মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৭তম জন্মবার্ষিকী আজ

এবার ‘মধুমেলা’ হচ্ছে না

আজ ২৫ জনুয়ারি অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের জনক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৭তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রাণালয়ের অর্থায়নে যশোর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে প্রতিবছর মহাকবির জন্মভূমি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে উদযাপিত হয়ে থাকে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা। মধুমেলায় দেশবরেণ্য কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীসহ লক্ষাধিক মধুভক্তের আগমনে মিলনমেলায় পরিণত হয় সাগরদাঁড়ি। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর মহাকবির জন্মোৎসব উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমএম আরাফাত হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন যশোর জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান।

মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোরের কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামের বিখ্যাত দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাত্র ৭ বছর বয়সে কলকাতা যান। খিদিরপুর স্কুলে দুই বছর পড়ার পর ১৮৩৩ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। বাংলা, ফারাসি ও সংস্কৃত ভাষায় শিক্ষা লাভ করেন। ১৮৪৪ সালে থেকে ১৮৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতার বিশব কলেজে অধ্যয়ন করেন। সেখানে মধুসূদন গ্রিক, ল্যাটিন ও সংস্কৃত ভাষা শেখেন। তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভুক্ত হাইস্কুলে শিক্ষাকতা করেন। মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত পত্রিকা মাদ্রাজ স্পেক্টেটর-এর সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৬২ সালের ৯ জুন ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য তিনি বিলেত যান। ১৮৬৬ সালে ব্যারিস্টারি পাস করেন।

মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষার সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। তিনি বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি ইংরেজি সাহিত্যেও অসামান্য অবদান রাখেন। যদিও তার প্রথম ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ ‘দি ক্যাপটিভ লেডি‘কে ইংরেজরা তখন সাদরে গ্রহণ করেনি। পাশ্চাত্যের প্রতি আকর্ষিত মধুসূদন ১৮৪৩ সলে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয় এবং মাইকেল উপাধি ধারণ করেন। তিনি ইংরেজদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ওই কাব্যগ্রন্থটি রচনা করলে গ্রন্থটি তৎকালিন ইংরেজ সাহিত্যিকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে। মধুসূদন থাকলে তাদের সাহিত্যকর্ম স্থান পাবে না এই সংশয় তাদের মধ্যে প্রকটভাবে দানা বাঁধতে থাকে। ইংরেজি সাহিত্যে তার কীর্তির যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ায় তিনি মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে পড়েন। তখনই বুঝতে পারেন নিজ স্বদেশ ও শেকড়ের মর্ম।

মধুসূদন দত্ত নাট্যকার হিসেবেই প্রথম বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে প্রবেশ করেন। রতœাবলী নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করতে গিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যের উপযুক্ত নাটকের অভাব রোধ করেন। ১৮৫৯ সালে তিনি রচনা করেন, ‘শর্মিষ্ঠা নাটক’। ১৮৬০ সালে ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ ও ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নামের দুটি প্রহসন এবং অমিত্রাক্ষর ছন্দে ‘পদ্মাবতী নাটক’। ১৮৬০ সালে তিনি অমিত্রাক্ষরে লেখেন ‘তিলোত্তমা কাব্য’। ১৮৬১ সালে একে একে রচিত হয় মহকাব্য ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’, ‘ব্রজাঙ্গানা কাব্য’, ‘কৃষ্ণ কুমারি নাটক’। ১৮৬২ সালে ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’ ও ১৮৬৬ সালে ‘চতুর্দশপদী কবিতা’। তিনি ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দির অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি ও নাট্যকার এবং প্রহসন রচয়িতা। তাকে বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব গণ্য করা হয়। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী কবি হিসেবেও তিনি পরিচিত।

মধুসূদনের শেষ জীবন চরম দুঃখ ও দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। অমিতব্যয়ী সভাবের জন্য তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আরও খবর
গ্যাস সিলিন্ডারে বেলুন ফোলানো বন্ধে অভিযান চালান
করোনায় দেশের অর্থনীতির চাকা সচল বিশ্বে অনন্য উদাহরণ সরকারি দল
বিএনপি টিকা ব্যবস্থাপনা নিয়েও অপপ্রচার চালাচ্ছে কাদের
টিকা গ্রহণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রচারণা বৃদ্ধির সুপারিশ
করোনার অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমোদন দিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
পর্দা নামলো ‘উনবিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের’
রংপুরে শিশু ধর্ষণ মামলায় একজনের যাবজ্জীবন
জেল সুপার রত্মা রায় ও জেলার নূর মোহাম্মদকে প্রত্যাহার
ভারতে পাচার করে দেয়া যুবকের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি
বেড়েছে জরিমানার অঙ্ক, কমেনি দুর্ঘটনা
মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া সবচেয়ে বড় দুর্নীতি মির্জা ফখরুল
বিসিআইসি’র চেয়ারম্যান হলেন এহছানে এলাহী
ঘন কুয়াশায় ফের ১২ ঘণ্টা ফেরি বন্ধ ছিল
দৈনিক সংবাদে কোন সংবাদদাতা নিয়োগ করা হচ্ছে না

সোমবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২১ , ১১ মাঘ ১৪২৭, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৭তম জন্মবার্ষিকী আজ

এবার ‘মধুমেলা’ হচ্ছে না

শামসুর রহমান, কেশবপুর (যশোর)

আজ ২৫ জনুয়ারি অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের জনক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৭তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রাণালয়ের অর্থায়নে যশোর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে প্রতিবছর মহাকবির জন্মভূমি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে উদযাপিত হয়ে থাকে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা। মধুমেলায় দেশবরেণ্য কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীসহ লক্ষাধিক মধুভক্তের আগমনে মিলনমেলায় পরিণত হয় সাগরদাঁড়ি। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর মহাকবির জন্মোৎসব উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমএম আরাফাত হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন যশোর জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান।

মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোরের কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামের বিখ্যাত দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাত্র ৭ বছর বয়সে কলকাতা যান। খিদিরপুর স্কুলে দুই বছর পড়ার পর ১৮৩৩ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। বাংলা, ফারাসি ও সংস্কৃত ভাষায় শিক্ষা লাভ করেন। ১৮৪৪ সালে থেকে ১৮৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতার বিশব কলেজে অধ্যয়ন করেন। সেখানে মধুসূদন গ্রিক, ল্যাটিন ও সংস্কৃত ভাষা শেখেন। তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভুক্ত হাইস্কুলে শিক্ষাকতা করেন। মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত পত্রিকা মাদ্রাজ স্পেক্টেটর-এর সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৬২ সালের ৯ জুন ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য তিনি বিলেত যান। ১৮৬৬ সালে ব্যারিস্টারি পাস করেন।

মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষার সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। তিনি বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি ইংরেজি সাহিত্যেও অসামান্য অবদান রাখেন। যদিও তার প্রথম ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ ‘দি ক্যাপটিভ লেডি‘কে ইংরেজরা তখন সাদরে গ্রহণ করেনি। পাশ্চাত্যের প্রতি আকর্ষিত মধুসূদন ১৮৪৩ সলে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয় এবং মাইকেল উপাধি ধারণ করেন। তিনি ইংরেজদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ওই কাব্যগ্রন্থটি রচনা করলে গ্রন্থটি তৎকালিন ইংরেজ সাহিত্যিকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে। মধুসূদন থাকলে তাদের সাহিত্যকর্ম স্থান পাবে না এই সংশয় তাদের মধ্যে প্রকটভাবে দানা বাঁধতে থাকে। ইংরেজি সাহিত্যে তার কীর্তির যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ায় তিনি মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে পড়েন। তখনই বুঝতে পারেন নিজ স্বদেশ ও শেকড়ের মর্ম।

মধুসূদন দত্ত নাট্যকার হিসেবেই প্রথম বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে প্রবেশ করেন। রতœাবলী নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করতে গিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যের উপযুক্ত নাটকের অভাব রোধ করেন। ১৮৫৯ সালে তিনি রচনা করেন, ‘শর্মিষ্ঠা নাটক’। ১৮৬০ সালে ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ ও ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নামের দুটি প্রহসন এবং অমিত্রাক্ষর ছন্দে ‘পদ্মাবতী নাটক’। ১৮৬০ সালে তিনি অমিত্রাক্ষরে লেখেন ‘তিলোত্তমা কাব্য’। ১৮৬১ সালে একে একে রচিত হয় মহকাব্য ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’, ‘ব্রজাঙ্গানা কাব্য’, ‘কৃষ্ণ কুমারি নাটক’। ১৮৬২ সালে ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’ ও ১৮৬৬ সালে ‘চতুর্দশপদী কবিতা’। তিনি ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দির অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি ও নাট্যকার এবং প্রহসন রচয়িতা। তাকে বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব গণ্য করা হয়। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী কবি হিসেবেও তিনি পরিচিত।

মধুসূদনের শেষ জীবন চরম দুঃখ ও দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। অমিতব্যয়ী সভাবের জন্য তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।