শাকিলের ফাঁদে প্রাণ হারান ব্যবসায়ী হামিদুল

গ্রেপ্তার ৫ ছিনতাইকারীর স্বীকারোক্তি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান হাতকাটা শাকিল ওরফে ডুম্বাস। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় মানুষের সহানুভূতি কাজ করত তার প্রতি। পুলিশও রিকশাটি চলাচলে বাধা দিত না। এই সুযোগে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে রিকশায় উঠিয়ে সর্বস্ব লুটে নিতেন শাকিল ও তার চক্রের সদস্যরা। প্রতিবন্ধীকতার সুযোগে গড়ে তোলা তার এই রিকশা ফাঁদে পা দিয়েই প্রাণ হারিয়েছেন জাসদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ও ডিস ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম (৫৫)। শাকিলসহ তাদের ছিনতাইকারী চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা হামিদুলকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। গত সোমবার রাতে রাজধানীর উত্তর মুগদা ও কামরাঙ্গীরচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের মূল হোতা এরাবিয়ান সোহেলসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলোÑ সোহেল ওরফে এরাবিয়ান সোহেল, জাহিদ হোসেন, শুক্কুর আলী, শাকিল ওরফে ডুম্বাস ও সোহেল মিয়া। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ১টি চাকু, ১টি মোটরচালিত রিকশা, লুণ্ঠিত মোবাইল ও মানিব্যাগ উদ্ধার করা হয়। অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে শাকিল একজন রিকশাচালক। তার ডান হাত কব্জির কাছ থেকে কাটা। রিকশা চালানো মূলত তার ছদ্মবেশ। এ চক্রের মূল হোতা এরাবিয়ান সোহেল। জাহিদ ও শুক্কুর আলী তার সহযোগী। আর সোহেল মিয়া ছিনতাইয়ের মালামাল ক্রয়কারী। হামিদুলের ছিনতাই হওয়া মোবাইলও সোহেল মিয়াই কিনেছিলেন। তাদের সবার বাসা কামরাঙ্গীরচর এলাকায়।

অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গত ২৩ জানুয়ারি রাজধানীতে খুন হওয়া সেগুনবাগিচার ডিস ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম হাতকাটা শাকিলের রিকশাতেই উঠেছিলেন। হাইকোর্ট মাজার থেকে সেগুনবাগিচায় যাওয়ার পথে জাতীয় ঈদগাহ মাঠের সামনের ফুটপাতে ওই রিকশার গতিরোধ করে ছিনতাইকারী সোহেল ওরফে এরাবিয়ান সোহেল, জাহিদ হোসেন ও শুক্কুর আলী। এ সময় হামিদুলের কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। তখন হামিদুল চিৎকার করলে এরাবিয়ান সোহেল চাকু দিয়ে পায়ে আঘাত করে। এতে তার রগ কেটে রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। গ্রেপ্তার হওয়া প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ১০টি করে ছিনতাই মামলা রয়েছে উল্লেখ করে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘প্রত্যেক মামলাতেই তারা জামিনে রয়েছেন। এরাবিয়ান সোহেল গত সাত মাস আগে জেল থেকে বের হয়েছেন আর হাতকাটা শাকিল এক বছর আগে বেরিয়েছিলেন। বের হয়ে পুনরায় তারা ছিনতাইয়ে নামে। হামিদুল হত্যার সঙ্গে এরা সবাই জড়িত।

হামিদুল হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তের বিষয়ে অভিযান চালানো ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (রমনা জোন) মিশু বিশ্বাস বলেন, ‘ঘটনার দিন যে দুইজনকে আটক করা হয়েছিল, মূলত তাদের তথ্য থেকেই ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করা হয়। তারা বলেছিল একজন হাতকাটা রিকশা চালক ওই ব্যক্তিকে রিকশায় তুলেছিলেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববদ্যালয় এলাকার বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে হাতকাটা শাকিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্য মতে বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, রাজধানীতে কতগুলো ছিনতাই স্পট আর কতগুলো ছিনতাইকারী গ্রুপ আছে তা বলা যাচ্ছে না। তবে ছোট ছোট কিছু গ্রুপ নতুন করে তৈরি হয়েছে তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আবার রাস্তার ধারে যারা নেশা করত তারাও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। সেদিকেও নজর দেয়া হচ্ছে। নিহত হামিদুলের স্বজনরা জানান, ময়মনসিংহ সদর কলেজ রোডে তাদের গ্রামের বাড়ি। বাবার নাম মৃত রফিকুল ইসলাম। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিল হামিদুল। মেয়ে নায়না ইসলাম (২৪) ও ছেলে নাহিদুল ইসলামসহ (২১) স্ত্রী নার্গিস আক্তারকে নিয়ে সেগুনবাগিচা হাইস্কুলের পাশে বসতি-ময়ূরী অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন। হামিদুল জাসদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ও শাহবাগ থানার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বলেও জানান তারা।

আরও খবর
ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস প্যারেডে বাংলাদেশ
ভ্যাকসিন নিয়ে বিএনপিকে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর আহ্বান কাদেরের
বিএনপি টিকা নিয়ে অহেতুক প্রশ্ন তুলছে
দক্ষিণ এশিয়ায় কেবল বাংলাদেশের জিডিপি বাড়ছে জাতিসংঘ
যুক্তরাজ্য ফেরত ২৯ প্রবাসীর করোনা শনাক্ত
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা ভয়ঙ্কর অসুবিধায় আছি : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ভারতে ট্যুরিস্ট ভিসা চালু শীঘ্রই দোরাইস্বামী
বিচারের দীর্ঘ সূত্রতায় হতাশা
নৌকার প্রার্থী প্রত্যাখ্যান আ’লীগ ও ১৪ দল নেতাদের
বাংলাদেশ ভ্রমণে মার্কিন নাগরিকদের জন্য সতর্কতা
গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে চার্জশিট
শাবি ছাত্রলীগ সভাপতিসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
রোহিঙ্গা শিবিরে দু’পক্ষের গুলি বিনিময়, নিহত ১
শাহবাগে মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল

বুধবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২১ , ১৩ মাঘ ১৪২৭, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ছদ্মবেশী প্রতিবন্ধী রিকশাচালক

শাকিলের ফাঁদে প্রাণ হারান ব্যবসায়ী হামিদুল

গ্রেপ্তার ৫ ছিনতাইকারীর স্বীকারোক্তি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান হাতকাটা শাকিল ওরফে ডুম্বাস। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় মানুষের সহানুভূতি কাজ করত তার প্রতি। পুলিশও রিকশাটি চলাচলে বাধা দিত না। এই সুযোগে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে রিকশায় উঠিয়ে সর্বস্ব লুটে নিতেন শাকিল ও তার চক্রের সদস্যরা। প্রতিবন্ধীকতার সুযোগে গড়ে তোলা তার এই রিকশা ফাঁদে পা দিয়েই প্রাণ হারিয়েছেন জাসদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ও ডিস ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম (৫৫)। শাকিলসহ তাদের ছিনতাইকারী চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা হামিদুলকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। গত সোমবার রাতে রাজধানীর উত্তর মুগদা ও কামরাঙ্গীরচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের মূল হোতা এরাবিয়ান সোহেলসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলোÑ সোহেল ওরফে এরাবিয়ান সোহেল, জাহিদ হোসেন, শুক্কুর আলী, শাকিল ওরফে ডুম্বাস ও সোহেল মিয়া। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ১টি চাকু, ১টি মোটরচালিত রিকশা, লুণ্ঠিত মোবাইল ও মানিব্যাগ উদ্ধার করা হয়। অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে শাকিল একজন রিকশাচালক। তার ডান হাত কব্জির কাছ থেকে কাটা। রিকশা চালানো মূলত তার ছদ্মবেশ। এ চক্রের মূল হোতা এরাবিয়ান সোহেল। জাহিদ ও শুক্কুর আলী তার সহযোগী। আর সোহেল মিয়া ছিনতাইয়ের মালামাল ক্রয়কারী। হামিদুলের ছিনতাই হওয়া মোবাইলও সোহেল মিয়াই কিনেছিলেন। তাদের সবার বাসা কামরাঙ্গীরচর এলাকায়।

অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গত ২৩ জানুয়ারি রাজধানীতে খুন হওয়া সেগুনবাগিচার ডিস ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম হাতকাটা শাকিলের রিকশাতেই উঠেছিলেন। হাইকোর্ট মাজার থেকে সেগুনবাগিচায় যাওয়ার পথে জাতীয় ঈদগাহ মাঠের সামনের ফুটপাতে ওই রিকশার গতিরোধ করে ছিনতাইকারী সোহেল ওরফে এরাবিয়ান সোহেল, জাহিদ হোসেন ও শুক্কুর আলী। এ সময় হামিদুলের কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। তখন হামিদুল চিৎকার করলে এরাবিয়ান সোহেল চাকু দিয়ে পায়ে আঘাত করে। এতে তার রগ কেটে রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। গ্রেপ্তার হওয়া প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ১০টি করে ছিনতাই মামলা রয়েছে উল্লেখ করে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘প্রত্যেক মামলাতেই তারা জামিনে রয়েছেন। এরাবিয়ান সোহেল গত সাত মাস আগে জেল থেকে বের হয়েছেন আর হাতকাটা শাকিল এক বছর আগে বেরিয়েছিলেন। বের হয়ে পুনরায় তারা ছিনতাইয়ে নামে। হামিদুল হত্যার সঙ্গে এরা সবাই জড়িত।

হামিদুল হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তের বিষয়ে অভিযান চালানো ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (রমনা জোন) মিশু বিশ্বাস বলেন, ‘ঘটনার দিন যে দুইজনকে আটক করা হয়েছিল, মূলত তাদের তথ্য থেকেই ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করা হয়। তারা বলেছিল একজন হাতকাটা রিকশা চালক ওই ব্যক্তিকে রিকশায় তুলেছিলেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববদ্যালয় এলাকার বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে হাতকাটা শাকিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্য মতে বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, রাজধানীতে কতগুলো ছিনতাই স্পট আর কতগুলো ছিনতাইকারী গ্রুপ আছে তা বলা যাচ্ছে না। তবে ছোট ছোট কিছু গ্রুপ নতুন করে তৈরি হয়েছে তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আবার রাস্তার ধারে যারা নেশা করত তারাও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। সেদিকেও নজর দেয়া হচ্ছে। নিহত হামিদুলের স্বজনরা জানান, ময়মনসিংহ সদর কলেজ রোডে তাদের গ্রামের বাড়ি। বাবার নাম মৃত রফিকুল ইসলাম। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিল হামিদুল। মেয়ে নায়না ইসলাম (২৪) ও ছেলে নাহিদুল ইসলামসহ (২১) স্ত্রী নার্গিস আক্তারকে নিয়ে সেগুনবাগিচা হাইস্কুলের পাশে বসতি-ময়ূরী অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন। হামিদুল জাসদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ও শাহবাগ থানার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বলেও জানান তারা।