কোটি টাকার ফ্লাডলাইটেও চলছে না
ঘন কুয়াশার কারণে দীর্ঘ প্রায় ১২ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে পুনরায় ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে।
গতকাল সকাল ১০টায় কুয়াশার ঘনত্ব কমে এলে এ নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়।
এর আগে ঘন কুয়াশার কারণে গত শনিবার রাত ১০টায় নৌদুঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ করে বিআইডব্লিউটিসি কতৃপক্ষ। দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া প্রান্তে নদী পাড়ের অপেক্ষায় সিরিয়ালে আটকা পড়ে অ্যাম্বুলেন্স, যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ প্রায় সহ¯্রাধিক যানবাহন। এতে তীব্র শীতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে শিশু, নারীসহ যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা।
এছড়া ঘন কুয়াশার কারণে ব্যাস্ততম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে প্রতিনিয়তই ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। কুয়াশায় ফেরি বন্ধ থাকায় এ নৌপথে প্রতিনিয়তই থাকছে যাত্রীবাহী, পণ্যবাহী পরিবহনের দীর্ঘ সিরিয়াল। এতে শীত ও কুয়াশার মধ্যে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সিরিয়ালে আটকে থাকা বিভিন্ন গাড়ির চালকসহ হাজার হাজার যাত্রী। জানা যায়, গত ৭ দিনে (গত রোববার ৮ ঘণ্টা, সোমবার সাড়ে ১০ ঘণ্টা, মঙ্গলবার সাড়ে ৮ ঘণ্টা, বৃহস্পতিবার ৮ ঘণ্টা এবং শুক্রবার সাড়ে ৯ ঘণ্টা, শনিবার ৬ ঘণ্টা এবং রোববার ১২ঘণ্টা) পৃথক পৃথক সময়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে মোট সাড়ে ৬২ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে।
সরজমিনে গিয়ে কথা হয়, গাড়িচালক ( ঢাকা মেট্রো- ট ১৪-৬৪ ৯৬) নাঈম বলেন, শনিবার রাত ১০টার দিকে দৌলতদিয়া এসে দেখি কুয়াশার কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ। সেই থেকে সিরিয়ালে আটকে আছি আজ রোববার সকাল ১১টা বাজে কখন ফেরি পাব জানি না।
বিআইডব্লিটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী ব্যাবস্থাপক মাহবুব হোসেন বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে নৌদুর্ঘটনা এড়াতে শনিবার রাত ১০টায় ফেরি চলাচল বন্ধ করা হয়। রোববার সকাল ১০টায় কুয়াশার ঘনত্ব কমে এলে ফেরি চলাচল শুরু হয়। দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধ থাকায় এ নৌরুটে যানবাহনের দীর্ঘ সিরিয়াল সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ নৌরুটে ছোট-বড় ১৬টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। সিরিয়ালে থাকা যানবাহনের চাপ দ্রুতই কমে যাবে বলে তিনি জানান।
ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। প্রতিদিন সেখানে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ছোট-বড় বিভিন্ন গাড়ি ফেরিতে পারাপার হয়। কিন্তু সেই ফেরিগুলোতে ঘন কুয়াশার মধ্যে চলাচলের ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন আলোক নিক্ষেপের বিশেষ কোন ব্যাবস্থা নেই। ফলে প্রতিবছর শীত মৌসুমে কুয়াশাকালীন সেখানে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। এতে ফেরি পার হতে আসা শত শত বিভিন্ন গাড়ি আটকা পড়ে ঘাটে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি করে। মাত্র তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ওই নৌপথ পাড়ি দিতে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ে ভোগান্তির শিকার হন বিভিন্ন গাড়ির চালকসহ হাজার হাজার যাত্রী।
জানা গেছে, ঘন কুয়াশার মধ্যে নৌপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য ২০১৫ সালের জুন মাসে নৌ মন্ত্রণালয় টেন্ডারের মাধ্যমে মোট ১০টি ফেরিতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ‘ফগলাইট’ স্থাপন করে। সাড়ে ৭ হাজার কিলোওয়াটের প্রতিটি ফগলাইট ক্রয় বাবদ খরচ হয় অর্ধ কোটি টাকার ওপর। অথচ কুয়াশায় আগের সার্চ লাইটে নৌ চ্যানেলের মার্কার যতটুকু দেখা যায়, নতুন স্থাপিত ওই ফগলাইটে তাও দেখা যায় না। ফলে মূল্যবান ওই ফগলাইটগুলো কুয়াশায় ফেরি চলাচলে কোন কাজেই আসছে না। স্থাপনের পর থেকে সেগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. জিল্লুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে দীর্ঘ সময়জুড়ে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে যানজট সৃষ্টি হয়ে আছে।’ তবে পরীক্ষামূলকভাবে দশটি ফেরিতে স্থাপিত ফগলাইটের সঙ্গে বিমানে ব্যবহৃত রাডার সংযুক্ত করা গেলে ঘন কুয়াশার মধ্যে নৌপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
সোমবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২১ , ১১ মাঘ ১৪২৭, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪২
