‘খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি অনেক বড়’

সংবাদ : বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম কেন, কবে শুরু হয়েছিল?

রেজাউল করিম : আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০১৫ সালে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন বাস্তবায়ন করা। বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করতে চান। এর ধারাবাহিকতায় এখন আমরা এসডিজি বাস্তবায়নের পথে রয়েছি। এসডিজি বাস্তবায়ন ও একটি উন্নত দেশ গঠনে প্রয়োজন একটি সৃজনশীল, শক্ত-সমর্থ ও উন্নত জাতি। উন্নত জাতি গঠন করতে হলে দরকার আমাদের উন্নত স্বাস্থ্য। আর স্বাস্থ্যের জন্য ওতপ্রোতভাজে জড়িত খাদ্য। তাই উন্নত জাতি গঠন করতে হলে আমাদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্যের সংজ্ঞায় স্বাস্থ্য বলতে শারীরিক মানসিক দুটোকেই বুঝায়। এর সঙ্গে আমাদের বুদ্ধিবিত্তিক স্বাস্থ্য এটাকেও বুঝায়।

সংবাদ : বর্তমানে কোন কোন কর্মসূচি চলমান রয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের?

রেজাউল করিম : দেশের মানুষের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই মহূর্তে আমরা সবকিছু শুরু করতে পারছি না। এর কারণ আমাদের জনবল ও প্রযুক্তিসহ অনেক বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে। সম্প্রতি আমরা কিছু জনবল পেয়েছি। তবে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে যেমন জ্ঞানসম্পন্ন জনবল দরকার তা ছিল না। ইতোমধ্যে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ১০টা প্রবিধানমালা প্রণয়ন করেছি। এসব প্রবিধানমালায় একটি খাদ্যদ্রব্য চাষ থেকে শুরু করে একবারে চামুচে তুলে খাওয়া পর্যন্ত নিরাপদ করতে যা যা দরকার সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আর খাদ্য শুধু দেশীও বিষয় নয়। এটা আন্তর্জাতিক ইস্যু। খাদ্য নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু করেছি। তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ নিরাপদ খাদ্যের ধারণা আমাদের দেশে অনেক পরে এসেছে। আর তারা যেহেতু আগে থেকেই এটা নিয়ে কাজ করে, সেহেতু তাদের এর সঙ্গে জড়িত সব প্রযুক্তি রয়েছে। তাদের কাছে থেকে আমরা বিভিন্ন প্রযুক্তি নিচ্ছি।

সংবাদ : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে এই মুহূর্তে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন?

রেজাউল করিম : আমরা যদি একটা খাদ্যকে পুরোপুরি নিরাপদ করতে চাই, তাহলে এর সঙ্গে জড়িত সব পর্যায়ের মানুষকে সচেতন হতে হবে। যেমন একটা কৃষক যখন ধান চাষ করতে তখনও তাকে সচেতন হতে হবে। তাকে নিশ্চিত করতে হবে যে, মাটিতে ধানটা চাষ হচ্ছে সেই মাটি বিষমুক্ত কিনা, সে যে কিটনাশক ব্যবহার করছেন সেটি আমাদের জন্য নিরাপদ কিনা। এরপর যখন সেই ধানটা বস্তা বা প্যাকেটে মোড়কজাত করা হচ্ছে সেই প্যাকেটটি নিরাপদ কিনা, তারপর যে তাপমাত্রায় পণ্যটি সংরক্ষণ করা হচ্ছে সেটি সঠিক তাপমাত্রা কিনা। সেখানে থেকে বের করে যখন খাদ্য তৈরি করা হচ্ছে তখন সেটি নিরাপদ ও সঠিক নিয়মে জীবাণুমুক্তভাবে তৈরি করা হচ্ছে কিনা- এসব বিষয়ই নিশ্চিত করতে হবে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে। অর্থাৎ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে কৃষক, ব্যবসায়ী, রেস্টুরেন্টের কর্মচারী সবাইকে সচেতন হতে হবে। তবে আমাদের মতো দেশের জন্য খুব দ্রুত সবকিছু করা সম্ভব নয়। এটা দীর্ঘমেয়াদী প্রসেস।

সংবাদ : নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সব পক্ষের ইচ্ছারও একটা বিষয় আছে কিনা?

