মাইকেল মধুসূদন বাংলা কাব্যসাহিত্যের প্রথম দ্বার উন্মোচনকারী

হাবিবুর রহমান স্বপন

আপন বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল মাইকেল মধুসূদন দত্ত। ধূমকেতুর মতো অল্প সময়ের জন্য আবির্ভূত হয়েছিলেন এমন নয়, তিনি অসাধারণ দীপ্তিতে ভাস্বর ছিলেন। তার জীবন কবি প্রতিভা, আকস্মিকতা ও উন্নাসিকতার সমন্বয়ে গঠিত।

এক অসাধারণ দৈব প্রতিভা নিয়ে মাইকেল মধুসূদন বাঙলা সাহিত্যের অঙ্গনে প্রবেশ করেছিলেন। তিনি পাশ্চাত্য সাহিত্য থেকে নানান উপাদান ও উপকরণ সংগ্রহ করে বাংলাভাষাকে গাম্ভীর্য ও ভাববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ করে তোলেন। মধুসূদনই প্রথম দেখালেন যে পয়ার-পাঁচালি জর্জরিত বাংলাভাষায় কেবল বাঁশির মৃদুমধুর গুঞ্জরণ অথবা বেণু-বীণার পেলব ঝঙ্কার ধ্বনিত হয় না, প্রতিভাবান লেখকের হাতে তা থেকে যুদ্ধ-ভেরীর সুগম্ভীর তুর্যনাদও প্রকাশিত হতে পারে। মধুসূদনের আগে বাংলা কবিতায় পয়ার ও পাঁচালির প্রধান্য ছিল। তিনিই প্রথম প্রমাণ করলেন যে, বাংলা ভাষাকে যে কোন ভাবধারায় ও রসের বাহন করা যায় এবং দৃঢ়তায় ও সম্ভাব্যতায় এ ভাষা যে কোন উন্নতিশীল ভাষার সমকক্ষ। মধুসূদনই সেই অর্থে বাংলা কাব্যসাহিত্যকে আধুনিকতার মন্ত্রে দীক্ষা দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘মধুসূদন আধুনিক বাংলা কাব্যসাহিত্যের প্রথম দ্বার মোচনকারী।’

যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে তার জন্ম ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি। মধুসূদনের বাবা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার সদর দেওয়ানি আদালতের আইনজীবী। মাতা জাহ্নবী দেবী অক্ষরজ্ঞান সম্পন্না ছিলেন। মায়ের কাছেই মধুসূদন রামায়ণ, মহাভারত শুনেছেন। মধুসূদনের আরও দুই ভাই ছিল। কিন্তু তারা শিশুকালেই মারা যায়। একমাত্র জীবিত সন্তান মধুসূদন তাই বাবা-মায়ের আদরের ধন ছিলেন। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে সাত বছর বয়সে মধুসূদনকে কলকাতার খিদিরপুর স্কুলে ভর্তি করা হয়। এর দুই বছর পর ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার হিন্দু কলেজের জুনিয়র ডিপার্টমেন্টের সর্বনিম্ন শ্রেণীতে তাকে ভর্তি করা হয়। এই কলেজে নিম্ন শ্রেণীতে পড়ার সময়ই তিনি ইংরেজিতে কবিতা লিখতে আরম্ভ করেন।

হিন্দু কলেজে শিক্ষক ডিরোজিও সাহিত্য পড়াতেন। মধুসূদন ভর্তি হওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়। ডিরোজিওর শিষ্যদের পরিচালিত একাধিক পত্রিকা প্রকাশিত হতো। পত্রিকাগুলোতে যুক্তিবাদের মাধ্যমে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানানো হতো। হিন্দু ধর্মের অনেক বিষয়কেই আঘাত করে লেখা হতো। ডিরোজিওর শিষ্যরা সত্যের জন্য দরকার হলে পিতা-মাতা এবং সমাজকে অস্বীকার করার আদর্শকে সাহসের সঙ্গে গ্রহণ করেন। ডিরোজিওর শিষ্য রিচার্ডসন হিন্দু কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। মধুসূদন রিচার্ডসনের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

