ক্যারিবিয়ানদের ফের হোয়াইটওয়াশ

বাংলাদেশ সফরে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রায় দ্বিতীয় সারির এই দলটার বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওডিআই সিরিজের শুরু থেকেই দাপটের সঙ্গে খেলেছে টাইগাররা। মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে যথাক্রমে ছয় ও সাত উইকেটে জয়ের পর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সোমবার অনুষ্ঠিত সিরিজের শেষ ম্যাচে টাইগারদের জয় ১২০ রানের। এর মধ্য দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের দ্বিতীয়বারের মতো এবং সবমিলিয়ে প্রতিপক্ষকে চতুর্দশবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা। সেইসঙ্গে ওয়ানডে সুপার লীগে নিজেদের প্রথম সিরিজে পূর্ণ ত্রিশ পয়েন্টও জমা করল বাংলাদেশ দল।

নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে এ নিয়ে ১৫টি ম্যাচে ১০০ বা তার বেশি রানের ব্যবধানে জয়ের পথে টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পাওয়া বাংলাদেশ দল চার সিনিয়র ক্রিকেটারের হাফ সেঞ্চুরিতে ছয় উইকেটে তুলেছিল ২৯৭ রান (বাংলাদেশের ইনিংস খেলার পাতায়)। জয়ের জন্য ২৯৮ রানের বড় লক্ষ্যে ছুটতে গিয়ে ক্যারিবিয়ানদের ভাঙাচোরা ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট ১৭৭ রানে অলআউট হয়ে যায়।

সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ১২২ ও ১৪৮ রানে অলআউট হওয়া ক্যারিবিয়ান দলের অর্জন বলতে এবারের সফরে দেড়শ’র কোটা পার হওয়া প্রথম ইনিংস।

জয়ের জন্য বিশাল টার্গেটের পেছনে ছুটতে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান দল যেভাবে ব্যাটিং করেছে, তা দেখে এটাকে পাড়ার দল বলেই মনে হয়েছে। প্রথম দুই ম্যাচের মতোই ছন্নছাড়া ছিল তাদের ব্যাটিং। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট সিরিজের শেষ ম্যাচটাতেও বিশ্বকাপ সুপার লীগে কোন পয়েন্ট অর্জনে ব্যর্থ হয়। আগের দুই ওয়ানডের মতোই বাংলাদেশি বোলারদের তোপের মুখে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ক্যারিবিয়ানদের ব্যাটিং লাইনআপ। মাত্র ৭৯ রান তুলতেই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা ৪ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পায়। শুরুর দুই উইকেট প্রথম ম্যাচের মতোই যায় কাটার মাস্টার মুস্তাফিজের দখলে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে আঘাত হানেন মুস্তাফিজুর রহমান। তার বেরিয়ে যাওয়া এক ডেলিভারি বুঝতে না পেরে খোঁচা দিয়ে বসেন ক্যারিবিয়ান ওপেনার কেজর্ন ওটলে (১), সহজ ক্যাচ নেন মুশফিকুর রহিম। মাত্র ৭ রানে নিজেদের প্রথম উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ষষ্ঠ ওভারে দলীয় ৩০ রানের মাথায় মুস্তাফিজের বলেই সাজঘরে ফেরেন আরেক ওপেনার সুনিল অ্যামব্রিস (১৩)। লেগ বিফোর উইকেটের শিকার হন এই ক্যারিবিয়ান ওপেনার। এ নিয়ে সিরিজের তিন ম্যাচেই মুস্তাফিজের শিকার হলেন সুনিল।

দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে খোলসে ঢুকে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে কাজের কাজ হয়নি। তৃতীয় উইকেটে এনক্রোমা বোনারের সঙ্গে ৩৯ বলে মাত্র ১৭ রান যোগ করে আউট হয়ে যান কাইল মায়ার্স। মেহেদি হাসান মিরাজের ঘূর্ণি ডেলিভারি মিস করে লেগ বিফোর উইকেট হন মায়ার্স, ২৩ বলে খেলে করেন ১১ রান। এতেই ৪৭ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারানো ক্যারিবিয়ান দল অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ আর বোনারের ব্যাটে চতুর্থ উইকেটে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে। ৬৫ বলের জুটিতে তারা যোগ করেন ৩২ রান। এই প্রতিরোধ ভাঙে ২৪তম ওভারে। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে সফরকারীদলের অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ (১৭) উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন।

পেস-স্পিনের যুগলবন্দীতে বাংলাদেশ দল ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং লাইনআপকে রীতিমতো চেপে ধরে। টাইগার অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ রান দিয়েছেন একেবারেই কৃপনের মতো। রান কিছুটা বেশি দিলেও দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেছেন এ ম্যাচ দিয়েই দলে ফেরা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে পুরো সিরিজে ধারাবাহিক খেলা রভম্যান পাওয়েল রান পেয়েছেন সোমবারও। সৌম্য সরকারের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ার আগে ৪৯ বলে ৪৭ রান করেন তিনি। এনক্রুমাহ বোনারের ব্যাট থেকে এসেছে ৩১ রান। এর বাইরে বলার মতো রান রেমন্ড রেইফারের ২৭।

বাংলাদেশের পক্ষে বল হাতে ৯ ওভারে ৫১ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়েছেন সাইফউদ্দিন। মুস্তাফিজ ৬ ওভারে ২৪ রান দিয়ে শিকার করেছেন ২ উইকেট। বাংলাদেশের অফস্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিংয়ের রেকর্ড গড়ে ১০ ওভারে মাত্র ১৮ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট শিকার করেছেন মেহেদি মিরাজ। এছাড়া ১টি করে উইকেট গেছে তাসকিন আহমেদ ও সৌম্য সরকারের ঝুলিতে।

মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২১ , ১২ মাঘ ১৪২৭, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ক্যারিবিয়ানদের ফের হোয়াইটওয়াশ

বিশেষ প্রতিনিধি

image

হাফ সেঞ্চুরির পথে সাকিব আল হাসানের দৃষ্টিনন্দন আরেকটি গ্লান্স শট

বাংলাদেশ সফরে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রায় দ্বিতীয় সারির এই দলটার বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওডিআই সিরিজের শুরু থেকেই দাপটের সঙ্গে খেলেছে টাইগাররা। মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে যথাক্রমে ছয় ও সাত উইকেটে জয়ের পর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সোমবার অনুষ্ঠিত সিরিজের শেষ ম্যাচে টাইগারদের জয় ১২০ রানের। এর মধ্য দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের দ্বিতীয়বারের মতো এবং সবমিলিয়ে প্রতিপক্ষকে চতুর্দশবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা। সেইসঙ্গে ওয়ানডে সুপার লীগে নিজেদের প্রথম সিরিজে পূর্ণ ত্রিশ পয়েন্টও জমা করল বাংলাদেশ দল।

নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে এ নিয়ে ১৫টি ম্যাচে ১০০ বা তার বেশি রানের ব্যবধানে জয়ের পথে টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পাওয়া বাংলাদেশ দল চার সিনিয়র ক্রিকেটারের হাফ সেঞ্চুরিতে ছয় উইকেটে তুলেছিল ২৯৭ রান (বাংলাদেশের ইনিংস খেলার পাতায়)। জয়ের জন্য ২৯৮ রানের বড় লক্ষ্যে ছুটতে গিয়ে ক্যারিবিয়ানদের ভাঙাচোরা ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট ১৭৭ রানে অলআউট হয়ে যায়।

সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ১২২ ও ১৪৮ রানে অলআউট হওয়া ক্যারিবিয়ান দলের অর্জন বলতে এবারের সফরে দেড়শ’র কোটা পার হওয়া প্রথম ইনিংস।