রেজাউল করিম : এক সময় আমরা তিন বেলা খাদ্য খাওয়ার জন্য লড়াই করেছি। এখন খাদ্য প্রয়োজন আমাদের মিটে গেছে। কিন্তু নিরাপদ খাদ্য এখনও হয়নি। এই নিরাপদ খাদ্য নিরাপত্তার একটি অংশ। নিরাপদ খাদ্য না হলে খাদ্য নিরাপত্তা হলেও তা পরিপূর্ণ হবে না। অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষের চাহিদা, যোগাযোগ ও জীবন-যাপনের ধরন বদলে গেছে। মানুষের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। মানুষের রুচি ও জীবনের চাহিদা বদলে গেছে। ব্যস্ততার কারণে নিজে বা পারিবারিক আবহে খাদ্যের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। বাজার বা সরবরাহকারীর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আমরা প্রচলিত খাবার খেলেও আমাদের সন্তান প্রচলিত খাবারের ওপর নির্ভর করছে না, বারবিকিউ কাবাব, ফাস্ট ফুড না খেলে চলছে না, সেটা আমরা দিচ্ছিও। কারণ আপনার ক্যাপাসিটি বেড়ে গেছে। আপনার সন্তানের জন্য খরচ করতে পারছেন, ভালো কথা। সন্তানের ভালোর কথা চিন্তা করে এটা দেবেন। কিন্তু সেটা ঝুঁকিমুক্ত হতে হবে। আর এখানেই নিরাপদ খাদ্যের প্রয়োজন আসছে। অর্থাৎ এক সময়ে চাহিদা ছিল খাবার। এখন চাহিদা হলো নিরাপদ খাবার। এটি নিশ্চিত করতে হলে, ব্যবসায়ী থেকে ভোক্তা সবারই সদিচ্ছা থাকতে হবে, আমরা যা খাচ্ছি তা যেন নিরাপদ হয়।

সংবাদ : খাদ্যসামগ্রী ভেজাল ও অবৈধ গণ্য হলে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩-এর ৩২ ধারা অনুযায়ী দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। যেসব প্রতিষ্ঠানে একদিনেই কয়েক লক্ষ টাকার বেচাকেনা হয়, সেসব প্রতিষ্ঠানকে মাত্র দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হলে খাদ্যে ভেজাল নির্মূল হবে বলে মনে করেন?

রেজাউল করিম : আসলে শাস্তি দিয়ে কোন কিছু ঠিক করা যায় না। তারপরও যেকোন কিছুকে একটা শৃঙ্খলায় আনতে আইনের প্রয়োজন হয়। যে ব্যবসায়ী খাদ্যে ভেজাল দিচ্ছে বা অপরিষ্কার জায়গায় খাদ্য তৈরি করছে সে যদি সৎ হয় তাহলে সে কোনভাবেও এই কাজ করবে না। তাই আমরা চাই, মানুষ প্রথমে সচেতন হোক, তারপর সৎ হোক। এইভাবে আমরা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে চাই। তবে এরপরও যারা তা করবে না তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব।

সংবাদ : রেস্টুরেন্টগুলোতে নিরাপদ খাদ্য কর্র্তৃপক্ষের যে রেটিং দেয়ার ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল সেগুলোর কোন সুফল কি পাওয়া যাচ্ছে?