মধুসূদন ছিলেন একাধারে অমিতব্যয়ী, বিলাসী এবং আমোদপ্রিয়। দু’হাতে টাকা ওড়াতেন। সে সময় মদপান ইংরেজি শিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে একটা সৎসাহসের কাজ বলে গণ্য হতো। মধুসূদন এবং হিন্দু কলেজের বেশ কয়েকজন ছাত্র মদপানে অগ্রগণ্য ছিলেন।

মধুসূদনের বয়স যখন ১৯ বছর তখন তার বাবা ৮ বছরের এক বালিকার সঙ্গে মধুসূদনের বিয়ের প্রস্তাব করেন। মধুসূদন এ বিয়েতে আপত্তি করেন এবং ক্ষিপ্ত হন। চেনেন না, জানেন না, কোনদিন দেখেননি এমন একটি মেয়েকে বিয়ে করতে তিনি আপত্তি প্রকাশ করেন এবং বিয়ে ঠেকাতে তিনি নিজেই খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মধুসূদন আর্চডিবন ডেয়ালট্রির কাছে কলকাতার ওল্ড মিশন চার্চে খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হন। এতে তার বাবা প্রচণ্ড চটে যান।

১৮৪৪ থেকে ১৮৪৭ সাল পর্যন্ত মধুসূদন দত্ত বিশপ কলেজে ভর্তি হন। এখানে তিনি গ্রিক, ল্যাটিন, জার্মান ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি ইংরেজিতে প্রবন্ধ ও কবিতা লিখতে শুরু করেন। ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে তার বাবা অর্থ প্রদান বন্ধ করে দেন। ফলে তিনি কলেজ ছাড়তে বাধ্য হন। কলকাতা ছেড়ে মধুসূদন চলে যান তার এক বন্ধুর সঙ্গে মাদ্রাজে (তিনি বই বিক্রি করে সবার অজান্তে মাদ্রাজ চলে যান)। সেখানে আরফান আ্যসাইলাম বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। এই সময়ই তিনি রচনা করেন ইংরেজি কাব্য গ্রন্থ ‘দ্য ক্যাপটিভ লেডি’ এবং ‘ভিশন অব দ্য পাস্ট’। কিন্তু কাব্য গ্রন্থ দুটি সমালোচকদের কাছে সমাদৃত হয়নি। অনেকেই তাঁকে ইংরেজির পরিবর্তে মাতৃভাষা বাংলায় সাহিত্যচর্চা করার পরামর্শ দেন।

এ সময়ই তিনি রেবেকা নামের এক নারীকে বিয়ে করেন। তার বাবা ছিলেন নীলকর সাহেব। ওই স্ত্রীর গর্ভে এক সন্তান জন্মগ্রহণ করলেও বেশি দিন এ বিয়ে টেকেনি (এক বছর সাত মাস)। এরপর মাইকেল বিয়ে করেন এমিলিয়া হেনরিয়েটা সোফিয়াকে। মাদ্রাজে থাকাকালীন বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে স্ত্রী হেনরিয়েটাকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় আসেন মাইকেল।

মাদ্রাজে তিনি অরফ্যান আ্যসাইলামে শিক্ষকতা করার সময় একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। স্কুলে তার পদটি স্থায়ী না করে সেখানে একজন ইউরেশিয়ান শিক্ষক নিয়োগ করায় তিনি তা মেনে নিতে পারেননি। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে মতভেদ দেখা দিলে তিনি শিক্ষকতার চাকরি থেকে ইস্তফা দেন এবং পাকাপাকিভাবে কলকাতায় ফিরে আসেন। কলকাতায় থাকা এবং খরচ চালানো মাইকেলের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। বারবার তাকে বাসা বদলাতে হয়। মাইকেলের বাবা রাজনারায়ণের মৃত্যুর পর খিদিরপুরের বাড়ি আত্মীয়স্বজনরা দখল করে নেয়। তারা রটিয়ে দেয় মাইকেল মারা গেছে। মাইকেল বাড়িতে উপস্থিত হলে আত্মীয়স্বজনরা তাকে জানায় তারা বাড়িটি রাজনারায়ণ বাবুর কাছ থেকে উইল করে নিয়েছেন। বাড়ি উদ্ধারের জন্য তিনি মামলা করেন।

