মায়া
অঞ্জনা সাহা
কেন ঝরে জল?
ওকি মায়া নাকি শোকের লোবান?
অনায়াস যাত্রায় ঝরে পড়ে কষ্টের শিশিরবিন্দু
কাব্য আর মুকুলের চোখে!
শুধুই নিছক কোনো মায়া নয়ণ্ড
এখনে গূঢ় এক অন্তর্গত ব্যথার অনুভব
আচ্ছন্ন করে রাখে আকীর্ণ হৃদয়!
হয়তো এভাবেই চোখ পুড়ে যায় নোনা জলে!
ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ফিরে যেতে যেতে
আমাকে পিছনের দিকে কে যেন আঁচল ধরে
টেনে থামিয়ে দিতে চায়!
একি শুধুই মায়া, আর কিছু নয়?
চাওয়া-পাওয়া
শফিক ইমতিয়াজ
নিজের ভেতর ছিলো কোন স্বতন্ত্র সাঁতার তাইতো নদী চেয়েছি
নদী এলো অথৈ চোখের মতো।
নিজের ভেতর কিছু স্বর্ণ ছিলো, চেয়েছি পোড়াতে
আঁচ পাই, এলো শব্দ, আগুনপোড়া অজর।
নিজের ভেতর কিছু প্রশ্ন ছিলো, চেয়েছি উত্তর
এলো সঙ্গীত, বিশ্ব ছাপিয়ে ওঠা নিঃশব্দ জ্যোৎস্না!
তবু মন আমার কাঙাল বেচাইন
কী যেন চাই, কী যেন আরো জমাটবিস্ফার!
মুখ এলো, মুখোশ উড়িয়ে; প্রশান্তির উজ্জ্বল তিমির!
রাখালবালিকা ও মনের বাঘ
মাহফুজ আল-হোসেন
মনস্তাত্ত্বিকভাবে শক্তপোক্ত কাউকে পুরোপুরি ঘায়েল করতে
শব্দাস্ত্র ব্যবহারে যিনি অত্যন্ত পারঙ্গম
মধ্যরাতের ক্লান্তিকর সংলাপে দ্বিধান্বিত ভেবে ঘোর সংসারীকে
মায়াবাস্তব ভালোবাসার বৈষ্ণব পদাবলী
একটু-আধটু শোনাতেই পারেন নিয়মমাফিক
আর এই আচানক আখ্যানভাগ সহজেই সেঁটে যেতে পারে
লোভের লোকমায় বেড়ে ওঠা গৃহলালিত বিড়াল আর
আত্মগর্বী আয়নার ঈশপীয় গল্পকাঠামোতে
সমস্যাটা তৈরি হয় ঠিক তখনণ্ড যখন সম্ভাব্য শিকারকেই
বাধ্যকর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে হয়
এই বলে যে, তিনিই এক সুচতুর ছদ্ম-শিকারী
আতসী কাঁচের ভেতর দিয়ে ঝাপসা বিবর্ধিত বনবিড়ালকে দেখে
¯্রফে মজা করে বারংবার ‘বাঘ আসিয়াছে’ বলা আমাদের সকলেরই
প্রিয়ভাজন সেই রাখালবালিকা
শেষ অব্দি সত্যি সত্যিই আক্রান্ত হন হৃদয়ঘাতী মনের বাঘের
ভয়ঙ্কর থাবায়...