রেজাউল করিম : প্রথম অবস্থায় আমরা সেগুলো করেছিলাম, তা থেকে কিছু ভালো ফলাফল এসেছে। অন্তত রেস্টুরেন্টের মালিকদের মাথায় রয়েছে যে তারা যদি ভালো করে তাহলে তারা ভালো রেটিং পাবে। এছাড়া আমরা মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করে সব সেক্টরের সঙ্গে আলোচনা করছি। সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।

সংবাদ : সাধারণ মানুষ মনে করে তারা যা খাচ্ছে তাতেই ভেজাল রয়েছে। মানুষের এই ধারণার পরিবর্তন করতে হলে কি করতে হবে?

রেজাউল করিম : মানুষের মধ্যে নেতিবাচক চিন্তাটা আগে আসে। আর আমরা সচেতন কম। এজন্য অনেক সময় ভেজাল খাদ্য পরিবেশন করে এর সঙ্গে জড়িত লোকজন। পাঁচজন যদি নিরাপদ খাদ্য পরিবেশন করে তাহলে সেটা নিউজ হবে না। কিন্তু একজন যদি ভেজাল দেয় তাহলে সেটি নিউজ হয়ে যাবে এবং মানুষ সেটাতে আতঙ্কিত হবে। মানুষের এই ধারণা পরিবর্তন করতে যেমন ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে, তেমনি এর সঙ্গে জড়িত সব লোকজনকে সচেতন হতে হবে এবং সৎ হতে হবে।

সংবাদ : নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মসূচির আওতা কতটুকু?

রেজাউল করিম : খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার মুখে তুলে দেয়া পর্যন্ত যতগুলো স্টেপ রয়েছে সব স্টেপই নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আওতায় রয়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ যদি বলে এ খাদ্য নিরাপদ নয়, এ খাদ্য আসবে না, সে খাদ্য আসবে না, বাজারজাত হবে না। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলে, এই প্লেট তৈরি হবে না, এই প্লেটে খাদ্য খাওয়া নিরাপদ নয়, প্লেট থাকা কেমিক্যাল বা উপাদানে বিষক্রিয়া হবে। এ খাদ্য বাজারে যাবে না। এর মানে খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি অনেক বড়।

বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১ , ১৪ মাঘ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

‘খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি অনেক বড়’

image

সংবাদ : বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম কেন, কবে শুরু হয়েছিল?

রেজাউল করিম : আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০১৫ সালে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন বাস্তবায়ন করা। বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করতে চান। এর ধারাবাহিকতায় এখন আমরা এসডিজি বাস্তবায়নের পথে রয়েছি। এসডিজি বাস্তবায়ন ও একটি উন্নত দেশ গঠনে প্রয়োজন একটি সৃজনশীল, শক্ত-সমর্থ ও উন্নত জাতি। উন্নত জাতি গঠন করতে হলে দরকার আমাদের উন্নত স্বাস্থ্য। আর স্বাস্থ্যের জন্য ওতপ্রোতভাজে জড়িত খাদ্য। তাই উন্নত জাতি গঠন করতে হলে আমাদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্যের সংজ্ঞায় স্বাস্থ্য বলতে শারীরিক মানসিক দুটোকেই বুঝায়। এর সঙ্গে আমাদের বুদ্ধিবিত্তিক স্বাস্থ্য এটাকেও বুঝায়।

সংবাদ : বর্তমানে কোন কোন কর্মসূচি চলমান রয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের?

রেজাউল করিম : দেশের মানুষের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই মহূর্তে আমরা সবকিছু শুরু করতে পারছি না। এর কারণ আমাদের জনবল ও প্রযুক্তিসহ অনেক বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে। সম্প্রতি আমরা কিছু জনবল পেয়েছি। তবে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে যেমন জ্ঞানসম্পন্ন জনবল দরকার তা ছিল না। ইতোমধ্যে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ১০টা প্রবিধানমালা প্রণয়ন করেছি। এসব প্রবিধানমালায় একটি খাদ্যদ্রব্য চাষ থেকে শুরু করে একবারে চামুচে তুলে খাওয়া পর্যন্ত নিরাপদ করতে যা যা দরকার সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আর খাদ্য শুধু দেশীও বিষয় নয়। এটা আন্তর্জাতিক ইস্যু। খাদ্য নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু করেছি। তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ নিরাপদ খাদ্যের ধারণা আমাদের দেশে অনেক পরে এসেছে। আর তারা যেহেতু আগে থেকেই এটা নিয়ে কাজ করে, সেহেতু তাদের এর সঙ্গে জড়িত সব প্রযুক্তি রয়েছে। তাদের কাছে থেকে আমরা বিভিন্ন প্রযুক্তি নিচ্ছি।