এ সময় তিনি অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করেন। পুলিশ কোর্টে কেরানির চাকরি পান। দক্ষতা বলে তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের দোভাষীর কাজ পান। এ সময়ই তার কাব্য প্রতিভার আবার স্ফুরণ ঘটে। তিনি রচনা করেন ‘শর্মিষ্ঠা’ (১৮৫৮ খ্রি.), ‘একেই কী বলে সভ্যতা’ (১৮৬০ খ্রি.), ‘বুড়োশালিকের ঘাড়ে রোঁ’ (১৮৬০ খ্রি.), ‘পদ্মাবতী’ এবং ‘কৃষ্ণ কুমারী’ (১৮৬১ খ্রি.) নাটক। ‘পদ্মাবতী’ (১৮৬০ খ্রি.) নাটকেই তিনি প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেন। পরবর্তীকালে ক্রমে ‘ব্রজাঙ্গনা কাব্য’, তিলোত্তমা সম্ভব কাব্য ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ ও ‘বীরাঙ্গনা’ কাব্য রচনা করেন। দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটক এবং রামনারায়ণ তর্করতœ রচিত ‘রতœবলী’ নাটক ইংরেজিতে অনুবাদ করেন।

মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য মহাকাব্য (এপিক) রূপে পরিচিত। মহাকাব্যের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার, সেই বৈশিষ্ট্যসমূহ উক্ত কাব্যে উপস্থিত আছে বলেই আলোচকরা মনে করেন। মহাকাব্যে বিষয়বস্তুর বিশালতা, বস্তুধর্মের (বাস্তব বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়কে প্রধান্য দেওয়া) প্রাচুর্য, বর্ণনায় নাটকীয়তা ইত্যাদিও থাকা জরুরি। মেঘনাদবধ কাব্যের ৯টি সর্গে মোট ৬ হাজার ৭৪টি পঙ্ক্তি আছে। তাই তার বিশালত্ব সম্পর্কে কোন দ্বিধা নেই।

রামায়ণ-কাহিনী এর মূল বিষয়বস্তু হলেও মেঘনাদবধ কাব্যে অনেক নতুনত্বের পরিচয় মেলে। কবির বর্ণনার গুণে রাক্ষস পরিবারের জন্য চোখের জল না ফেলে পারা যায় না। রাক্ষসদের স্বজাতিপ্রেমে পাঠক মুগ্ধ আবার তাদের বিপর্যয়ে পাঠক দুঃখিত হয়। মধুসূদন রাক্ষসদের রাক্ষস রূপে দেখাননি, মানুষের মতো করে এঁকেছেন এবং সেভাবেই চিত্রিত করেছেন তাদের অনুভূতি এবং মর্মবেদনার চিত্রমালা। অন্যদিকে এ কাব্যের রাম ও সীতা যেন দেবতা নারায়ণ ও লক্ষ্মীর অবতার নয়, তারা এই পার্থিব জগতের অন্য নর-নারীর মতো সুখ-দুঃখের ভুক্তভোগী সাধারণ মানব-মানবী। অন্যদিকে রাম লক্ষণের পাশে রাবণ মেঘনাদদের চরিত্র বেশি উজ্জ্বল করে চিহ্নিত করেছেন। কবির নিজের স্বদেশপ্রীতির ছবি ফুটে উঠেছে এ কাব্যে। বিদেশি সৈন্য এসে অন্যের দেশ আক্রমণ করেছে। সেই আক্রান্ত দেশ- অর্থাৎ লঙ্কার স্বাধীনতা বিপন্ন। আক্রান্ত রাজা রাবণ স্বদেশ ও আত্মমর্যাদা রক্ষার জন্য পুত্র ও অন্য প্রিয় আত্মীয়স্বজনকে হারিয়ে অদম্য তেজে প্রাণপণ যুদ্ধ করছেন। মধুসূদন রাবণ-চরিত্রে এক অদম্য শক্তির অপ্রতিহত গতিবেগ লক্ষ্য করেছিলেন, যে স্বাধীনতা রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দেশরক্ষার অসাধারণ বীরত্ব কবিকে মুগ্ধ করেছিল। সে কারণেই বীর মেঘনাদের চরিত্র কবি তার কল্পনায় উচ্চ স্থানে বসিয়েছেন। এক পরাধীন দেশের তৎকালীন অধিবাসী মধুসূদনের কাছে স্বদেশের সম্মানরক্ষায় ব্রতী রাবণ ও মেঘনাদের আত্মত্যাগ অনেক বেশি গৌরবের বলে মনে হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মেঘনাদবধ কাব্য প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘মেঘনাদবধ কাব্যে কেবল ছন্দোবন্ধে ও রচনাপ্রণালীতে নহে, তাহার ভিতরকার ভাব ও রসের মধ্যে একটা অপূর্ব পরিবর্তন দেখতে পাই। এই পরিবর্তন আত্মবিস্মৃতি নহে। ইহার মধ্যে এক বিদ্রোহ আছে। ...এই কাব্যে রাম-লক্ষণের চেয়ে রাবণ-ইন্দ্রজিৎ বড় হইয়া উঠিয়াছে।’

