এটা যেন দীর্ঘমেয়াদি না হয়

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার দুই বছরের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। দারিদ্র্যের হার গ্রামের তুলনায় বেশি বেড়েছে শহর ও মফস্বলে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের সাম্প্রতিক এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে সানেম যে তথ্য দিয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী। তিনি বলেছেন, প্রণোদনা প্যাকেজসহ সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে দেশের অর্থনীতি প্রায় আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে।

দেশে গত এক দশকে দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় অগ্রগতি ঘটেছে। কিন্তু এ নিয়ে অনেকের সংশয় ছিল যে, এ প্রবণতা কতটা টেকসই হবে। অনেকেই বলেছিলেন যে, সামান্য অভিঘাতে আবারও দারিদ্র্য বেড়ে যেতে পারে। করোনার দুর্যোগে সেই আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হলো। অর্থাৎ কোভিড-১৯ এর আগের দারিদ্র্য বিষয়ক অর্জনগুলো কোভিড-১৯ এর প্রভাবে ম্লান হয়ে পড়েছে। মানুষ যে আর্থিক দুর্দশায় পড়েছে এটা বাস্তবতা। এটা অস্বীকার করা যাবে না- করোনার আগে সচ্ছল ছিলেন এমন অনেকেই এখন পরমুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছেন।

দারিদ্র্যের এ প্রবণতা যাতে দীর্ঘ না হয়, সেজন্য সরকারকে এখনই সতর্ক হতে হবে। দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের বিশাল জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত আছে। তাদের আয় ভীষণ অস্থিতিশীল। এদের কর্মসংস্থানের পরিবর্তনগুলো স্বীকার করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা চাকরি হারিয়েছেন তাদের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।

দেশে অনেক ছোট ব্যবসায়ী আছেন যারা করোনার মধ্যে নিজের পুঁজিটুকু হারিয়ে ফেলেছেন। সমস্যা হচ্ছে, এই ব্যবসায়ীরা কোন প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ পায় না। ছোট ব্যবসায়ীরা প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ব্যাপারে সচেতন নন। অন্যদিকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও তাদের ঋণ দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় না। এ সমস্যাগুলো দূর করতে হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের যদি পুঁজি পৌঁছে দেয়া যায় তাহলে তারা নিজেরাই ঘুরে দাঁড়াবে।

করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন প্যাকেজে এমনভাবে মানদণ্ড ঠিক করতে হবে যাতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরাই ঋণ সহায়তা পান। কার্যকরভাবে ‘অসহায়’ জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে তাদের সহায়তা প্রদানের ধরন ও সময়ের ব্যাপ্তি নির্ধারণ করতে হবে। যেসব অর্থনৈতিক খাত এবং দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সহায়তা প্রয়োজন, তাদের কাছে এ সহায়তা সঠিকভাবে পৌঁছাতে হবে। সেই সঙ্গে একটি ‘তদারকি ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া’ চালু করতে হবে; যার মাধ্যমে সহায়তা প্রদান কার্যক্রমের কার্যকারিতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়।

মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২১ , ১২ মাঘ ১৪২৭, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪২

বেড়েছে দারিদ্র্যের হার

এটা যেন দীর্ঘমেয়াদি না হয়

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার দুই বছরের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। দারিদ্র্যের হার গ্রামের তুলনায় বেশি বেড়েছে শহর ও মফস্বলে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের সাম্প্রতিক এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে সানেম যে তথ্য দিয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী। তিনি বলেছেন, প্রণোদনা প্যাকেজসহ সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে দেশের অর্থনীতি প্রায় আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে।

দেশে গত এক দশকে দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় অগ্রগতি ঘটেছে। কিন্তু এ নিয়ে অনেকের সংশয় ছিল যে, এ প্রবণতা কতটা টেকসই হবে। অনেকেই বলেছিলেন যে, সামান্য অভিঘাতে আবারও দারিদ্র্য বেড়ে যেতে পারে। করোনার দুর্যোগে সেই আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হলো। অর্থাৎ কোভিড-১৯ এর আগের দারিদ্র্য বিষয়ক অর্জনগুলো কোভিড-১৯ এর প্রভাবে ম্লান হয়ে পড়েছে। মানুষ যে আর্থিক দুর্দশায় পড়েছে এটা বাস্তবতা। এটা অস্বীকার করা যাবে না- করোনার আগে সচ্ছল ছিলেন এমন অনেকেই এখন পরমুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছেন।

দারিদ্র্যের এ প্রবণতা যাতে দীর্ঘ না হয়, সেজন্য সরকারকে এখনই সতর্ক হতে হবে। দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের বিশাল জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত আছে। তাদের আয় ভীষণ অস্থিতিশীল। এদের কর্মসংস্থানের পরিবর্তনগুলো স্বীকার করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা চাকরি হারিয়েছেন তাদের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।

দেশে অনেক ছোট ব্যবসায়ী আছেন যারা করোনার মধ্যে নিজের পুঁজিটুকু হারিয়ে ফেলেছেন। সমস্যা হচ্ছে, এই ব্যবসায়ীরা কোন প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ পায় না। ছোট ব্যবসায়ীরা প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ব্যাপারে সচেতন নন। অন্যদিকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও তাদের ঋণ দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় না। এ সমস্যাগুলো দূর করতে হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের যদি পুঁজি পৌঁছে দেয়া যায় তাহলে তারা নিজেরাই ঘুরে দাঁড়াবে।

করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন প্যাকেজে এমনভাবে মানদণ্ড ঠিক করতে হবে যাতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরাই ঋণ সহায়তা পান। কার্যকরভাবে ‘অসহায়’ জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে তাদের সহায়তা প্রদানের ধরন ও সময়ের ব্যাপ্তি নির্ধারণ করতে হবে। যেসব অর্থনৈতিক খাত এবং দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সহায়তা প্রয়োজন, তাদের কাছে এ সহায়তা সঠিকভাবে পৌঁছাতে হবে। সেই সঙ্গে একটি ‘তদারকি ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া’ চালু করতে হবে; যার মাধ্যমে সহায়তা প্রদান কার্যক্রমের কার্যকারিতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়।