সংবাদ : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে এই মুহূর্তে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন?

রেজাউল করিম : আমরা যদি একটা খাদ্যকে পুরোপুরি নিরাপদ করতে চাই, তাহলে এর সঙ্গে জড়িত সব পর্যায়ের মানুষকে সচেতন হতে হবে। যেমন একটা কৃষক যখন ধান চাষ করতে তখনও তাকে সচেতন হতে হবে। তাকে নিশ্চিত করতে হবে যে, মাটিতে ধানটা চাষ হচ্ছে সেই মাটি বিষমুক্ত কিনা, সে যে কিটনাশক ব্যবহার করছেন সেটি আমাদের জন্য নিরাপদ কিনা। এরপর যখন সেই ধানটা বস্তা বা প্যাকেটে মোড়কজাত করা হচ্ছে সেই প্যাকেটটি নিরাপদ কিনা, তারপর যে তাপমাত্রায় পণ্যটি সংরক্ষণ করা হচ্ছে সেটি সঠিক তাপমাত্রা কিনা। সেখানে থেকে বের করে যখন খাদ্য তৈরি করা হচ্ছে তখন সেটি নিরাপদ ও সঠিক নিয়মে জীবাণুমুক্তভাবে তৈরি করা হচ্ছে কিনা- এসব বিষয়ই নিশ্চিত করতে হবে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে। অর্থাৎ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে কৃষক, ব্যবসায়ী, রেস্টুরেন্টের কর্মচারী সবাইকে সচেতন হতে হবে। তবে আমাদের মতো দেশের জন্য খুব দ্রুত সবকিছু করা সম্ভব নয়। এটা দীর্ঘমেয়াদী প্রসেস।

সংবাদ : নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সব পক্ষের ইচ্ছারও একটা বিষয় আছে কিনা?

রেজাউল করিম : এক সময় আমরা তিন বেলা খাদ্য খাওয়ার জন্য লড়াই করেছি। এখন খাদ্য প্রয়োজন আমাদের মিটে গেছে। কিন্তু নিরাপদ খাদ্য এখনও হয়নি। এই নিরাপদ খাদ্য নিরাপত্তার একটি অংশ। নিরাপদ খাদ্য না হলে খাদ্য নিরাপত্তা হলেও তা পরিপূর্ণ হবে না। অর্থনৈতিক কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষের চাহিদা, যোগাযোগ ও জীবন-যাপনের ধরন বদলে গেছে। মানুষের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। মানুষের রুচি ও জীবনের চাহিদা বদলে গেছে। ব্যস্ততার কারণে নিজে বা পারিবারিক আবহে খাদ্যের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। বাজার বা সরবরাহকারীর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আমরা প্রচলিত খাবার খেলেও আমাদের সন্তান প্রচলিত খাবারের ওপর নির্ভর করছে না, বারবিকিউ কাবাব, ফাস্ট ফুড না খেলে চলছে না, সেটা আমরা দিচ্ছিও। কারণ আপনার ক্যাপাসিটি বেড়ে গেছে। আপনার সন্তানের জন্য খরচ করতে পারছেন, ভালো কথা। সন্তানের ভালোর কথা চিন্তা করে এটা দেবেন। কিন্তু সেটা ঝুঁকিমুক্ত হতে হবে। আর এখানেই নিরাপদ খাদ্যের প্রয়োজন আসছে। অর্থাৎ এক সময়ে চাহিদা ছিল খাবার। এখন চাহিদা হলো নিরাপদ খাবার। এটি নিশ্চিত করতে হলে, ব্যবসায়ী থেকে ভোক্তা সবারই সদিচ্ছা থাকতে হবে, আমরা যা খাচ্ছি তা যেন নিরাপদ হয়।