গতানুগতিকতার প্রথা ভঙ্গের ক্ষেত্রে মধুসূদনের এ স্পর্ধাই মেঘনাদবধ কাব্যকে বাংলা সাহিত্যে অমরত্ব দান করেছে। তার আগে বা পরে একজন পরাজিত পাত্রকে বিজয়ী নায়কের বদলে এভাবে মহিমান্বিত করার এমন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আর নেই!

১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে জ্ঞাতিদের বিরুদ্ধে মামলায় জয়ী হয়ে তিনি পৈতৃক বাড়িটি ফিরে পান। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ব্যারিস্টারি পড়তে লন্ডন যান। সেখানে তিনি অর্থ সংকটে পড়েন। তখন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাকে অর্থ সহায়তা প্রদান করেন। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে ব্যারিস্টারি পাস করে তিনি দেশে ফিরে কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশা শুরু করেন। আইন পেশায় তিনি তেমন সুবিধা করতে পারেননি। কারণ তিনি ছলচাতুরি করে মক্কেলের কাছ থেকে টাকা নিতেন না। সেটা ছিল তার স্বভাববিরুদ্ধ কাজ। এছাড়া তিনি গরিব মক্কেলদের মামলা করতেন বিনা পারিশ্রমিকে।

১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় তাকে এক গণসংবর্ধনা প্রদান করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে তিনি তার বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমার সাহেব হওয়ার পথ বিধাতা রোধ করে রেখেছেন। আমি আমার বসবার আর শয়ন করবার ঘরে আরশি রেখে দিয়েছি এবং আমার মনে সাহেব হবার ইচ্ছা যেমনি বলবৎ হয় অমনি আরশিতে মুখ দেখি। তাছাড়া আমি বাঙালি, আমার বাটী যশোহর।’

অনেক স্থানে কাজ করার পর ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে মাইকেল অল্পকাল পঞ্চকোট রাজ্যের আইন-উপদেষ্টা পদে কাজ করেন। এ সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং উত্তরপাড়ার জমিদারদের লাইব্রেরি কক্ষে বাস করেন। ক্রমশই আরও দুর্বল হলে স্ত্রী হেনরিয়েটাকে সঙ্গে নিয়ে ২২নং বেনেপুকুর রোডের একটি বাড়িতে ওঠেন। সেখানেই ১৮৭৩ সালের ২৬ জুন স্ত্রীর মৃত্যু হয়। বাড়িভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় এন্টালি বস্তিতে ছোট্ট একটি ঘরে তার স্থান হয়।

স্ত্রীর মৃত্যুর সময় কন্যা শর্মিষ্ঠার বয়স ১৩ বছর, মেঘনাদের বয়স ১১ বছর, আর ছোট ছেলে নেপোলিয়ানের বয়স তখন ৫ বছর। রোগকাতর দেহ, সর্বোপরি সন্তানদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদ্বেগ- এ পরিস্থিতি মাথায় নিয়ে ১৮৭৩ সালের জুন মাসের শেষ সপ্তাহে তাকে আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে (বর্তমান শেঠ সুখলাল করোনারি মেমোরিয়াল হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (স্ত্রীর মৃত্যুর তিন দিন পর)।

মধুসূদনের বংশধরদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিখ্যাত টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেজ।

[লেখক : সাংবাদিক

hrahman.swapon@gmail.com

২৪ জানুয়ারি, ২০২১

মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২১ , ১২ মাঘ ১৪২৭, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪২