কোটি টাকার ফ্লাডলাইটেও চলছে না
প্রতিনিধি, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)
ঘন কুয়াশার কারণে দীর্ঘ প্রায় ১২ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে পুনরায় ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে।
গতকাল সকাল ১০টায় কুয়াশার ঘনত্ব কমে এলে এ নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়।
এর আগে ঘন কুয়াশার কারণে গত শনিবার রাত ১০টায় নৌদুঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ করে বিআইডব্লিউটিসি কতৃপক্ষ। দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া প্রান্তে নদী পাড়ের অপেক্ষায় সিরিয়ালে আটকা পড়ে অ্যাম্বুলেন্স, যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ প্রায় সহ¯্রাধিক যানবাহন। এতে তীব্র শীতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে শিশু, নারীসহ যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা।
এছড়া ঘন কুয়াশার কারণে ব্যাস্ততম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে প্রতিনিয়তই ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। কুয়াশায় ফেরি বন্ধ থাকায় এ নৌপথে প্রতিনিয়তই থাকছে যাত্রীবাহী, পণ্যবাহী পরিবহনের দীর্ঘ সিরিয়াল। এতে শীত ও কুয়াশার মধ্যে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সিরিয়ালে আটকে থাকা বিভিন্ন গাড়ির চালকসহ হাজার হাজার যাত্রী। জানা যায়, গত ৭ দিনে (গত রোববার ৮ ঘণ্টা, সোমবার সাড়ে ১০ ঘণ্টা, মঙ্গলবার সাড়ে ৮ ঘণ্টা, বৃহস্পতিবার ৮ ঘণ্টা এবং শুক্রবার সাড়ে ৯ ঘণ্টা, শনিবার ৬ ঘণ্টা এবং রোববার ১২ঘণ্টা) পৃথক পৃথক সময়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে মোট সাড়ে ৬২ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে।
সরজমিনে গিয়ে কথা হয়, গাড়িচালক ( ঢাকা মেট্রো- ট ১৪-৬৪ ৯৬) নাঈম বলেন, শনিবার রাত ১০টার দিকে দৌলতদিয়া এসে দেখি কুয়াশার কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ। সেই থেকে সিরিয়ালে আটকে আছি আজ রোববার সকাল ১১টা বাজে কখন ফেরি পাব জানি না।
বিআইডব্লিটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী ব্যাবস্থাপক মাহবুব হোসেন বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে নৌদুর্ঘটনা এড়াতে শনিবার রাত ১০টায় ফেরি চলাচল বন্ধ করা হয়। রোববার সকাল ১০টায় কুয়াশার ঘনত্ব কমে এলে ফেরি চলাচল শুরু হয়। দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধ থাকায় এ নৌরুটে যানবাহনের দীর্ঘ সিরিয়াল সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ নৌরুটে ছোট-বড় ১৬টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। সিরিয়ালে থাকা যানবাহনের চাপ দ্রুতই কমে যাবে বলে তিনি জানান।
ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। প্রতিদিন সেখানে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ছোট-বড় বিভিন্ন গাড়ি ফেরিতে পারাপার হয়। কিন্তু সেই ফেরিগুলোতে ঘন কুয়াশার মধ্যে চলাচলের ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন আলোক নিক্ষেপের বিশেষ কোন ব্যাবস্থা নেই। ফলে প্রতিবছর শীত মৌসুমে কুয়াশাকালীন সেখানে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। এতে ফেরি পার হতে আসা শত শত বিভিন্ন গাড়ি আটকা পড়ে ঘাটে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি করে। মাত্র তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ওই নৌপথ পাড়ি দিতে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ে ভোগান্তির শিকার হন বিভিন্ন গাড়ির চালকসহ হাজার হাজার যাত্রী।
জানা গেছে, ঘন কুয়াশার মধ্যে নৌপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য ২০১৫ সালের জুন মাসে নৌ মন্ত্রণালয় টেন্ডারের মাধ্যমে মোট ১০টি ফেরিতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ‘ফগলাইট’ স্থাপন করে। সাড়ে ৭ হাজার কিলোওয়াটের প্রতিটি ফগলাইট ক্রয় বাবদ খরচ হয় অর্ধ কোটি টাকার ওপর। অথচ কুয়াশায় আগের সার্চ লাইটে নৌ চ্যানেলের মার্কার যতটুকু দেখা যায়, নতুন স্থাপিত ওই ফগলাইটে তাও দেখা যায় না। ফলে মূল্যবান ওই ফগলাইটগুলো কুয়াশায় ফেরি চলাচলে কোন কাজেই আসছে না। স্থাপনের পর থেকে সেগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. জিল্লুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে দীর্ঘ সময়জুড়ে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে যানজট সৃষ্টি হয়ে আছে।’ তবে পরীক্ষামূলকভাবে দশটি ফেরিতে স্থাপিত ফগলাইটের সঙ্গে বিমানে ব্যবহৃত রাডার সংযুক্ত করা গেলে ঘন কুয়াশার মধ্যে নৌপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।