কেউ ফিরি কেউ যে ফিরি না
ইকবাল হোসেন বুলবুল
সবাই তো যাই। স্কুলে কাজে, আড্ডায় বেড়াতে। দূরে কাছে অচেনা শহরে।
মাটে ঘাটে, সমুদ্রে পাহাড়ে। নদী জলে, আকাশের নীলে।
যাই যুদ্ধে, শান্তির মিছিলে। যাই প্রেমে, বিরহে মিলনে। যাই সুখে, আনন্দে রোদনে।
যাই গানে, মেলায় উৎসবে।
যাই নিতে, অথবা দিতেও। যাই সেজে অথবা সাজাতে। যাই খেতে অথবা খাওয়াতে।
যাই ঘুমে অথবা নির্ঘুমে।
যাই একা, অথবা একত্রে। যাই বলে অথবা না বলে। যাই মিলে, অথবা না মিলে।
যাই মনে অথবা শরীরে।
সবাই কি আর ফিরি? কেউ ফিরি কেউ যে ফিরি না।
নতুন কবিতা শুনবে বললে
মানজুর মুহাম্মদ
নতুন কবিতা শুনবে বললে,
জেগে দেখি পৃথিবী ঘুমিয়ে গেছে, প্রকৃতি নিথর
তুষারে ঢাকা শৈশব কৈশরের টুংটাং সাইকেল প্রহর
ঝিরঝির তুষার ঝরছে নৈঃশব্দ্যের কেশর ছুঁয়ে
পশমের লং কোর্ট আর উলের টুপিতে ঢাকা পড়ে গেছে প্রহর
শুধু চোখ দুটো সুদূর জাফরানি প্রান্তে
দৃষ্টি খুঁজে ফিরলণ্ড রোদেল গোলাপ
জারুল গাছের নিচে বেগুনি ছায়ার খেলা
পদ্মঝিলের টলমল জলে দুপুরের উদাস চোখ
আর হাতে হাত রাখা গোধূলি বেলা
যেখানে পাখা মেলে অবিশ্রান্ত উড়েছে কবিতা দিনমান একদিন
এখানে ঠাণ্ডায় জমে গেছে মাংসল দেহ,
তাপমাত্রা নেমে গেছে হিমাঙ্কের অনেক নিচের ঘরে
রমরমা বারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে বিপুল উষ্ণতা গ্লাস ভরে
নতুন কবিতা শুনবে বললে,
জেগে দেখি কবিতাপুরে খাঁ খাঁ শূন্যতা আর অনন্ত বরফ
কোথাও আর পাতা ফোটার সাড়া নেই, প্রজাপতির গান নেই
চোখের রেটিনা আঁচড়ে যাচ্ছে শুধু কবিতার হরফ।
সেইসব সন্ধ্যার গল্প
হানিফ রুবেল
ফুরিয়ে যায় আমাদের জীবনে সন্ধ্যার গল্পগুলো
সময়ের বারান্দায় রেখে অন্তহীন কুয়াশা
আর এক মায়াচ্ছন্নতার ঘোর বৃষ্টি,
যে ব্যাপ্ত ছিল অবসর সাজাতে মুখরতায়
প্রাণে ফুটিয়ে দিয়ে অজস্র কদমের রেণু
ধুয়ে দিত মরুচরের ধূলিবালি।
সে বিজন পথরেখা এক
যার চতুষ্পার্শ্বে সমৃদ্ধ চারুলতার মর্মরধ্বনি,
যেখানে এক উর্বর ঋতু নিরন্তন ছড়িয়ে দিত রাগমালা,
ফুরিয়ে যায় আমাদের জীবন সন্ধ্যার গল্প
জানালায় মাথা রেখে এখন করি উপভোগ জীবনের অবহেলা।
দরজায় খিল
নিলয় রফিক
ছায়া দেখে সুর শোনে কাঁটাবনে আয়না সড়ক
শব্দপোড়া স্বপ্নলিপি আগামী-আলোর কর্ম রেখা
গোপনীয় হিরণময় শুদ্ধরথে বিজয়-মিছিলে
পাঠউন্মোচন হবে প্রাকৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে।
উজানে স্রোতের গতি মৈনাক সিঁথানে খেলা করে
আকাশপথে নজর যোগাযোগে শব্দের কথন
সময় প্রহর গুনে ঝিঁঝিঁপোকা অলস রজনী
হেমন্ত সকালে মুখ খুঁজি হৃদে দরজায় খিল।
অবিশ্বাসে মেঘছুটে বৃষ্টির আভাস ফর্সা রোদে
পরিপূর্ণ পলিমাটি বীজের সৌরভে কালো প্রেম
ফিরে দেখো স্মৃতিগুলো অম্লান মুচকি হেসে উঠে
ভাসমান কোকিলের বাসায় উড়াল দূরে মন।
দু’ফোঁটা চোখের জল
সুপ্তি জামান
অদেখা ভুবন চরসের নেশার মতো
জেগে ওঠে মৌতাত দুর্নিবার।
সেই রামও নেই, নেই সে অযোধ্যা
কে হবে সীতার ত্রাতা?