শ্রদ্ধাঞ্জলি

মাইকেল মধুসূদন বাংলা কাব্যসাহিত্যের প্রথম দ্বার উন্মোচনকারী

হাবিবুর রহমান স্বপন

আপন বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল মাইকেল মধুসূদন দত্ত। ধূমকেতুর মতো অল্প সময়ের জন্য আবির্ভূত হয়েছিলেন এমন নয়, তিনি অসাধারণ দীপ্তিতে ভাস্বর ছিলেন। তার জীবন কবি প্রতিভা, আকস্মিকতা ও উন্নাসিকতার সমন্বয়ে গঠিত।

এক অসাধারণ দৈব প্রতিভা নিয়ে মাইকেল মধুসূদন বাঙলা সাহিত্যের অঙ্গনে প্রবেশ করেছিলেন। তিনি পাশ্চাত্য সাহিত্য থেকে নানান উপাদান ও উপকরণ সংগ্রহ করে বাংলাভাষাকে গাম্ভীর্য ও ভাববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ করে তোলেন। মধুসূদনই প্রথম দেখালেন যে পয়ার-পাঁচালি জর্জরিত বাংলাভাষায় কেবল বাঁশির মৃদুমধুর গুঞ্জরণ অথবা বেণু-বীণার পেলব ঝঙ্কার ধ্বনিত হয় না, প্রতিভাবান লেখকের হাতে তা থেকে যুদ্ধ-ভেরীর সুগম্ভীর তুর্যনাদও প্রকাশিত হতে পারে। মধুসূদনের আগে বাংলা কবিতায় পয়ার ও পাঁচালির প্রধান্য ছিল। তিনিই প্রথম প্রমাণ করলেন যে, বাংলা ভাষাকে যে কোন ভাবধারায় ও রসের বাহন করা যায় এবং দৃঢ়তায় ও সম্ভাব্যতায় এ ভাষা যে কোন উন্নতিশীল ভাষার সমকক্ষ। মধুসূদনই সেই অর্থে বাংলা কাব্যসাহিত্যকে আধুনিকতার মন্ত্রে দীক্ষা দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘মধুসূদন আধুনিক বাংলা কাব্যসাহিত্যের প্রথম দ্বার মোচনকারী।’

যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে তার জন্ম ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি। মধুসূদনের বাবা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার সদর দেওয়ানি আদালতের আইনজীবী। মাতা জাহ্নবী দেবী অক্ষরজ্ঞান সম্পন্না ছিলেন। মায়ের কাছেই মধুসূদন রামায়ণ, মহাভারত শুনেছেন। মধুসূদনের আরও দুই ভাই ছিল। কিন্তু তারা শিশুকালেই মারা যায়। একমাত্র জীবিত সন্তান মধুসূদন তাই বাবা-মায়ের আদরের ধন ছিলেন। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে সাত বছর বয়সে মধুসূদনকে কলকাতার খিদিরপুর স্কুলে ভর্তি করা হয়। এর দুই বছর পর ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার হিন্দু কলেজের জুনিয়র ডিপার্টমেন্টের সর্বনিম্ন শ্রেণীতে তাকে ভর্তি করা হয়। এই কলেজে নিম্ন শ্রেণীতে পড়ার সময়ই তিনি ইংরেজিতে কবিতা লিখতে আরম্ভ করেন।

হিন্দু কলেজে শিক্ষক ডিরোজিও সাহিত্য পড়াতেন। মধুসূদন ভর্তি হওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়। ডিরোজিওর শিষ্যদের পরিচালিত একাধিক পত্রিকা প্রকাশিত হতো। পত্রিকাগুলোতে যুক্তিবাদের মাধ্যমে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানানো হতো। হিন্দু ধর্মের অনেক বিষয়কেই আঘাত করে লেখা হতো। ডিরোজিওর শিষ্যরা সত্যের জন্য দরকার হলে পিতা-মাতা এবং সমাজকে অস্বীকার করার আদর্শকে সাহসের সঙ্গে গ্রহণ করেন। ডিরোজিওর শিষ্য রিচার্ডসন হিন্দু কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। মধুসূদন রিচার্ডসনের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

