচনার বলেন, ‘দেশের শিক্ষার মান একেবারেই তলানিতে। লকডাউনে সবকিছুই চলেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলো না কেন। সরকারের এই ভুল সিদ্ধান্তের মাশুল দেবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।’

পরে সংশোধনী প্রস্তাবের আলোচনায় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘২০২০ সালের গ্লোবাল নলেজ ইনডেক্স অনুসারে ১৩৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১২তম। মানের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ সর্বনিম্ন। অটোপাস যুক্ত হলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা সহজে অনুমেয়।’

জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘যাদের সরকারের সময় শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া হয়েছিল শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছিল। শিক্ষার হার কমে গিয়েছিল সেই দলের সদস্য এখন শিক্ষার মান নিয়ে মায়াকান্না করেন।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষার মান বুঝতে যেটুকু শিক্ষার প্রয়োজন হয় একজন মাধ্যমিক পেরুতে ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তা সম্ভব নয়। এ কারণে হয়ত বিএনপির আমলে মানের দিকে হয়ত নজর দেয়া যায়নি। এখন তার দলের যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তিনিও বারবার বহিষ্কৃত হয়েছেন। এই ইতিহাস নিয়ে শিক্ষার মানের দিকে নজর দেয়া কঠিন।’

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, তার স্বামী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী। সন্তানেরা দেশে-বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। সেখান থেকেও তারা মানের দিকে নজর পান।’

দেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেবে, যা এই মহামারীর সময়ে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবেও সংসদে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খোলা হবে, তা করোনা মোকাবিলার জন্য গঠিত ‘জাতীয় পরামর্শক কমিটি’র মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে জানিয়ে গতকাল বিকেলে আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবসের এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, ‘করোনা পরবর্তীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে নেয়া যায় তার চেষ্টা করছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে কীভাবে আরও ভালো করতে পারি সেটা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সেজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব প্রস্তুতি সেরে নিতে বলা হয়েছে। ক্লাস রুমের সঙ্গে অনলাইনে ক্লাস চলবে।’

বাংলাদেশ-ইউনেস্কো কমিশন এই সভার আয়োজন করে। এতে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলমসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

৪ ফেব্রুয়ারির পর শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে নেয়া যাবে নাকি আরও পরে নেয়া হবে সে সর্ম্পকে পরামর্শক কমিটির মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেয়া হবে। সেজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের তিন বা চার মাসের মধ্যে সরাসরি ক্লাসে এসে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করতে হবে। সেজন্য তাদের সপ্তাহে পাঁচ বা ছয়দিন ক্লাসে আসতে হতে পারে। অন্যান্য ক্লাসে সপ্তাহে একদিন আসতে হবে শিক্ষার্থীদের। তবে সবাইকে স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি মেনে ক্লাস করতে হবে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মোকাবিলার জন্য গঠিত ‘জাতীয় পরামর্শক কমিটি’র সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা তো আরও দীর্ঘ সময় বন্ধ রাখা যাবে না। এই মুহূর্তে দেশে করোনা সংক্রমণের যে অবস্থা তাতে আগামীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে ভাবতে হবে। দেশে করোনা শনাক্তের হার (নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায়) পরপর দুই সপ্তাহ যদি ৫ শতাংশের নিচে থাকে তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ধাপে ধাপে তা খুলতে হবে। হুট করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যাবে না।’

একসঙ্গে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার ব্যাখ্যা দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্লাসরুমে এতো শিক্ষার্থী থাকে না। কিন্তু বাংলাদেশে ক্লাসের শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। এখানে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি মানা খুব কঠিন। ক্লাসরুমে যেন স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকটি মানা হয় সেজন্য স্থানীয় পর্যায়ে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করার পর একজন শিক্ষার্থীও যেন বেকার না থাকে সেজন্য কারিকুলাম পরিবর্তনের কাজ চলছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে মাধ্যমিকে কোন বিভাগ থাকবে না এটার কাজ শুরু হয়েছে। সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের যেন বাধ্যতামূলকভাবে একটি কারিগরি ট্রেডে পড়ানো হয় সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

এদিকে গত শুক্রবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মাউশির নির্দেশনায়, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে বজায় রাখতে একটি গাইডলাইনও দেয়া হয়েছে। তবে শিক্ষা খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একসঙ্গে খুলে দিলে কোনভাবেই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা সম্ভব হবে না। ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হবে।

এর আগে বিল বাছাই কমিটির পাঠানোর প্রস্তাবের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি সংসদে বলেছিলেন,‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে দূরে রাখতে পেরেছি।’ কওমি মাদ্রাসা খোলা রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসার অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এতিম ও দুস্থ। তাদের বেশিরভাগই আবাসিক। সেখানে তারা থাকার সুযোগ না পেলে তাদের জীবন দুঃসহ অবস্থায় পড়বে। তাই সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে অনেকগুলো শর্ত সাপেক্ষে এটা খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখানেও মানবিকতা, স্বাস্থ্য সবকিছু বিবেচেনায় নেয়া হয়েছে।’