এ যুগের সীতা রাবণের ঘরে খোঁজে পরিত্রাণ
মনে ভয় এ যাত্রা রক্ষা পেলেও ফের যদি বনবাস হয়!
নারকেলের চিরল পাতায় বাতাসের দোল
পিতার পাণ্ডুর মুখ
দু’চোখে মায়াবী মায়ার নদী, জল থৈ থৈ।
শ্রাবণ ধারায় বন্যার আগমন
বসত বাড়ি, মানুষের জীবন গলা পানিতে দণ্ডায়মান
যেন পূর্ব জনমের অপরাধে তারা খোঁয়ারের বাসিন্দা জনমভর।
ভালবাসার রঙ যদি নীল হয়
কামনার রঙ লাল।
বাতাসে লাল-নীল ভোমরের মৃদু গুঞ্জরণ।
এ সময় ঘাস লতাপাতার বড় বেশি সুসময়
মীন কন্যা পাবে না কোনোদিন জলের দেখা
হাতির ঝিলের জলে গড়িয়ে পড়ে মীন
কন্যার দু’ফোঁটা চোখের জল।
লোকটা
ঋষিণ দস্তিদার
একটা খারাপ বছর গেল
তার আগে অনেকগুলো মন্দ মাস
বেয়াড়া সপ্তাহ রোদজ্বলা, তারও আগেণ্ড
ক্ষণিকের নীল পুরু মেঘের পেটে
বিদ্যুল্লতা গ্রীবায় কমনীয় রাত
নার্সারির চালে বৃষ্টি ময়ূরখড়ম।
শিশু চারাদের বনের গল্প শুনিয়ে
কোনও কোনও দিন বরফ গুণে
গড়পড়তা ফাঁকিতে দু’একবার
ভালো থাকার ভানণ্ড জানত সবাই।
লোকটা এখন কায়ক্লেশে
বেড়ালের খাঁচা, হাঙরের কাঁটা ফেরি করে
আলুর খোসায় ভ্যান ভরে
টো-টো এপাড়া ওপাড়ায়;
জনতা ধন্য ধন্য হুমড়ি খায়
এই বছরটায় ওর নামে জয়ধ্বনি
ঠোঙাভরা পাতাভাজা চিবুনোর ফাঁকে।
কালাজ্বর
নীহার মোশারফ
কত মানুষ শহরের অলিগলি ধরে হাঁটে
দূরে রাজপথ
ঠিকানাহীন আশা দুচোখের সীমানায়
পাথর ছোঁয়া
আমি সেই শহরের বাসিন্দা
কোলাহলে মন, চায়ের কাপে রাজনীতি
আপিসের নিয়ম-কানুন একঘেয়ে লাগে
কবির ভাবনায় ল্যাম্পপোস্টের আলো
কাব্যের রসদ
জানালার মায়াবী চাদরে অচেনা স্বভাব
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এ শহর, মুক্তি দেবে
চলে যাব দূরে
মায়ার পৃষ্ঠদেশে রাখব হাত
ছন্দে থাকবে না ঘাত-প্রতিঘাত
উৎসবে ডুবে যাব একদিন
তোমাদের এ শহর কালাজ্বরে ভোগে
ভোরের কাগজে লাশের গন্ধ পেলে
পীরজাদা ঘরে বসে ইন্নালিল্লাহ্ পড়ে
কোন সুখে মাতম ওঠে রসিকের?
নাচে মীরা বাঈ...
বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১ , ১৪ মাঘ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২
মায়া
অঞ্জনা সাহা
কেন ঝরে জল?
ওকি মায়া নাকি শোকের লোবান?
অনায়াস যাত্রায় ঝরে পড়ে কষ্টের শিশিরবিন্দু
কাব্য আর মুকুলের চোখে!
শুধুই নিছক কোনো মায়া নয়ণ্ড
এখনে গূঢ় এক অন্তর্গত ব্যথার অনুভব
আচ্ছন্ন করে রাখে আকীর্ণ হৃদয়!
হয়তো এভাবেই চোখ পুড়ে যায় নোনা জলে!
ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ফিরে যেতে যেতে
আমাকে পিছনের দিকে কে যেন আঁচল ধরে
টেনে থামিয়ে দিতে চায়!
একি শুধুই মায়া, আর কিছু নয়?
চাওয়া-পাওয়া
শফিক ইমতিয়াজ
নিজের ভেতর ছিলো কোন স্বতন্ত্র সাঁতার তাইতো নদী চেয়েছি
নদী এলো অথৈ চোখের মতো।
নিজের ভেতর কিছু স্বর্ণ ছিলো, চেয়েছি পোড়াতে
আঁচ পাই, এলো শব্দ, আগুনপোড়া অজর।
নিজের ভেতর কিছু প্রশ্ন ছিলো, চেয়েছি উত্তর
এলো সঙ্গীত, বিশ্ব ছাপিয়ে ওঠা নিঃশব্দ জ্যোৎস্না!
তবু মন আমার কাঙাল বেচাইন
কী যেন চাই, কী যেন আরো জমাটবিস্ফার!
মুখ এলো, মুখোশ উড়িয়ে; প্রশান্তির উজ্জ্বল তিমির!
রাখালবালিকা ও মনের বাঘ
মাহফুজ আল-হোসেন
মনস্তাত্ত্বিকভাবে শক্তপোক্ত কাউকে পুরোপুরি ঘায়েল করতে
শব্দাস্ত্র ব্যবহারে যিনি অত্যন্ত পারঙ্গম
মধ্যরাতের ক্লান্তিকর সংলাপে দ্বিধান্বিত ভেবে ঘোর সংসারীকে
মায়াবাস্তব ভালোবাসার বৈষ্ণব পদাবলী
একটু-আধটু শোনাতেই পারেন নিয়মমাফিক
আর এই আচানক আখ্যানভাগ সহজেই সেঁটে যেতে পারে
লোভের লোকমায় বেড়ে ওঠা গৃহলালিত বিড়াল আর
আত্মগর্বী আয়নার ঈশপীয় গল্পকাঠামোতে
সমস্যাটা তৈরি হয় ঠিক তখনণ্ড যখন সম্ভাব্য শিকারকেই
বাধ্যকর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে হয়
এই বলে যে, তিনিই এক সুচতুর ছদ্ম-শিকারী
আতসী কাঁচের ভেতর দিয়ে ঝাপসা বিবর্ধিত বনবিড়ালকে দেখে
¯্রফে মজা করে বারংবার ‘বাঘ আসিয়াছে’ বলা আমাদের সকলেরই
প্রিয়ভাজন সেই রাখালবালিকা
শেষ অব্দি সত্যি সত্যিই আক্রান্ত হন হৃদয়ঘাতী মনের বাঘের
ভয়ঙ্কর থাবায়...
