প্রথম টিকা নিলেন রুনু ভেরোনিকা

এটা ঐতিহাসিক দিন : প্রধানমন্ত্রী 

বিকেল ৪টা ৬ মিনিট। ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। টিকা কেন্দ্রে আসেন সিনিয়র নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। এসে তিনি চেয়ারে বসেন। টিকা দেয়ার জন্য প্রস্তুত তিন স্বাস্থ্যকর্মী। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

টিকা নেয়ার আগ মুহূর্তে রুনু ভেরোনিকাকে প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার ভয় লাগছে না তো?’ উত্তরে রুনু ভেরোনিকা বলেন, ‘না’। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুব সাহসী তুমি। তোমার জন্য শুভ কামনা। তুমি আরও বেশি করে রোগীদের সেবা কর।’ এরপরই ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ৪টা ৮ মিনিটে দেশের প্রথম করোনা টিকা দেয়া হয় রুনো ভেরোনিকাকে। টিকা নিয়েই তিনি দাঁড়িয়ে স্লোগান দেন ‘জয় বাংলা’। এ সময় প্রধানমন্ত্রী হাততালি দিয়ে তাকে সাহস যোগান।

এর মধ্য দিয়েই দেশে করোনার টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন হলো। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টিকা কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

এরপর অনুষ্ঠানে আরও চারজনকে টিকা দেয়া হয়। তারা হলেন- কুর্মিটোলা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আহমেদ লুৎফুল মোবেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. নাসিমা সুলতানা, মতিঝিল বিভাগের ট্রাফিক পুলিশের সদস্য দিদারুল ইসলাম এবং সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সীমিত শক্তির বাংলাদেশে এই সময়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করতে পারাকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘বিশে^র অনেক দেশ এখনও করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। আমরা এই ঘনবসতিপূর্ণ দেশে শুরু করেছি। এটা ঐতিহাসিক দিন। আমরা করোনার এই স্থবির অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাব।’

পাঁচজনকে টিকা দেয়ার পর কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার আরও ২১ জনকে করোনার টিকা দেয়া হয়। তাদের মধ্যে কুর্মিটোলা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মুন্নী খাতুন ও রিনা সরকার টিকা নিয়েছেন।

টিকা দেয়ার পর সবাইকে ৩০ মিনিট করে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। টিকা গ্রহণের পর কারোর শরীরে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শনাক্ত হয়নি বলে গতকাল রাতে সংবাদকে জানিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর।

৮ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ

করোনার প্রথম ডোজ টিকা দেয়ার দুই মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট তারিখে পরবর্তী ডোজ টিকা দেয়া হবে। দুটি ডোজ নেয়া হলে সুরক্ষা প্লাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন থেকে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির সনদ সংগ্রহ করা যাবে।

ডা. এএসএম আলমগীর জানান, প্রথম ডোজ নেয়ার আট সপ্তাহ (দুই মাস) পর দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া হবে। প্রথমদিন ২৬ জনকে করোনার টিকা দেয়ার কথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আগেই (২৬ জানুয়ারি) জানিয়েছিলেন। টিকা কর্মসূচির উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর এবিএম খুরশীদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, টিকা নেয়ার পর কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

আজ পাঁচ হাসপাতালে টিকা কর্মসূচি

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বাংলাদেশ-–কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালেও করোনার টিকা দেয়া হবে। এই পাঁচ হাসপাতালে আজ পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের।

ঢাকার এই পাঁচ হাসপাতালে টিকা দেয়ার পর টিকা গ্রহীতাদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করবেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ৬৪ জেলায় ব্যাপকভাবে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। ওই সময় প্রতিদিন সারাদেশে দুই লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের।

টিকা কেন্দ্রেও তালিকাভুক্তির সুযোগ

টিকা পেতে এখন থেকে অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। টিকা নেয়ার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সঙ্গে রাখতে হবে। তবে যাদের অনলাইনে নিবন্ধনের সুযোগ নেই, কিংবা এনআইডি নম্বর নেই তারাও টিকাদান কেন্দ্রে সরাসরি যোগাযোগ করে তালিকাভুক্ত হতে পারবেন।

করোনার টিকা নিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিবন্ধন করতে হবে ‘সুরক্ষা’ (www.surokha.gov.bd) ওয়েব পোর্টালে। অ্যান্ড্রয়েড বা অ্যাপল প্লে স্টোর থেকে সুরক্ষা মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করা যাবে।

টিকা গ্রহীতাদের সাহস দিলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রথম টিকা গ্রহণকারী পাঁচজনকে শুভকামনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাহস দিয়েছেন। নিজে করোনার টিকা দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগে আগে নিলে বলবে আগে নিজেই নিল, কাউকে দিল না। সবাইকে দিয়ে নেই তারপর আমি নেব।’

