টিকা দেয়ার পর ১৫ মিনিট পর্যবেক্ষণ

আজ আসছে আরও ৫০ লাখ

করোনার টিকা নেয়ার পর সবাইকে ১৫ মিনিট পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এজন্য টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে বসার জন্য পর্যাপ্ত জায়গাও রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি টিকা গ্রহীতাদের নির্দিষ্ট কিছু গাইডলাইন বা পরামর্শ দেয়া হবে, যাতে কোনরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে তারা ‘অ্যাপ’ বা ‘হটলাইনে’ স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ পাবেন।

২৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সকে দিয়ে দেশে করোনার টিকাদান কর্মসূচি ‘ড্রাই রান’ বা মহড়া শুরু হচ্ছে। প্রথমদিন বিভিন্ন গ্রুপের ২৫ থেকে ৩০ জনকে টিকা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যাদের বেশিরভাগই ওই হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী। যদিও গতকাল পর্যন্ত ২৫-৩০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত হয়নি বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পরদিন কুর্মিটোলাসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী জেনারেল হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) আরও পাঁচ’শ স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেয়া হবে। এই পাঁচ হাসপাতালের নার্স, চিকিৎসক ও কর্মকর্তাকে টিকা দেয়ার এক সপ্তাহ পর সাধারণ নাগরিকদের টিকা দেয়া হবে। টিকা দেয়ার পর সবাইকে টিকাদান কেন্দ্রেই কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা

পর্যায়ক্রমে সবাই টিকা পাবে, জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘জেলা-উপজেলা হাসপাতালে যারা ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য আসবেন তাদের আলাদা বসার জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবেন, অবজারভেশনে থাকবেন। কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা আমরা করেছি। আমরা ভ্যাকসিন দেয়ার কার্যক্রম বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী করছি।’

আজ চুক্তির আওতায় কেনা ৫০ লাখ ডোজ করোনার টিকা দেশে আসবে বলে গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটা হবে চুক্তির প্রথম ধাপের ভ্যাকসিন।’ তবে এই মাসে ভ্যাকসিনের আর কোন লট আসবে না জানিয়েছেন মন্ত্রী।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশে যখনই কোন ভ্যাকসিন দেয়া হয়, তখন কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এটা ভ্যাকসিনেশনের একটি রুটিন কাজ।’

তবে এবার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সারাদেশেই জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্র্যায়ে ভ্যাকসিন সেন্টারে যারা ভ্যাকসিন নেবেন তাদের ‘১৫ মিনিট অবজার্ভ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডা. এএসএম আলমগীর।

১৫ মিনিট পর্যবেক্ষণে রাখার পর টিকাগ্রহীতাকে বাড়ি যেতে বলা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এরপরও যতি কোন সমস্যা হয়..অ্যাপস... হটলাইনগুলো... আইইডিসিআরের হটলাইন দিয়ে দেয়া হবে। এসব নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৮ জানুয়ারি ঢাকার ৫টি হাসপাতালে সম্মুখসারির ন্যূনতম ৫০০ জনকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৫০ জন, ঢামেকে ১৫০ জন, বিএসএমএমইউতে ১০০ থেকে ১৫০ জন এবং মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ও কুর্মিটোলায় ১০০ জন করে করোনার টিকা পাবেন।

প্রাথমিকভাবে ঢাকায় টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া ২০ লাখ ডোজ টিকায় (অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা)। আর চুক্তি আওতায় কেনা টিকা দেশব্যাপী জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দেয়া হবে, যার প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন (টিকা) আজ দেশে আসছে।

২৬ জানুয়ারি থেকে টিকার জন্য অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হচ্ছে। নিবন্ধন ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সদস্যরা নিজ নিজ পেশাজীবী সংগঠনের মাধ্যমে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র’ (এনআইডি) এবং একটি ফরম পূরণ করে করোনার টিকা নিতে পারবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭ জানুয়ারি সকালে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনার টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। পরদিন ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর আরও চারটি হাসপাতালে করোনার টিকা দেয়া হবে বলে সম্প্রতি একাধিক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান জানিয়েছেন।

