প্রতীক নয় প্রার্থী দেখে এবার ভোট

দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও ভোটাররা দল ও প্রতীক নয়, প্রার্থীদের অতীত কর্মকা-, সততা ও প্রয়োজনে যাকে কাছে পাবেন তাকেই ভোট দেবেন। গত সোমবার ও মঙ্গলবার নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগ-বিএনপির ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’র এই নির্বাচনে এবার ভোটাররা প্রার্থী দেখে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।

বর্তমানের বাস্তবতা বিবেচনা করে বলা যায়, কোন মেয়রই কোন প্রতিশ্রুতিই বাস্তায়ন করতে পারবেন না। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার দক্ষতার ওপর সবকিছু নির্ভর করবে। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা নিরসন, যানজট সমস্যা থেকে উত্তরণ, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পর্যটন রাজধানী, স্বাস্থ্য সেবাসহ চলমান মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করার মানসিকতা যার রয়েছে তাকে এবার ভোটাররা ভোট দিবেন।

দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডের বৃদ্ধা ভোটার কুলসুম আরার কাছে কেমন প্রার্থীকে ভোট দেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলীয় প্রতীক না, প্রার্থী দেখে ভোট দিমু। একই এলাকার স্কুলশিক্ষক নুর ইসলাম বলেন, আমার ভোট আমি দেব। তবে প্রার্থীর অতীত কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে ভোট দিব।

২৮নং পাঠানটুলি ওয়ার্ডের ভোটার বাবুল হোসেন বলেন, বিপদ-আপদে যারে কাছে পাই, সেই প্রার্থীরেই ভোট দিমু। একই ওয়ার্ডের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নিরঞ্জন তালুকদার বলেন, দলীয় প্রার্থী বিবেচনায় ভোট দেব না। সৎ, যোগ্য ও এলাকার উন্নয়নে যিনি অবদান রাখতে পারবেন তেমন প্রার্থীকেই ভোট দিব।

৩৪নং বক্সিরহাট ওয়ার্ডের গৃহবধূ জেসমিন আকতার (৩৫) বলেন, আমি ভোট দেব প্রার্থী দেখে। কারও কথায় ভোট দেব না। ৩৬নং গোসাইল ডাঙ্গা ওয়ার্ডের শিক্ষার্থী হায়দার হোসেন বলেন, এবার প্রথম ভোটার হইছি। ভোট দিমু দেইখা-শুইনা। মুদি মাল বিক্রেতা ইলিয়াস মিয়া বলেন, মার্কা দেইখা না, ভোট দিমু লোক দেইখা। আগ্রাবাদ এলাকায় রাস্তার সংস্কারকাজে নিয়োজিত শ্রমিক রহিমা খাতুন (৪৫) বলেন, গরিব মানুষের সঙ্গে যারা আছে, তাদেরই ভোট দিমু।

২৮, ২৯ ও ৩৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী অধ্যাপিকা বিবি মরিয়ম বলেন, দল মনোনয়ন দিতে ভুল করেছে। আশা করি, মানুষ দলীয় প্রতীকে নয়, প্রার্থী হিসেবে আমাকেই নির্বাচিত করবে।

গত ৩ বার সংসদ নির্বাচনে মনেপ্রাণে চেয়েছি চাল ডাল তেল লবন যেন কেনার ক্ষমতা থাকে, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে যেন মারামারি খুন-খারাবি না হয়। বড়পোলের রিকশাচালক সাইদুর রহমান খুব আক্ষেপের সঙ্গে বলেন কথাগুলো। বড়পোল এলাকার ৪০ বছর বয়সের এই রিকশাচালক এবারও ভোট দেবেন এবং তার চাওয়াও আছে আগের মতোই, তবে এবার সে আর একটু বেশি কিছু চায় নতুন মেয়রের কাছে, তা হলো জলাবদ্ধতা নিরসন। প্রতিবার বর্ষায় যেন জোয়ারের পানি বৃষ্টির পানি তার বাসায় যেন না উঠে।

বক্সিরহাট ওয়ার্ডের কলেজশিক্ষিকা নিলু বেগম এবার প্রথম ভোটার হয়েছেন। এর আগে ভোটার হওয়ারই সুযোগ হয়নি। জীবনে প্রথম ভোট দেবেন ২৭ জানুয়ারি, এই আনন্দে তার চোখ ছল ছল করে উঠে। দেওয়ান হাটে পান সিগারেটের দোকান চালান স্বপন, ২০ বছর বয়সের এ যুবক এবার ভোটার হয়েছেন এবং ভোট দেবেন তার পছন্দের প্রার্থীকে, এ আশা নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে। সেদ্ধ ডিম বিক্রেতা গনেশ (৩৩) জানান, ২৭ তারিখের নির্বাচনেও তিনি ভোট দিতে যাবেন। আগেও ২ বার তার ভোট দেয়ার সুযোগ হয়েছে। তার চাওয়া নগরী যেন নান্দনিক হয়ে উঠে। প্রতিবার বর্ষায় যেন জলে ডুবে না যায় নগরী।

বুধবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২১ , ১৩ মাঘ ১৪২৭, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪২