সংবাদ : খাদ্যসামগ্রী ভেজাল ও অবৈধ গণ্য হলে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩-এর ৩২ ধারা অনুযায়ী দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। যেসব প্রতিষ্ঠানে একদিনেই কয়েক লক্ষ টাকার বেচাকেনা হয়, সেসব প্রতিষ্ঠানকে মাত্র দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হলে খাদ্যে ভেজাল নির্মূল হবে বলে মনে করেন?

রেজাউল করিম : আসলে শাস্তি দিয়ে কোন কিছু ঠিক করা যায় না। তারপরও যেকোন কিছুকে একটা শৃঙ্খলায় আনতে আইনের প্রয়োজন হয়। যে ব্যবসায়ী খাদ্যে ভেজাল দিচ্ছে বা অপরিষ্কার জায়গায় খাদ্য তৈরি করছে সে যদি সৎ হয় তাহলে সে কোনভাবেও এই কাজ করবে না। তাই আমরা চাই, মানুষ প্রথমে সচেতন হোক, তারপর সৎ হোক। এইভাবে আমরা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে চাই। তবে এরপরও যারা তা করবে না তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব।

সংবাদ : রেস্টুরেন্টগুলোতে নিরাপদ খাদ্য কর্র্তৃপক্ষের যে রেটিং দেয়ার ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল সেগুলোর কোন সুফল কি পাওয়া যাচ্ছে?

রেজাউল করিম : প্রথম অবস্থায় আমরা সেগুলো করেছিলাম, তা থেকে কিছু ভালো ফলাফল এসেছে। অন্তত রেস্টুরেন্টের মালিকদের মাথায় রয়েছে যে তারা যদি ভালো করে তাহলে তারা ভালো রেটিং পাবে। এছাড়া আমরা মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করে সব সেক্টরের সঙ্গে আলোচনা করছি। সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।

সংবাদ : সাধারণ মানুষ মনে করে তারা যা খাচ্ছে তাতেই ভেজাল রয়েছে। মানুষের এই ধারণার পরিবর্তন করতে হলে কি করতে হবে?

রেজাউল করিম : মানুষের মধ্যে নেতিবাচক চিন্তাটা আগে আসে। আর আমরা সচেতন কম। এজন্য অনেক সময় ভেজাল খাদ্য পরিবেশন করে এর সঙ্গে জড়িত লোকজন। পাঁচজন যদি নিরাপদ খাদ্য পরিবেশন করে তাহলে সেটা নিউজ হবে না। কিন্তু একজন যদি ভেজাল দেয় তাহলে সেটি নিউজ হয়ে যাবে এবং মানুষ সেটাতে আতঙ্কিত হবে। মানুষের এই ধারণা পরিবর্তন করতে যেমন ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে, তেমনি এর সঙ্গে জড়িত সব লোকজনকে সচেতন হতে হবে এবং সৎ হতে হবে।

সংবাদ : নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মসূচির আওতা কতটুকু?

রেজাউল করিম : খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার মুখে তুলে দেয়া পর্যন্ত যতগুলো স্টেপ রয়েছে সব স্টেপই নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আওতায় রয়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ যদি বলে এ খাদ্য নিরাপদ নয়, এ খাদ্য আসবে না, সে খাদ্য আসবে না, বাজারজাত হবে না। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলে, এই প্লেট তৈরি হবে না, এই প্লেটে খাদ্য খাওয়া নিরাপদ নয়, প্লেট থাকা কেমিক্যাল বা উপাদানে বিষক্রিয়া হবে। এ খাদ্য বাজারে যাবে না। এর মানে খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি অনেক বড়।