পাঁচ হাসপাতালে টিকা গ্রহীতাদের শারিরীক অবস্থা এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎকরা। পাঁচ হাসপাতালের টিকাগ্রহীদের কোনরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কীনা, সমস্যা হলে এর ধরণ ও প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নিয়ে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জেলা-উপজেলা এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা দেয়া হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত ১৯ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা সংক্রান্ত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী প্রতিদিন দুই লাখ মানুষকে করোনা টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

টিকা কর্মসূচির বিষয়ে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রচার ও যোগাযোগ সংক্রান্ত কারিগরি বিশেষজ্ঞ এবং আইইডিসিআর’র পরামর্শক ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে থাকতে থাকতে (অনলাইনে) ১০-১৫ জনকে দেয়া হবে। এরপর চলতে থাকবে, কুর্মিটোলা হাসপাতালের যেসব স্বাস্থ্যকর্মী টিকা নিতে চান, বা টিকা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করবেন তারা নিতে পারবেন। প্রথমদিন এক থেকে দেড়শ’ জনকেও টিকা দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে।’

ডা. মুশতাক হোসেন জানান, ‘পাঁচ হাসপাতালে টিকাদানের পর ঢাকা শহরের অন্যান্য হাসপাতালেও টিকা দেয়া হবে। এরপর বিভিন্ন জেলা-শহরেরর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে। পর্যায়ে থাকা বা উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্র্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি চলবে।’

গত ২০ জানুয়ারি ভারত সরকারের উপহার হিসেবে দেয়া ‘অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র তৈরি করোনার ‘কোভিশিল্ড’ টিকা দেশে পৌঁছায়, যা দেশটির সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিন। চুক্তির আওতায়ও একই প্রতিষ্ঠানের টিকা আসছে, বাংলাদেশের কেনা তিন কোটি ডোজ টিকার প্রথম চালান ‘৫০ লাখ’ আজ দেশে পৌঁছার কথা রয়েছে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া অন্য সবদিনই টিকা

শুকবার ও সরকারি ছুটির দিন বাদে সপ্তাহের বাকি পাঁচদিনই টিকাদান কর্মসূচি চলবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সম্প্রতি বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জনদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত টিকাদান কর্মসূচি চলবে। একটি কেন্দ্রে দৈনিক সর্বোচ্চ ১৫০ জনকে টিকা দেয়া যাবে। প্রতিটি কেন্দ্র টানা ১২দিন টিকা দেয়া হবে। করোনার টিকার ডোজ ০.৫ এমএল। এই টিকা বাহুর ওপরিভাগের বহিরাংশের মাংসপেশিতে দেয়া হবে। প্রথম ডোজ নেয়ার পর আট সপ্তাহ পর একই কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে।

ভ্যাকসিন প্রয়োগে জাতীয় কমিটির প্রস্তুতি সম্পন্ন

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘২০ লাখ ভ্যাকসিন আমরা পেয়েছি। আগামীকাল (আজ) আমাদের আরও ৫০ লাখ ভ্যাকসিন আসবে আশা করছি। এজন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।’

মন্ত্রী জানান, ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য জাতীয় কমিটির প্রস্তুতি মোটামুটি শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জানতে পেরেছি একটা অ্যাপ তৈরি করার বিষয় ছিল, সেটাও একটা ফাইনাল স্টেজে চলে আসছে।’

ভ্যাকসিন কোন জেলায় কোন উপজেলায় নিয়ে যাব, সে পরিকল্পনাও করা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার (সম্মুখসারীর যোদ্ধা), যাদের আমরা প্রথমে ভ্যাকসিন দেব তাদের তালিকাও আমাদের হাতে আছে।’

তিনি বলেন, ভ্যাকসিন নিতে কাউকে জোর করা হবে না। সবাই নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী স্বাধীনভাবে ভ্যাকসিন নিতে পারবে।

জাহিদ মালেক বলেন, ‘২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী আমাদের সময় দিয়েছেন। ভ্যাকসিন দেয়ার যে পরিকল্পনা সেটা উনি উদ্বোধন করবেন। ভ্যাকসিন দেয়ার কাজ শুরু হবে কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে। সেখানে কিছু লোককে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। এরমধ্যে যারা নার্স, রোগীর একদম পাশে থাকেন, তাদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। তাদেরই আমরা প্রথমে ভ্যাকসিন দেব।

সোমবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২১ , ১১ মাঘ ১৪২৭, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

