যেসব ওয়ার্ডে সংঘর্ষ

ভাইয়ের হাতে ভাই খুন

নির্বাচন-পূর্ব আশঙ্কাকে সত্যি করে দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ভোটে উত্তাপ ছড়িয়েছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। মেয়র পদে মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির শাহাদাত হোসেনের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ এসেছে। শাহাদাত তার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ করেছেন। তবে দৃশ্যত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শক্ত অবস্থানের বিপরীতে মাঠে দেখা যায়নি বিএনপির নেতাকর্মীদের। সে অর্থে মেয়র পদের জন্য ভোটের লড়াইয়ের চিত্র অনেকটাই নিষ্প্রাণ থাকলেও বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘাত হয়েছে। কয়েকটি ওয়ার্ডে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গুলিবর্ষণ, ভাইয়ের হাতে ভাই খুনসহ কয়েকটি সহিংস ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে নগরীর খুলশি থানার ঝাউতলা এলাকায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিতে একজন নিহত হওয়ার পর সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে র‌্যাব ও সোয়াত টিম।

জানা গেছে, গতকাল সকাল আটটায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ। প্রথম দেড় ঘণ্টা যাওয়ার পরই শুরু হয় উত্তেজনা। ওই ওয়ার্ডের সরকারদলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী ও বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মো. আলম (২৮) নামে একজন নিহত হন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সেখানে থেমে থেমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছিল। এক সাংবাদিককের মোটরসাইকেলসহ বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে সংঘর্ষে জড়ানো উত্তেজিত নেতাকর্মীরা। নিহত আলমের বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায়। বাবার নাম সুলতান। আলম ঝাউতলা এলাকার ভাড়া বাসায় থাকতেন।

এদিকে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড লালখান বাজার এলাকায় আওয়ামী সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল এবং মনোনয়ন বঞ্চিত দিদারুল আলম মাসুমের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সকাল ৯টার দিকে লালখান বাজার শহীদ নগর সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এ সময় পাথর নিক্ষেপ ও লাঠি নিয়ে হামলায় জড়ায় দুই পক্ষ। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। খুলশি থানার ওসি শাহিনুজ্জামান বলেন, কেন্দ্রের বাইরে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছিল। পুলিশ-বিজিবি এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এছাড়া নগরের পাহাড়তলী থানার পশ্চিম নাছিরাবাদ বার কোয়ার্টার এলাকায় ভাইয়ের হাতে ভাই খুন হয়েছেন। দুই ভাই দুই কাউন্সিলর প্রার্থীকে সমর্থন করতেন। গতকাল

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানিয়েছে, দুই ভাইয়ের মধ্যে আগে থেকে বিরোধ ছিল। নিহতের নাম নিজাম উদ্দীন মুন্না। অভিযুক্ত তার ভাই সালাউদ্দীন কামরুল। এদের মধ্যে নিজাম উদ্দীন মুন্না সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবের আহমদের সমর্থক ও অভিযুক্ত সালাউদ্দীন কামরুল আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নরুল আমিনের সমর্থক।

পাহাড়তলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল ইসলাম বলেন, বার কোয়ার্টার এলাকায় ছুরিকাঘাতে নিজাম উদ্দীন মুন্না নামে একজন নিহত হয়েছে। তার ভাই সালাউদ্দীন কামরুল ছুরিকাঘাত করেছে বলে জানতে পেরেছি। তিনি বলেন, মুন্না ও সালাউদ্দীন কামরুলের মধ্যে আগে থেকে বিরোধ ছিল। অভিযুক্তকে আটকের চেষ্টা চলছে।

ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে নিহত মো. নিজাম উদ্দীনের মা জিন্নাত আরা বেগম বলেন, আমার ছেলের ফাঁসি চাই। ও প্ল্যান করে খুন করেছে। আমার বউ মা বোবা, কথা বলতে পারে না। তার মাসুম দুই সন্তানের কী হবে? তিনি বলেন, দুই ভাই দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছিলেন। পারিবারিক জায়গা নিয়েও বিরোধ ছিল। আমার ছেলের খুনের জন্য আমার আরেক ছেলে কামরুল ইসলাম দায়ী। আমি তার ফাঁসি চাই।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার বড় নাতি ইমন দেখছিল, নিজাম ভাইয়ের পা ধরে বলছিল মাফ করে দাও। কিন্তু সে মাফ করেনি। খুন করে ফেলেছে। নিহত নিজামের স্ত্রী নাসরিন আকতার সুমি বাক প্রতিবন্ধী। তিনি নিজের ভাষায় বলার চেষ্টা করছিলেন সব ঘটনা। বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন তার মা ও শাশুড়ি। সুমি জানান, অনেক দিন ধরে আমাদের ওপর অত্যাচার করে আসছিল কামরুল। হত্যার হুমকিও দিয়েছিল। সুমির ছেলে ইব্রাহিমের বয়স মাত্র ৮ মাস। মেয়ে বিবি মরিয়মের বয়স আড়াই বছর। নিহত নিজামের বোন বিবি জোহরা মুক্তা বিলাপ করে কাঁদছিলেন ভাইয়ের শোকে। তিনি বলেন, আমার ভাতিজা, ভাতিজির কী হবে।

বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১ , ১৪ মাঘ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