প্রতীক নয় প্রার্থী দেখে এবার ভোট

চট্টগ্রাম ব্যুরো

দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও ভোটাররা দল ও প্রতীক নয়, প্রার্থীদের অতীত কর্মকা-, সততা ও প্রয়োজনে যাকে কাছে পাবেন তাকেই ভোট দেবেন। গত সোমবার ও মঙ্গলবার নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগ-বিএনপির ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’র এই নির্বাচনে এবার ভোটাররা প্রার্থী দেখে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।

বর্তমানের বাস্তবতা বিবেচনা করে বলা যায়, কোন মেয়রই কোন প্রতিশ্রুতিই বাস্তায়ন করতে পারবেন না। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার দক্ষতার ওপর সবকিছু নির্ভর করবে। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা নিরসন, যানজট সমস্যা থেকে উত্তরণ, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পর্যটন রাজধানী, স্বাস্থ্য সেবাসহ চলমান মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করার মানসিকতা যার রয়েছে তাকে এবার ভোটাররা ভোট দিবেন।

দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডের বৃদ্ধা ভোটার কুলসুম আরার কাছে কেমন প্রার্থীকে ভোট দেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলীয় প্রতীক না, প্রার্থী দেখে ভোট দিমু। একই এলাকার স্কুলশিক্ষক নুর ইসলাম বলেন, আমার ভোট আমি দেব। তবে প্রার্থীর অতীত কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে ভোট দিব।

২৮নং পাঠানটুলি ওয়ার্ডের ভোটার বাবুল হোসেন বলেন, বিপদ-আপদে যারে কাছে পাই, সেই প্রার্থীরেই ভোট দিমু। একই ওয়ার্ডের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নিরঞ্জন তালুকদার বলেন, দলীয় প্রার্থী বিবেচনায় ভোট দেব না। সৎ, যোগ্য ও এলাকার উন্নয়নে যিনি অবদান রাখতে পারবেন তেমন প্রার্থীকেই ভোট দিব।

৩৪নং বক্সিরহাট ওয়ার্ডের গৃহবধূ জেসমিন আকতার (৩৫) বলেন, আমি ভোট দেব প্রার্থী দেখে। কারও কথায় ভোট দেব না। ৩৬নং গোসাইল ডাঙ্গা ওয়ার্ডের শিক্ষার্থী হায়দার হোসেন বলেন, এবার প্রথম ভোটার হইছি। ভোট দিমু দেইখা-শুইনা। মুদি মাল বিক্রেতা ইলিয়াস মিয়া বলেন, মার্কা দেইখা না, ভোট দিমু লোক দেইখা। আগ্রাবাদ এলাকায় রাস্তার সংস্কারকাজে নিয়োজিত শ্রমিক রহিমা খাতুন (৪৫) বলেন, গরিব মানুষের সঙ্গে যারা আছে, তাদেরই ভোট দিমু।

২৮, ২৯ ও ৩৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী অধ্যাপিকা বিবি মরিয়ম বলেন, দল মনোনয়ন দিতে ভুল করেছে। আশা করি, মানুষ দলীয় প্রতীকে নয়, প্রার্থী হিসেবে আমাকেই নির্বাচিত করবে।

গত ৩ বার সংসদ নির্বাচনে মনেপ্রাণে চেয়েছি চাল ডাল তেল লবন যেন কেনার ক্ষমতা থাকে, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে যেন মারামারি খুন-খারাবি না হয়। বড়পোলের রিকশাচালক সাইদুর রহমান খুব আক্ষেপের সঙ্গে বলেন কথাগুলো। বড়পোল এলাকার ৪০ বছর বয়সের এই রিকশাচালক এবারও ভোট দেবেন এবং তার চাওয়াও আছে আগের মতোই, তবে এবার সে আর একটু বেশি কিছু চায় নতুন মেয়রের কাছে, তা হলো জলাবদ্ধতা নিরসন। প্রতিবার বর্ষায় যেন জোয়ারের পানি বৃষ্টির পানি তার বাসায় যেন না উঠে।

বক্সিরহাট ওয়ার্ডের কলেজশিক্ষিকা নিলু বেগম এবার প্রথম ভোটার হয়েছেন। এর আগে ভোটার হওয়ারই সুযোগ হয়নি। জীবনে প্রথম ভোট দেবেন ২৭ জানুয়ারি, এই আনন্দে তার চোখ ছল ছল করে উঠে। দেওয়ান হাটে পান সিগারেটের দোকান চালান স্বপন, ২০ বছর বয়সের এ যুবক এবার ভোটার হয়েছেন এবং ভোট দেবেন তার পছন্দের প্রার্থীকে, এ আশা নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে। সেদ্ধ ডিম বিক্রেতা গনেশ (৩৩) জানান, ২৭ তারিখের নির্বাচনেও তিনি ভোট দিতে যাবেন। আগেও ২ বার তার ভোট দেয়ার সুযোগ হয়েছে। তার চাওয়া নগরী যেন নান্দনিক হয়ে উঠে। প্রতিবার বর্ষায় যেন জলে ডুবে না যায় নগরী।