কেউ ফিরি কেউ যে ফিরি না
ইকবাল হোসেন বুলবুল
সবাই তো যাই। স্কুলে কাজে, আড্ডায় বেড়াতে। দূরে কাছে অচেনা শহরে।
মাটে ঘাটে, সমুদ্রে পাহাড়ে। নদী জলে, আকাশের নীলে।
যাই যুদ্ধে, শান্তির মিছিলে। যাই প্রেমে, বিরহে মিলনে। যাই সুখে, আনন্দে রোদনে।
যাই গানে, মেলায় উৎসবে।
যাই নিতে, অথবা দিতেও। যাই সেজে অথবা সাজাতে। যাই খেতে অথবা খাওয়াতে।
যাই ঘুমে অথবা নির্ঘুমে।
যাই একা, অথবা একত্রে। যাই বলে অথবা না বলে। যাই মিলে, অথবা না মিলে।
যাই মনে অথবা শরীরে।
সবাই কি আর ফিরি? কেউ ফিরি কেউ যে ফিরি না।
নতুন কবিতা শুনবে বললে
মানজুর মুহাম্মদ
নতুন কবিতা শুনবে বললে,
জেগে দেখি পৃথিবী ঘুমিয়ে গেছে, প্রকৃতি নিথর
তুষারে ঢাকা শৈশব কৈশরের টুংটাং সাইকেল প্রহর
ঝিরঝির তুষার ঝরছে নৈঃশব্দ্যের কেশর ছুঁয়ে
পশমের লং কোর্ট আর উলের টুপিতে ঢাকা পড়ে গেছে প্রহর
শুধু চোখ দুটো সুদূর জাফরানি প্রান্তে
দৃষ্টি খুঁজে ফিরলণ্ড রোদেল গোলাপ
জারুল গাছের নিচে বেগুনি ছায়ার খেলা
পদ্মঝিলের টলমল জলে দুপুরের উদাস চোখ
আর হাতে হাত রাখা গোধূলি বেলা
যেখানে পাখা মেলে অবিশ্রান্ত উড়েছে কবিতা দিনমান একদিন
এখানে ঠাণ্ডায় জমে গেছে মাংসল দেহ,
তাপমাত্রা নেমে গেছে হিমাঙ্কের অনেক নিচের ঘরে
রমরমা বারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে বিপুল উষ্ণতা গ্লাস ভরে
নতুন কবিতা শুনবে বললে,
জেগে দেখি কবিতাপুরে খাঁ খাঁ শূন্যতা আর অনন্ত বরফ
কোথাও আর পাতা ফোটার সাড়া নেই, প্রজাপতির গান নেই
চোখের রেটিনা আঁচড়ে যাচ্ছে শুধু কবিতার হরফ।
সেইসব সন্ধ্যার গল্প
হানিফ রুবেল
ফুরিয়ে যায় আমাদের জীবনে সন্ধ্যার গল্পগুলো
সময়ের বারান্দায় রেখে অন্তহীন কুয়াশা
আর এক মায়াচ্ছন্নতার ঘোর বৃষ্টি,
যে ব্যাপ্ত ছিল অবসর সাজাতে মুখরতায়
প্রাণে ফুটিয়ে দিয়ে অজস্র কদমের রেণু
ধুয়ে দিত মরুচরের ধূলিবালি।
সে বিজন পথরেখা এক
যার চতুষ্পার্শ্বে সমৃদ্ধ চারুলতার মর্মরধ্বনি,
যেখানে এক উর্বর ঋতু নিরন্তন ছড়িয়ে দিত রাগমালা,
ফুরিয়ে যায় আমাদের জীবন সন্ধ্যার গল্প
জানালায় মাথা রেখে এখন করি উপভোগ জীবনের অবহেলা।
দরজায় খিল
নিলয় রফিক
ছায়া দেখে সুর শোনে কাঁটাবনে আয়না সড়ক
শব্দপোড়া স্বপ্নলিপি আগামী-আলোর কর্ম রেখা
গোপনীয় হিরণময় শুদ্ধরথে বিজয়-মিছিলে
পাঠউন্মোচন হবে প্রাকৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে।
উজানে স্রোতের গতি মৈনাক সিঁথানে খেলা করে
আকাশপথে নজর যোগাযোগে শব্দের কথন
সময় প্রহর গুনে ঝিঁঝিঁপোকা অলস রজনী
হেমন্ত সকালে মুখ খুঁজি হৃদে দরজায় খিল।
অবিশ্বাসে মেঘছুটে বৃষ্টির আভাস ফর্সা রোদে
পরিপূর্ণ পলিমাটি বীজের সৌরভে কালো প্রেম
ফিরে দেখো স্মৃতিগুলো অম্লান মুচকি হেসে উঠে
ভাসমান কোকিলের বাসায় উড়াল দূরে মন।
দু’ফোঁটা চোখের জল
সুপ্তি জামান
অদেখা ভুবন চরসের নেশার মতো
জেগে ওঠে মৌতাত দুর্নিবার।
সেই রামও নেই, নেই সে অযোধ্যা
কে হবে সীতার ত্রাতা?