টিকা দেয়ার পর ১৫ মিনিট পর্যবেক্ষণ

আজ আসছে আরও ৫০ লাখ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

করোনার টিকা নেয়ার পর সবাইকে ১৫ মিনিট পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এজন্য টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে বসার জন্য পর্যাপ্ত জায়গাও রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি টিকা গ্রহীতাদের নির্দিষ্ট কিছু গাইডলাইন বা পরামর্শ দেয়া হবে, যাতে কোনরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে তারা ‘অ্যাপ’ বা ‘হটলাইনে’ স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ পাবেন।

২৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সকে দিয়ে দেশে করোনার টিকাদান কর্মসূচি ‘ড্রাই রান’ বা মহড়া শুরু হচ্ছে। প্রথমদিন বিভিন্ন গ্রুপের ২৫ থেকে ৩০ জনকে টিকা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যাদের বেশিরভাগই ওই হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী। যদিও গতকাল পর্যন্ত ২৫-৩০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত হয়নি বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পরদিন কুর্মিটোলাসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী জেনারেল হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) আরও পাঁচ’শ স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেয়া হবে। এই পাঁচ হাসপাতালের নার্স, চিকিৎসক ও কর্মকর্তাকে টিকা দেয়ার এক সপ্তাহ পর সাধারণ নাগরিকদের টিকা দেয়া হবে। টিকা দেয়ার পর সবাইকে টিকাদান কেন্দ্রেই কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা

পর্যায়ক্রমে সবাই টিকা পাবে, জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘জেলা-উপজেলা হাসপাতালে যারা ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য আসবেন তাদের আলাদা বসার জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবেন, অবজারভেশনে থাকবেন। কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা আমরা করেছি। আমরা ভ্যাকসিন দেয়ার কার্যক্রম বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী করছি।’

আজ চুক্তির আওতায় কেনা ৫০ লাখ ডোজ করোনার টিকা দেশে আসবে বলে গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটা হবে চুক্তির প্রথম ধাপের ভ্যাকসিন।’ তবে এই মাসে ভ্যাকসিনের আর কোন লট আসবে না জানিয়েছেন মন্ত্রী।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশে যখনই কোন ভ্যাকসিন দেয়া হয়, তখন কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এটা ভ্যাকসিনেশনের একটি রুটিন কাজ।’

তবে এবার বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সারাদেশেই জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্র্যায়ে ভ্যাকসিন সেন্টারে যারা ভ্যাকসিন নেবেন তাদের ‘১৫ মিনিট অবজার্ভ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডা. এএসএম আলমগীর।

১৫ মিনিট পর্যবেক্ষণে রাখার পর টিকাগ্রহীতাকে বাড়ি যেতে বলা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এরপরও যতি কোন সমস্যা হয়..অ্যাপস... হটলাইনগুলো... আইইডিসিআরের হটলাইন দিয়ে দেয়া হবে। এসব নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৮ জানুয়ারি ঢাকার ৫টি হাসপাতালে সম্মুখসারির ন্যূনতম ৫০০ জনকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৫০ জন, ঢামেকে ১৫০ জন, বিএসএমএমইউতে ১০০ থেকে ১৫০ জন এবং মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ও কুর্মিটোলায় ১০০ জন করে করোনার টিকা পাবেন।

প্রাথমিকভাবে ঢাকায় টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া ২০ লাখ ডোজ টিকায় (অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা)। আর চুক্তি আওতায় কেনা টিকা দেশব্যাপী জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দেয়া হবে, যার প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন (টিকা) আজ দেশে আসছে।

২৬ জানুয়ারি থেকে টিকার জন্য অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হচ্ছে। নিবন্ধন ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সদস্যরা নিজ নিজ পেশাজীবী সংগঠনের মাধ্যমে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র’ (এনআইডি) এবং একটি ফরম পূরণ করে করোনার টিকা নিতে পারবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭ জানুয়ারি সকালে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনার টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। পরদিন ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর আরও চারটি হাসপাতালে করোনার টিকা দেয়া হবে বলে সম্প্রতি একাধিক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান জানিয়েছেন।