বর্তমান সরকার দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে তা আবারও প্রমাণ হলো- মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শীঘ্রই সারাদেশে টিকা দেয়া শুরু হবে, যাতে দেশের মানুষ করোনার বিরুদ্ধে সুরক্ষা পায়।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ তিন কোটি ৪০ লাখ ভ্যাকসিন পাবে। আমরা সময়মতো ভ্যাকসিন আনার জন্য চুক্তি করেছি। আমরা ভ্যাকসিন প্রয়োগের যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছি। আমাদের দুর্ভাগ্য কিছু কিছু মানুষ থাকে যারা সবকিছুতেই নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে, তারা মানুষকে সাহায্য করে না, উল্টো ভয়ভীতি ঢুকানোর চেষ্টা করে, তাদের ‘সবকিছু ভালো লাগে না’- রোগে ভোগে। তারা যত সমালোচনা করেছে আমরা তত দ্রুত কাজ করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘করোনায় সব স্থবির হয়ে গেছে। এই করোনা চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ছেলে পর্যন্ত মায়ের লাশ স্পর্শ করেনি। আত্মীস্বজনরা কেউ এগিয়ে আসেনি। এমন সংকটে আমরা মানুষের পাশে ছিলাম। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যাবতীয় উদ্যোগ নিয়েছি। ভ্যাকসিনও অনেক দেশের আগে আমরা দিচ্ছি।’

মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার মাতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে সরকার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, প্রশাসন, পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন কমিটি করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আনসার ভিডিপিও মানুষের পাশে ছিল।’

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ সরকার ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র উদ্ভাবিত তিন কোটি ডোজ করোনার টিকা কিনেছে। এই টিকা উৎপাদন হচ্ছে ভারতের পুনে রাজ্যের সেরাম ইনস্টিটিউটে।

এই তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ গত ২৫ জানুয়ারি এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইট ঢাকা পৌঁছায়। পরে এই টিকা নিয়ে রাখা হয় টঙ্গীতে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ওয়্যারহাউজে। সেখান থেকে প্রতিটি লটের নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলো মানবদেহে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন (২৬ জানুয়ারি) দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

এর আগে ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে একই প্রতিষ্ঠানের টিকার ২০ লাখ ডোজ পাওয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২৭ জানুয়ারি থেকে টিকাদান কর্মসূচি শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি ঢাকার পাঁচ হাসপাতালে ৫০০ জনকে ‘পাইলটিং’ হিসেবে করোনার টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১ , ১৪ মাঘ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

প্রথম টিকা নিলেন রুনু ভেরোনিকা

এটা ঐতিহাসিক দিন : প্রধানমন্ত্রী 

image

প্রথম টিকা গ্রহণকারী রুনু ভেরোনিকা

বিকেল ৪টা ৬ মিনিট। ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। টিকা কেন্দ্রে আসেন সিনিয়র নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। এসে তিনি চেয়ারে বসেন। টিকা দেয়ার জন্য প্রস্তুত তিন স্বাস্থ্যকর্মী। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

টিকা নেয়ার আগ মুহূর্তে রুনু ভেরোনিকাকে প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার ভয় লাগছে না তো?’ উত্তরে রুনু ভেরোনিকা বলেন, ‘না’। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুব সাহসী তুমি। তোমার জন্য শুভ কামনা। তুমি আরও বেশি করে রোগীদের সেবা কর।’ এরপরই ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ৪টা ৮ মিনিটে দেশের প্রথম করোনা টিকা দেয়া হয় রুনো ভেরোনিকাকে। টিকা নিয়েই তিনি দাঁড়িয়ে স্লোগান দেন ‘জয় বাংলা’। এ সময় প্রধানমন্ত্রী হাততালি দিয়ে তাকে সাহস যোগান।

এর মধ্য দিয়েই দেশে করোনার টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন হলো। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টিকা কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

এরপর অনুষ্ঠানে আরও চারজনকে টিকা দেয়া হয়। তারা হলেন- কুর্মিটোলা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আহমেদ লুৎফুল মোবেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. নাসিমা সুলতানা, মতিঝিল বিভাগের ট্রাফিক পুলিশের সদস্য দিদারুল ইসলাম এবং সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সীমিত শক্তির বাংলাদেশে এই সময়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করতে পারাকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘বিশে^র অনেক দেশ এখনও করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। আমরা এই ঘনবসতিপূর্ণ দেশে শুরু করেছি। এটা ঐতিহাসিক দিন। আমরা করোনার এই স্থবির অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাব।’

পাঁচজনকে টিকা দেয়ার পর কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার আরও ২১ জনকে করোনার টিকা দেয়া হয়। তাদের মধ্যে কুর্মিটোলা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মুন্নী খাতুন ও রিনা সরকার টিকা নিয়েছেন।

টিকা দেয়ার পর সবাইকে ৩০ মিনিট করে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। টিকা গ্রহণের পর কারোর শরীরে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শনাক্ত হয়নি বলে গতকাল রাতে সংবাদকে জানিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর।