মধুসূদন ছিলেন একাধারে অমিতব্যয়ী, বিলাসী এবং আমোদপ্রিয়। দু’হাতে টাকা ওড়াতেন। সে সময় মদপান ইংরেজি শিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে একটা সৎসাহসের কাজ বলে গণ্য হতো। মধুসূদন এবং হিন্দু কলেজের বেশ কয়েকজন ছাত্র মদপানে অগ্রগণ্য ছিলেন।

মধুসূদনের বয়স যখন ১৯ বছর তখন তার বাবা ৮ বছরের এক বালিকার সঙ্গে মধুসূদনের বিয়ের প্রস্তাব করেন। মধুসূদন এ বিয়েতে আপত্তি করেন এবং ক্ষিপ্ত হন। চেনেন না, জানেন না, কোনদিন দেখেননি এমন একটি মেয়েকে বিয়ে করতে তিনি আপত্তি প্রকাশ করেন এবং বিয়ে ঠেকাতে তিনি নিজেই খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মধুসূদন আর্চডিবন ডেয়ালট্রির কাছে কলকাতার ওল্ড মিশন চার্চে খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হন। এতে তার বাবা প্রচণ্ড চটে যান।

১৮৪৪ থেকে ১৮৪৭ সাল পর্যন্ত মধুসূদন দত্ত বিশপ কলেজে ভর্তি হন। এখানে তিনি গ্রিক, ল্যাটিন, জার্মান ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি ইংরেজিতে প্রবন্ধ ও কবিতা লিখতে শুরু করেন। ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে তার বাবা অর্থ প্রদান বন্ধ করে দেন। ফলে তিনি কলেজ ছাড়তে বাধ্য হন। কলকাতা ছেড়ে মধুসূদন চলে যান তার এক বন্ধুর সঙ্গে মাদ্রাজে (তিনি বই বিক্রি করে সবার অজান্তে মাদ্রাজ চলে যান)। সেখানে আরফান আ্যসাইলাম বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। এই সময়ই তিনি রচনা করেন ইংরেজি কাব্য গ্রন্থ ‘দ্য ক্যাপটিভ লেডি’ এবং ‘ভিশন অব দ্য পাস্ট’। কিন্তু কাব্য গ্রন্থ দুটি সমালোচকদের কাছে সমাদৃত হয়নি। অনেকেই তাঁকে ইংরেজির পরিবর্তে মাতৃভাষা বাংলায় সাহিত্যচর্চা করার পরামর্শ দেন।

এ সময়ই তিনি রেবেকা নামের এক নারীকে বিয়ে করেন। তার বাবা ছিলেন নীলকর সাহেব। ওই স্ত্রীর গর্ভে এক সন্তান জন্মগ্রহণ করলেও বেশি দিন এ বিয়ে টেকেনি (এক বছর সাত মাস)। এরপর মাইকেল বিয়ে করেন এমিলিয়া হেনরিয়েটা সোফিয়াকে। মাদ্রাজে থাকাকালীন বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে স্ত্রী হেনরিয়েটাকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় আসেন মাইকেল।

মাদ্রাজে তিনি অরফ্যান আ্যসাইলামে শিক্ষকতা করার সময় একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। স্কুলে তার পদটি স্থায়ী না করে সেখানে একজন ইউরেশিয়ান শিক্ষক নিয়োগ করায় তিনি তা মেনে নিতে পারেননি। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে মতভেদ দেখা দিলে তিনি শিক্ষকতার চাকরি থেকে ইস্তফা দেন এবং পাকাপাকিভাবে কলকাতায় ফিরে আসেন। কলকাতায় থাকা এবং খরচ চালানো মাইকেলের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। বারবার তাকে বাসা বদলাতে হয়। মাইকেলের বাবা রাজনারায়ণের মৃত্যুর পর খিদিরপুরের বাড়ি আত্মীয়স্বজনরা দখল করে নেয়। তারা রটিয়ে দেয় মাইকেল মারা গেছে। মাইকেল বাড়িতে উপস্থিত হলে আত্মীয়স্বজনরা তাকে জানায় তারা বাড়িটি রাজনারায়ণ বাবুর কাছ থেকে উইল করে নিয়েছেন। বাড়ি উদ্ধারের জন্য তিনি মামলা করেন।