এ যুগের সীতা রাবণের ঘরে খোঁজে পরিত্রাণ
মনে ভয় এ যাত্রা রক্ষা পেলেও ফের যদি বনবাস হয়!
নারকেলের চিরল পাতায় বাতাসের দোল
পিতার পাণ্ডুর মুখ
দু’চোখে মায়াবী মায়ার নদী, জল থৈ থৈ।
শ্রাবণ ধারায় বন্যার আগমন
বসত বাড়ি, মানুষের জীবন গলা পানিতে দণ্ডায়মান
যেন পূর্ব জনমের অপরাধে তারা খোঁয়ারের বাসিন্দা জনমভর।
ভালবাসার রঙ যদি নীল হয়
কামনার রঙ লাল।
বাতাসে লাল-নীল ভোমরের মৃদু গুঞ্জরণ।
এ সময় ঘাস লতাপাতার বড় বেশি সুসময়
মীন কন্যা পাবে না কোনোদিন জলের দেখা
হাতির ঝিলের জলে গড়িয়ে পড়ে মীন
কন্যার দু’ফোঁটা চোখের জল।
লোকটা
ঋষিণ দস্তিদার
একটা খারাপ বছর গেল
তার আগে অনেকগুলো মন্দ মাস
বেয়াড়া সপ্তাহ রোদজ্বলা, তারও আগেণ্ড
ক্ষণিকের নীল পুরু মেঘের পেটে
বিদ্যুল্লতা গ্রীবায় কমনীয় রাত
নার্সারির চালে বৃষ্টি ময়ূরখড়ম।
শিশু চারাদের বনের গল্প শুনিয়ে
কোনও কোনও দিন বরফ গুণে
গড়পড়তা ফাঁকিতে দু’একবার
ভালো থাকার ভানণ্ড জানত সবাই।
লোকটা এখন কায়ক্লেশে
বেড়ালের খাঁচা, হাঙরের কাঁটা ফেরি করে
আলুর খোসায় ভ্যান ভরে
টো-টো এপাড়া ওপাড়ায়;
জনতা ধন্য ধন্য হুমড়ি খায়
এই বছরটায় ওর নামে জয়ধ্বনি
ঠোঙাভরা পাতাভাজা চিবুনোর ফাঁকে।
কালাজ্বর
নীহার মোশারফ
কত মানুষ শহরের অলিগলি ধরে হাঁটে
দূরে রাজপথ
ঠিকানাহীন আশা দুচোখের সীমানায়
পাথর ছোঁয়া
আমি সেই শহরের বাসিন্দা
কোলাহলে মন, চায়ের কাপে রাজনীতি
আপিসের নিয়ম-কানুন একঘেয়ে লাগে
কবির ভাবনায় ল্যাম্পপোস্টের আলো
কাব্যের রসদ
জানালার মায়াবী চাদরে অচেনা স্বভাব
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এ শহর, মুক্তি দেবে
চলে যাব দূরে
মায়ার পৃষ্ঠদেশে রাখব হাত
ছন্দে থাকবে না ঘাত-প্রতিঘাত
উৎসবে ডুবে যাব একদিন
তোমাদের এ শহর কালাজ্বরে ভোগে
ভোরের কাগজে লাশের গন্ধ পেলে
পীরজাদা ঘরে বসে ইন্নালিল্লাহ্ পড়ে
কোন সুখে মাতম ওঠে রসিকের?
নাচে মীরা বাঈ...