সম্পর্ক উন্নয়নে তুরস্ক সৌদির মনোযোগ

বছর দুই আগে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের দূতাবাসে খুন হন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। এরপরই সৌদি তুরস্ক সম্পর্ক তলানিতে নেমে আসে। সম্প্রতি কাতার ও অন্য আরব দেশগুলোর বিরোধের অবসানের পর সৌদি-তুরস্কের সম্পর্ক উন্নয়নের আভাস দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। আল জাজিরা

এতে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদে সহযোগিতার অভিযোগে ২০১৭ সালে কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ করে সৌদি আরবসহ চারটি দেশ। কাতারের বিরুদ্ধে ইরানকে সহায়তার অভিযোগও তোলে তারা।

চলতি মাসের শুরুতে উপসাগরীয় দেশগুলোর জোট গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের সম্মেলনে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত নেয় সৌদি আরব। দেশটির জন্য নিজেদের সীমান্ত ও আকাশপথ খুলে দেয়ারও ঘোষণা দেয়া হয়। এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি একে ‘খুবই দরকারি’ হিসেবেও অভিহিত করেন। এতে জিসিসি আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এরদোয়ানের এমন বন্ধুত্বপূর্ণ মন্তব্যের কিছুদিনের মধ্যে সৌদি ও তুরস্কের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেয় কাতার। কাতারের বিশেষ দূত মুখলাক আল কাহতানি বলেন, ‘যদি দুটি দেশ মনে করে মধ্যস্থতায় কাতারের ভূমিকা আছে, তাহলেই এটি সম্ভব হবে। সবাই চায় দেশ দুটির সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হোক।’ যদিও জিসিসি সম্মেলনের আগেই সৌদি-তুরস্ক উষ্ণ সম্পর্কের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। নভেম্বরে জি-২০ সম্মেলন শুরুর আগে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদকে ফোন করেন এরদোয়ান।

ওই সময় এরদোয়ানের দপ্তর জানিয়েছিল, ফোনে দুই নেতা পারস্পরিক বিরোধ মিটিয়ে ফেলার ইঙ্গিত দিয়েছেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে আলোচনা চালু রাখতেও সম্মত হন তারা। এরপর ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) এক সম্মেলনে দেখা হয় দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। সাক্ষাৎকার শেষে এক টুইট বার্তায় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেন, ‘পারস্পরিক অংশীদারিত্ব পুরো অঞ্চলের জন্যই উপকার বয়ে আনবে।’ সৌদি-তুরস্কের সাম্প্রতিক সম্পর্কের পেছনে আরও এক কারণের কথা বলছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয়। কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আলি বাকির বলেন, ‘ট্রাম্প নির্বাচনে হারার পর সৌদি আরব ভাবলো নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশটিকে চাপে রাখতে পারেন। এ কারণেই নতুন রাস্তা খুঁজছে সৌদি। তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের এটিই প্রধান কারণ।’ তিনি বলেন, ‘বাইডেন প্রশাসনের চাপ ছাড়া তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তাগাদা থাকত না সৌদির।’ ২০১১ সালে কথিত আরব বসন্তের পর মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন দিয়েছিল তুরস্ক। অন্যদিকে সৌদি আরব ব্রাদারহুডকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। ব্রাদারহুডের অনেক সদস্য মিসর থেকে তুরস্কে পালিয়ে আসে। তারা দেশটিতে ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল বলে অভিযোগ করে সৌদি। তুরস্কের সমর্থন ছিল মিসরের প্রেসিডেন্ট মুরসির প্রতি। ২০১২ সালে সামরিক বাহিনী তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে। অন্যদিকে মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সরানো জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিকে সমর্থন দিয়েছিল সৌদি। সৌদি আরব, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের অভিযোগ ছিল মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন দিচ্ছে কাতার। তারা দেশটিতে তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি বন্ধেরও দাবি জানিয়েছিল।

image

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও (বামে) সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান - আল-জাজিরা

আরও খবর
ফিলিস্তিনি কিশোরকে গুলি করে হত্যা
পুতিনকে ফোনে সতর্ক করলেন বাইডেন
মুক্তি পেলেন তামিলনাড়ুর শশীকলা

বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১ , ১৪ মাঘ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

সম্পর্ক উন্নয়নে তুরস্ক সৌদির মনোযোগ

image

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও (বামে) সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান - আল-জাজিরা

বছর দুই আগে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের দূতাবাসে খুন হন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। এরপরই সৌদি তুরস্ক সম্পর্ক তলানিতে নেমে আসে। সম্প্রতি কাতার ও অন্য আরব দেশগুলোর বিরোধের অবসানের পর সৌদি-তুরস্কের সম্পর্ক উন্নয়নের আভাস দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। আল জাজিরা

এতে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদে সহযোগিতার অভিযোগে ২০১৭ সালে কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ করে সৌদি আরবসহ চারটি দেশ। কাতারের বিরুদ্ধে ইরানকে সহায়তার অভিযোগও তোলে তারা।

চলতি মাসের শুরুতে উপসাগরীয় দেশগুলোর জোট গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের সম্মেলনে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত নেয় সৌদি আরব। দেশটির জন্য নিজেদের সীমান্ত ও আকাশপথ খুলে দেয়ারও ঘোষণা দেয়া হয়। এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি একে ‘খুবই দরকারি’ হিসেবেও অভিহিত করেন। এতে জিসিসি আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এরদোয়ানের এমন বন্ধুত্বপূর্ণ মন্তব্যের কিছুদিনের মধ্যে সৌদি ও তুরস্কের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেয় কাতার। কাতারের বিশেষ দূত মুখলাক আল কাহতানি বলেন, ‘যদি দুটি দেশ মনে করে মধ্যস্থতায় কাতারের ভূমিকা আছে, তাহলেই এটি সম্ভব হবে। সবাই চায় দেশ দুটির সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হোক।’ যদিও জিসিসি সম্মেলনের আগেই সৌদি-তুরস্ক উষ্ণ সম্পর্কের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। নভেম্বরে জি-২০ সম্মেলন শুরুর আগে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদকে ফোন করেন এরদোয়ান।

ওই সময় এরদোয়ানের দপ্তর জানিয়েছিল, ফোনে দুই নেতা পারস্পরিক বিরোধ মিটিয়ে ফেলার ইঙ্গিত দিয়েছেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে আলোচনা চালু রাখতেও সম্মত হন তারা। এরপর ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) এক সম্মেলনে দেখা হয় দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। সাক্ষাৎকার শেষে এক টুইট বার্তায় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেন, ‘পারস্পরিক অংশীদারিত্ব পুরো অঞ্চলের জন্যই উপকার বয়ে আনবে।’ সৌদি-তুরস্কের সাম্প্রতিক সম্পর্কের পেছনে আরও এক কারণের কথা বলছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয়। কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আলি বাকির বলেন, ‘ট্রাম্প নির্বাচনে হারার পর সৌদি আরব ভাবলো নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশটিকে চাপে রাখতে পারেন। এ কারণেই নতুন রাস্তা খুঁজছে সৌদি। তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের এটিই প্রধান কারণ।’ তিনি বলেন, ‘বাইডেন প্রশাসনের চাপ ছাড়া তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তাগাদা থাকত না সৌদির।’ ২০১১ সালে কথিত আরব বসন্তের পর মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন দিয়েছিল তুরস্ক। অন্যদিকে সৌদি আরব ব্রাদারহুডকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। ব্রাদারহুডের অনেক সদস্য মিসর থেকে তুরস্কে পালিয়ে আসে। তারা দেশটিতে ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল বলে অভিযোগ করে সৌদি। তুরস্কের সমর্থন ছিল মিসরের প্রেসিডেন্ট মুরসির প্রতি। ২০১২ সালে সামরিক বাহিনী তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে। অন্যদিকে মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সরানো জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিকে সমর্থন দিয়েছিল সৌদি। সৌদি আরব, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের অভিযোগ ছিল মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন দিচ্ছে কাতার। তারা দেশটিতে তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি বন্ধেরও দাবি জানিয়েছিল।