এ সময় তিনি অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করেন। পুলিশ কোর্টে কেরানির চাকরি পান। দক্ষতা বলে তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের দোভাষীর কাজ পান। এ সময়ই তার কাব্য প্রতিভার আবার স্ফুরণ ঘটে। তিনি রচনা করেন ‘শর্মিষ্ঠা’ (১৮৫৮ খ্রি.), ‘একেই কী বলে সভ্যতা’ (১৮৬০ খ্রি.), ‘বুড়োশালিকের ঘাড়ে রোঁ’ (১৮৬০ খ্রি.), ‘পদ্মাবতী’ এবং ‘কৃষ্ণ কুমারী’ (১৮৬১ খ্রি.) নাটক। ‘পদ্মাবতী’ (১৮৬০ খ্রি.) নাটকেই তিনি প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেন। পরবর্তীকালে ক্রমে ‘ব্রজাঙ্গনা কাব্য’, তিলোত্তমা সম্ভব কাব্য ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ ও ‘বীরাঙ্গনা’ কাব্য রচনা করেন। দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটক এবং রামনারায়ণ তর্করতœ রচিত ‘রতœবলী’ নাটক ইংরেজিতে অনুবাদ করেন।

মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য মহাকাব্য (এপিক) রূপে পরিচিত। মহাকাব্যের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার, সেই বৈশিষ্ট্যসমূহ উক্ত কাব্যে উপস্থিত আছে বলেই আলোচকরা মনে করেন। মহাকাব্যে বিষয়বস্তুর বিশালতা, বস্তুধর্মের (বাস্তব বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়কে প্রধান্য দেওয়া) প্রাচুর্য, বর্ণনায় নাটকীয়তা ইত্যাদিও থাকা জরুরি। মেঘনাদবধ কাব্যের ৯টি সর্গে মোট ৬ হাজার ৭৪টি পঙ্ক্তি আছে। তাই তার বিশালত্ব সম্পর্কে কোন দ্বিধা নেই।

রামায়ণ-কাহিনী এর মূল বিষয়বস্তু হলেও মেঘনাদবধ কাব্যে অনেক নতুনত্বের পরিচয় মেলে। কবির বর্ণনার গুণে রাক্ষস পরিবারের জন্য চোখের জল না ফেলে পারা যায় না। রাক্ষসদের স্বজাতিপ্রেমে পাঠক মুগ্ধ আবার তাদের বিপর্যয়ে পাঠক দুঃখিত হয়। মধুসূদন রাক্ষসদের রাক্ষস রূপে দেখাননি, মানুষের মতো করে এঁকেছেন এবং সেভাবেই চিত্রিত করেছেন তাদের অনুভূতি এবং মর্মবেদনার চিত্রমালা। অন্যদিকে এ কাব্যের রাম ও সীতা যেন দেবতা নারায়ণ ও লক্ষ্মীর অবতার নয়, তারা এই পার্থিব জগতের অন্য নর-নারীর মতো সুখ-দুঃখের ভুক্তভোগী সাধারণ মানব-মানবী। অন্যদিকে রাম লক্ষণের পাশে রাবণ মেঘনাদদের চরিত্র বেশি উজ্জ্বল করে চিহ্নিত করেছেন। কবির নিজের স্বদেশপ্রীতির ছবি ফুটে উঠেছে এ কাব্যে। বিদেশি সৈন্য এসে অন্যের দেশ আক্রমণ করেছে। সেই আক্রান্ত দেশ- অর্থাৎ লঙ্কার স্বাধীনতা বিপন্ন। আক্রান্ত রাজা রাবণ স্বদেশ ও আত্মমর্যাদা রক্ষার জন্য পুত্র ও অন্য প্রিয় আত্মীয়স্বজনকে হারিয়ে অদম্য তেজে প্রাণপণ যুদ্ধ করছেন। মধুসূদন রাবণ-চরিত্রে এক অদম্য শক্তির অপ্রতিহত গতিবেগ লক্ষ্য করেছিলেন, যে স্বাধীনতা রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দেশরক্ষার অসাধারণ বীরত্ব কবিকে মুগ্ধ করেছিল। সে কারণেই বীর মেঘনাদের চরিত্র কবি তার কল্পনায় উচ্চ স্থানে বসিয়েছেন। এক পরাধীন দেশের তৎকালীন অধিবাসী মধুসূদনের কাছে স্বদেশের সম্মানরক্ষায় ব্রতী রাবণ ও মেঘনাদের আত্মত্যাগ অনেক বেশি গৌরবের বলে মনে হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মেঘনাদবধ কাব্য প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘মেঘনাদবধ কাব্যে কেবল ছন্দোবন্ধে ও রচনাপ্রণালীতে নহে, তাহার ভিতরকার ভাব ও রসের মধ্যে একটা অপূর্ব পরিবর্তন দেখতে পাই। এই পরিবর্তন আত্মবিস্মৃতি নহে। ইহার মধ্যে এক বিদ্রোহ আছে। ...এই কাব্যে রাম-লক্ষণের চেয়ে রাবণ-ইন্দ্রজিৎ বড় হইয়া উঠিয়াছে।’