৮ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ

করোনার প্রথম ডোজ টিকা দেয়ার দুই মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট তারিখে পরবর্তী ডোজ টিকা দেয়া হবে। দুটি ডোজ নেয়া হলে সুরক্ষা প্লাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন থেকে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির সনদ সংগ্রহ করা যাবে।

ডা. এএসএম আলমগীর জানান, প্রথম ডোজ নেয়ার আট সপ্তাহ (দুই মাস) পর দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া হবে। প্রথমদিন ২৬ জনকে করোনার টিকা দেয়ার কথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আগেই (২৬ জানুয়ারি) জানিয়েছিলেন। টিকা কর্মসূচির উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর এবিএম খুরশীদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, টিকা নেয়ার পর কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

আজ পাঁচ হাসপাতালে টিকা কর্মসূচি

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বাংলাদেশ-–কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালেও করোনার টিকা দেয়া হবে। এই পাঁচ হাসপাতালে আজ পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের।

ঢাকার এই পাঁচ হাসপাতালে টিকা দেয়ার পর টিকা গ্রহীতাদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করবেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ৬৪ জেলায় ব্যাপকভাবে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। ওই সময় প্রতিদিন সারাদেশে দুই লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের।

টিকা কেন্দ্রেও তালিকাভুক্তির সুযোগ

টিকা পেতে এখন থেকে অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। টিকা নেয়ার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সঙ্গে রাখতে হবে। তবে যাদের অনলাইনে নিবন্ধনের সুযোগ নেই, কিংবা এনআইডি নম্বর নেই তারাও টিকাদান কেন্দ্রে সরাসরি যোগাযোগ করে তালিকাভুক্ত হতে পারবেন।

করোনার টিকা নিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিবন্ধন করতে হবে ‘সুরক্ষা’ (www.surokha.gov.bd) ওয়েব পোর্টালে। অ্যান্ড্রয়েড বা অ্যাপল প্লে স্টোর থেকে সুরক্ষা মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করা যাবে।

টিকা গ্রহীতাদের সাহস দিলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রথম টিকা গ্রহণকারী পাঁচজনকে শুভকামনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাহস দিয়েছেন। নিজে করোনার টিকা দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগে আগে নিলে বলবে আগে নিজেই নিল, কাউকে দিল না। সবাইকে দিয়ে নেই তারপর আমি নেব।’

বর্তমান সরকার দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে তা আবারও প্রমাণ হলো- মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শীঘ্রই সারাদেশে টিকা দেয়া শুরু হবে, যাতে দেশের মানুষ করোনার বিরুদ্ধে সুরক্ষা পায়।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ তিন কোটি ৪০ লাখ ভ্যাকসিন পাবে। আমরা সময়মতো ভ্যাকসিন আনার জন্য চুক্তি করেছি। আমরা ভ্যাকসিন প্রয়োগের যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছি। আমাদের দুর্ভাগ্য কিছু কিছু মানুষ থাকে যারা সবকিছুতেই নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে, তারা মানুষকে সাহায্য করে না, উল্টো ভয়ভীতি ঢুকানোর চেষ্টা করে, তাদের ‘সবকিছু ভালো লাগে না’- রোগে ভোগে। তারা যত সমালোচনা করেছে আমরা তত দ্রুত কাজ করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘করোনায় সব স্থবির হয়ে গেছে। এই করোনা চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ছেলে পর্যন্ত মায়ের লাশ স্পর্শ করেনি। আত্মীস্বজনরা কেউ এগিয়ে আসেনি। এমন সংকটে আমরা মানুষের পাশে ছিলাম। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যাবতীয় উদ্যোগ নিয়েছি। ভ্যাকসিনও অনেক দেশের আগে আমরা দিচ্ছি।’

মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার মাতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে সরকার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, প্রশাসন, পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন কমিটি করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আনসার ভিডিপিও মানুষের পাশে ছিল।’

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ সরকার ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র উদ্ভাবিত তিন কোটি ডোজ করোনার টিকা কিনেছে। এই টিকা উৎপাদন হচ্ছে ভারতের পুনে রাজ্যের সেরাম ইনস্টিটিউটে।

এই তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ গত ২৫ জানুয়ারি এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইট ঢাকা পৌঁছায়। পরে এই টিকা নিয়ে রাখা হয় টঙ্গীতে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ওয়্যারহাউজে। সেখান থেকে প্রতিটি লটের নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলো মানবদেহে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন (২৬ জানুয়ারি) দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

এর আগে ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে একই প্রতিষ্ঠানের টিকার ২০ লাখ ডোজ পাওয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২৭ জানুয়ারি থেকে টিকাদান কর্মসূচি শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি ঢাকার পাঁচ হাসপাতালে ৫০০ জনকে ‘পাইলটিং’ হিসেবে করোনার টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।