পাঁচ হাসপাতালে টিকা গ্রহীতাদের শারিরীক অবস্থা এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎকরা। পাঁচ হাসপাতালের টিকাগ্রহীদের কোনরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কীনা, সমস্যা হলে এর ধরণ ও প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নিয়ে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জেলা-উপজেলা এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা দেয়া হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত ১৯ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা সংক্রান্ত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী প্রতিদিন দুই লাখ মানুষকে করোনা টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

টিকা কর্মসূচির বিষয়ে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রচার ও যোগাযোগ সংক্রান্ত কারিগরি বিশেষজ্ঞ এবং আইইডিসিআর’র পরামর্শক ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে থাকতে থাকতে (অনলাইনে) ১০-১৫ জনকে দেয়া হবে। এরপর চলতে থাকবে, কুর্মিটোলা হাসপাতালের যেসব স্বাস্থ্যকর্মী টিকা নিতে চান, বা টিকা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করবেন তারা নিতে পারবেন। প্রথমদিন এক থেকে দেড়শ’ জনকেও টিকা দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে।’

ডা. মুশতাক হোসেন জানান, ‘পাঁচ হাসপাতালে টিকাদানের পর ঢাকা শহরের অন্যান্য হাসপাতালেও টিকা দেয়া হবে। এরপর বিভিন্ন জেলা-শহরেরর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে। পর্যায়ে থাকা বা উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্র্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি চলবে।’

গত ২০ জানুয়ারি ভারত সরকারের উপহার হিসেবে দেয়া ‘অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র তৈরি করোনার ‘কোভিশিল্ড’ টিকা দেশে পৌঁছায়, যা দেশটির সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিন। চুক্তির আওতায়ও একই প্রতিষ্ঠানের টিকা আসছে, বাংলাদেশের কেনা তিন কোটি ডোজ টিকার প্রথম চালান ‘৫০ লাখ’ আজ দেশে পৌঁছার কথা রয়েছে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া অন্য সবদিনই টিকা

শুকবার ও সরকারি ছুটির দিন বাদে সপ্তাহের বাকি পাঁচদিনই টিকাদান কর্মসূচি চলবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সম্প্রতি বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জনদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত টিকাদান কর্মসূচি চলবে। একটি কেন্দ্রে দৈনিক সর্বোচ্চ ১৫০ জনকে টিকা দেয়া যাবে। প্রতিটি কেন্দ্র টানা ১২দিন টিকা দেয়া হবে। করোনার টিকার ডোজ ০.৫ এমএল। এই টিকা বাহুর ওপরিভাগের বহিরাংশের মাংসপেশিতে দেয়া হবে। প্রথম ডোজ নেয়ার পর আট সপ্তাহ পর একই কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে।

ভ্যাকসিন প্রয়োগে জাতীয় কমিটির প্রস্তুতি সম্পন্ন

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘২০ লাখ ভ্যাকসিন আমরা পেয়েছি। আগামীকাল (আজ) আমাদের আরও ৫০ লাখ ভ্যাকসিন আসবে আশা করছি। এজন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।’

মন্ত্রী জানান, ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য জাতীয় কমিটির প্রস্তুতি মোটামুটি শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জানতে পেরেছি একটা অ্যাপ তৈরি করার বিষয় ছিল, সেটাও একটা ফাইনাল স্টেজে চলে আসছে।’

ভ্যাকসিন কোন জেলায় কোন উপজেলায় নিয়ে যাব, সে পরিকল্পনাও করা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার (সম্মুখসারীর যোদ্ধা), যাদের আমরা প্রথমে ভ্যাকসিন দেব তাদের তালিকাও আমাদের হাতে আছে।’

তিনি বলেন, ভ্যাকসিন নিতে কাউকে জোর করা হবে না। সবাই নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী স্বাধীনভাবে ভ্যাকসিন নিতে পারবে।

জাহিদ মালেক বলেন, ‘২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী আমাদের সময় দিয়েছেন। ভ্যাকসিন দেয়ার যে পরিকল্পনা সেটা উনি উদ্বোধন করবেন। ভ্যাকসিন দেয়ার কাজ শুরু হবে কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে। সেখানে কিছু লোককে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। এরমধ্যে যারা নার্স, রোগীর একদম পাশে থাকেন, তাদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। তাদেরই আমরা প্রথমে ভ্যাকসিন দেব।