গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে চার্জশিট

গাড়ি ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের মাদক ও অস্ত্র মামলায় পৃথক দুটি চার্জশিট দাখিল করেছে ডিবি পুলিশ। গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আবদুল মালেক এ চার্জশিট দাখিল করেন। গত ২০ নভেম্বর গভীর রাত থেকে ২১ নভেম্বর দুপুর পর্যন্ত টানা ৮ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে বাড্ডায় মনিবের বাসা থেকে ৬০০ ভরি সোনার গহনা, বিদেশি পিস্তল, গুলি, মদ, ১০টি দেশের মুদ্রা ও নগদ ১ কোটি ৯ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় দুই শতাধিক প্লট ও ফ্ল্যাটের মালিক গোল্ডেন মনির। রাজউকের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে অসংখ্য প্লট হাতিয়ে নেন তিনি। প্রাথমিকভাবে ৩০টি প্লট ও ফ্ল্যাটের কথা স্বীকার করেন মনির। জব্দ করা হয় দুটি বিলাসবহুল গাড়ি। প্রতিটির দাম প্রায় তিন কোটি টাকা। পরে তার বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় তিনটি মামলা দায়ের করে র‌্যাব। অস্ত্র, বিশেষ ক্ষমতা এবং মাদক আইনের পৃথক তিন মামলায় ২৭ দিনের রিমান্ড শেষে গত ১০ ডিসেম্বর কারাগারে পাঠানো হয়।

র?্যাব আরও জানায়, নব্বইয়ের দশকে রাজধানীর গাউসিয়া মার্কেটে কাপড়ের দোকানের বিক্রয়কর্মী ছিলেন মনির। এরপর মৌচাক মার্কেটে ক্রোকারিজের দোকানে চাকরি নেন। সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে যুক্ত হন বিমানবন্দরকেন্দ্রিক লাগেজ পার্টি ও স্বর্ণ চোরাচালানে। পরিচিতি পান ‘গোল্ডেন মনির’ নামে। স্বর্ণ চোরাচালানসহ নানা অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পর তার লক্ষ্য ছিল ভিআইপি মর্যাদা লাভ। এ কারণে সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দুহাত মেলে অনুদান দিতেন তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাড্ডার আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান, মিল্কি হত্যা মামলার আসামি আমেরিকায় পলাতক চঞ্চল ও মেহেদীসহ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে ছিল তার নিয়মিত যোগাযোগ।

সূত্র জানায়, বাড্ডায় এলাকায় মনির পুরাতন গাড়ির ব্যবসা শুরু করেন। এরপর এয়ারপোর্টে লাগেজ পার্টির ব্যবসা শুরু করেন। মূলত তখনই মনির স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ৬০ পিস গোল্ডসহ ধরা পড়ার পর মনির হয়ে যান গোল্ডেন মনির। এরপর গোল্ডেন মনির বাড্ডা, বাটারা এলাকায় নিজের আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের অনুগত সন্ত্রাসীদের করে গোল্ডেন মনির বিভিন্ন ব্যক্তির বাড়ি, জায়গা দখল শুরু করেন। এলাকায় ২ শতাধিক ব্যক্তির বাড়ি দখল করে বহুতল ফ্লাট তৈরি করেন।

দুদক সূূত্র জানায়, মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মনিরের নামে থাকা রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ৪০টি প্লট ও ৬১০ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদের তালিকা নিয়ে তদন্ত করছে দুদক। এছাড়া, প্রাথমিক অনুসন্ধানে আরও অনেক সম্পদ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা অর্থের তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি। এসব তথ?্য যাচাই করা হচ্ছে। দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, গোল্ডেন মনিরের অঢেল সম্পদের তথ্য আছে দুদকের হাতে। এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে মনিরের নামে ৬১০ কোটি টাকার ও তার স্ত্রীর নামে প্রায় ৬ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। আরও কিছু তথ্য যাচাই-বাছাই পর্যায়ে আছে। মনির ও তার স্ত্রীকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ ইস্যুর জন্য সুপারিশ করেছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা।

আরও খবর
ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস প্যারেডে বাংলাদেশ
ভ্যাকসিন নিয়ে বিএনপিকে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর আহ্বান কাদেরের
বিএনপি টিকা নিয়ে অহেতুক প্রশ্ন তুলছে
দক্ষিণ এশিয়ায় কেবল বাংলাদেশের জিডিপি বাড়ছে জাতিসংঘ
যুক্তরাজ্য ফেরত ২৯ প্রবাসীর করোনা শনাক্ত
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা ভয়ঙ্কর অসুবিধায় আছি : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ভারতে ট্যুরিস্ট ভিসা চালু শীঘ্রই দোরাইস্বামী
বিচারের দীর্ঘ সূত্রতায় হতাশা
নৌকার প্রার্থী প্রত্যাখ্যান আ’লীগ ও ১৪ দল নেতাদের
বাংলাদেশ ভ্রমণে মার্কিন নাগরিকদের জন্য সতর্কতা
শাবি ছাত্রলীগ সভাপতিসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
রোহিঙ্গা শিবিরে দু’পক্ষের গুলি বিনিময়, নিহত ১
শাহবাগে মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল
শাকিলের ফাঁদে প্রাণ হারান ব্যবসায়ী হামিদুল

বুধবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২১ , ১৩ মাঘ ১৪২৭, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪২

মাদক ও অস্ত্র মামলায়

গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে চার্জশিট

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

গাড়ি ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের মাদক ও অস্ত্র মামলায় পৃথক দুটি চার্জশিট দাখিল করেছে ডিবি পুলিশ। গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আবদুল মালেক এ চার্জশিট দাখিল করেন। গত ২০ নভেম্বর গভীর রাত থেকে ২১ নভেম্বর দুপুর পর্যন্ত টানা ৮ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে বাড্ডায় মনিবের বাসা থেকে ৬০০ ভরি সোনার গহনা, বিদেশি পিস্তল, গুলি, মদ, ১০টি দেশের মুদ্রা ও নগদ ১ কোটি ৯ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় দুই শতাধিক প্লট ও ফ্ল্যাটের মালিক গোল্ডেন মনির। রাজউকের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে অসংখ্য প্লট হাতিয়ে নেন তিনি। প্রাথমিকভাবে ৩০টি প্লট ও ফ্ল্যাটের কথা স্বীকার করেন মনির। জব্দ করা হয় দুটি বিলাসবহুল গাড়ি। প্রতিটির দাম প্রায় তিন কোটি টাকা। পরে তার বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় তিনটি মামলা দায়ের করে র‌্যাব। অস্ত্র, বিশেষ ক্ষমতা এবং মাদক আইনের পৃথক তিন মামলায় ২৭ দিনের রিমান্ড শেষে গত ১০ ডিসেম্বর কারাগারে পাঠানো হয়।

র?্যাব আরও জানায়, নব্বইয়ের দশকে রাজধানীর গাউসিয়া মার্কেটে কাপড়ের দোকানের বিক্রয়কর্মী ছিলেন মনির। এরপর মৌচাক মার্কেটে ক্রোকারিজের দোকানে চাকরি নেন। সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে যুক্ত হন বিমানবন্দরকেন্দ্রিক লাগেজ পার্টি ও স্বর্ণ চোরাচালানে। পরিচিতি পান ‘গোল্ডেন মনির’ নামে। স্বর্ণ চোরাচালানসহ নানা অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পর তার লক্ষ্য ছিল ভিআইপি মর্যাদা লাভ। এ কারণে সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দুহাত মেলে অনুদান দিতেন তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাড্ডার আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান, মিল্কি হত্যা মামলার আসামি আমেরিকায় পলাতক চঞ্চল ও মেহেদীসহ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে ছিল তার নিয়মিত যোগাযোগ।

সূত্র জানায়, বাড্ডায় এলাকায় মনির পুরাতন গাড়ির ব্যবসা শুরু করেন। এরপর এয়ারপোর্টে লাগেজ পার্টির ব্যবসা শুরু করেন। মূলত তখনই মনির স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ৬০ পিস গোল্ডসহ ধরা পড়ার পর মনির হয়ে যান গোল্ডেন মনির। এরপর গোল্ডেন মনির বাড্ডা, বাটারা এলাকায় নিজের আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের অনুগত সন্ত্রাসীদের করে গোল্ডেন মনির বিভিন্ন ব্যক্তির বাড়ি, জায়গা দখল শুরু করেন। এলাকায় ২ শতাধিক ব্যক্তির বাড়ি দখল করে বহুতল ফ্লাট তৈরি করেন।

দুদক সূূত্র জানায়, মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মনিরের নামে থাকা রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ৪০টি প্লট ও ৬১০ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদের তালিকা নিয়ে তদন্ত করছে দুদক। এছাড়া, প্রাথমিক অনুসন্ধানে আরও অনেক সম্পদ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা অর্থের তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি। এসব তথ?্য যাচাই করা হচ্ছে। দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, গোল্ডেন মনিরের অঢেল সম্পদের তথ্য আছে দুদকের হাতে। এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে মনিরের নামে ৬১০ কোটি টাকার ও তার স্ত্রীর নামে প্রায় ৬ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। আরও কিছু তথ্য যাচাই-বাছাই পর্যায়ে আছে। মনির ও তার স্ত্রীকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ ইস্যুর জন্য সুপারিশ করেছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা।