অধরা স্বপ্ন যখন বাস্তররূপে নিজের সামনে ধরা দেয় তখন আনন্দ আর সুখের সীমা থাকে না। এ রকমই এক স্বপবাজ ও স্বপ্নজয়ী সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের চিনাকান্দি গ্রামের প্রয়াত আব্দুল হালিমের ছেলে সৌদি ফেরত আব্দুর রহমান(৫৫)। সৌদি আরবে প্রবাসে থাকাকালীন সময়ে তার স্বপ্ন ছিল দেশে ফিরে মাল্টা বাগান করে বিদেশে না যাওয়ার। যেই কথা সেই কাজ। দেশে ফিরেই তার স্বপ্ন দেখা মাল্টা চাষ করে সফল হয়ে এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কৃষক আব্দুর রহমান। এখন বাস্তবে ধরা দিয়েছে তার সেই স্বপ্নের ফল। সৌদি আরবে থাকাকালীন সময়ে আব্দুর রহমান সৌদির বিভিন্ন মাল্টা বাগান দেখে এবং মাল্টা বাগানের বিভিন্ন প্রতিবেদন ইউটিউব চ্যানেলে দেখেন এবং বাংলাদেশের মাল্টা বাগান নিয়ে চ্যানেল আই টিভিতে শাইখ সিরাজের করা একটি প্রতিবেদন দেখের পর থেকেই আব্দুর রহমানের আরও বেশি উদ্বুদ্ধ হয় মাল্টা বাগান করার। গত শনিবার জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চিনাকান্দি প্রামের আব্দুর রহমানের মাল্টা বাগানে গিয়ে কথা হলে তিনি জানান, ১৯৯৯ সালের ২৭ জুন পাড়ি দেন বিদেশে। প্রায় ২০ বছর সৌদি থেকে ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি দেশে ফেরেন। দেশে ফেরার কিছুদিন যেতে না যেতেই হাঠাৎ একদিন দেখা হয় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সামছুল আলম(বিধু)’র সাথে। পরে তার মাল্টা বাগান করার ইচ্ছা পোষণ করলে তিনি উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। এরপর পরে আব্দুর রহমান তার স্বপ্নের মাল্টা বাগান বাস্তবেরূপ দিতে যোগাযোগ করেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কৃষি অফিসে। পরে বিশ্বম্ভরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রাজস্ব খাতের অর্থায়নে ও ডিএই,বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ এর বাস্তবায়নে ধনপুর ইউনিয়নের মাছিমপুর ব্লকের চিনাকান্দি গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের বাড়ির পশ্চিমে ৫২ শতাংশ (০.৫০ একর) জমিতে বারি মাল্টা-১ জাতের ব্লক প্রদর্শনীর করেন। কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে দেয়া বারি মাল্টা-১ জাতের ২০০টি চারা দিয়ে আব্দুর রহমান ২০১৯ সালের ১২ জুন শুরু করেন তার স্বপ্নের মাল্টা বাগানের যাত্রা। কৃষক আব্দুর রহমানকে চারা রোপণ ও বাগান পরিচর্যার জন্য কৃষি অফিস থেকে দেয়া হয় কিছু টাকাও। তার স্বপ্ন রোপণের প্রায় ৯ মাস যেতে না যেতেই স্বপ্ন এখন তার হাতের মুটোয় ধরা দিয়েছে বাস্তব রূপে। এখন তার বাগানে থাকা প্রত্যেকটি গাছের ডালে ডালে ঝুলছে থোকা থোকা মাল্টা। বর্তমানে আব্দুর রহমানের বাগানে ১৫০টি মাল্টা গাছ রয়েছে। শুধু তাই নয়, মাল্টার পাশাপাশি তার বাগানে সাথীফসল হিসেবে বাগানে চাষ করেছেন, ঘাস (নেপিয়ার পাক চং-১), টমেটো, মূলা,মরিচ, ডেরস ও শসা। মাল্টা বাগান করার প্রথমদিকে এলাকার লোকজন ও তার আত্মীয় স্বজনসহ বন্ধু-বান্ধবরা আব্দুর রহমানকে বিভিন্ন তিরস্কারসহ পাগল বলে আখ্যায়িত(ডাকলেও) এখন আব্দুর রহমানের মাল্টা বাগানে ঝাঁকে ঝাঁকে মাল্টার ফলন দেখে ও তার সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এলাকার বেকার যুবকরা ও আব্দুর রহমানকে পাগল ডাকা লোকেরাই এখন ঝুঁকছেন মাল্টা বাগান গড়ে তোলার দিকে। তার মাল্টা বাগান দেখতে এখন প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকার লোকজন ভিড় থাকে। ২০১৯ সালে ১২ জুনে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় পৈত্রিক ০.৫০ একর পরিমাণ ধানি জমিতে মাটি ভরাট করে মাল্টা গাছের (বারি-১) জাতের চারা রোপণ করেন কৃষক আব্দুর রহমান। মাল্টার চারা রোপণের প্রায় ৯ মাসেই মাল্টা গাছে ফল ধরেছে। বাগানের গাছে গাছে এখন শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন সাইজের মাল্টা। সবুজ পাতার আড়ালে কিংবা পাতা ঝরা ডালেও ঝুলছে থোকা থোকা সবুজ জাতের মাল্টা। আগামীতে আমার আরও মাল্টা বাগা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা আছে।এই বাগান থেকেই আগামী বছর থেকে মাল্টা বিক্রি করে আমার প্রতি বছর ২ লাখ টাকার মতো আয় আসবে। তিনি আরও বলেন, যে অর্থ ব্যয় করে বিদেশে গিয়ে যে পরিমান শ্রম আর ঘাম জড়িয়ে যে টাকা উপার্জন করা হয়। নিজের জন্মভূমির মাটিতে অল্প পরিশ্রমেই তার চেয়ে দ্বিগুণ টাকা উপার্জন করা সম্ভব।
বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১ , ১৪ মাঘ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২
কামাল হোসেন, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) বিশ্বম্ভরপুর থেকে ফিরে :
অধরা স্বপ্ন যখন বাস্তররূপে নিজের সামনে ধরা দেয় তখন আনন্দ আর সুখের সীমা থাকে না। এ রকমই এক স্বপবাজ ও স্বপ্নজয়ী সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের চিনাকান্দি গ্রামের প্রয়াত আব্দুল হালিমের ছেলে সৌদি ফেরত আব্দুর রহমান(৫৫)। সৌদি আরবে প্রবাসে থাকাকালীন সময়ে তার স্বপ্ন ছিল দেশে ফিরে মাল্টা বাগান করে বিদেশে না যাওয়ার। যেই কথা সেই কাজ। দেশে ফিরেই তার স্বপ্ন দেখা মাল্টা চাষ করে সফল হয়ে এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কৃষক আব্দুর রহমান। এখন বাস্তবে ধরা দিয়েছে তার সেই স্বপ্নের ফল। সৌদি আরবে থাকাকালীন সময়ে আব্দুর রহমান সৌদির বিভিন্ন মাল্টা বাগান দেখে এবং মাল্টা বাগানের বিভিন্ন প্রতিবেদন ইউটিউব চ্যানেলে দেখেন এবং বাংলাদেশের মাল্টা বাগান নিয়ে চ্যানেল আই টিভিতে শাইখ সিরাজের করা একটি প্রতিবেদন দেখের পর থেকেই আব্দুর রহমানের আরও বেশি উদ্বুদ্ধ হয় মাল্টা বাগান করার। গত শনিবার জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চিনাকান্দি প্রামের আব্দুর রহমানের মাল্টা বাগানে গিয়ে কথা হলে তিনি জানান, ১৯৯৯ সালের ২৭ জুন পাড়ি দেন বিদেশে। প্রায় ২০ বছর সৌদি থেকে ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি দেশে ফেরেন। দেশে ফেরার কিছুদিন যেতে না যেতেই হাঠাৎ একদিন দেখা হয় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সামছুল আলম(বিধু)’র সাথে। পরে তার মাল্টা বাগান করার ইচ্ছা পোষণ করলে তিনি উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। এরপর পরে আব্দুর রহমান তার স্বপ্নের মাল্টা বাগান বাস্তবেরূপ দিতে যোগাযোগ করেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কৃষি অফিসে। পরে বিশ্বম্ভরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রাজস্ব খাতের অর্থায়নে ও ডিএই,বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ এর বাস্তবায়নে ধনপুর ইউনিয়নের মাছিমপুর ব্লকের চিনাকান্দি গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের বাড়ির পশ্চিমে ৫২ শতাংশ (০.৫০ একর) জমিতে বারি মাল্টা-১ জাতের ব্লক প্রদর্শনীর করেন। কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে দেয়া বারি মাল্টা-১ জাতের ২০০টি চারা দিয়ে আব্দুর রহমান ২০১৯ সালের ১২ জুন শুরু করেন তার স্বপ্নের মাল্টা বাগানের যাত্রা। কৃষক আব্দুর রহমানকে চারা রোপণ ও বাগান পরিচর্যার জন্য কৃষি অফিস থেকে দেয়া হয় কিছু টাকাও। তার স্বপ্ন রোপণের প্রায় ৯ মাস যেতে না যেতেই স্বপ্ন এখন তার হাতের মুটোয় ধরা দিয়েছে বাস্তব রূপে। এখন তার বাগানে থাকা প্রত্যেকটি গাছের ডালে ডালে ঝুলছে থোকা থোকা মাল্টা। বর্তমানে আব্দুর রহমানের বাগানে ১৫০টি মাল্টা গাছ রয়েছে। শুধু তাই নয়, মাল্টার পাশাপাশি তার বাগানে সাথীফসল হিসেবে বাগানে চাষ করেছেন, ঘাস (নেপিয়ার পাক চং-১), টমেটো, মূলা,মরিচ, ডেরস ও শসা। মাল্টা বাগান করার প্রথমদিকে এলাকার লোকজন ও তার আত্মীয় স্বজনসহ বন্ধু-বান্ধবরা আব্দুর রহমানকে বিভিন্ন তিরস্কারসহ পাগল বলে আখ্যায়িত(ডাকলেও) এখন আব্দুর রহমানের মাল্টা বাগানে ঝাঁকে ঝাঁকে মাল্টার ফলন দেখে ও তার সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এলাকার বেকার যুবকরা ও আব্দুর রহমানকে পাগল ডাকা লোকেরাই এখন ঝুঁকছেন মাল্টা বাগান গড়ে তোলার দিকে। তার মাল্টা বাগান দেখতে এখন প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকার লোকজন ভিড় থাকে। ২০১৯ সালে ১২ জুনে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় পৈত্রিক ০.৫০ একর পরিমাণ ধানি জমিতে মাটি ভরাট করে মাল্টা গাছের (বারি-১) জাতের চারা রোপণ করেন কৃষক আব্দুর রহমান। মাল্টার চারা রোপণের প্রায় ৯ মাসেই মাল্টা গাছে ফল ধরেছে। বাগানের গাছে গাছে এখন শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন সাইজের মাল্টা। সবুজ পাতার আড়ালে কিংবা পাতা ঝরা ডালেও ঝুলছে থোকা থোকা সবুজ জাতের মাল্টা। আগামীতে আমার আরও মাল্টা বাগা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা আছে।এই বাগান থেকেই আগামী বছর থেকে মাল্টা বিক্রি করে আমার প্রতি বছর ২ লাখ টাকার মতো আয় আসবে। তিনি আরও বলেন, যে অর্থ ব্যয় করে বিদেশে গিয়ে যে পরিমান শ্রম আর ঘাম জড়িয়ে যে টাকা উপার্জন করা হয়। নিজের জন্মভূমির মাটিতে অল্প পরিশ্রমেই তার চেয়ে দ্বিগুণ টাকা উপার্জন করা সম্ভব।