যেসব ওয়ার্ডে সংঘর্ষ

ভাইয়ের হাতে ভাই খুন

চট্টগ্রাম ব্যুরো

নির্বাচন-পূর্ব আশঙ্কাকে সত্যি করে দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ভোটে উত্তাপ ছড়িয়েছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। মেয়র পদে মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির শাহাদাত হোসেনের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ এসেছে। শাহাদাত তার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ করেছেন। তবে দৃশ্যত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শক্ত অবস্থানের বিপরীতে মাঠে দেখা যায়নি বিএনপির নেতাকর্মীদের। সে অর্থে মেয়র পদের জন্য ভোটের লড়াইয়ের চিত্র অনেকটাই নিষ্প্রাণ থাকলেও বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘাত হয়েছে। কয়েকটি ওয়ার্ডে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গুলিবর্ষণ, ভাইয়ের হাতে ভাই খুনসহ কয়েকটি সহিংস ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে নগরীর খুলশি থানার ঝাউতলা এলাকায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিতে একজন নিহত হওয়ার পর সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে র‌্যাব ও সোয়াত টিম।

জানা গেছে, গতকাল সকাল আটটায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ। প্রথম দেড় ঘণ্টা যাওয়ার পরই শুরু হয় উত্তেজনা। ওই ওয়ার্ডের সরকারদলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী ও বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মো. আলম (২৮) নামে একজন নিহত হন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সেখানে থেমে থেমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছিল। এক সাংবাদিককের মোটরসাইকেলসহ বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে সংঘর্ষে জড়ানো উত্তেজিত নেতাকর্মীরা। নিহত আলমের বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায়। বাবার নাম সুলতান। আলম ঝাউতলা এলাকার ভাড়া বাসায় থাকতেন।

এদিকে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড লালখান বাজার এলাকায় আওয়ামী সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল এবং মনোনয়ন বঞ্চিত দিদারুল আলম মাসুমের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সকাল ৯টার দিকে লালখান বাজার শহীদ নগর সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এ সময় পাথর নিক্ষেপ ও লাঠি নিয়ে হামলায় জড়ায় দুই পক্ষ। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। খুলশি থানার ওসি শাহিনুজ্জামান বলেন, কেন্দ্রের বাইরে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছিল। পুলিশ-বিজিবি এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এছাড়া নগরের পাহাড়তলী থানার পশ্চিম নাছিরাবাদ বার কোয়ার্টার এলাকায় ভাইয়ের হাতে ভাই খুন হয়েছেন। দুই ভাই দুই কাউন্সিলর প্রার্থীকে সমর্থন করতেন। গতকাল

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানিয়েছে, দুই ভাইয়ের মধ্যে আগে থেকে বিরোধ ছিল। নিহতের নাম নিজাম উদ্দীন মুন্না। অভিযুক্ত তার ভাই সালাউদ্দীন কামরুল। এদের মধ্যে নিজাম উদ্দীন মুন্না সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবের আহমদের সমর্থক ও অভিযুক্ত সালাউদ্দীন কামরুল আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নরুল আমিনের সমর্থক।

পাহাড়তলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল ইসলাম বলেন, বার কোয়ার্টার এলাকায় ছুরিকাঘাতে নিজাম উদ্দীন মুন্না নামে একজন নিহত হয়েছে। তার ভাই সালাউদ্দীন কামরুল ছুরিকাঘাত করেছে বলে জানতে পেরেছি। তিনি বলেন, মুন্না ও সালাউদ্দীন কামরুলের মধ্যে আগে থেকে বিরোধ ছিল। অভিযুক্তকে আটকের চেষ্টা চলছে।

ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে নিহত মো. নিজাম উদ্দীনের মা জিন্নাত আরা বেগম বলেন, আমার ছেলের ফাঁসি চাই। ও প্ল্যান করে খুন করেছে। আমার বউ মা বোবা, কথা বলতে পারে না। তার মাসুম দুই সন্তানের কী হবে? তিনি বলেন, দুই ভাই দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছিলেন। পারিবারিক জায়গা নিয়েও বিরোধ ছিল। আমার ছেলের খুনের জন্য আমার আরেক ছেলে কামরুল ইসলাম দায়ী। আমি তার ফাঁসি চাই।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার বড় নাতি ইমন দেখছিল, নিজাম ভাইয়ের পা ধরে বলছিল মাফ করে দাও। কিন্তু সে মাফ করেনি। খুন করে ফেলেছে। নিহত নিজামের স্ত্রী নাসরিন আকতার সুমি বাক প্রতিবন্ধী। তিনি নিজের ভাষায় বলার চেষ্টা করছিলেন সব ঘটনা। বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন তার মা ও শাশুড়ি। সুমি জানান, অনেক দিন ধরে আমাদের ওপর অত্যাচার করে আসছিল কামরুল। হত্যার হুমকিও দিয়েছিল। সুমির ছেলে ইব্রাহিমের বয়স মাত্র ৮ মাস। মেয়ে বিবি মরিয়মের বয়স আড়াই বছর। নিহত নিজামের বোন বিবি জোহরা মুক্তা বিলাপ করে কাঁদছিলেন ভাইয়ের শোকে। তিনি বলেন, আমার ভাতিজা, ভাতিজির কী হবে।