জয়ের জন্য বিশাল টার্গেটের পেছনে ছুটতে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান দল যেভাবে ব্যাটিং করেছে, তা দেখে এটাকে পাড়ার দল বলেই মনে হয়েছে। প্রথম দুই ম্যাচের মতোই ছন্নছাড়া ছিল তাদের ব্যাটিং। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট সিরিজের শেষ ম্যাচটাতেও বিশ্বকাপ সুপার লীগে কোন পয়েন্ট অর্জনে ব্যর্থ হয়। আগের দুই ওয়ানডের মতোই বাংলাদেশি বোলারদের তোপের মুখে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ক্যারিবিয়ানদের ব্যাটিং লাইনআপ। মাত্র ৭৯ রান তুলতেই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা ৪ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পায়। শুরুর দুই উইকেট প্রথম ম্যাচের মতোই যায় কাটার মাস্টার মুস্তাফিজের দখলে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে আঘাত হানেন মুস্তাফিজুর রহমান। তার বেরিয়ে যাওয়া এক ডেলিভারি বুঝতে না পেরে খোঁচা দিয়ে বসেন ক্যারিবিয়ান ওপেনার কেজর্ন ওটলে (১), সহজ ক্যাচ নেন মুশফিকুর রহিম। মাত্র ৭ রানে নিজেদের প্রথম উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ষষ্ঠ ওভারে দলীয় ৩০ রানের মাথায় মুস্তাফিজের বলেই সাজঘরে ফেরেন আরেক ওপেনার সুনিল অ্যামব্রিস (১৩)। লেগ বিফোর উইকেটের শিকার হন এই ক্যারিবিয়ান ওপেনার। এ নিয়ে সিরিজের তিন ম্যাচেই মুস্তাফিজের শিকার হলেন সুনিল।

দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে খোলসে ঢুকে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে কাজের কাজ হয়নি। তৃতীয় উইকেটে এনক্রোমা বোনারের সঙ্গে ৩৯ বলে মাত্র ১৭ রান যোগ করে আউট হয়ে যান কাইল মায়ার্স। মেহেদি হাসান মিরাজের ঘূর্ণি ডেলিভারি মিস করে লেগ বিফোর উইকেট হন মায়ার্স, ২৩ বলে খেলে করেন ১১ রান। এতেই ৪৭ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারানো ক্যারিবিয়ান দল অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ আর বোনারের ব্যাটে চতুর্থ উইকেটে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে। ৬৫ বলের জুটিতে তারা যোগ করেন ৩২ রান। এই প্রতিরোধ ভাঙে ২৪তম ওভারে। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে সফরকারীদলের অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ (১৭) উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন।

পেস-স্পিনের যুগলবন্দীতে বাংলাদেশ দল ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং লাইনআপকে রীতিমতো চেপে ধরে। টাইগার অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ রান দিয়েছেন একেবারেই কৃপনের মতো। রান কিছুটা বেশি দিলেও দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেছেন এ ম্যাচ দিয়েই দলে ফেরা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে পুরো সিরিজে ধারাবাহিক খেলা রভম্যান পাওয়েল রান পেয়েছেন সোমবারও। সৌম্য সরকারের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ার আগে ৪৯ বলে ৪৭ রান করেন তিনি। এনক্রুমাহ বোনারের ব্যাট থেকে এসেছে ৩১ রান। এর বাইরে বলার মতো রান রেমন্ড রেইফারের ২৭।

বাংলাদেশের পক্ষে বল হাতে ৯ ওভারে ৫১ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়েছেন সাইফউদ্দিন। মুস্তাফিজ ৬ ওভারে ২৪ রান দিয়ে শিকার করেছেন ২ উইকেট। বাংলাদেশের অফস্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিংয়ের রেকর্ড গড়ে ১০ ওভারে মাত্র ১৮ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট শিকার করেছেন মেহেদি মিরাজ। এছাড়া ১টি করে উইকেট গেছে তাসকিন আহমেদ ও সৌম্য সরকারের ঝুলিতে।