গতানুগতিকতার প্রথা ভঙ্গের ক্ষেত্রে মধুসূদনের এ স্পর্ধাই মেঘনাদবধ কাব্যকে বাংলা সাহিত্যে অমরত্ব দান করেছে। তার আগে বা পরে একজন পরাজিত পাত্রকে বিজয়ী নায়কের বদলে এভাবে মহিমান্বিত করার এমন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আর নেই!

১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে জ্ঞাতিদের বিরুদ্ধে মামলায় জয়ী হয়ে তিনি পৈতৃক বাড়িটি ফিরে পান। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ব্যারিস্টারি পড়তে লন্ডন যান। সেখানে তিনি অর্থ সংকটে পড়েন। তখন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাকে অর্থ সহায়তা প্রদান করেন। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে ব্যারিস্টারি পাস করে তিনি দেশে ফিরে কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশা শুরু করেন। আইন পেশায় তিনি তেমন সুবিধা করতে পারেননি। কারণ তিনি ছলচাতুরি করে মক্কেলের কাছ থেকে টাকা নিতেন না। সেটা ছিল তার স্বভাববিরুদ্ধ কাজ। এছাড়া তিনি গরিব মক্কেলদের মামলা করতেন বিনা পারিশ্রমিকে।

১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় তাকে এক গণসংবর্ধনা প্রদান করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে তিনি তার বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমার সাহেব হওয়ার পথ বিধাতা রোধ করে রেখেছেন। আমি আমার বসবার আর শয়ন করবার ঘরে আরশি রেখে দিয়েছি এবং আমার মনে সাহেব হবার ইচ্ছা যেমনি বলবৎ হয় অমনি আরশিতে মুখ দেখি। তাছাড়া আমি বাঙালি, আমার বাটী যশোহর।’

অনেক স্থানে কাজ করার পর ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে মাইকেল অল্পকাল পঞ্চকোট রাজ্যের আইন-উপদেষ্টা পদে কাজ করেন। এ সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং উত্তরপাড়ার জমিদারদের লাইব্রেরি কক্ষে বাস করেন। ক্রমশই আরও দুর্বল হলে স্ত্রী হেনরিয়েটাকে সঙ্গে নিয়ে ২২নং বেনেপুকুর রোডের একটি বাড়িতে ওঠেন। সেখানেই ১৮৭৩ সালের ২৬ জুন স্ত্রীর মৃত্যু হয়। বাড়িভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় এন্টালি বস্তিতে ছোট্ট একটি ঘরে তার স্থান হয়।

স্ত্রীর মৃত্যুর সময় কন্যা শর্মিষ্ঠার বয়স ১৩ বছর, মেঘনাদের বয়স ১১ বছর, আর ছোট ছেলে নেপোলিয়ানের বয়স তখন ৫ বছর। রোগকাতর দেহ, সর্বোপরি সন্তানদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদ্বেগ- এ পরিস্থিতি মাথায় নিয়ে ১৮৭৩ সালের জুন মাসের শেষ সপ্তাহে তাকে আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে (বর্তমান শেঠ সুখলাল করোনারি মেমোরিয়াল হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (স্ত্রীর মৃত্যুর তিন দিন পর)।

মধুসূদনের বংশধরদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিখ্যাত টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেজ।

[লেখক : সাংবাদিক

hrahman.swapon@gmail.com

২৪ জানুয়ারি, ২০২১